ট্রানজিট নয়, ভারতকে ট্রানশিপমেন্ট দেওয়ার পক্ষে আইসিসিবি
প্রতিবেশী ভারতকে ট্রানজিট নয়, বরং ট্রানশিপমেন্ট-সুবিধা দেওয়ার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেছে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স-বাংলাদেশ (আইসিসিবি)। আইসিসিবির মতে, ট্রানজিটের পরিবর্তে বাংলাদেশের ট্রানশিপমেন্ট চুক্তিতে যাওয়া একান্ত বাঞ্ছনীয়। এতে বাংলাদেশি পরিবহনের মাধ্যমে কম সময়ে কম খরচে ভারত তার উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে পণ্য পাঠাতে পারবে এবং উভয় দেশই অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। গতকাল রোববার প্রকাশিত আইসিসিবির ত্রৈমাসিক বুলেটিনের সম্পাদকীয়তে এই অভিমত প্রকাশ করা হয়েছে। এতে ভারতকে ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্ট-সুবিধা দেওয়ার বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করা হয়েছে।
আইসিসিবি বলছে, গত মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বহুল আলোচিত বাংলাদেশ সফরের সময় দুটো মূল ইস্যু—তিস্তার পানি বণ্টন এবং ট্রানজিট চুক্তি স্বাক্ষরিত না হওয়ায় ভারত ও বাংলাদেশে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। তবে দুই প্রধানমন্ত্রী বেশ কিছু ইতিবাচক সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছেন, যেগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ, ভারতসহ নেপাল এবং ভুটানও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে।
আইসিসিবির সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়েছে, অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, ট্রানজিট চুক্তি স্থগিত হওয়া বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। এতে সরকার বরং পুরো বিষয়টি আবার পুনর্বিবেচনা করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাবে এবং চুক্তির ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো পর্যালোচনা করতে পারবে।
আইসিসিবির মতে, আপাতদৃষ্টিতে ট্রানজিট-সুবিধা ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামে পরিচিত উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর জন্য অনেক বেশি সুবিধা বয়ে আনবে বলে মনে করা হচ্ছে। কেননা, ভারতের পশ্চিমাংশ থেকে মালামাল পরিবহনে দূরত্ব ও সময় প্রায় তিন ভাগের এক ভাগে নেমে আসবে এবং পরিবহনের খরচও প্রচুর সাশ্রয় হবে।
এ রকম ব্যবস্থায় ভারতের উৎপাদনকারীরা তাঁদের পণ্য ওই রাজ্যগুলোয় অনেক কম মূল্যে বিক্রি করতে পারবেন, কিন্তু বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা উত্তর-পূর্ব ভারতে তাঁদের ব্যবসা বাড়ানোর সুযোগ হারাবেন বলে আশঙ্কা করছে আইসিসিবি।
আইসিসিবি আরও বলছে, ট্রানজিট-সুবিধার পক্ষে এটা বলা হয় যে বাংলাদেশ ট্রানজিট মাশুল এবং অন্যান্য কার্যক্রম বাবদ বছরে শত শত কোটি ডলার উপার্জন করবে। কিন্তু গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুসারে, বাংলাদেশ ভারতকে ট্রানজিট-সুবিধা দিলে ৩০ বছরে মাত্র ২৩০ কোটি ডলারের মতো আয় আশা করতে পারে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের তুলনায় এটা একেবারেই নগণ্য। আবার এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সাম্প্রতিক এক হিসাব অনুযায়ী ভারতকে ট্রানজিট-সুবিধা দিলে বছরে পাঁচ কোটি ডলার আয় করতে পারবে, যা একেবারেই অপ্রতুল।
আইসিসিবির সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়েছে, যখন থেকে বিশ্বব্যাপী দেশগুলোর সীমানার বাইরে বাণিজ্য সম্প্রসারণ শুরু হয়েছে, তখন থেকেই পণ্য পরিবহনে ট্রানশিপমেন্ট-পদ্ধতির ব্যবহার শুরু।
আইসিসিবি মনে করে, ট্রানশিপমেন্ট চুক্তি হলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ বিভিন্ন মাত্রার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে, ব্যবসায়ের সুযোগ বাড়বে ও নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি বহুলাংশে কমে যাবে। অন্যদিকে ট্রানজিটের ক্ষেত্রে এ ধরনের ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রাপ্তি থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হবে।
