আলোচনা- 'আজও পাহাড় অশান্ত' by রফিকুল বাসার/ এ কে এম মকছুদ আহমেদ

শান্তি চুক্তির ১৩ বছরেও শান্তি আসেনি পার্বত্য চট্টগ্রামে। বাস্তবায়ন হয়নি চুক্তির বেশির ভাগধারাই। ভূমি বিরোধ এখনো মেটেনি। আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদ গঠন হলেও আইন অনুযায়ি ক্ষমতা দেয়া হয়নি। হয়নি পার্বত্যাঞ্চলের ভেতরের উদ্বাস্তু পুনর্বা-সন। তৈরী করা যায়নি স্থায়ী বাসিন্দাদের ভোটার তালিকা। অন্যদিকে চুক্তি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে রয়েছে মতপার্থক্য। যা এখনো মেটেনি। এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির ১৩ বছর উপলক্ষে ঢাকাসহ তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির খাগড়া-ছড়ি ও বান্দরবানে বিভিন্ন সংগঠন পৃথক কর্মসূচি নিয়েছে।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে দেশের সংবিধানকে অনুসরণ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি করা হয়। তখন গঠন করা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির আহবায়ক আবুল হাসনাত আব্দুলস্নাহ এবং জন-সংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা এতে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু তের বছর অতিবাহিত হলেও চুক্তির পূর্ণাঙ্গ সুফল পাওয়া যায়নি।
সরকার বলছে, চুক্তি বাস্তবায়নে আমরা আন্তরিক। পর্যায়ক্রমে চুক্তির পুরোটা বাস্তবায়ন করা হবে। জনসংহতি সমিতি বলছে, বর্তমান সরকার প্রায় দুই বছর পার করলেও এখন পর্যন্ত চুক্তি বাস্তবায়নে তেমন কোন উদ্যোগই নেয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামের পশ্চাদপদ ও বিলুপ্তপ্রায় জুম্ম জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব সংরক্ষণ ও বিকাশের জন্যই এই চুৃক্তি করা হয়। লক্ষ্য ছিল অনগ্রসর আদিবাসী জুম্ম জনগণ যাতে নিজস্ব ভাষা-সংস্কৃতি তথা জাতীয় অধিকার সংরক্ষণ করতে পারে। এ অঞ্চলের স্থায়ী অধিবাসীরা সর্বক্ষেত্রে উন্নতির মাধ্যমে সমতল বাসীদের সমান কাতারে আসতে পারে। পাহাড়িরা আশা করেছিল, এই চুক্তির মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ সম্বলিত পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ শাসিত অঞ্চলের মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। আদিবাসী জুম্ম ও স্থায়ী বাঙালি জনগণ নিজেদের উন্নয়ন নিজেরাই নির্ধারণ করতে পারবে এবং তাদের পূর্ণ অংশগ্রহণ ও অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হবে। কিন্তু এসব মৌলিক বিষয়গুলো এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।
চুক্তির শর্ত পূরণ না হওয়ায় নির্বাচন ছাড়াই তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ প্রায় অকার্যকর হয়ে আছে। ২১ বছর নির্বাচন না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বশাসিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো জনপ্রতিনিধিত্ব সুলভ প্রতিষ্ঠান হতে পারছে না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) বলেছেন, বর্তমান সরকার নির্বাচনী ইশতেহারে এই চুক্তি বাস্তবায়নের অঙ্গিকার করলেও তার কার্যকর কোন পদক্ষেপ এখনো নেয়নি। এখন পর্যন্ত চুক্তি বাস্তবায়নে কোন সময়সূচিও ঘোষণা করেনি। এজন্য আদিবাসীরা তাদের অধিকার আদায়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবে। তিনি বলেন, সরকার একটি কমিটি গঠন করলেও তারা কার্যকর কোন কার্যক্রম করছে না। বরং জুম্মদের জমি দখল করে তাদের সংখ্যালঘু করার চেষ্টা চলছে। ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ হলেও কমিশনের আইনের ২০০১ এর কয়েকটি ধারা এখনো সংশোধন হয়নি। অনেক পাহাড়ি শরণার্থী তাদের জমি ফিরে পায়নি। পার্বত্য জেলা পরিষদ এখনো অকার্যকর হয়ে আছে। আঞ্চলিক পরিষদ আইন কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ইউপিডিএফ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়নি। এখনো আদিবাসীরা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি। শান্তি চুক্তি নিয়ে কথা বলতে চাইলে আবুল হাসনাত আব্দুলস্নাহ এবিষয়ে কোন মন্তব্য করবেন না বলে তার একান্ত সচিব জানান।
