তারেক বাবর মুজাহিদ হারিছের বিচার শুরু
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্র অনুযায়ী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। গতকাল রবিবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান।উত্থাপিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক শাহেদ নুর উদ্দিন আগামী ১৩ অক্টোবর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। ওই দিন আসামিপক্ষের বক্তব্য শুনবেন ট্রাইব্যুনাল।
গতকাল অভিযোগ উত্থাপনের মধ্য দিয়ে তারেক রহমানসহ বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা এবং কয়েকজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ও জঙ্গি নেতার বিচার শুরু হলো।
তারেক রহমান ছাড়া আর যাঁদের বিচার শুরু হলো তাঁরা হলেন_বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাগ্নে সাইফুল ইসলাম ডিউক, বিগত জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা ও সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, ডিজিএফআইয়ের সাবেক কর্মকর্তা লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার (বরখাস্ত); পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বঙ্; ডিএমপির তৎকালীন উপকমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান ও সাবেক উপকমিশনার (দক্ষিণ) খান সাইদ হাসান; সিআইডির সাবেক সুপারিনটেনডেন্ট রুহুল আমিন, সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট মুন্সী আতিকুর রহমান ও সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট আবদুর রশিদ; মো. হানিফ ওরফে পরিবহন হানিফ, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ছোট ভাই বাবু ওরফে রাতুল বাবু; নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) আমির মাওলানা শেখ ফরিদ, নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল হান্নান ওরফে সাবি্বর; মাওলানা আবদুর রউফ; হুজির সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির (আইডিপি) আহ্বায়ক মাওলানা আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আবদুল মাজেদ বাট ওরফে ইউসুফ বাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, বিএনপির ঢাকা মহানগর শাখার নেতা ও ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফুল ইসলাম ওরফে আরিফ।
সম্পূরক অভিযোগপত্রভুক্ত ১৮ জন কারাগারে আছেন। কাউন্সিলর আরিফ জামিনে আছেন। তারেক, হারিছ, কায়কোবাদসহ ১১ আসামি পলাতক।
গতকাল আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য ছিল। কারাগারে থাকা আসামিদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। আসামিদের পক্ষে তাঁদের আইনজীবীরা অভিযোগ গঠনের শুনানি করার জন্য সময়ের আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল সময়ের আবেদন নামঞ্জুর করেন। বিচারক মন্তব্য করেন, এর আগে কয়েকবার সময় দেওয়া হয়েছে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এতবার সময় দেওয়ার সুযোগ নেই। তিনি রাষ্ট্রপক্ষকে অভিযোগ উত্থাপনের জন্য বলেন। পরে সৈয়দ রেজাউর রহমান প্রত্যেক আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেন। প্রত্যেক আসামির বিরুদ্ধে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে বলে তিনি ট্রাইব্যুনালকে জানান।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, মামলায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় প্রথম অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ওই অভিযোগপত্রে নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদের নেতা মুফতি হান্নান, জোট সরকারের সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, তাঁর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে আগে অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল এবং সাক্ষ্য গ্রহণও শুরু হয়েছিল। একপর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষে অধিকতর তদন্তের আবেদন জানানো হলে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে অধিকতর তদন্ত হয়। অধিকতর তদন্তে আরো ৩০ জনের বিরুদ্ধে ২১ আগস্টের ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রথম অভিযোগপত্রভুক্ত ২২ আসামির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে, তা নতুন করে তুলে ধরেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, আগের ২২ আসামির সঙ্গে নতুন ৩০ আসামির যোগসূত্র রয়েছে। সব আসামি শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনাস্থলে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এরপর ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে প্রকৃত হামলাকারীদের বাঁচানোর এবং নিরপরাধ ব্যক্তিদের মামলার আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেন আসামিরা।