প্রস্তাবিত ট্রানজিট পরিকল্পনায় ভারতের ট্রাকগুলো বাংলাদেশের মধ্য দিয়েই ভারতের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যাতায়াত করতে পারবে, অথচ অন্যদিকে বাংলাদেশি পণ্যবাহী ট্রাকগুলো শুধু ভারতের সীমানা পর্যন্ত যেতে পারবে। এ তথ্য উল্লেখ করে আইসিসিবি এটিকে একটি বৈষম্যমূলক সংযোগ পরিকল্পনা হিসেবে অভিহিত করেছে।
আবার বাংলাদেশের ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে ভারতীয় পণ্য নিয়ে ভারতীয় যানবাহন চলাচলের জন্য রাস্তাঘাট তথা অবকাঠামোকে এর উপযোগী করার নিমিত্তে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং তার নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে তা কোথা থেকে আসবে, সেটিও স্পষ্ট নয়। বিদেশি ঋণ অথবা অভ্যন্তরীণ সম্পদ—কোনো উৎস থেকেই এই বিনিয়োগ ফলপ্রসূ হবে বলে মনে করে না আইসিসিবি।
আইসিসিবির প্রকাশনায় আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সড়ক, রেল ও নৌবন্দরের মাধ্যমে ভারত তার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের রাজ্যগুলোর জন্য ট্রানজিট-সুবিধা চেয়েছে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে নেপাল ও ভুটানের সংযোগ স্থাপনের জন্য ভারত রেল ও সড়ক যোগাযোগে সম্মত হয়েছে। যুক্তি হিসেবে বলা হয় যে নেপাল ও ভুটান থেকে ট্রানজিট মাশুল হিসেবে বাংলাদেশ ভালো রাজস্ব আদায় করতে পারবে।
কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন বলে মনে করে আইসিসিবি। সংগঠনটি এর কারণ হিসেবে বলেছে, ভুটানের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ২০০ কোটি ডলারের কম এবং নেপালের অর্থনীতিও খুব বড় নয়। আবার এ দুটি দেশের অর্থনীতি অবিচ্ছেদ্যভাবে ভারতের অর্থনীতির সঙ্গে একীভূত হয়ে আছে। এ দুটো দেশ খুব বেশি রপ্তানিমুখী পণ্যও উৎপাদন করে না।
এমতাবস্থায় বাংলাদেশের ওপর দিয়ে নেপাল ও ভুটান থেকে আশানুরূপ পণ্যসামগ্রী ট্রানজিটে পরিবাহিত হবে না বলে অনুমান করা যায়—আইসিসিবি এমনটি বলছে।
আইসিসিবি আরও বলছে, এডিবি ও অন্যান্য উন্নয়ন-সহযোগীদের মতে উন্নত সড়ক, বন্দর, রেলওয়ে এবং আন্তবাণিজ্য থেকে বাংলাদেশ লাভবান হবে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ বিশেষভাবে লাভবান হতে পারে, যদি ট্রানশিপমেন্ট কাঠামোর আওতায় ভারতীয় পণ্য এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলাচলের জন্য বাংলাদেশি পরিবহন ব্যবহার করে। এতে একদিকে যেমন ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশের ওপর দিয়ে নির্বিঘ্নে চলাচলের সুযোগ পাবে, অন্যদিকে তাদের সময়, দূরত্ব ও পরিবহন খরচের ব্যাপক সাশ্রয় হবে। আবার ট্রানশিপমেন্ট ব্যবস্থায় ভারতীয়দের কোনো প্রকার ট্রানজিট মাশুল দিতে হবে না।
আইসিসিবির সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়েছে, অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, ট্রানজিট চুক্তি স্থগিত হওয়া বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। এতে সরকার বরং পুরো বিষয়টি আবার পুনর্বিবেচনা করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাবে এবং চুক্তির ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো পর্যালোচনা করতে পারবে।
আইসিসিবির মতে, আপাতদৃষ্টিতে ট্রানজিট-সুবিধা ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামে পরিচিত উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর জন্য অনেক বেশি সুবিধা বয়ে আনবে বলে মনে করা হচ্ছে। কেননা, ভারতের পশ্চিমাংশ থেকে মালামাল পরিবহনে দূরত্ব ও সময় প্রায় তিন ভাগের এক ভাগে নেমে আসবে এবং পরিবহনের খরচও প্রচুর সাশ্রয় হবে।
এ রকম ব্যবস্থায় ভারতের উৎপাদনকারীরা তাঁদের পণ্য ওই রাজ্যগুলোয় অনেক কম মূল্যে বিক্রি করতে পারবেন, কিন্তু বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা উত্তর-পূর্ব ভারতে তাঁদের ব্যবসা বাড়ানোর সুযোগ হারাবেন বলে আশঙ্কা করছে আইসিসিবি।
