রাজনৈতিক আলোচনা- 'খালেদা জিয়ার লিখিত অনাস্থা, আপিল বিভাগের নীরবতা' by মিজানুর রহমান খান

বিস্ময়কর তথ্যটি আগেই বলে নিই। গতকালের সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলগুলোর খবর পরিবেশনা দেখে আদালতে কী ঘটে গেছে তা বোঝা যাবে না। এই ঘটনা প্রমাণ দেয় যে আমাদের রাষ্ট্রের তিন স্তম্ভের কোনোটিই দাঁড়ায়নি। বেগম খালেদা জিয়া দেশের প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ও আপিল বিভাগের অপর দুই বিচারক বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন ও বিচারপতি এস কে সিনহার প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেন। এর প্রায় ২০ ঘণ্টা ব্যবধানে ২৯ নভেম্বর সকাল সাড়ে নয়টার দিকে দুই বড় দল সমর্থক আইনজীবীদের উত্তেজনাপূর্ণ উপস্থিতিতে আপিল বিভাগে শুরু হলো সেনানিবাসের বাড়িসংক্রান্ত লিভ টু আপিলসহ চারটি আবেদনের ওপর শুনানি।
বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা চাইলেন আগে আপিল বিভাগ অবমাননা মামলার শুনানি হবে। প্রধান বিচারপতি চাইলেন সবই শুনানি হবে। তবে শুরু হোক লিভ পিটিশন শুনানির মধ্য দিয়ে। কোনটি আগে হবে সে বিষয়ে ৯০ মিনিট কেটে গেল। এরপর দেশবাসী জানলেন, উত্থাপন না করায় আপিল বিভাগ বেগম খালেদা জিয়ার লিভ পিটিশন খারিজ করে দিয়েছেন। ২৯ ও ৩০ নভেম্বরের রাতজুড়ে ধুন্দুমার টিভি টক শো হলো। কিন্তু তাতে জনগণ জানলেন না বেগম খালেদা জিয়ার বিস্ময়কর অনাস্থার তথ্য। গতকালের বাংলাদেশের খবরের কাগজগুলোর শিরোনাম দেখে তাঁরা জানলেন না, অবাধ তথ্যপ্রবাহের যুগে কী করে গুরুত্বপূর্ণ প্রাসঙ্গিক তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখা সম্ভব হয়। সত্যি এটা সব সম্ভবের দেশ, সেটা আরেকবার প্রমাণিত হলো। মানুষ ভাবছে, আদালত অবমাননার শুনানি আগে হলে কী হতো। বেগম জিয়ার আইনজীবীরা বিলাপ করছেন, তাঁদের আবেদন শোনার কেউ নেই। অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল জানাচ্ছেন, ৯০ মিনিট সংলাপ হলো অথচ তাঁরা লিভ পিটিশনের শুনানি শুরু করতে চাইলেন না। এটা আমি কখনো শুনানি। কিন্তু তার চেয়েও বড় বিস্ময়, অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর অনাস্থার বিষয়ে আদালতে কোনো বক্তব্য রাখেনি। প্রতিপক্ষকে বাগে পেয়েও তারা ঘাটাতে যায়নি। নীরবতাকেই শ্রেয় মনে করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এটা রাষ্ট্রের ব্যাধি, যা তারা গোপন রাখতে চায়।
