সার্কের মাধ্যমেই বোঝাপড়া by এম সাখাওয়াত হোসেন
সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞা নিয়ে সমগ্র বিশেষ খব পরসঙ্র বিপরীতধর্মী ব্যাখ্যা রয়েছে। সন্ত্রাস একটা হাতিয়ার। যে কোনো গ্রুপ এই হাতিয়ার ব্যবহার করতে পারে। সন্ত্রাস প্রচলিত যুদ্ধেও ব্যবহূত হতে পারে। সেটি নিয়ন্ত্রিত। বিভিন্ন ধরনের কৌশল, স্যাবোটাজ অবলম্বনের মাধ্যমে এটা হয়ে থাকে। প্রতিপক্ষকে সন্ত্রস্ত করার জন্য। সন্ত্রাসকে আমরা দু'ভাগে ভাগ করতে পারি। এক. রাজনৈতিক সন্ত্রাস; দুই. সামাজিক সন্ত্রাস। সামাজিক সন্ত্রাস হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে চাঁদাবাজি, অপহরণ, লুটপাট বা নৈরাজ্য সৃষ্টি করে ফায়দা লোটা বা উদ্দেশ্য পূরণ করা।
রাজনৈতিক সন্ত্রাস হচ্ছে_ কোনো দুর্বল শক্তি বা সংগঠন, যদি সবল বা শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে কোনো এজেন্ডা তুলে ধরতে চায় তখন তারা রাজনৈতিক এজেন্ডা প্রতিষ্ঠার জন্য সন্ত্রাস করে কিংবা অন্যভাবে বলা যায়, সন্ত্রাসের মতো হাতিয়ার অবলম্বন বা ব্যবহার করা। বিশেষ করে একটা শক্তি (কোনো সংস্থা ও সংগঠন, যাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা আছে) তারা যদি তাদের শক্তি ্টারা সরকারকে পর্যদুস্ত করতে চায় তাহলে সেই শক্তির প্রকাশ ঘটায়। এর মাধ্যমে তারা সরকারকে সংলাপে বসার কিংবা বাধ্য করার পর্যায়ে নিয়ে যেতে চেষ্ঠা করে। আবার আমরা এও দেখেছি, স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরদুব্দবাদী যারা তারাও কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের বি&চ্ছিম্নতাবাদী বা দেশদ্রোহী আখ্যায়িত করে। যেমন ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা কিংবা তাদের দোসররা মুক্তিযোদ্ধাদের সেভাবে আখ্যায়িত করেছিল, দুষ্ফ্কৃতকারীও বলেছিল। আলজেরিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধেও মুক্তিযোদ্ধাদের এভাবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল।
আমাদের উপমহাদেশের দিকে চোখ বুলালে দেখা যাবে, সবচেয়ে বেশি কথা হয়েছে কাশ্মীর নিয়ে। এই সংঘাত প্রায় ৫৬ বছর চলছে। তবে গত ১৫-১৬ বছরে কাশ্মীরে বিভিন্ন সংগঠন সম্পৃক্ত হয়েছে, যারা নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা বলছে। পাকিস্তান এদের ব্যাপারে তাদের নৈতিক সমর্থন দিয়ে আসছে। যদিও ভারত অভিযোগ করছে, পাকিস্তান এদের অস্ত্র-গোলাবারদু দিয়ে সহযোগিতা করছে। পাকিস্তান বলছে, ওরা কাশ্মীরি এবং তারা তাদের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করছে। ভারত বলছে, তারা জঙ্গি, স্বাধীনতাকামী নয়, ওরা সন্ত্রাসী। ঘটনাক্রমে কাশ্মীরের মেজরিটি লোক মুসলমান, কাজেই কাশ্মীরের স্বাধীনতার জন্য যারা যুদ্ধ করছে তারা ঘটনাচত্রেক্রই সব মুসলমান। এখন কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামীদের নিয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের সংজ্ঞা দু'ধরনের। কাজেই দক্ষিণ এশিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে যখন আমরা পারসঙ্রিক সহযোগিতার কথা বলব, যখন আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কো-অপারেশনের কথা বলব, স্বাভাবিক কারণেই আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। সম্প্রতি দিল্লিতে ব্যাপক বোমা হামলা হয়েছে। হতাহত হয়েছে অনেক। ক্ষয়ক্ষতিও ব্যাপক। যে সংগঠন এই হামলা চালিয়েছে তাদের নাম এই প্রথম শোনা গেল। ভারত এজন্য দায়ী করছে পাকিস্তানকে। তারা বলছে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বাই এ কা- ঘটিয়েছে এবং পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও এর সঙ্গে জড়িত। এখন দেখা যাচ্ছে, ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের যে একটা সুবাতাস প্রবাহিত হচ্ছেল, ব্যাপক ভূমিকম্প ঘটার পর যার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, সেখানে এখন এই সন্দেহ দানা বাঁধছে, বাড়ছে পারসঙ্রিক বিশ্বাসে ফাটল, সংশয়। ভারতের নীতি-নির্ধারকরা মনে করছেন, সন্ত্রাস মোকাবেলায় পাকিস্তান যথেষ্ঠ আন্তরিক নয়। কাজেই দক্ষিণ এশিয়ায় সার্কের মাধ্যমে আমরা যে পারসঙ্রিক সহযোগিতার বন্দন দেখব সেটা দেখতে পাচ্ছে না।