পার্বত্য চুক্তির ১৩ তম বর্ষপূর্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার বলেছেন, শান্তি চুক্তির পর তা বাস্তবায়নে আমরা সময় পেয়েছি মাত্র ৪ বছর। যার জন্য এর বাস্তবায়ন কাজ আগায়নি। ৪ বছরে শান্তি চুক্তির যতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে তাতে বলবো না যে সন্তষ্ট। কিন্তু খুব বেশী অসন্তুষ্টও না। শান্তি চুক্তির স্বপক্ষের সকল শক্তিকে এক জাগায় এসে দাঁড়াতে না পারলে তা বাস্তবায়নে দেরি হবে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ আইন অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। শান্তি চুক্তির ফলে আজকে বিদেশী দাতাদেশগুলো পার্বত্য এলাকার উন্নয়নে এগিয়ে এসেছে আর এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করে।
পাহাড়ে চলমান সংঘাত বন্ধে সব দলের মধ্যে একটি আলোচনার উদ্যোগ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহবান জানিয়েছেন চাকমা রাজা দেবশিষ রায়। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে গতকাল চাকমা রাজা বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় আদিবাসীদের মাঝে হতাশা বাড়ছে। ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বেড়ে সকল অর্জনকে মস্নান করে দিচ্ছে। পার্বত্য চুক্তি নিয়ে মতপার্থক্যের কারণে পার্বত্য শান্তিচুক্তির সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে গত ২০০৭ সালে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করা হয়। এ বিষয়টি এখন আপীল বিভাগে বিচারাধীন।
এদিকে আজ পার্বত্য চুক্তির তের বছর পুর্তিতে তিন পার্বত্য জেলায় পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে আঞ্চলিক দলগুলো। পার্বত্য জনসংহতি সমিতি জেএসএস কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় এবং রাঙামাটিতে, ইউনাইটেড পিপলস ডেমক্রেটিকস ফ্রন্ট ইউপিডিএফ ঢাকা ও খাগড়াছড়িতে, আওয়ামী লীগ তিন জেলায় এবং পার্বত্য সম-অধিকার আন্দোলন চুক্তি বাতিলের দাবিতে রাঙ্গামাটিতে সমাবেশ করবে।
প্রসঙ্গত, চুক্তি অনুযায়ী ১৯৯৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারী খাগড়াছড়ি ষ্টেডিয়ামে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে শান্তিবাহিনীর ৭৩৯ সদস্যের প্রথম দলটি সন্তু লারমার নেতৃত্বে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অস্ত্রসমর্পন করেন। পরবতর্ীতে ১৬ ও ২২ ফেব্রুয়ারী ৪ দফায় শান্তিবাহিনীর মোট এক হাজার ৯৪৭ জন অস্ত্র সমর্পণ করেন।
===========================
আন্তর্জাতিক- 'চীনের দৃষ্টিতে এক হবে দুই কোরিয়া ইরাকে গণতন্ত্র চাননি মুবারক'  আন্তর্জাতিক- 'তরুণদের ভবিষ্যৎ মানে দেশের ভবিষ্যৎ'  রাজনৈতিক আলোচনা- 'খালেদা জিয়ার লিখিত অনাস্থা, আপিল বিভাগের নীরবতা'  রাজনৈতিক আলোচনা- 'কেউ কথা রাখেনি এবং গণতন্ত্রের বিকট চেহারা'  বক্তব্য- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসাবে খায়রুল হককে প্রশ্নবিদ্ধ করাই তাদের উদ্দেশ্য  শিল্প-অর্থনীতি 'করমুক্ত থাকার নানা চেষ্টা নোবেল বিজয়ীর  অনাস্থা নয়, খালেদার আশঙ্কা ছিল ন্যায়বিচার না পাওয়ার  খেলা- 'বাংলাদেশ তো আসলে জিততেই চায়নি!'  আলোচনা- 'ড. ইউনূসের কেলেঙ্কারি!'  খেলা- 'বাংলাদেশকে মাটিতে নামাল জিম্বাবুয়ে'  'ধরিত্রীকে বাঁচাতে কানকুনে সফল হতেই হবে'  স্মরণ- 'চিত্রা ভট্টাচার্যের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি'  রাজনৈতিক আলোচনা- 'আওয়ামী লীগে মিলন ও বিচ্ছেদের নাটকখবর- উইকিলিকসের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র  রাজনৈতিক আলোচনা- 'প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সমাজের প্রত্যাশা আলোচনা- 'পায়ে পড়ি বাঘ মামা, বেঁচে থাকো'  আন্তর্জাতিক- 'পুরনো বন্ধুকে ত্যাগ করতে প্রস্তুত চীন  আমরাই পারি 'দ্বিতীয় রাজধানী' গড়তে  খবর- পুলিশি হরতাল  যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'উপদেশের খেসারত'  গল্প- 'স্বপ্নভঙ্গের ইতিবৃত্ত'  স্মরণ- 'জগদীশচন্দ্র বসুর কথা বলি'  যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'প্রধানমন্ত্রী কি হরতাল চান?  ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা রাজনীতির নতুমাত্রা


দৈনিক ইত্তেফাক এর সৌজন্যে
লেখকঃ  রফিকুল বাসার ও এ কে এম মকছুদ আহমেদ


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.