তবুও সবচেয়ে বিস্ময়কর আপিল বিভাগের নীরবতা। আমরা এটা কোনোক্রমেই স্বাভাবিক মনে করি না। যত রকমের রীতি বা প্রক্রিয়া বা কেতাগত যুক্তি দেওয়া হোক না কেন, প্রকাশ্য আদালতে এই তথ্য গোপন রাখার অর্থ দেশবাসীকে অন্ধকারে রাখা। কর্মকর্তারা না জানালে আপিল বিভাগের বিচারকেরা কীভাবে জানবেন? এই প্রশ্ন তোলা হলে আমরা তা নাকচ করে দিতে পারি না। কিন্তু সে ক্ষেত্রে এটুকু বলব যে বেগম খালেদা জিয়া কোর্ট ফি দিয়ে অনাস্থা জ্ঞাপন করেছেন এবং তা আপিল বিভাগের বিচার শাখা গ্রহণ করেছে, তাই স্রেফ রীতির দোহাই মানা কঠিন। পরে অবশ্য সে সংক্রান্ত হলফনামায় সুপ্রিম কোর্টের খোদ রেজিস্ট্রার আশরাফুল ইসলাম সই দেন, সে কারণে বলি, আদালত তা উপেক্ষা করতে পারেন কি। আমরা মনে করি, আপিল বিভাগ প্রশাসনের কাছ থেকে এই তথ্য এবং সে সংক্রান্ত ব্যাখ্যা জানার অধিকার জনগণের আছে। ২৯ নভেম্বর তুমুল উত্তেজনাপূর্ণ শুনানি হলো, আর তাতে সব পক্ষ কার্যত নীরবতা পালন করল। যদিও সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি গতকাল রাতে বললেন, ‘আমরা এ-সংক্রান্ত আবেদনের প্রতি ওই দিন প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। মওদুদ অনাস্থার আবেদন হাতে দাঁড়িয়েছিলেন কিন্তু প্রধান বিচারপতি তাঁকে কথা বলার সুযোগ দেননি।’ বিষয়টিকে আমরা জনস্বার্থ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বলে মনে করি না। কারণ মাঝপথে আচানক অনাস্থা ব্যক্ত করলে খালেদা জিয়ার স্ববিরোধিতা প্রকট হতো। টি এইচ খান ও রফিক উল হক এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। কিন্তু তাঁরা তো অনাস্থার আবেদনে পক্ষ হয়েছেন। তাঁরাই তো মওদুদের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। দেশবাসী তাই জানতে পারল না, মওদুদের আবেদনে কী ছিল। বার সভাপতির কথায়, প্রধান বিচারপতি মওদুদকে অসৌজন্যমূলকভাবে বসিয়ে দিয়েছিলেন।
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না যে বিচারকদের প্রতি অনাস্থার বিষয়টি প্রকাশ্য আদালতে একেবারেই বিবেচনায় না নিয়ে নৈতিকভাবে গতকাল লিভ টু আপিলের শুনানির সুযোগ ছিল। আমি অবাক হতে প্রস্তুত যে ২৯ নভেম্বরের দৈনিক কার্যতালিকায় কী করে ওই দুটি আবেদন একই সঙ্গে না এসে পারল? এর বিষয়বস্তু তো সাদামাটা ছিল না। এর চেয়ে গুরুতর আর কী হতে পারে?
