শিল্প-অর্থনীতি 'করমুক্ত থাকার নানা চেষ্টা নোবেল বিজয়ীর' by ফারুক মেহেদী

নিজ প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংককে করমুক্ত রাখতে বছরের পর বছর ধরে সচেষ্ট আছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দারিদ্র্যমুক্তির প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংককে করের আওতামুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছেন ২০০৬ সালে শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার পাওয়া এ অর্থনীতিবিদ। একইভাবে নিজের এবং প্রতিষ্ঠানের নোবেল পুরস্কারের ওপরও যাতে কর না ধরা হয়, সে জন্য নানা তৎপরতা চালিয়েছিলেন তিনি।
দীর্ঘ কয়েক যুগে গ্রামীণ ব্যাংক একটি শক্তিশালী আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হলেও কোনো সরকারই এর করমুক্তির আবেদন অগ্রাহ্য করেনি। চলতি অর্থবছরের ৩১ ডিসেম্বর গ্রামীণ ব্যাংকের কর অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ড. ইউনূস সরকারের কাছে পরের দুই বছরের করমুক্তি চেয়ে আবেদন করে রেখেছেন। তবে এনবিআরের পক্ষ থেকে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন কর অব্যাহতি শাখার সদস্য সৈয়দ আমিনুল করিম। তিনি গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'গ্রামীণ ব্যাংকের আয়কে করমুক্ত রাখতে আমাদের কাছে আবেদন করা হয়েছে। এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ বজায় রাখার জন্য যা করণীয় আমরা তা করব।'
২০০৬ সালে ড. ইউনূস নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর করের প্রসঙ্গটি এলে তা থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন তৎপরতা চালান। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলামকে পাঠানো একটি চিঠিতে ড. ইউনূস ও তাঁর প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের পাওয়া নোবেল পুরস্কারের অর্থকে করমুক্ত রাখার অনুরোধ জানানো হয়। ওই চিঠিতে যদিও উদাহরণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে নোবেল পুরস্কার করমুক্ত নয়_এ তথ্য জানানো হয়েছিল, এর পরও মানবিক বিচেনায় বাংলাদেশে এ পুরস্কারটি করমুক্ত রাখার জোর সুপারিশ করে নোবেল কমিটি। ওই সময় অর্থ উপদেষ্টা তৎকালীন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান বদিউর রহমানকে বিষয়টি পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তখন এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হলে তিনিও বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
সরাসরি নোবেল কমিটির তদবিরের কিছুদিন পর ড. ইউনূস নিজেও তাঁর এবং প্রতিষ্ঠানের পাওয়া নোবেল পুরস্কারের ওপর করারোপ না করার অনুরোধ জানিয়ে সাবেক অর্থ উপদেষ্টাকে আরো একটি চিঠি পাঠান। এর পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নোবেল পুরস্কারকে করমুক্ত ঘোষণা করেছিল।
এ ঘটনার প্রায় দেড় বছর পর ধারাবাহিক আবেদনের অংশ হিসেবে ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে গ্রামীণ ব্যাংককে করমুক্ত রাখতে আবারও এনবিআরের প্রতি আবেদন জানানো হয়। ওই বছর ব্যাংকটির নির্ধারিত করমুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে এ আবেদন করা হয় পরের দুই বছরের জন্য। প্রতিষ্ঠানটিকে অলাভজনক দাবি করে দরিদ্র মানুষের সেবা করার সুযোগ চেয়ে করমুক্তি চাওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুল মজিদের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি তখন গ্রামীণ ব্যাংককে আর করমুক্তির সুযোগ দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এ প্রতিষ্ঠান এখন আর শিশুর মতো ছোট নয়, যে তাকে ফিডার দিয়ে দুধ খাওয়াতে হবে। অবশ্য তিনিও পরবর্তী সময়ে তাঁর এই দৃঢ় অবস্থানে থাকতে পারেননি। ওই বছরও সরকার গ্রামীণ ব্যাংকে পরের দুই বছরের জন্য করমুক্তি সুবিধা দেয়।
