হকির সর্বনাশ যা হওয়ার হয়ে গেছে
মুমূর্ষুপ্রায় হকির স্বজন যাঁরা, সেই খেলোয়াড়রা কেমন আছেন? কিভাবে সময় কাটছে তাঁদের? হতাশা আর দীর্ঘশ্বাস মেশানো সেই বেদনার খোঁজ নিতেই কালের কণ্ঠ স্পোর্টস মুখোমুখি হয়েছিল জাতীয় দলের খেলোয়াড় কৃষ্ণ কুমারের।খেলা তো নেই, সময় কাটছে কিভাবে?কৃষ্ণ কুমার : সময় তো কাটতে চায় না, সারাক্ষণ মন খারাপ হয়ে থাকে। ঘাসে প্র্যাকটিসও করা যায় না, তাই ফুটবল খেলি যাতে ফিটনেসটা ধরে রাখা যায়। যদিও জানি না আবার কবে খেলা হবে। আজকের পত্রিকাতেই দেখলাম, জামিল ভাই বলেছেন আর কোনো সমস্যা থাকবে না। কিন্তু এই কথা তো কবে থেকেই শুনে আসছি। কিছুতেই তো কিছু হচ্ছে না।
প্রশ্ন : পরিবারে কী প্রতিক্রিয়া?
কৃষ্ণ : আম্মা বলেন, কিছু একটা কর। আমিও বুঝতে পারি কিছু একটা করতে হবে। দেখা যাক কী হয়! সেনাবাহিনী থেকে একটা প্রস্তাব আছে। ভাবছি খেলোয়াড় কোটার সেই সুযোগটাই নেব। লিগ-টিগ তো হয় না, ডিফেন্সে তবু আন্ত-ইউনিট, আন্তবাহিনী খেলাগুলো হয়, সারা বছর প্র্যাকটিস করা যায়। যদিও নিয়ম অনেক, কিন্তু এখন এ ছাড়া তো বিকল্প কিছু দেখছি না।
প্রশ্ন : আপনি তো রাজশাহীর বৈকালী সংঘ থেকে উঠে এসেছেন, সেখানে এখন হকির চর্চাটা কেমন?
কৃষ্ণ : খেলোয়াড় অনেক কমে গেছে। বৈকালী ক্লাবটা তো আমার বাড়ির পাশেই। ছোটবেলায় আমি যখন খেলেছি, তখন ৮০-১০০ জন খেলোয়াড় সব সময়ই ছিল। এখন সেখানে ৩০ জন। অভিভাবকরাও হকি নিয়ে এখন আগ্রহ দেখান না। আমি নিজেই তো আরেকটা ছেলেকে বলতে পারি না, হকি খেলো। কোন মুখে বলব! বিশ্বাস করবেন, জাতীয় দলের খেলোয়াড় পরিচয় দিতেও লজ্জা লাগে।
প্রশ্ন : জাতীয় দলের আর সবারই কি এখন একই আক্ষেপ?
কৃষ্ণ : তা-ই হওয়ার কথা। আমি কিন্তু ক্রিকেটও ভালো খেলতাম। এলাকায় সব সময়ই খেলি। মাঝেমধ্যে মনে হয়, যদি ক্রিকেটটা নিয়েই ভাবনা-চিন্তা করতাম, বিকেএসপিতে ভর্তি হতাম, তাহলে জীবনটা হয়তো বদলে যেত। অন্তত এটা তো বলতে পারতাম, দেশের ১ নম্বর খেলাটা খেলি। এখন হকির স্থানটা কোথায় বলতে পারেন! আমার তো মনে হয় এই যে আপনারা পত্রিকায় হকি নিয়ে লেখালেখি করেন তাতে ওই জায়গাটুকুই শুধু নষ্ট হয়, লোকে পড়ারও চেষ্টা করে না।
প্রশ্ন : জাতীয় দলে তো চার-পাঁচ বছর ধরে খেলছেন, শুরুতে স্বপ্নটা কেমন ছিল?
কৃষ্ণ : আমি একেবারে ছোটবেলায় স্টিক হাতে নিয়েছি। ঢাকায় কয়েকবার এসে স্কুল টুর্নামেন্ট খেলেছি। ছয়-সাত বছর আগেও কিন্তু স্কুল টুর্নামেন্টগুলো নিয়মিত হতো। খেলার কথা বাড়ি থেকেও বলত, এখন কিন্তু বলে না।
প্রশ্ন : জাতীয় দলের অনেকেই এখন দেশের বাইরে গিয়ে লিগ খেলছে, আপনি যাচ্ছেন না কেন?
কৃষ্ণ : আমারও যাওয়ার কথা ছিল। কয়েক দিন আগেই যেমন জার্মানি যাওয়ার প্রস্তাব দিল পিটার, কিন্তু তখন জাতীয় দলের সঙ্গে ভারত যাওয়ায় আর যাওয়া হয়নি। এ নিয়ে পিটারের সঙ্গে আবার ভুল বোঝাবুঝিও হলো। তাই পরে আর ডাকেনি। এখন আবার শুনছি যাওয়া হতে পারে। তো সুযোগ পেলেই আমি যাব। দেশের হকির সর্বনাশ যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। খেলার সুযোগ পেলে আমরা হাতছাড়া করব কেন?
No comments