আসন্ন সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে হঠাৎ করে এই কো-অপারেশন করা সম্ভব নয়। কারণ, কোনো ধরনের মেকানিজম নেই। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, এ উদ্যোগটা ভারতের পক্ষ থেকেই প্রথমত এবং সর্বাগ্রে নেওয়া উচিত। কারণ, বড় রাষ্ঠ্র হিসেবে তাদেরই দায়িত্ব বেশি। তাদের মনোভাব ও আচরণেই প্রকাশ করতে হবে যে, প্রতিবেশী দেশগুলো তাদের বন্দু ও মিত্র।
এ নিয়ে ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়াটা স্বাভাবিক। বাস্তবতার প্রেক্ষাপটেই এই উবেগ ভারতের জন্য স্বাভাবিক। আমি ভারতীয় বিশ্লেষক হলে একই প্রতিক্রিয়া দেখাতাম। আমরা কী ধরনের সহযোগিতা আশা করতে পারি আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে? আমি মনে করি, এখনই সন্ত্রাস প্রশ্নে বড় ধরনের সহযোগিতা আশা করা উচিত হবে না। তার কারণ, সার্কের মধ্যে যারা আছে তাদের কিন্তু একে অপরের মধ্যে সন্দেহ যায়নি। সার্ক যে অবস্থায় এখনো আছে সেখানে এখনো একটা সহযোগিতার পরিবেশ গড়ে ওঠেনি। ১৯৪৭-এর দেশভাগের ট্রমা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। '৭১ সালকেও অনেকে বলে ভারতীয় স্বার্থে তারা বাংলাদেশকে সহযোগিতা-সমর্থন দিয়েছে। এর থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে সাধারণ জনগণ পর্যায়ে যত বেশি যোগাযোগ সৃষ্টি হবে, সাংস্কৃতিক ভাববিনিময় হবে ততই এই মনস্তাত্তি্বক বাধা দূর হবে।
সন্ত্রাসীদের চিহিক্রতকরণে এবং সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে যৌথ উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। তথ্যের আদান-প্রদান হতে পারে। এর জন্য চাই স্বচ্ছতা, উদারতা ও সদিচ্ছা। তাহলে সার্কভুক্ত দেশের মধ্যে যে সন্ত্রাস মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে তা নির্মূল করা সহজ।
আজ যদি আমরা মনে করি, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক আরো ভালো ও উন্নতি হলো, সেখান থেকে যদি সেনা প্রত্যাহার করে আনা হয়, নিয়ন্ত্রণ রেখায় যদি পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন হয়, ইউএনের পর্যবেক্ষণ টিম যদি শান্তি-শৃঙ্খলার জন্য বছরের পর বছর থাকতে পারে, কিংবা ৫০ বছর অবধি যে পর্যবেক্ষণ টিম কাশ্মীরে বসে রয়েছে সেখানে তো নেপাল, শ্রীলংকা, বাংলাদেশের সেনা যেতে পারে_ এ ধরনের চিন্তা-ভাবনা যদি আমরা করি তাহলে আঞ্চলিক কো-অপারেশন আরো এগিয়ে নিতে পারি। অন্যথা সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হচ্ছে, হবে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হবে না। আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সব সীমাবদ্ধ থাকবে। বড়জোর যেটা হবে, সাত দেশ একত্র হবে, কিছু ভাববিনিময় বা কুশল-শুভেচ্ছা বিনিময় হবে এ পর্যন্তই। আমরা সার্ককে যতটা বড় করে দেখি ততটা বড় করে ভারত দেখে না। যতটুকু বড় করে পাকিস্তান দেখে ততটুকু বড় করেও ভারত দেখে না। মূল কথা হচ্ছে, এটাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে হলে কতগুলো পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথম হচ্ছে, নিরাপত্তা বিষয়ক পদক্ষেপ, আজকে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এই শত্রুকে দেখা যায় না, ধরা ও বোঝা যায় না। অশরীরী শত্রুর