প্রথম অভিযোগপত্রভুক্ত ২২ আসামির মধ্যে বর্তমানে ১৪ জন কারাগারে রয়েছেন। তাঁরা হলেন_সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান, তাঁর ভাই মফিজুর রহমান ওরফে অভি, আবুল কালাম আজাদ, শরিফ শহিদুল ইসলাম ওরফে বিপুল, মাওলানা আবু সাইদ ওরফে ডা. আবু জাফর, জাহাঙ্গীর আলম, মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহমেদ ওরফে তামীম, মুফতি মইন উদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, রফিকুল ইসলাম গাজী ওরফে সবুজ, উজ্জ্বল ওরফে রতন ও শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল।
পলাতক রয়েছেন আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, ইকবাল (ঝিনাইদহ), মাওলানা আবু বকর (বরিশাল), খলিলুর রহমান (মাগুরা), জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর (দোহার, ঢাকা) ও মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার (গোপালগঞ্জ)। এ ছাড়া হুজির সদস্য আনিসুল মোরসালিন ও মহিবুল মোত্তাকিন ভারতের তিহার কারাগারে আটক রয়েছেন। এ নিয়ে মোট আটজন পলাতক রয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আরো বলেন, এটি একটি বিরল হত্যাকাণ্ড। জঘন্যতম এই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান রাষ্ট্রপতির স্ত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন। এ ছাড়া ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র হানিফসহ শত শত লোক সেখানে আহত হন।
সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, বহুল আলোচিত হাওয়া ভবনসহ ঢাকার মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, খিলগাঁও ও মিরপুরে জঙ্গিদের আস্তানায় বসে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার গোপন বৈঠক, ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, সিলেটে ছাত্রনেতা তুষার হত্যার প্রতিবাদে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ঘটনার দিন বিকেল ৪টা ২২ মিনিটে আয়োজিত সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষে গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ২৪ জনকে হত্যা করা হয়। শেখ হাসিনা বেঁচে যান; কিন্তু গুরুতর আহত হন। শতাধিক লোকও গুরুতর আহত হন। এ কারণে সব আসামির বিরুদ্ধে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উত্থাপন করা হলো।
তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর, হারিছ চৌধুরী, কায়কোবাদ, মুজাহিদ এবং সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা ও হত্যার মদদদাতা হিসেবে অভিযোগ আনা হয়।
পুলিশের সাবেক আইজি খোদা বঙ্ চৌধুরী, সিআইডির সাবেক সুপার রুহুল আমিন, সাবেক সহকারী সুপার মুন্সী আতিকুর রহমান ও সহকারী সুপার আবদুর রশিদ_এই চারজন পারস্পরিক যোগসাজশে মূল আসামিদের শাস্তির দায় থেকে রেহাই দিতে আইন অমান্য করে প্রলোভন দেখিয়ে বলপূর্বক কয়েকজনের মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করেছেন। একই সঙ্গে তাঁরা ঘটনার সময়কার বিভিন্ন আলামত নষ্ট করেন বলে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়।
পলাতক আসামি সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই বাবু ওরফে রাতুল বাবু অপরাপর আসামির সঙ্গে ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন। এমনকি তিনি সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিলেন। অন্য জঙ্গিরাও সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিলেন।
বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলায়ও সব আসামির বিরুদ্ধে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, বিস্ফোরক দখলে রাখা, বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করার অভিযোগ উত্থাপন করা হয়।
মামলার আসামি সাবেক আইজি (অব.) খোদা বঙ্ চৌধুরী, পাকিস্তানি নাগরিক আবদুল মাজেদ ভাট, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাগ্নে সাইফুল ইসলাম ডিউক, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, হুজির নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল হান্নান ওরফে সাবি্বর, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়ার পক্ষে তাঁদের আইনজীবী মামলা থেকে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানান। ট্রাইব্যুনাল আগামী ধার্য তারিখে এসব আবেদনের ওপর শুনানি হবে বলে জানান।
এদিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের পক্ষে তাঁর আইনজীবী কারাগারে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেওয়ার আবেদন জানান। ট্রাইব্যুনাল কারা কর্তৃপক্ষকে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। অপর আসামি সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর পক্ষে তাঁর আইনজীবী মামলা সম্পর্কে ধারণা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কারাগার ও ট্রাইব্যুনালে আনা-নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার আবেদন জানান। ট্রাইব্যুনাল এ আবেদন নাকচ করেন।