সুতরাং প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ এবং বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী দল এবং রাষ্ট্রপক্ষের প্রতিনিধিত্বকারীরা ২৯ নভেম্বরে আর যাই হোক, নৈতিকতাপূর্ণ আইনের অনুশীলন করেছিলেন, এটা মানতে বড় বাধে।
এতে বিএনপির ঘোষণামতে ‘আইনি ও রাজনৈতিক মোকাবিলার’ আরেকটি বিচিত্র রূপ আমরা দেখলাম। একই সঙ্গে আমরা রাষ্ট্র ও আদালতের নীরবতার রূপও দেখলাম। তবে জনগণের একটা লাভ হলো। বিচারপতি কে এম হাসান সম্পর্কে আওয়ামী লীগ তার অবস্থান স্পষ্ট করতে দেরি করেছিল। এবার অনেক আগেই স্পষ্ট হলো। তাই ২৮ নভেম্বর এক অর্থে একটি রেড লেটার ডে। কারণ বেগম খালেদা জিয়া এদিন কার্যত লিখিতভাবে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতিও অনাস্থা জ্ঞাপন করেছেন।
বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান যে স্ববিরোধী তা আমরা বেগম জিয়ার হলফনামায় লক্ষ করি। তাঁর সারকথা হচ্ছে, জিয়ার স্ত্রী হিসেবে তিনি ওই বাড়ি পেয়েছিলেন। বিচারপতি খায়রুল হকসহ তিন বিচারপতি জিয়াকে যেহেতু অবৈধ শাসক বলেছিলেন, তাই তাঁদের কাছে তিনি ন্যায়বিচার পাবেন না। তাঁর এই অবস্থান সংগত কি না সেটা ভিন্ন বিতর্ক। কিন্তু তাঁর মনে যে এই ছিল তা তিনি আগে প্রকাশ করেননি কেন? কেন তিনি এই বিচারকদের কাছে লিভ চাইলেন? কেন চেম্বার জজের কাছে স্টে চাইলেন? কেন তাঁর আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ছুটে গেলেন? বিচারপ্রার্থী মামলার যেকোনো পর্যায়ে অনাস্থা দিতে পারেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া যে কারণ দেখান, তার উদ্ভব ঘটে অনেক আগেই। তার কেন হঠাৎ মনে পড়ল?
বেগম খালেদা জিয়া তাঁর আবেদনে বলেন, ওই সময় দেশে সংসদ ছিল না। তাই তাঁকে সামরিক আইনের আওতায় দেশ শাসন করতে হয়েছিল। সামরিক আইন জিয়া নয়, মোশতাক জারি করেছিলেন। তিনি ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার সুযোগও হাতছাড়া করেননি। তাঁর যুক্তি: ‘জিয়া শুধু সামরিক ফরমান দিয়ে দেশে গণতন্ত্রই আনেননি, তাঁকে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালার ওপর বিশ্বাস স্থাপনের কথা সংযোজন করতে হয়েছিল।’ শেখ মুজিবের সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী’ এ রকম দাবি কবে, কোথায় করেছিল?
বেগম খালেদা জিয়া বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের রায় মূল্যায়ন করেন। তাঁর ভাষায়, হাইকোর্টের রায়ে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে একজন জবরদখলকারী হিসেবে জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। তিনি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ করেছিলেন। জিয়াউর রহমান জনগণের কল্যাণে যা কিছুই করেছেন, তা ভ্রান্ত ও অবৈধ। অথচ এই বক্তব্য অসত্য। কারণ বিচারপতি খায়রুল হক তাঁর রায়ে বাহাত্তরের সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদ ব্যতিরেকে জিয়ার আর সব কর্মকাণ্ডই জনশৃঙ্খলার স্বার্থে মার্জনা করেছিলেন। তবুও বেগম খালেদা জিয়া তাঁর স্বামী-সম্পর্কিত মন্তব্যের কারণেই ‘স্বার্থের সংঘাত’ দেখলেন। জিয়া থেকে বাড়ি। তাই জিয়ার নিন্দা মানে খালেদার বাড়ির নিন্দা।