মোকাবেলা করা খুবই কঠিন। এই যে গোটা মানুষের মধ্যে অজানা ভয়-আতঙ্ক এর মোকাবেলা করার জন্যই আঞ্চলিক সহযোগিতা ফোরামের কো-অপারেশন দরকার। বাস্তব কারণগুলোকে দেখে নিয়ে সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে আমাদের সহযোগিতার মনোভাব গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশ একটি জনবহুল ও দরিদ্র দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমরা সবার সঙ্গে মিলেমিশে সুপ্রতিবেশীসুলভ মর্যাদা নিয়ে এগিয়ে যেতে এবং সেজন্য যে বোঝাপড়া দরকার তা এই সার্কের মাধ্যমে তৈরি হতে পারে। কোনো ধরনের অবিশ্বাস, অসহযোগিতার মনোভাব এ ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্দক। আমরা আশা করব, এই সার্ক শীর্ষ সম্মেলন খুব বেশি না হলেও একটা মনস্তাত্তি্বক বাধা কমিয়ে আনতে পারবে। লেখক : ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.), সামরিক ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ
আমাদের উপমহাদেশের দিকে চোখ বুলালে দেখা যাবে, সবচেয়ে বেশি কথা হয়েছে কাশ্মীর নিয়ে। এই সংঘাত প্রায় ৫৬ বছর চলছে। তবে গত ১৫-১৬ বছরে কাশ্মীরে বিভিন্ন সংগঠন সম্পৃক্ত হয়েছে, যারা নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা বলছে। পাকিস্তান এদের ব্যাপারে তাদের নৈতিক সমর্থন দিয়ে আসছে। যদিও ভারত অভিযোগ করছে, পাকিস্তান এদের অস্ত্র-গোলাবারদু দিয়ে সহযোগিতা করছে। পাকিস্তান বলছে, ওরা কাশ্মীরি এবং তারা তাদের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করছে। ভারত বলছে, তারা জঙ্গি, স্বাধীনতাকামী নয়, ওরা সন্ত্রাসী। ঘটনাক্রমে কাশ্মীরের মেজরিটি লোক মুসলমান, কাজেই কাশ্মীরের স্বাধীনতার জন্য যারা যুদ্ধ করছে তারা ঘটনাচত্রেক্রই সব মুসলমান। এখন কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামীদের নিয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের সংজ্ঞা দু'ধরনের। কাজেই দক্ষিণ এশিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে যখন আমরা পারসঙ্রিক সহযোগিতার কথা বলব, যখন আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কো-অপারেশনের কথা বলব, স্বাভাবিক কারণেই আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। সম্প্রতি দিল্লিতে ব্যাপক বোমা হামলা হয়েছে। হতাহত হয়েছে অনেক। ক্ষয়ক্ষতিও ব্যাপক। যে সংগঠন এই হামলা চালিয়েছে তাদের নাম এই প্রথম শোনা গেল। ভারত এজন্য দায়ী করছে পাকিস্তানকে। তারা বলছে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বাই এ কা- ঘটিয়েছে এবং পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও এর সঙ্গে জড়িত। এখন দেখা যাচ্ছে, ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের যে একটা সুবাতাস প্রবাহিত হচ্ছেল, ব্যাপক ভূমিকম্প ঘটার পর যার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, সেখানে এখন এই সন্দেহ দানা বাঁধছে, বাড়ছে পারসঙ্রিক বিশ্বাসে ফাটল, সংশয়। ভারতের নীতি-নির্ধারকরা মনে করছেন, সন্ত্রাস মোকাবেলায় পাকিস্তান যথেষ্ঠ আন্তরিক নয়। কাজেই দক্ষিণ এশিয়ায় সার্কের মাধ্যমে আমরা যে পারসঙ্রিক সহযোগিতার বন্দন দেখব সেটা দেখতে পাচ্ছে না।
আসন্ন সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে হঠাৎ করে এই কো-অপারেশন করা সম্ভব নয়। কারণ, কোনো ধরনের মেকানিজম নেই। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, এ উদ্যোগটা ভারতের পক্ষ থেকেই প্রথমত এবং সর্বাগ্রে নেওয়া উচিত। কারণ, বড় রাষ্ঠ্র হিসেবে তাদেরই দায়িত্ব বেশি। তাদের মনোভাব ও আচরণেই প্রকাশ করতে হবে যে, প্রতিবেশী দেশগুলো তাদের বন্দু ও মিত্র।