প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। তিনি আহত হয়ে প্রাণে বেঁচে গেলেও বর্তমান রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন ওই ঘটনায় নিহত হন। এতে বহু নেতা-কর্মী আহত হন।
তারেক রহমান ছাড়া আর যাঁদের বিচার শুরু হলো তাঁরা হলেন_বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাগ্নে সাইফুল ইসলাম ডিউক, বিগত জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা ও সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, ডিজিএফআইয়ের সাবেক কর্মকর্তা লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার (বরখাস্ত); পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বঙ্; ডিএমপির তৎকালীন উপকমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান ও সাবেক উপকমিশনার (দক্ষিণ) খান সাইদ হাসান; সিআইডির সাবেক সুপারিনটেনডেন্ট রুহুল আমিন, সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট মুন্সী আতিকুর রহমান ও সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট আবদুর রশিদ; মো. হানিফ ওরফে পরিবহন হানিফ, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ছোট ভাই বাবু ওরফে রাতুল বাবু; নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) আমির মাওলানা শেখ ফরিদ, নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল হান্নান ওরফে সাবি্বর; মাওলানা আবদুর রউফ; হুজির সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির (আইডিপি) আহ্বায়ক মাওলানা আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আবদুল মাজেদ বাট ওরফে ইউসুফ বাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, বিএনপির ঢাকা মহানগর শাখার নেতা ও ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফুল ইসলাম ওরফে আরিফ।
সম্পূরক অভিযোগপত্রভুক্ত ১৮ জন কারাগারে আছেন। কাউন্সিলর আরিফ জামিনে আছেন। তারেক, হারিছ, কায়কোবাদসহ ১১ আসামি পলাতক।
গতকাল আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য ছিল। কারাগারে থাকা আসামিদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। আসামিদের পক্ষে তাঁদের আইনজীবীরা অভিযোগ গঠনের শুনানি করার জন্য সময়ের আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল সময়ের আবেদন নামঞ্জুর করেন। বিচারক মন্তব্য করেন, এর আগে কয়েকবার সময় দেওয়া হয়েছে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এতবার সময় দেওয়ার সুযোগ নেই। তিনি রাষ্ট্রপক্ষকে অভিযোগ উত্থাপনের জন্য বলেন। পরে সৈয়দ রেজাউর রহমান প্রত্যেক আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেন। প্রত্যেক আসামির বিরুদ্ধে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে বলে তিনি ট্রাইব্যুনালকে জানান।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, মামলায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় প্রথম অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ওই অভিযোগপত্রে নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদের নেতা মুফতি হান্নান, জোট সরকারের সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, তাঁর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে আগে অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল এবং সাক্ষ্য গ্রহণও শুরু হয়েছিল। একপর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষে অধিকতর তদন্তের আবেদন জানানো হলে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে অধিকতর তদন্ত হয়। অধিকতর তদন্তে আরো ৩০ জনের বিরুদ্ধে ২১ আগস্টের ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রথম অভিযোগপত্রভুক্ত ২২ আসামির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে, তা নতুন করে তুলে ধরেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, আগের ২২ আসামির সঙ্গে নতুন ৩০ আসামির যোগসূত্র রয়েছে। সব আসামি শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনাস্থলে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এরপর ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে প্রকৃত হামলাকারীদের বাঁচানোর এবং নিরপরাধ ব্যক্তিদের মামলার আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেন আসামিরা।
প্রথম অভিযোগপত্রভুক্ত ২২ আসামির মধ্যে বর্তমানে ১৪ জন কারাগারে রয়েছেন। তাঁরা হলেন_সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান, তাঁর ভাই মফিজুর রহমান ওরফে অভি, আবুল কালাম আজাদ, শরিফ শহিদুল ইসলাম ওরফে বিপুল, মাওলানা আবু সাইদ ওরফে ডা. আবু জাফর, জাহাঙ্গীর আলম, মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহমেদ ওরফে তামীম, মুফতি মইন উদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, রফিকুল ইসলাম গাজী ওরফে সবুজ, উজ্জ্বল ওরফে রতন ও শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল।
