আন্তর্জাতিক- 'তরুণদের ভবিষ্যৎ মানে দেশের ভবিষ্যৎ' by অং সান সু চি
অং সান সু চি মিয়ানমারের (বার্মা) গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক। ১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী। জন্ম রেঙ্গুনে, ১৯৪৫ সালের ১৯ জুন। ১৯৬৯ সালে অক্সফোর্ডের সেন্ট হগস কলেজ থেকে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিষয়ে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৮ সালে ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে বার্মিজদের গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য সংগ্রামে নামলেন সু চি। এ জন্য তাঁকে গৃহবন্দী করা হয়। গত ২১ বছরের মধ্যে ১৫ বছরই কেটেছে তাঁর গৃহবন্দী অবস্থায়। গৃহবন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছেন ১৩ নভেম্বর, ২০১০। ১৯৯৯ সালের ১২ জুন পেনসিলভানিয়ার বাকনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে তাঁর লিখিত এই ভাষণ বার্মায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত (১৯৮৭-৯০) বার্টন লেভিন পাঠ করে শোনান।
বাকনেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাওয়ার্ড অব মেরিট পাওয়া সত্যি গর্বের বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করার সুযোগ পাওয়াও অনেক গর্বের। সমাবর্তন অনুষ্ঠান যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অনেক আনন্দের মুহূর্ত। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অন্যান্য সদস্য এবং শিক্ষার্থী ও তাঁদের পরিবারের মিলনমেলা বসে। কয়েক বছরের প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ সফলভাবে সম্পন্ন করার কৃতিত্বের জন্য শিক্ষার্থীদের অভিবাদন জানাতে সবাই সমবেত হন সমাবর্তনে। ওহে গ্র্যাজুয়েটরা, তোমাদের জানাই উষ্ণ অভিনন্দন।
আমার নিজ দেশ বার্মা (মিয়ানমার)। সেখানে হাইস্কুল পাস করা শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগেরই দুর্ভাগ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পাওয়ার স্বপ্ন যেন সেখানে অসাধ্য, অবাস্তব। গণতন্ত্রের জন্য একটি স্বতঃস্ফূর্ত, জাতীয় আন্দোলনকে যখন ১৯৮৮ সালে সেনাবাহিনী দিয়ে দমন করা শুরু হলো, বার্মায় উচ্চশিক্ষা তখন থেকেই মুখ থুবড়ে পড়েছে। ১৯৯৬ সালের শেষ দিকে রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপদ্ধতি নিয়ে বিরক্তির বহিঃপ্রকাশ দেখিয়েছিলেন আন্দোলনের মাধ্যমে। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ করে দেওয়া হয়। সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান যাঁরা, তাঁরা হয়তো বিদেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে পারছেন। কিন্তু বার্মার হাজার হাজার তরুণ উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ তাঁদের কোনো অপরাধ নেই।
বার্মায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়াটা হতাশার প্রতীকী চিহ্ন। যার কারণে দক্ষ জনশক্তির ও প্রাকৃতিক সম্পদের একটা দেশ শিক্ষা-দীক্ষায় দুর্দশাগ্রস্ত, সামাজিকভাবে অস্থির ও অর্থনীতিতে হয়েছে হতদরিদ্র। এই হতাশার মূল কারণ জান্তা। ১৯৮৮ সালে বার্মার জনগণ গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনে নেমেছিল। তিন দশক আগ থেকে শাসকের আসনে থাকা বার্মা সোশ্যালিস্ট প্রোগ্রাম পার্টিকে প্রত্যাখ্যান করার বহিঃপ্রকাশ ছিল সেই আন্দোলন। নিজেদের গন্তব্য সম্পর্কে সচেতন বার্মিজরা সেদিন এমন একটা সরকার চেয়েছিল, জনগণের কাছে যে সরকারের জবাবদিহি থাকবে। এমনই একটি সরকার গঠন করতে ১৯৯০ সালের নির্বাচনে তাঁরা মূল্যবান ভোট দিয়েছিলেন। জান্তা সেই নির্বাচনের ফলাফল উপেক্ষা করে এবং শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে। সেই থেকে মৌলিক অধিকার, স্বাধীনতা ও জীবনের নিরাপত্তার জন্য জনগণকে লড়াই করতে হচ্ছে। বিশেষ করে জ্ঞানার্জনের জন্য সংগ্রাম করছেন তরুণেরা।
এ দাবি কি ন্যায়সংগত নয় যে বিশ্বের সব তরুণের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অধিকার আছে বার্মিজ তরুণদেরও? জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকার সনদের (ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন অব হিউম্যান রাইটস) ২৬ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘শিক্ষা গ্রহণের অধিকার সবারই আছে।’ ধারাটি আরও বলছে, ‘ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশে/উন্নয়নে, মানবাধিকার ও মানুষের মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য শিক্ষা দরকার। বোধশত্তি ও সহনশীলতা বৃদ্ধি এবং বিশ্বের জাতি, সংস্কৃতি ও ধর্মের মধ্যে বন্ধুত্ব স্থাপনে শিক্ষা সাহায্য করবে। এবং শান্তি রক্ষায় জাতিসংঘের কর্মকুশলকে সহযোগিতা করবে।’
সর্বজনীন মানবাধিকার সনদ অনুযায়ী, একটি দেশে শিক্ষা গ্রহণ কীভাবে সম্ভব, যে দেশে মানুষের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা খর্বিত এবং যে দেশে মানুষের মতামতের কোনো গুরুত্ব নেই, বরং বিদেশিদের সম্পর্কে চালু রাখা হয়েছে এক ধরনের ভীতি আর ঘৃণা?
