যে ড্রয়ে ইংল্যান্ডের জয়

নিজে টেস্ট খেলেছেন ৬৩টি, ধারাভাষ্যকক্ষে বসে দেখেছেন পাঁচ শর বেশি। সেই রিচি বেনো পর্যন্ত বিস্মিত কণ্ঠে বললেন, এমন স্কোর কার্ড আগে দেখেছেন কিনা সন্দেহ। বেনোর দেখার প্রশ্নই ওঠে না, কারণ টেস্ট ইতিহাসই এমন স্কোর কার্ড আগে কখনো দেখাই যায়নি!
১ উইকেটে ৫১৭, একটি মাত্র উইকেট হারানো কোনো দলের ইনিংস শেষে এত রান আর কখনো দেখেনি টেস্ট ক্রিকেট। তিনজন ব্যাটসম্যান ব্যাটিং করেছেন, স্কোরকার্ডে পরপর দেখা যাচ্ছিল—১১০, অপরাজিত ২৩৫ ও অপরাজিত ১৩৫। রিকি পন্টিং তো বটেই, অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসও হয়তো একটু চমকেই গেছেন।
ম্যাচের ভাগ্যে যা ছিল, তা-ই হয়েছে। নাটক আর রং বদলের পর চার দিন শেষেই বোঝা যাচ্ছিল, ড্র-ই নিয়তি এই টেস্টের। কুক-ট্রটের ম্যারাথন জুটি নিশ্চিত করেছে সেই ফলাফল। চা-বিরতির আধঘণ্টা আগে ইনিংস ছাড়ার সময় স্ট্রাউস নিশ্চয়ই ম্যাচ জয়ের আশা করেননি। ৪-৫টি উইকেট তুলে নিয়ে ব্রিসবেন টেস্টের ‘নৈতিক জয়’ পাওয়াটাই লক্ষ্য ছিল। ৪১ ওভারে ২৯৭ রান তাড়া করার কথাও নিশ্চয়ই ভাবেননি রিকি পন্টিং। অস্ট্রেলীয় অধিনায়কের ভাবনায় ছিল, বরং ওই সময়টুকুতে নিজেদের মিইয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস কিছুটা হলেও ফিরে পাওয়া। ৫ রানে সাইমন ক্যাটিচকে হারানোর পর ওয়াটসন-পন্টিংয়ের ১০২ রানের জুটি আর পন্টিংয়ের দ্রুতগতির ফিফটিতে সেই ‘কিছু একটা’ পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
তবে সবচেয়ে বেশি পেল তো ইংল্যান্ডই। প্রথম ইনিংসে ২২১ রানে পিছিয়ে পড়ার পর চোখ রাঙাচ্ছিল পরাজয়। সেখান থেকেই স্ট্রাউস-কুক-ট্রটের অবিশ্বাস্য প্রতিরোধ, যা উল্টো নাস্তানাবুদ করে ছাড়ল অস্ট্রেলিয়াকে।
ব্যাটিং অর্ডার অনুযায়ী লেখা হলো, নইলে কুকের নামটা সবার আগে আসত। বাজে ফর্মের জন্য অ্যাশেজ দলে থাকা নিয়েই সংশয় ছিল, যেটি দূর করেছেন গত আগস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওভালে সেঞ্চুরি করে। সেই কুক এবার নাম লিখিয়ে ফেললেন ইতিহাসে। ডন ব্র্যাডম্যানকে (২২৬) ছাড়িয়ে গ্যাবার সর্বোচ্চ ইনিংস, ষষ্ঠ ইংলিশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দ্বিশতক—ছাড়িয়ে গেছেন তো নিজেকেও। টেস্টে আগের সর্বোচ্চ ছিল ১৭৩, ডাবল সেঞ্চুরি ছিল না প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটেই। অস্ট্রেলিয়ায় গত অ্যাশেজে ৫ টেস্টে করেছিলেন ২৭৬, এবার প্রথম টেস্টেই ৩০২! ট্রটের সঙ্গে তাঁর ৩২৯ রানের জুটিটি যেকোনো উইকেটেই অস্ট্রেলিয়ায় ইংলিশদের সর্বোচ্চ।
২০০৯ অ্যাশেজে টেস্ট অভিষেকে দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছিলেন ট্রট। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথম টেস্টেও দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি। ১৪ টেস্টে এটি ট্রটের চতুর্থ সেঞ্চুরি, টেস্ট গড় এখন ৫৯.৯৫!
গত বছর ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ অ্যাশেজ সিরিজের সঙ্গে যেমন মিল খুঁজে পাচ্ছেন ট্রট, ইংল্যান্ড দলও খুঁজে নিচ্ছে এমন মিল। সেবার কার্ডিফে সিরিজের প্রথম টেস্টে শেষ উইকেট জুটির বীরত্বে প্রায় নিশ্চিত মনে হওয়া পরাজয়কে ড্র বানিয়ে ফেলেছিল ইংল্যান্ড। এবার তো আরও ‘দাপুটে’ ড্র। এই ‘ড্র’-ই তবে ঠিক করে দেবে অ্যাশেজের গতিপথ? স্ট্রাউস কিন্তু বলেই দিয়েছেন, ‘এই ড্র আমাদের জোগাচ্ছে সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাস।’

No comments

Powered by Blogger.