পলাতক রয়েছেন আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, ইকবাল (ঝিনাইদহ), মাওলানা আবু বকর (বরিশাল), খলিলুর রহমান (মাগুরা), জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর (দোহার, ঢাকা) ও মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার (গোপালগঞ্জ)। এ ছাড়া হুজির সদস্য আনিসুল মোরসালিন ও মহিবুল মোত্তাকিন ভারতের তিহার কারাগারে আটক রয়েছেন। এ নিয়ে মোট আটজন পলাতক রয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আরো বলেন, এটি একটি বিরল হত্যাকাণ্ড। জঘন্যতম এই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান রাষ্ট্রপতির স্ত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন। এ ছাড়া ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র হানিফসহ শত শত লোক সেখানে আহত হন।
সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, বহুল আলোচিত হাওয়া ভবনসহ ঢাকার মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, খিলগাঁও ও মিরপুরে জঙ্গিদের আস্তানায় বসে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার গোপন বৈঠক, ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, সিলেটে ছাত্রনেতা তুষার হত্যার প্রতিবাদে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ঘটনার দিন বিকেল ৪টা ২২ মিনিটে আয়োজিত সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষে গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ২৪ জনকে হত্যা করা হয়। শেখ হাসিনা বেঁচে যান; কিন্তু গুরুতর আহত হন। শতাধিক লোকও গুরুতর আহত হন। এ কারণে সব আসামির বিরুদ্ধে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উত্থাপন করা হলো।
তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর, হারিছ চৌধুরী, কায়কোবাদ, মুজাহিদ এবং সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা ও হত্যার মদদদাতা হিসেবে অভিযোগ আনা হয়।
পুলিশের সাবেক আইজি খোদা বঙ্ চৌধুরী, সিআইডির সাবেক সুপার রুহুল আমিন, সাবেক সহকারী সুপার মুন্সী আতিকুর রহমান ও সহকারী সুপার আবদুর রশিদ_এই চারজন পারস্পরিক যোগসাজশে মূল আসামিদের শাস্তির দায় থেকে রেহাই দিতে আইন অমান্য করে প্রলোভন দেখিয়ে বলপূর্বক কয়েকজনের মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করেছেন। একই সঙ্গে তাঁরা ঘটনার সময়কার বিভিন্ন আলামত নষ্ট করেন বলে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়।
পলাতক আসামি সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই বাবু ওরফে রাতুল বাবু অপরাপর আসামির সঙ্গে ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন। এমনকি তিনি সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিলেন। অন্য জঙ্গিরাও সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিলেন।
বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলায়ও সব আসামির বিরুদ্ধে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, বিস্ফোরক দখলে রাখা, বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করার অভিযোগ উত্থাপন করা হয়।
মামলার আসামি সাবেক আইজি (অব.) খোদা বঙ্ চৌধুরী, পাকিস্তানি নাগরিক আবদুল মাজেদ ভাট, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাগ্নে সাইফুল ইসলাম ডিউক, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, হুজির নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল হান্নান ওরফে সাবি্বর, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়ার পক্ষে তাঁদের আইনজীবী মামলা থেকে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানান। ট্রাইব্যুনাল আগামী ধার্য তারিখে এসব আবেদনের ওপর শুনানি হবে বলে জানান।
এদিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের পক্ষে তাঁর আইনজীবী কারাগারে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেওয়ার আবেদন জানান। ট্রাইব্যুনাল কারা কর্তৃপক্ষকে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। অপর আসামি সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর পক্ষে তাঁর আইনজীবী মামলা সম্পর্কে ধারণা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কারাগার ও ট্রাইব্যুনালে আনা-নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার আবেদন জানান। ট্রাইব্যুনাল এ আবেদন নাকচ করেন।
প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। তিনি আহত হয়ে প্রাণে বেঁচে গেলেও বর্তমান রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন ওই ঘটনায় নিহত হন। এতে বহু নেতা-কর্মী আহত হন।
No comments