বান কি মুনের ওপর নজরদারি করতে বলেছেন হিলারি

জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনসহ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিদের ওপর নজরদারি করতে মার্কিন কূটনীতিকদের নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলা।
নজরদারি ওয়েবসাইট উইকিলিকসের প্রকাশ করা আড়াই লাখ বার্তায় এ রকম আরও অসংখ্য সংবেদনশীল তথ্য বেরিয়ে এসেছে। বিশ্বব্যাপী মার্কিন দূতাবাসগুলোর নিজেদের মধ্যে বিনিময় করা ও ওয়াশিংটনে পাঠানো এসব তথ্যের সিংহভাগই পাকিস্তান, ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, ইয়েমেন ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট। প্রকাশ করা বেশির ভাগ বার্তাই গত তিন বছরের মধ্যে পাঠানো।
গোপন এসব তথ্য ফাঁস করে দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রসহ অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও ইরাক সরকার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, এর ফলে সারা বিশ্বে কূটনৈতিক সংকট দেখা দেবে।
গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমস, যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান, ফ্রান্সের ল্য মঁদে, জার্মানির ডের স্পিগেল ও স্পেনের এল পাইসে একযোগে এসব বার্তা প্রকাশিত হয়।
একটি বার্তায় দেখা গেছে, পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সরকার খুবই শঙ্কিত। তারা বলেছে, পাকিস্তানের অর্থনীতি ভেঙে পড়ায় দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা পারমাণবিক সরঞ্জাম বিক্রি করে দিতে পারে।
অপর একটি বার্তায় দেখা গেছে, সন্ত্রাস দমনসহ নানা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করলেও ব্রিটিশ রাজনীতিবিদদের সমালোচনায় পিছিয়ে নেই ওয়াশিংটন। তাদের সমালোচনা থেকে বাদ যাননি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও।
একটি বার্তায় বলা হয়, মার্কিন কূটনীতিকেরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছেন, রুশ সরকার ও তাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য মাফিয়া চক্রকে ব্যবহার করছে। মাফিয়াদের সঙ্গে তাদের এ সম্পর্ক এতই জোরালো যে, দেশটি কার্যত মাফিয়া দেশে পরিণত হয়েছে।
রুশ প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুতিন ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বারলুসকোনির মধ্যকার সম্পর্ক নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন মার্কিন কূটনীতিকেরা। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, আফগান সরকারের দুর্নীতির বিষয়টি তাঁদের চোখের সামনেই ঘটছে। দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট জিয়া মাসুদ নগদ পাঁচ কোটি ২০ লাখ ডলার নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যান। তাঁরা বলেন, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই মানসিক বৈকল্যে ভুগছেন।
একটি বার্তায় দেখা গেছে, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদকে নাৎসি বাহিনীর প্রধান এডলফ হিটলারের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের ব্যাপারে বলা হয়েছে, তিনি খুবই সৃজনশীল। তবে ঝুঁকি নিতে একদমই পছন্দ করেন না তিনি।
আরেক বার্তায় দেখা যায়, সৌদি আরবের অনেকে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত। তাঁরা এসব সংগঠনের পেছনে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঢালছেন। ইয়েমেন ও ওয়াশিংটনের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তির কথাও ফাঁস করে দেওয়া হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, ইয়েমেনে আল-কায়েদার লক্ষ্যবস্তুতে যুক্তরাষ্ট্র বোমা হামলা চালাবে কিন্তু এর দায়িত্ব নেবে ইয়েমেন সরকার। গত জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক কমান্ডার জেনারেল ডেভিড পেট্রাউসের সঙ্গে এক বৈঠকে ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ সালেহ বলেন, ‘আমরা সব সময়ই বলব, এসব বোমা হামলা আমরাই চালিয়েছি, আপনারা (যুক্তরাষ্ট্র) নন।’
এক বার্তায় মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট গেটস ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য ছাড়াই ইরানে হামলা চালানোর সামর্থ্য রাখে ইসরায়েল। তবে এককভাবে এই হামলা চালালে তা সফল নাও হতে পারে। লিবিয়ার প্রবীণ নেতা মুয়াম্মের গাদ্দাফি সম্পর্কে বলা হয়েছে, পানির ওপর দিয়ে তিনি বিমানে চড়তে ভয় পান। সাধারণত নিচতলাতে থাকতেই পছন্দ করেন তিনি। কোথাও গেলে তাঁর বিশ্বস্ত ইউক্রেনিয়ান সেবিকাকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে কখনোই ভুল হয় না তাঁর।
উইকিলিকসের তথ্য প্রকাশের নিন্দা জানিয়ে হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গোপন ও জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি স্পর্শকাতর তথ্য প্রকাশের নিন্দা জানাচ্ছি আমরা।’ তবে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসানজে বলেন, মার্কিন কর্তৃপক্ষ দায়ভার নিতে ভয় পাচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়া এসব বার্তা প্রকাশের সমালোচনা করে উইকিলিকসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল রবার্ট ম্যাকলিল্যান্ড বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার উইকিলিকসের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিলে তাতে সমর্থন জানাবে অস্ট্রেলীয় সরকার। ইরাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোশিয়ার জিবারি বলেন, গোপন তথ্য প্রকাশের ফলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘ইরাকিরা কঠিন সময় পার করছে। তাঁরা বহুল প্রতীক্ষিত সরকার গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। আশা করছি, ইরাকের রাজনীতিবিদ ও নেতাদের মধ্যে এ ঘটনা কোনো প্রভাব ফেলবে না।’ ফ্রান্স সরকারের মুখপাত্র ফ্র্যাসিয় বারোন বলেন, গোপন তথ্য প্রকাশের ফলে গণতান্ত্রিক অধিকার হুমকির মুখে পড়বে।

No comments

Powered by Blogger.