ইরাকের ওপর ইরানের প্রভাব বাড়ছে
ইরাকের ওপর ইরানের প্রভাব বাড়ছে। এ বছরের শেষ দিকে ইরাক থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে যুক্তরাষ্ট্র। তারপর যে শূন্যতা সৃষ্টি হবে তা যুক্তরাষ্ট্রের চিরশত্রু হিসেবে পরিচিত ইরান পূরণ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এমন ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। অর্থাৎ ওয়াশিংটনের বলয় থেকে বের হয়ে তেহরানের বৃত্তে ঢুকে যাচ্ছে বাগদাদ। বিষয়টি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনকেও ভাবিয়ে তুলেছে।সিরিয়া প্রসঙ্গেই ইরাকের ইরানপ্রীতির সবচেয়ে ভালো নজির পাওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্র বেশ কিছু দিন থেকে বিরোধীদের আন্দোলনে বিপর্যস্ত সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে আসছে।
- যুক্তরাষ্ট্রের স্পষ্ট এ অবস্থানের পরও ইরাক দেশটিকে নৈতিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক কারণে দীর্ঘদিন থেকে ইরানের সঙ্গে সিরিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ইরাকও একই অবস্থান নেওয়ায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে ওবামা প্রশাসন। তারা সিরিয়ার বিক্ষোভের শুরু থেকেই আসাদ প্রশাসনকে নিঃসঙ্গ করতে মুসলিম দেশগুলোর সমর্থন চেয়ে প্রচার চালাচ্ছিল। অনেকাংশে সফলও হয়েছে। ইতিমধ্যেই সৌদি আরব, কুয়েত, বাহরাইন ও সিরিয়ার দীর্ঘদিনের সহযোগী ও প্রতিবেশী তুরস্কও মার্কিন আহ্বানে সাড়া দিয়ে দামেস্কের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও সিরিয়ার ওপর কয়েক দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এমন এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের সমর্থনপুষ্ট ইরাক সিরিয়ার সঙ্গে কয়েকটি বাণিজ্য চুক্তি সই করেছে, এমনকি তাদের রাজনৈতিক সহায়তারও প্রস্তাব দিয়েছে। বিষয়টি মার্কিন প্রশাসনের জন্য খুব একটা সুখকর নয়।
- ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি গত মাসে ইরাকি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে বাশার প্রশাসনের ব্যাপারে তাঁর দৃঢ় সমর্থনের কথা জানিয়ে দেন। তিনি বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি, সংস্কারের মাধ্যমে বর্তমান সংকট থেকে বের হয়ে আসতে পারবে সিরিয়া।' আসাদের পদত্যাগের মার্কিন আহ্বান নাকচ করে দেন তিনি। তাঁর বক্তব্যে ইরানি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদের সুর পাওয়া যায়। এর আগে ইরানি প্রেসিডেন্টও বলেছিলেন, তারা (সিরিয়া) 'নিজেরাই প্রয়োজনীয় সংস্কার আনবে।'
- সিরিয়া ছাড়াও বেশ কয়েকটি বিষয়ে আল-মালিকি সম্প্রতি ইরানের অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। পরমাণু প্রযুক্তিতে ইরানের অধিকারের প্রতি সমর্থন জানানোর পাশাপাশি জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদের আবেদনেও সাড়া দিয়েছে ইরাক। দুটি প্রসঙ্গেই প্রবল আপত্তি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।
- মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা ডেভিড পোলোক বলেন, 'ইরান তাদের জাতীয় স্বার্থের কারণেই আসাদ প্রশাসনের সুরক্ষা চায়। আর দামেস্কের বন্ধুকে রক্ষা করতে ইরাকের সহায়তা চায় ইরান।' ইরাকের সিরিয়ানীতি নিয়ে এক মার্কিন কর্মকর্তা গভীর হতাশা প্রকাশ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, 'নিশ্চিতভাবেই আমাদের আরো সহায়তা করা উচিত ছিল ইরাকিদের।' সিরিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং "এন দ্য লায়ন'স ডেন" বইয়ের লেখক অ্যান্ড্রু তাবলের বলেন, 'সিরিয়াকে ইরাক একটি লাইফলাইন দিচ্ছে।' তিনি বলেন, আল-মালিকি এক সময় সিরিয়ায় ১৫ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটিয়েছেন। কৌশলগত ও সাম্প্রদায়িক কারণেই তিনি আসাদের সঙ্গে সংঘাতে যেতে চান না।
- এ ছাড়া ইরাকে প্রভাবশালী ও ইরানপন্থী শিয়া নেতা মোকতাদা আল-সদর প্রকাশ্যে আসাদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। সদরের কয়েক লাখ অনুসারী রয়েছে। এ বিষয়টিও হয়তো আল-মালিকির হিসাবের মধ্যে রয়েছে। ফলে সিরিয়ার বিরোধিতা তাঁকে রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে ফেলতে পারে। এ ছাড়া সিরিয়ায় ইরাকের ১০ লাখ শরণার্থীও রয়েছে। সূত্র : দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট।
No comments