২৮ নভেম্বর একই দিনে আমরা খালেদা জিয়াকে দুটি আলাদা আবেদন দাখিল করতে দেখি। এই দুটি নিয়ে আপিল বিভাগে তাঁর আবেদন দাঁড়িয়েছিল অর্ধ ডজন। অনাস্থা ছাড়া তিনি পৃথক একটি আবেদনে সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিলের মুলতবি চান। মনে হতে পারে আপিল বিভাগে বিএনপির পুরো অবস্থানটাই ছিল অধিকতর রাজনৈতিক। বেগম খালেদা জিয়া পরিচ্ছন্ন হাতে আপিল বিভাগে এসেছিলেন, আমরা তার প্রমাণ পাই না।
গতকাল দুপুরে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলাম। জানতে পারি যে আপিল বিভাগ ২৯ নভেম্বর দেওয়া পূর্ণাঙ্গ লিখিত আদেশ চূড়ান্ত করার কাজ করছেন। এর ঘষামাজা চলছে। অনাস্থা জ্ঞাপনের আবেদনটি আপিল বিভাগের বিচার শাখা গ্রহণ করেছে ২৮ নভেম্বর দুইটা ৩৫ মিনিটে। এ জন্য সোনালী ব্যাংকে নগদ দুই হাজার টাকার ফি জমা পড়েছে। শুনলাম তাঁর এই আবেদন আপিল বিভাগে খালেদা জিয়ার বাড়িসংক্রান্ত মামলার নথিভুক্ত হয়নি গতকালও। এমনকি এই আবেদন বিজ্ঞ বিচারপতিদের কাছে পৌঁছেছে—এমনটাও নাকি দালিলিকভাবে বলা যাবে না। সিভিল পিটিশন মুলতবি করার আবেদনটি দাখিল করা হয় ২৮ নভেম্বর। তবে দুটি আবেদনই ডায়েরিভুক্ত হয় একদিন পর ২৯ নভেম্বর। অনাস্থা জ্ঞাপন আবেদনের ডায়েরি নম্বর ১৯২৯। মুলতবি করার আবেদনের ডায়েরি নম্বর ১৯২৮।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ ২৯ নভেম্বরের শুনানিকালে যখন বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা ন্যায়বিচারের কথা বলছিলেন, তখন যদি বলা হতো যে আমাদের ওপর আপনাদের তো আস্থা নেই, তা হলে কেন এসেছেন? এর জবাব কী হতো তা জানা থেকে আমরা বঞ্চিত হলাম। হয়তো এ রকম একটি বাক্যে আদালতের উত্তেজনাকর হইচইপূর্ণ দৃশ্যের অবতারণা এড়ানো সম্ভব হতো। মুখোশটা খসে পড়ত।
বেগম খালেদা জিয়া অনাস্থা কেন দিলেন? সেটা কতটা রাজনৈতিক, সেটা ভিন্ন প্রশ্ন, ভিন্ন বিতর্ক। তবে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে পুরো আপিল বিভাগের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপনও করলেন, আর পুরো জাতি জানল যে আমাদের আপিল বিভাগ বেগম জিয়ার আবেদন শুনতে চাননি। এখানে কার লাভ হলো। আমাদের মতে, এই ঘটনায় উভয় পক্ষের রাজনীতি জয়যুক্ত হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর ওই দুটি আবেদনের কথা জানত না, সেটা মানা যায় না। আপিল বিভাগ প্রশাসন জানতেন না, সেটাও মানা যায় না। সুতরাং যে বিষয় নিয়ে দেশব্যাপী বিক্ষোভ ও হরতালের কর্মসূচি রয়েছে, যেখানে ডগ স্কোয়াড মোতায়েন করা হয়েছে; সে রকম একটি বিষয় বিচার প্রশাসন প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করেননি, তা স্বাভাবিক মনে হয় না। গতকাল ৩০ নভেম্বরে আদালত অবমাননাসংক্রান্ত শুনানির দিন ধার্য ছিল। এর অবশ্য কোনো শুনানি হয়নি। তা হলে কি ভবিষ্যতে কোনো দিন বিএনপি যখন ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতার’ উপযুক্ত পরিবেশ খুঁজে পাবে, তখন তারা এই আবেদন দুটিকে সামনে আনবে?
আসলে পুরো বিষয়টি বিচার বিভাগের ভঙ্গুরত্ব প্রমাণ করে। এত বড় একটা পরিহাস ধারণ করা সত্যি কঠিন যে বেগম খালেদা জিয়া হাইকোর্টের রায় অমান্য করে সারা দেশের বারে বিক্ষোভ দেখানোর কর্মসূচি পালন করলেন। সুুপ্রিমকোর্ট আদালত অবমাননার অভিযোগ তুলে তাঁকে বিব্রত করেননি। পুনর্বার বেগম খালেদা জিয়া আপিল বিভাগকে অনাস্থায় রেখে আপিল বিভাগ অবমাননা করার জন্য প্রতিকার চাইলেন। তারও কোনো বিহিত হলো না। উভয় ক্ষেত্রে আদালতের এই আপসে আমরা এই রাষ্ট্রের নির্বাহীর সঙ্গে বিচার বিভাগের চিরন্তন আপসের প্রতিফলন দেখি। আদালত নির্বাহী বিভাগকে বিব্রত করেন না। কারণ আদালত নিজেদের বিব্রত হওয়া থেকে বাঁচার চেষ্টা করেন। আপসের এই চোরাগলিতে এই রাষ্ট্রের নৈতিকতা ও আইনের শাসন মার খেয়ে চলেছে।
সামরিক শাসনকে অবৈধ বলার বিষয়টি নতুন কোনো উদ্ভাবন ছিল না। তবে বাহাত্তরের সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদকে সুপ্রিম কোর্ট যেভাবে পুনরুজ্জীবিত করেছেন, সেটা নিয়ে একটা জোরালো বুদ্ধিবৃত্তিক তর্ক আছে এবং থাকবে। কিন্তু এটাও সত্য যে মোশতাক, সায়েম ও জিয়াকে ‘জবরদখলকারী’ হিসেবে উল্লেখ শুধু বিচারপতি খায়রুল হক, বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন ও বিচারপতি এস কে সিনহা করেননি। আরো অনেক বিজ্ঞ বিচারকরা করেছেন।
হাইকোর্টের দেওয়া সেনাশাসনবিরোধী রায় আপিল বিভাগ কিন্তু প্রতিষ্ঠান হিসেবে যথার্থই সমুন্নত রেখেছেন। যেমন সাবেক প্রধান বিচারপতি তাফাজ্জাল ইসলাম এবং ছুটিতে থাকা বিচারপতি আবদুল মতিনকে আমরা কখনো আওয়ামীপন্থী হিসেবে বলাবলি করতে শুনি না। বরং তাঁদের কখনো বিএনপির প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে বর্ণনা করা হয়ে থাকে। বিচারপতি টি ইসলাম আইনজীবী থাকাকালে জিয়াউর রহমানের সফরসঙ্গী হিসেবে একাধিক দেশ ভ্রমণ করেছিলেন। বিচারপতি মতিনকে ‘আপন’ মনে করতে না পারায় তাঁকে ‘প্রতিশ্রুতি’ দিয়েও প্রধান বিচারপতি করা হলো না। এই দুজনই কিন্তু বিচারপতি খায়রুল হকের সামরিক শাসনবিরোধী রায় সমর্থন করেছেন।
বেগম খালেদা জিয়া আসলে একটি বাড়ি রক্ষা করতে গিয়ে নতুন করে পুরোনো ক্ষত উন্মোচন করলেন। আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির স্ববিরোধিতা ও অসাধুতার প্রলেপ এখনো অত্যন্ত প্রকট। অনেক বুদ্ধিজীবী জিয়াকে ৭ নভেম্বরের ‘সিপাহি-জনতার বিদ্রোহ’ থেকে উঠে আসা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শ্রদ্ধা জানাতে চান। আমরা তাঁদের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু তাঁদের স্পষ্ট করা দরকার যে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট থেকে ৭ নভেম্বরের মধ্যবর্তী সময়ের কর্মকাণ্ডের বৈধতা কিংবা অবৈধতার দায় তাঁরা কতটা কীভাবে নেবেন কিংবা নেবেন না। সেনানিবাসের বাড়ির মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার অনাস্থাকে আমরা শুধু ‘তিন বিচারপতির ব্যক্তিগত বিষয়’ হিসেবে দেখতে পারলে কিছুটা আশ্বস্ত হতাম। কিন্তু তিনি তো আদালতে হলফনামা দিয়ে ইতিহাসের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিলেন। শুধু জিয়াকে নয়, তিনি মোশতাক ও সায়েমকে অবৈধ বলাও মানতে পারেননি।
