ইউরোপের সংকটে উদ্বিগ্ন চীন

চীনের বেল্ট প্রস্তুতকারী উ ওয়েনলং হতাশ মনে জানান, 'ইউরোপের অর্ডার ৫০ শতাংশ কমে গেছে। তাই বেল্টের বাজার মন্দা।' তার মতে, আসছে দিনগুলোও ধূসর হবে। ইউরোপের ঋণ সংকটে কমেছে চীনা পণ্যের চাহিদা। এ সংকট বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় সামনের দিনগুলো নিয়ে উদ্বিগ্ন চীনের শিল্পমালিক ও শ্রমিকরা। দেশটির জুডং ট্যাঙ্টাইল গার্মেন্ট লিমিটেডের মার্কেটিং ম্যানেজার ইয়ং লিংটং বলেন, 'সেই জানুয়ারি থেকে আমরা কোন বিদেশী ক্রেতা পাচ্ছি না। তবুও ক্রেতাদের সাড়া পাওয়ার অপেক্ষায় আছি।'


বিশ্বে চীনা পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ২০১০ সালে এ অঞ্চলে ৩৮০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে চীন। কিন্তু ইউরোপের মন্দায় চীনের তৈরী জুতা, জামাকাপড় ও যন্ত্রপাতির চাহিদা কমে যাওয়ায় রপ্তানিনির্ভর দেশটিতে গত কয়েকমাস যাবতই কমে আসছে শিল্পকর্মকান্ড। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপের ঋণসংকট আরো গভীর হলে এ অবস্থার আরো অবনতি হবে। এতে চীনের কারখানাগুলোতে প্রচুর কর্মীকে চাকরি হারাতে হবে। দেশটির লক্ষ লক্ষ কর্মী কাজ করে রপ্তানিনির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলোতে। ফলে বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন চীনের নীতিনির্ধারকরাও।
নিউইয়র্কের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং আইএমএফের চীনা বিভাগের সাবেক প্রধান ইশ্বর প্রসাদ বলেন, 'ইউরোজোনের ঋণ সংকট আরো বেড়ে গেলে চীনের অর্থনীতিতে এর বড় ধরণের প্রভাব পড়বে।' তিনি বলেন, 'ঋণ সংকট বেড়ে গেলে ডলার আরো শক্তিশালী হবে, বাড়বে ইউয়ানের মান। এতে ইউরোপের প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হয়ে মন্দা আরো বাড়বে। আর ইউরোপই হচ্ছে চীনের সবচেয়ে বড় বাজার। অন্যদিকে ইউরোপীয় সংকটের প্রভাব পড়ছে অন্যান্য বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশগুলোতেও। তাতে করে অস্থির হয়ে উঠছে বিশ্ববাজার। ফলে সে সেব দেশেও চীনা পণ্যের চাহিদা কমে যাবে।' বিষটির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন বেইজিংয়ের আইএইচএস গ্লোবাল ইনসাইটের অর্থনীতিবিদ রেন ঝিয়ানফ্যাং। তিনি বলেন, 'যদি কোনভাবে ইউরোপের চাহিদা ভেঙ্গে পড়ে তবে চীনা অর্থনীতিতে এর উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে। কারণ চীনের এক পঞ্চমাংশ পণ্য রপ্তানি হয় ইউরোপের বাজারে।' তবে তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজার যদি ঠিক থাকে তবে প্রভাব ২০০৮ সালের মতো অতো জোরালো হবে না।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ইউরোপের ঋণগ্রস্ত দেশগুলো তাকিয়ে আছে চীনের নগদ অর্থের দিকে। বিশাল অংকের অর্থ নিয়ে চীনও সহায়তায় এগিয়ে এসেছে। বন্ডসহ ইউরোনির্ভর সম্পদ কিনে ইউরোপের অর্থনীতিতে অন্যতম উদ্ধারকারী হিসাবেও অবতীর্ণ হয়েছে দেশটি। এ নিয়ে ইউরোপকে চীন আশ্বস্তও করছে। প্রসাদ বলেন, 'সংকটে নিপতিত ইউরোপকে সহযোগিতা করতে চীনের নীতিনির্ধারকরা কোন কার্পন্য করছেন না। কারণ দেশের কর্মসংস্থান ঠিক রাখতে হলে ইউরোপকে বাঁচাতে হবে।' তাই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গেই বিবেচনা করছেন চীনের নীতিনির্ধারকরা। এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.