আইসিসিবি আরও বলছে, ট্রানজিট-সুবিধার পক্ষে এটা বলা হয় যে বাংলাদেশ ট্রানজিট মাশুল এবং অন্যান্য কার্যক্রম বাবদ বছরে শত শত কোটি ডলার উপার্জন করবে। কিন্তু গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুসারে, বাংলাদেশ ভারতকে ট্রানজিট-সুবিধা দিলে ৩০ বছরে মাত্র ২৩০ কোটি ডলারের মতো আয় আশা করতে পারে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের তুলনায় এটা একেবারেই নগণ্য। আবার এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সাম্প্রতিক এক হিসাব অনুযায়ী ভারতকে ট্রানজিট-সুবিধা দিলে বছরে পাঁচ কোটি ডলার আয় করতে পারবে, যা একেবারেই অপ্রতুল।
আইসিসিবির সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়েছে, যখন থেকে বিশ্বব্যাপী দেশগুলোর সীমানার বাইরে বাণিজ্য সম্প্রসারণ শুরু হয়েছে, তখন থেকেই পণ্য পরিবহনে ট্রানশিপমেন্ট-পদ্ধতির ব্যবহার শুরু।
আইসিসিবি মনে করে, ট্রানশিপমেন্ট চুক্তি হলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ বিভিন্ন মাত্রার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে, ব্যবসায়ের সুযোগ বাড়বে ও নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি বহুলাংশে কমে যাবে। অন্যদিকে ট্রানজিটের ক্ষেত্রে এ ধরনের ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রাপ্তি থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হবে।
প্রস্তাবিত ট্রানজিট পরিকল্পনায় ভারতের ট্রাকগুলো বাংলাদেশের মধ্য দিয়েই ভারতের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যাতায়াত করতে পারবে, অথচ অন্যদিকে বাংলাদেশি পণ্যবাহী ট্রাকগুলো শুধু ভারতের সীমানা পর্যন্ত যেতে পারবে। এ তথ্য উল্লেখ করে আইসিসিবি এটিকে একটি বৈষম্যমূলক সংযোগ পরিকল্পনা হিসেবে অভিহিত করেছে।
আবার বাংলাদেশের ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে ভারতীয় পণ্য নিয়ে ভারতীয় যানবাহন চলাচলের জন্য রাস্তাঘাট তথা অবকাঠামোকে এর উপযোগী করার নিমিত্তে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং তার নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে তা কোথা থেকে আসবে, সেটিও স্পষ্ট নয়। বিদেশি ঋণ অথবা অভ্যন্তরীণ সম্পদ—কোনো উৎস থেকেই এই বিনিয়োগ ফলপ্রসূ হবে বলে মনে করে না আইসিসিবি।
আইসিসিবির প্রকাশনায় আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সড়ক, রেল ও নৌবন্দরের মাধ্যমে ভারত তার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের রাজ্যগুলোর জন্য ট্রানজিট-সুবিধা চেয়েছে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে নেপাল ও ভুটানের সংযোগ স্থাপনের জন্য ভারত রেল ও সড়ক যোগাযোগে সম্মত হয়েছে। যুক্তি হিসেবে বলা হয় যে নেপাল ও ভুটান থেকে ট্রানজিট মাশুল হিসেবে বাংলাদেশ ভালো রাজস্ব আদায় করতে পারবে।
কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন বলে মনে করে আইসিসিবি। সংগঠনটি এর কারণ হিসেবে বলেছে, ভুটানের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ২০০ কোটি ডলারের কম এবং নেপালের অর্থনীতিও খুব বড় নয়। আবার এ দুটি দেশের অর্থনীতি অবিচ্ছেদ্যভাবে ভারতের অর্থনীতির সঙ্গে একীভূত হয়ে আছে। এ দুটো দেশ খুব বেশি রপ্তানিমুখী পণ্যও উৎপাদন করে না।
এমতাবস্থায় বাংলাদেশের ওপর দিয়ে নেপাল ও ভুটান থেকে আশানুরূপ পণ্যসামগ্রী ট্রানজিটে পরিবাহিত হবে না বলে অনুমান করা যায়—আইসিসিবি এমনটি বলছে।
আইসিসিবি আরও বলছে, এডিবি ও অন্যান্য উন্নয়ন-সহযোগীদের মতে উন্নত সড়ক, বন্দর, রেলওয়ে এবং আন্তবাণিজ্য থেকে বাংলাদেশ লাভবান হবে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ বিশেষভাবে লাভবান হতে পারে, যদি ট্রানশিপমেন্ট কাঠামোর আওতায় ভারতীয় পণ্য এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলাচলের জন্য বাংলাদেশি পরিবহন ব্যবহার করে। এতে একদিকে যেমন ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশের ওপর দিয়ে নির্বিঘ্নে চলাচলের সুযোগ পাবে, অন্যদিকে তাদের সময়, দূরত্ব ও পরিবহন খরচের ব্যাপক সাশ্রয় হবে। আবার ট্রানশিপমেন্ট ব্যবস্থায় ভারতীয়দের কোনো প্রকার ট্রানজিট মাশুল দিতে হবে না।
No comments