ব্রিটেন কি জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্য by রাজীব হাসান
আঠারো শতক থেকে শিল্প বিপ্লব আর নবজাগরণের আলোয় আলোকিত ধনতান্ত্রিক শক্তির দখলে আসে একের পর এক দেশ। শুরু হয় মুসলিম অধিকৃত অঞ্চলগুলোর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ। ব্রিটিশরা অধিকার করে ভারতর্বষ। ব্রিটিশ ও ডাচদের অধিকারে আসে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। ব্রিটিশ, ফরাসি এবং জার্মান ও ইতালীয়দের হাতে চলে যায় যথাক্রমে উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম এশিয়ার শাসনভার। মধ্য এশিয়ার দখল নেয় রুশরা।
১৯২০ সালের মধ্যে শুধু আফগানিস্তান-ইরান, তুরস্ক, মধ্য আরব ও ইয়েমেন কেবল পশ্চিমা দখলমুক্ত মুসলিম দেশ হিসেবে অস্তিত্ব ধরে রাখে। তবে তাদের মধ্যে কোনো কোনোটি পশ্চিমা প্রভাব এড়াতে পারেনি। কয়েকশ' বছর ধরে ধর্ম বিশ্বাস আর ক্ষমতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা মুসলিম শাসনের মূল্যায়ন হতে থাকে এভাবে_ ঈশ্বর না হলেও ইতিহাস হয়তো তাদের পরিত্যাগ করেছে! মুসলমানদের এ মর্মবেদনা আলতাফ হোসেন হালির কবিতায় বেশ সঙ্ষ্ঠভাবে ধরা দেয়। 'বাগানে যখন ছেয়েছে শরৎ/বসনেস্নর ফুলের সমাহার নিয়ে তখন/কি লাভ কথা বলে?...'
হারানো ইতিহাস আর ঐতিহ্যকে ফিরে পেতে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে মুসলানদের লড়াই আজো বিদ্যমান। তবে এ লড়াইয়ে সবাই যে একই লক্ষ্য ও পন্থায় অগ্রসর হচ্ছে তা বলা যাবে না। বিভিন্ন মত ও পথের পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমাদের দৃষ্টিতে তারা সবাই 'জঙ্গি', 'সন্ত্রাসী'...। সবাইকে একই কাতারে দাঁড় করানোর সুবিধাটা হলো ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনগুলো থেকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে রাখা যায়। আর তাই পশ্চিমা পৃষ্ঠপোষকতায় তালেবান কিংবা আল কায়দার মতো সংগঠনগুলোর বেড়ে ওঠা খুব অস্বাভাবিক নয়। সমাজতান্ত্রিক বিশ্বকে মোকাবেলার নামে এসব ইসলামী শক্তির পৃষ্ঠপোষকতা এখন পশ্চিমাদের জন্য বুমেরাং হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার পরিণতি ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে টুইন টাওয়ারে হামলা। গত বছর লন্ডনে পাতাল রেল ও দোতলা বাসে আত্নঘাতী বোমা হামলা। সর্বশেষে এ বছরের আগস্টে লন্ডনের এয়ারপোটরাউ যুক্তরাষ্ঠ্রগামী ১০টি বিমান ধ্বংসের সন্ত্রাসী পরিকল্পনা। তবে এ পরিকল্পনাটি সফল না হলেও এর পেছনে কারা জড়িত, কিভাবে তারা তাদের সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ক্ষেত্রে ব্রিটেনের নামটিই সামনে চলে এসেছে। সেখানে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের এসব পরিকল্পনার মূল কারিগর হিসেবে চিহিক্রত করা হচ্ছে। নাইন-ইলেভেনের আগে পশ্চিমাবিরোধী যুদ্ধে লন্ডন ওসামা বিন লাদেনের মতাদশরাউর শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত হয়। এখানে যুক্ত হন বিভিন্ন ভাষাভাষীর বদুিব্দজীবী, ধর্ম প্রচারক, অর্থ-জোগানদাতা, অস্ত্র ব্যবসায়ী, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, ভ্রমণ সংস্থা থেকে শুরু করে সামরিক প্রশিক্ষণ পাওয়া বিভিন্ন সেনারা। ইউরোপের অন্য যে কোনো শহরের তুলনায় লন্ডনের সঙ্গে রয়েছে আল কায়দা ও এর অনুসারী সংগঠনগুলোর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। তথ্য-প্রমাণ বলছে, গত ১ দশক ধরে তাদের বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকা- লন্ডন থেকেই পরিচালিত হয়ে আসছে। নাইন-ইলেভেনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লাদেনের জিহাদের ডাক এসেছে লন্ডন থেকে। বিবিসিসহ প্রভাবশালী পত্রিকাগুলোতে সেসময় তার উপস্থিতি ছিল নিয়মিত। ১৯৯৮ সালের জুলাই মাসে ব্রিটিশ এম ১৫-এর এক সাবেক কর্মকর্তা ব্রিটেনের ডেইলি মেইলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফিকে হত্যা প্রচেষ্ঠার পেছনে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা লন্ডনভিত্তিক একটি ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠীকে অর্থায়ন করেছিল। হত্যা প্রচেষ্ঠায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক সদস্যকে এর জন্য ১ লাখ পাউন্ড করে দেওয়া হয়। ১৯৯৬ সালের জুনে সৌদি আরবের দাহরানে মার্কিন সেনা ব্যারাকে বোমা হামলা চালিয়ে ১৯ সেনাকে হত্যা করা হয়। লন্ডনে সৌদি প্রবাসী মোহাম্মদ আল মাসারিকে এ ঘটনায় জড়িতে বলে ধারণা করা হয়। সৌদি রাজতনে্পর পতন ঘটিয়ে একটি কট্টর ইসলামী রাষ্ঠ্র গঠনের ঘোষণা দেওয়া সত্ত্বেও ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ লন্ডনে থাকার জন্য তাকে ৪ বছরের অনুমতি দেয়। লাদেনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ মিত্র। ১৯৯৭ সালের নভেম্বরে মিসরের একটি ইসলামী সংগঠন জামা-আল-ইসলামিয়া পর্যটকদের লক্ষ্য কর নৃশংস এক হত্যাকা- চালায়। এতে প্রাণ হারায় ৬২ জন। কিন্তু এ সংগঠনটির নেতা ব্রিটেনের রাজনৈতিক আশ্রয়ের সুযোগ পান।
১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ঠ্র ৩০টি বিদেশী সন্ত্রাসী সংগঠনের একটি তালিকা প্রকাশ করে। এর মধ্যে ৬টির সদর দফতর পরিচালিত হয় লন্ডন থেকে। এগুলো হলো ইসলামিক গ্রুপ (মিসর), আল জিহাদ (মিসর), হামাস (ফিলিস্তিন), আর্মড ইসলামিক গ্রুপ (আল জেরিয়া, ফদ্ধান্স), কদুর্িশ ওয়ার্কার পার্টির (তুরস্ক) ও এলটিটিই (শ্রীলংকা)। ১৯৯৭ সালে ব্রিটিশ সরকার ইন্টারন্যাশনাল বু্যরো ফর দি ডিফেন্স অব দি ইজিপশিয়ান পিপল অ্যান্ড দি ইসলামিক অবজারভেটরি নামে মিসরের ইসলামিক গ্রুপ ও ইসলামিক জিহাদকে লন্ডনে মিডিয়া অফিস স্থাপনের অনুমতি দেয়। ১৯৯৮ সালে সৌদি ভিন্নমতালম্বী আল মাসারি ও লন্ডনভিত্তিক আল মুহাজিরুনের প্রধান ওমর বাকরি মার্কিন স্থাপনাগুলোয় হামলার হুমকি দেয়। এ হুমকির প্রতি সমর্থন জানায় লন্ডনভিত্তিক ৬০টি সংগঠন। ওয়াশিংটন পোস্টের তথ্য মতে, নাইন-ইলেভেনের পর ২০০১ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে লন্ডনে ৭০০ সন্দেহভাজন ইসলামী জঙ্গিকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে মাত্র ১৭ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
হারানো ইতিহাস আর ঐতিহ্যকে ফিরে পেতে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে মুসলানদের লড়াই আজো বিদ্যমান। তবে এ লড়াইয়ে সবাই যে একই লক্ষ্য ও পন্থায় অগ্রসর হচ্ছে তা বলা যাবে না। বিভিন্ন মত ও পথের পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমাদের দৃষ্টিতে তারা সবাই 'জঙ্গি', 'সন্ত্রাসী'...। সবাইকে একই কাতারে দাঁড় করানোর সুবিধাটা হলো ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনগুলো থেকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে রাখা যায়। আর তাই পশ্চিমা পৃষ্ঠপোষকতায় তালেবান কিংবা আল কায়দার মতো সংগঠনগুলোর বেড়ে ওঠা খুব অস্বাভাবিক নয়। সমাজতান্ত্রিক বিশ্বকে মোকাবেলার নামে এসব ইসলামী শক্তির পৃষ্ঠপোষকতা এখন পশ্চিমাদের জন্য বুমেরাং হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার পরিণতি ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে টুইন টাওয়ারে হামলা। গত বছর লন্ডনে পাতাল রেল ও দোতলা বাসে আত্নঘাতী বোমা হামলা। সর্বশেষে এ বছরের আগস্টে লন্ডনের এয়ারপোটরাউ যুক্তরাষ্ঠ্রগামী ১০টি বিমান ধ্বংসের সন্ত্রাসী পরিকল্পনা। তবে এ পরিকল্পনাটি সফল না