যেসব দেশে জনগণের উন্নয়নের জন্য যোগ্য যৌক্তিক সরকার আছে, সেসব দেশে বাধাহীন শিক্ষাপদ্ধতি কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নয়। পাঠ্যসূচি, প্রাতিষ্ঠানিক আদর্শ, প্রশাসন ও অর্থ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মতামত প্রদান ও বিতর্কের জন্য উন্মুক্ত থাকতে পারে এবং এটাই হওয়া উচিত। কোনো ধরনের বাধাবিপত্তি ছাড়াই তরুণেরা যেন ছোট স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত তাঁদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেন, একটি সমাজ ও তার রাজনৈতিক অবকাঠামোতে এটিই সবচেয়ে গুরুত্ব পাওয়া উচিত। তাহলে শিক্ষাকে অধিকার বলে দাবি তোলার আর দরকারই পড়বে না। তাই এই সমাবর্তনে যাঁরা সমবেত হয়েছেন, তাঁদের সবার কাছে চাওয়া, আমার দেশ নিয়ে আপনারাও একটু ভাবুন। সেখানে শিশুরা ও তাদের মা-বাবারা সংগ্রাম করেন শুধু প্রাথমিক শিক্ষার জন্য।
আমাদের তরুণদের নিয়ে সমস্যাগুলো নিয়ে চিন্তা করুন, যাঁদের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি, তরুণদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার মানে দেশেরই ভবিষ্যৎ ঘোর অন্ধকার।
শিক্ষার মানে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক অর্জনই নয়। সর্বজনীন মানবাধিকার সনদে বলা হয়েছে, ‘শিক্ষা হলো অন্যকে বোঝার ক্ষমতা, সহনশীলতা ও বন্ধুত্ব।’ বিশ্বশান্তি রক্ষায় এগুলোই তো মূল উপাদান। আমি বারবার দেখেছি, এই ধারণা ও অন্যান্য নীতিবিধান যা আমাদের মানবিক হতে সাহায্য করে, আমাদের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য যথেষ্ট। বাকনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বার্মার দীর্ঘ ১৪০ বছরের বন্ধুত্ব। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে নানা বৈপরিত্য থাকা সত্ত্বেও এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশের মধ্যে অটুট বন্ধনই প্রমাণ করে যে শেখার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা এবং আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব বজায় রয়েছে।
যতটুকু সম্ভব, বাকনেল বার্মার জন্য বন্ধুত্ব দেখিয়েছে। আমাদের দেশ ও তার মানুষ, ইতিহাস, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অন্যান্য সমস্যায় বাকনেল পাশে দাঁড়িয়েছে। এটা হলো একে অপরকে বোঝা এবং বিপদে সাহায্য করার মানসিকতা থেকে আমরা ভৌগোলিক সীমারেখা ও সাংস্কৃতিক ভিন্নতাকে উপেক্ষা করে পারস্পরিক সহভাগিতা গড়ে তোলা। আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি, এমন একদিন আসবে, যেদিন বার্মার জনগণও বিশ্বের বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে পারিস্পরিক সহভাগিতা গড়ে তুলবে। আজকের এই সমাবর্তনে যাঁরা আমার দেশের মানুষ উপস্থিত আছেন, আশা করব, তাঁরা বিশ্ববাসীকে এটাই দেখাবেন যে শান্তিকামী, সত্যিকারের উন্নয়নশীল জাতি হিসেবে বার্মাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ। সহনশীলতা, সহমর্মিতা, ন্যায়বিচারের সেই বার্মায় থাকবে স্বাধীনতা। প্রস্ফুটিত হবে শিক্ষার আলো।
==========================