এ নিয়ে ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়াটা স্বাভাবিক। বাস্তবতার প্রেক্ষাপটেই এই উবেগ ভারতের জন্য স্বাভাবিক। আমি ভারতীয় বিশ্লেষক হলে একই প্রতিক্রিয়া দেখাতাম। আমরা কী ধরনের সহযোগিতা আশা করতে পারি আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে? আমি মনে করি, এখনই সন্ত্রাস প্রশ্নে বড় ধরনের সহযোগিতা আশা করা উচিত হবে না। তার কারণ, সার্কের মধ্যে যারা আছে তাদের কিন্তু একে অপরের মধ্যে সন্দেহ যায়নি। সার্ক যে অবস্থায় এখনো আছে সেখানে এখনো একটা সহযোগিতার পরিবেশ গড়ে ওঠেনি। ১৯৪৭-এর দেশভাগের ট্রমা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। '৭১ সালকেও অনেকে বলে ভারতীয় স্বার্থে তারা বাংলাদেশকে সহযোগিতা-সমর্থন দিয়েছে। এর থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে সাধারণ জনগণ পর্যায়ে যত বেশি যোগাযোগ সৃষ্টি হবে, সাংস্কৃতিক ভাববিনিময় হবে ততই এই মনস্তাত্তি্বক বাধা দূর হবে।
সন্ত্রাসীদের চিহিক্রতকরণে এবং সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে যৌথ উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। তথ্যের আদান-প্রদান হতে পারে। এর জন্য চাই স্বচ্ছতা, উদারতা ও সদিচ্ছা। তাহলে সার্কভুক্ত দেশের মধ্যে যে সন্ত্রাস মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে তা নির্মূল করা সহজ।
আজ যদি আমরা মনে করি, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক আরো ভালো ও উন্নতি হলো, সেখান থেকে যদি সেনা প্রত্যাহার করে আনা হয়, নিয়ন্ত্রণ রেখায় যদি পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন হয়, ইউএনের পর্যবেক্ষণ টিম যদি শান্তি-শৃঙ্খলার জন্য বছরের পর বছর থাকতে পারে, কিংবা ৫০ বছর অবধি যে পর্যবেক্ষণ টিম কাশ্মীরে বসে রয়েছে সেখানে তো নেপাল, শ্রীলংকা, বাংলাদেশের সেনা যেতে পারে_ এ ধরনের চিন্তা-ভাবনা যদি আমরা করি তাহলে আঞ্চলিক কো-অপারেশন আরো এগিয়ে নিতে পারি। অন্যথা সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হচ্ছে, হবে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হবে না। আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সব সীমাবদ্ধ থাকবে। বড়জোর যেটা হবে, সাত দেশ একত্র হবে, কিছু ভাববিনিময় বা কুশল-শুভেচ্ছা বিনিময় হবে এ পর্যন্তই। আমরা সার্ককে যতটা বড় করে দেখি ততটা বড় করে ভারত দেখে না। যতটুকু বড় করে পাকিস্তান দেখে ততটুকু বড় করেও ভারত দেখে না। মূল কথা হচ্ছে, এটাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে হলে কতগুলো পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথম হচ্ছে, নিরাপত্তা বিষয়ক পদক্ষেপ, আজকে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এই শত্রুকে দেখা যায় না, ধরা ও বোঝা যায় না। অশরীরী শত্রুর মোকাবেলা করা খুবই কঠিন। এই যে গোটা মানুষের মধ্যে অজানা ভয়-আতঙ্ক এর মোকাবেলা করার জন্যই আঞ্চলিক সহযোগিতা ফোরামের কো-অপারেশন দরকার। বাস্তব কারণগুলোকে দেখে নিয়ে সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে আমাদের সহযোগিতার মনোভাব গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশ একটি জনবহুল ও দরিদ্র দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমরা সবার সঙ্গে মিলেমিশে সুপ্রতিবেশীসুলভ মর্যাদা নিয়ে এগিয়ে যেতে এবং সেজন্য যে বোঝাপড়া দরকার তা এই সার্কের মাধ্যমে তৈরি হতে পারে। কোনো ধরনের অবিশ্বাস, অসহযোগিতার মনোভাব এ ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্দক। আমরা আশা করব, এই সার্ক শীর্ষ সম্মেলন খুব বেশি না হলেও একটা মনস্তাত্তি্বক বাধা কমিয়ে আনতে পারবে। লেখক : ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.), সামরিক ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ
No comments