হলেও এর পেছনে কারা জড়িত, কিভাবে তারা তাদের সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ক্ষেত্রে ব্রিটেনের নামটিই সামনে চলে এসেছে। সেখানে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের এসব পরিকল্পনার মূল কারিগর হিসেবে চিহিক্রত করা হচ্ছে। নাইন-ইলেভেনের আগে পশ্চিমাবিরোধী যুদ্ধে লন্ডন ওসামা বিন লাদেনের মতাদশরাউর শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত হয়। এখানে যুক্ত হন বিভিন্ন ভাষাভাষীর বদুিব্দজীবী, ধর্ম প্রচারক, অর্থ-জোগানদাতা, অস্ত্র ব্যবসায়ী, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, ভ্রমণ সংস্থা থেকে শুরু করে সামরিক প্রশিক্ষণ পাওয়া বিভিন্ন সেনারা। ইউরোপের অন্য যে কোনো শহরের তুলনায় লন্ডনের সঙ্গে রয়েছে আল কায়দা ও এর অনুসারী সংগঠনগুলোর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। তথ্য-প্রমাণ বলছে, গত ১ দশক ধরে তাদের বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকা- লন্ডন থেকেই পরিচালিত হয়ে আসছে। নাইন-ইলেভেনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লাদেনের জিহাদের ডাক এসেছে লন্ডন থেকে। বিবিসিসহ প্রভাবশালী পত্রিকাগুলোতে সেসময় তার উপস্থিতি ছিল নিয়মিত। ১৯৯৮ সালের জুলাই মাসে ব্রিটিশ এম ১৫-এর এক সাবেক কর্মকর্তা ব্রিটেনের ডেইলি মেইলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফিকে হত্যা প্রচেষ্ঠার পেছনে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা লন্ডনভিত্তিক একটি ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠীকে অর্থায়ন করেছিল। হত্যা প্রচেষ্ঠায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক সদস্যকে এর জন্য ১ লাখ পাউন্ড করে দেওয়া হয়। ১৯৯৬ সালের জুনে সৌদি আরবের দাহরানে মার্কিন সেনা ব্যারাকে বোমা হামলা চালিয়ে ১৯ সেনাকে হত্যা করা হয়। লন্ডনে সৌদি প্রবাসী মোহাম্মদ আল মাসারিকে এ ঘটনায় জড়িতে বলে ধারণা করা হয়। সৌদি রাজতনে্পর পতন ঘটিয়ে একটি কট্টর ইসলামী রাষ্ঠ্র গঠনের ঘোষণা দেওয়া সত্ত্বেও ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ লন্ডনে থাকার জন্য তাকে ৪ বছরের অনুমতি দেয়। লাদেনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ মিত্র। ১৯৯৭ সালের নভেম্বরে মিসরের একটি ইসলামী সংগঠন জামা-আল-ইসলামিয়া পর্যটকদের লক্ষ্য কর নৃশংস এক হত্যাকা- চালায়। এতে প্রাণ হারায় ৬২ জন। কিন্তু এ সংগঠনটির নেতা ব্রিটেনের রাজনৈতিক আশ্রয়ের সুযোগ পান।
১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ঠ্র ৩০টি বিদেশী সন্ত্রাসী সংগঠনের একটি তালিকা প্রকাশ করে। এর মধ্যে ৬টির সদর দফতর পরিচালিত হয় লন্ডন থেকে। এগুলো হলো ইসলামিক গ্রুপ (মিসর), আল জিহাদ (মিসর), হামাস (ফিলিস্তিন), আর্মড ইসলামিক গ্রুপ (আল জেরিয়া, ফদ্ধান্স), কদুর্িশ ওয়ার্কার পার্টির (তুরস্ক) ও এলটিটিই (শ্রীলংকা)। ১৯৯৭ সালে ব্রিটিশ সরকার ইন্টারন্যাশনাল বু্যরো ফর দি ডিফেন্স অব দি ইজিপশিয়ান পিপল অ্যান্ড দি ইসলামিক অবজারভেটরি নামে মিসরের ইসলামিক গ্রুপ ও ইসলামিক জিহাদকে লন্ডনে মিডিয়া অফিস স্থাপনের অনুমতি দেয়। ১৯৯৮ সালে সৌদি ভিন্নমতালম্বী আল মাসারি ও লন্ডনভিত্তিক আল মুহাজিরুনের প্রধান ওমর বাকরি মার্কিন স্থাপনাগুলোয় হামলার হুমকি দেয়। এ হুমকির প্রতি সমর্থন জানায় লন্ডনভিত্তিক ৬০টি সংগঠন। ওয়াশিংটন পোস্টের তথ্য মতে, নাইন-ইলেভেনের পর ২০০১ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে লন্ডনে ৭০০ সন্দেহভাজন ইসলামী জঙ্গিকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে মাত্র ১৭ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
No comments