চলতি বছরের আসছে ৩১ ডিসেম্বর সেই বর্ধিত করমুক্তির দুই বছর মেয়াদ পূর্তি হচ্ছে। তাই আগেভাগেই আবারও করমুক্তি চেয়ে আবেদন করে রেখেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এ অর্থনীতিবিদ। গত ১৪ অক্টোবর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে নিজ হাতে লেখা চিঠিতে দরিদ্রদের সেবা করার স্বার্থে গ্রামীণ ব্যাংকের করমুক্তি চেয়ে যুক্তি তুলে ধরেন ড. ইউনূস। প্রতিষ্ঠানটি যে বিশাল একটি সংস্থা তার বিবরণও অর্থমন্ত্রীর অবগতির জন্য তুলে ধরেন তিনি। আবেদনে তিনি দেখান বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংক দুই হাজার ৫৬৪টি শাখার মাধ্যমে দেশের ৮১ হাজার ৩১৭টি গ্রামে প্রায় ৮৩ লাখ সদস্যকে ক্ষুদ্রঋণ দিচ্ছে। এর আওতায় পাঁচ কোটি জনসংখ্যা সুবিধা পাচ্ছে। আর প্রতিষ্ঠানটি বছরে প্রায় আট হাজার ৮০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করছে। আদায়ের হার ৯৭ দশমিক ২৬ শতাংশ। এসব বিবেচনায় গ্রামীণ ব্যাংককে ১ জানুয়ারি ২০১১ সাল থেকে কর অব্যাহতি দেওয়ার বিনীত অনুরোধ জানানো হয়। তবে অর্থমন্ত্রী বিষয়টি সম্পর্কে মন্তব্য করেন প্রায় ১৪ দিন পর গত ২৮ অক্টোবর। এতে তিনি ড. ইউনূসের চিঠির এক কোনায় বিষয়টি পর্যালোচনা করে তাঁকে অবহিত করতে এনবিআরের প্রতি নির্দেশ দেন। ড. ইউনূসের করমুক্তির আবেদনসংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে গত মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে কালের কণ্ঠে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যদিও এ বিষয়ে সরকার ইতিবাচক বা নেতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি এখনো।
==========================
অনাস্থা নয়, খালেদার আশঙ্কা ছিল ন্যায়বিচার না পাওয়ার  খেলা- 'বাংলাদেশ তো আসলে জিততেই চায়নি!'  আলোচনা- 'ড. ইউনূসের কেলেঙ্কারি!'  খেলা- 'বাংলাদেশকে মাটিতে নামাল জিম্বাবুয়ে'  'ধরিত্রীকে বাঁচাতে কানকুনে সফল হতেই হবে'  স্মরণ- 'চিত্রা ভট্টাচার্যের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি'  রাজনৈতিক আলোচনা- 'আওয়ামী লীগে মিলন ও বিচ্ছেদের নাটকখবর- উইকিলিকসের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র  রাজনৈতিক আলোচনা- 'প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সমাজের প্রত্যাশা আলোচনা- 'পায়ে পড়ি বাঘ মামা, বেঁচে থাকো'  আন্তর্জাতিক- 'পুরনো বন্ধুকে ত্যাগ করতে প্রস্তুত চীন  আমরাই পারি 'দ্বিতীয় রাজধানী' গড়তে  খবর- পুলিশি হরতাল  যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'উপদেশের খেসারত'  গল্প- 'স্বপ্নভঙ্গের ইতিবৃত্ত'  স্মরণ- 'জগদীশচন্দ্র বসুর কথা বলি'  যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'প্রধানমন্ত্রী কি হরতাল চান?  ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা রাজনীতির নতুমাত্রা  খবর, বিএনপি কর্মীদের দাঁড়াতে দেয়নি পুলিশ  গল্প- 'আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসারে'  গল্প- 'মহামানুষের গল্প' by রাসেল আহমেদ  গল্পালোচনা- 'যেভাবে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়!' by আলী হবিব  জলবায়ু সম্মেলনঃ আমি কেন কানকুনে যাচ্ছি? by মেরি রবিনস  ভ্রমণ- 'মেঘনায় যায় মেঘনা রানী' by সালেক খোকন


দৈনিক কালের কণ্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ ফারুক মেহেদী


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.