রাষ্ট্রপক্ষ এবং আদালত বেগম খালেদা জিয়ার এই অবস্থানকে সামনে আনলে দেশের জনগণ পক্ষ-বিপক্ষ চিনতে পারবে। প্রকৃত ইস্যু বুঝতে পারবে। আদালত অবমাননার আবেদনের একতরফা নিষ্পত্তি হতে পারে। সেই আদেশে আমরা এর প্রতিফলন আশা করব। ২৯ নভেম্বর লিভ পিটিশন খারিজসংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রায়ের মধ্যেও আমরা বেগম জিয়ার অনাস্থার বিষয়টির উল্লেখ আশা করব। দুজন জ্যেষ্ঠ বিচারককে ডিঙ্গিয়ে বিচারপতি খায়রুল হককে প্রধান বিচারপতি করার পর বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বলেছিলেন, বিএনপি তাঁর অধীনে নির্বাচনে যাবে না। বেগম খালেদা জিয়ার হলফনামা সেই সত্যই বহন করে। তবে অমায়িক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসান একটি ‘না’ উচ্চারণ করতে অনেক বিলম্ব করেছিলেন। সংবিধান সংশোধন করে বয়স বাড়ানোর পর পরই যখন বিতর্ক ওঠে তখনই তিনি ‘না’ বলতে পারতেন। আমরা আশা করব, প্রধান বিচারপতি এখনই এ বিষয়ে তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করবেন। প্রধান বিচারপতির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা ঝুলিয়ে রাখার বোঝা সুপ্রিম কোর্ট আর বহন করতে পারছে না।
=============================
রাজনৈতিক আলোচনা- 'কেউ কথা রাখেনি এবং গণতন্ত্রের বিকট চেহারা'  বক্তব্য- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসাবে খায়রুল হককে প্রশ্নবিদ্ধ করাই তাদের উদ্দেশ্য  শিল্প-অর্থনীতি 'করমুক্ত থাকার নানা চেষ্টা নোবেল বিজয়ীর  অনাস্থা নয়, খালেদার আশঙ্কা ছিল ন্যায়বিচার না পাওয়ার  খেলা- 'বাংলাদেশ তো আসলে জিততেই চায়নি!'  আলোচনা- 'ড. ইউনূসের কেলেঙ্কারি!'  খেলা- 'বাংলাদেশকে মাটিতে নামাল জিম্বাবুয়ে'  'ধরিত্রীকে বাঁচাতে কানকুনে সফল হতেই হবে'  স্মরণ- 'চিত্রা ভট্টাচার্যের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি'  রাজনৈতিক আলোচনা- 'আওয়ামী লীগে মিলন ও বিচ্ছেদের নাটকখবর- উইকিলিকসের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র  রাজনৈতিক আলোচনা- 'প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সমাজের প্রত্যাশা আলোচনা- 'পায়ে পড়ি বাঘ মামা, বেঁচে থাকো'  আন্তর্জাতিক- 'পুরনো বন্ধুকে ত্যাগ করতে প্রস্তুত চীন  আমরাই পারি 'দ্বিতীয় রাজধানী' গড়তে  খবর- পুলিশি হরতাল  যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'উপদেশের খেসারত'  গল্প- 'স্বপ্নভঙ্গের ইতিবৃত্ত'  স্মরণ- 'জগদীশচন্দ্র বসুর কথা বলি'  যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'প্রধানমন্ত্রী কি হরতাল চান?  ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা রাজনীতির নতুমাত্রা


দৈনিক প্রথম আলো এর সৌজন্যে
লেখকঃ মিজানুর রহমান খান


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.