রাজনৈতিক আলোচনা- 'খালেদা জিয়ার লিখিত অনাস্থা, আপিল বিভাগের নীরবতা' রাজনৈতিক আলোচনা- 'কেউ কথা রাখেনি এবং গণতন্ত্রের বিকট চেহারা' বক্তব্য- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসাবে খায়রুল হককে প্রশ্নবিদ্ধ করাই তাদের উদ্দেশ্য শিল্প-অর্থনীতি 'করমুক্ত থাকার নানা চেষ্টা নোবেল বিজয়ীর অনাস্থা নয়, খালেদার আশঙ্কা ছিল ন্যায়বিচার না পাওয়ার খেলা- 'বাংলাদেশ তো আসলে জিততেই চায়নি!' আলোচনা- 'ড. ইউনূসের কেলেঙ্কারি!' খেলা- 'বাংলাদেশকে মাটিতে নামাল জিম্বাবুয়ে' 'ধরিত্রীকে বাঁচাতে কানকুনে সফল হতেই হবে' স্মরণ- 'চিত্রা ভট্টাচার্যের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি' রাজনৈতিক আলোচনা- 'আওয়ামী লীগে মিলন ও বিচ্ছেদের নাটক' খবর- উইকিলিকসের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক আলোচনা- 'প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সমাজের প্রত্যাশা আলোচনা- 'পায়ে পড়ি বাঘ মামা, বেঁচে থাকো' আন্তর্জাতিক- 'পুরনো বন্ধুকে ত্যাগ করতে প্রস্তুত চীন আমরাই পারি 'দ্বিতীয় রাজধানী' গড়তে খবর- পুলিশি হরতাল যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'উপদেশের খেসারত' গল্প- 'স্বপ্নভঙ্গের ইতিবৃত্ত' স্মরণ- 'জগদীশচন্দ্র বসুর কথা বলি' যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'প্রধানমন্ত্রী কি হরতাল চান? ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা রাজনীতির নতুমাত্রা
দৈনিক প্রথম আলো এর সৌজন্যে
লেখকঃ অং সান সু চি
হিউম্যানিটি ডট অর্গের ওয়েবসাইট থেকে অনুবাদ জাহাঙ্গীর আলম
এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
রাজনৈতিক আলোচনা- 'খালেদা জিয়ার লিখিত অনাস্থা, আপিল বিভাগের নীরবতা' রাজনৈতিক আলোচনা- 'কেউ কথা রাখেনি এবং গণতন্ত্রের বিকট চেহারা' বক্তব্য- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসাবে খায়রুল হককে প্রশ্নবিদ্ধ করাই তাদের উদ্দেশ্য শিল্প-অর্থনীতি 'করমুক্ত থাকার নানা চেষ্টা নোবেল বিজয়ীর অনাস্থা নয়, খালেদার আশঙ্কা ছিল ন্যায়বিচার না পাওয়ার খেলা- 'বাংলাদেশ তো আসলে জিততেই চায়নি!' আলোচনা- 'ড. ইউনূসের কেলেঙ্কারি!' খেলা- 'বাংলাদেশকে মাটিতে নামাল জিম্বাবুয়ে' 'ধরিত্রীকে বাঁচাতে কানকুনে সফল হতেই হবে' স্মরণ- 'চিত্রা ভট্টাচার্যের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি' রাজনৈতিক আলোচনা- 'আওয়ামী লীগে মিলন ও বিচ্ছেদের নাটক' খবর- উইকিলিকসের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক আলোচনা- 'প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সমাজের প্রত্যাশা আলোচনা- 'পায়ে পড়ি বাঘ মামা, বেঁচে থাকো' আন্তর্জাতিক- 'পুরনো বন্ধুকে ত্যাগ করতে প্রস্তুত চীন আমরাই পারি 'দ্বিতীয় রাজধানী' গড়তে খবর- পুলিশি হরতাল যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'উপদেশের খেসারত' গল্প- 'স্বপ্নভঙ্গের ইতিবৃত্ত' স্মরণ- 'জগদীশচন্দ্র বসুর কথা বলি' যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'প্রধানমন্ত্রী কি হরতাল চান? ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা রাজনীতির নতুমাত্রা
দৈনিক প্রথম আলো এর সৌজন্যে
লেখকঃ অং সান সু চি
হিউম্যানিটি ডট অর্গের ওয়েবসাইট থেকে অনুবাদ জাহাঙ্গীর আলম
এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
No comments