মৃত্যুর খবর জানিয়ে দেবে সফটওয়্যার!
হার্টঅ্যাটাক
বা ফুসফুসের আক্রমণের অন্তত ছয় ঘণ্টা আগে সফটওয়্যারের অ্যালগোরিদম
ব্যবস্থা সংকেত দিতে পারবে। জানিয়ে দিতে পারবে মৃত্যুর খবর। এ সময় চাইলে
আপনি চিকিৎসককে ডেকে বাঁচার শেষ চেষ্টা করতে পারেন। এটি কল্পকাহিনীর মতো
শোনালেও এখন সেটি সম্ভব হতে চলেছে। এই সফটওয়্যারটি তৈরি করেছে এক্সেল
মেডিকেল সার্ভিসের মহাব্যবস্থাপক ল্যান্স বার্টনের কোম্পানি। সফটওয়্যারের
অ্যালগোরিদম ব্যবস্থার নামকরণ করা হয়েছে ভিসেনশিয়া সেফটি ইনডেক্স। খবর
বিবিসির। কোম্পানির মহাপরিচালক বলেন, এটি আসলে একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম,
যা একজন রোগীর শারীরিক লক্ষণ যাচাই-বাছাই করে হার্টঅ্যাটাকের শিকার হওয়ার
অন্তত ৬ ঘণ্টা আগে সংকেত দিতে পারে। ফলে চিকিৎসক এবং সেবিকারা দ্রুত
ব্যবস্থা নিতে পারবেন। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন দফতর এ রকম
একটি সফটওয়্যারের অনুমোদন দিয়েছে, যেটি হৃৎপিণ্ড বা ফুসফুস হঠাৎ বন্ধ
হয়ে যাওয়া সম্পর্কে আগাম সতর্কবার্তা দিতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্রের বেশ
কয়েকটি হাসপাতাল এ ব্যবস্থা চালু করেছে। এক্সেল মেডিকেল সার্ভিসের
মহাব্যবস্থাপক ল্যান্স বার্টন বলেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগগুলো এখন একটি বড়
সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। মানুষ আগের চেয়ে বেশি দিন বাঁচেন, কিন্তু তারা
এখন অনেক দীর্ঘমেয়াদি রোগেও আক্রান্ত হচ্ছেন। রোগীদের নজরদারিতে রাখা হলেও
চিকিৎসক বা সেবিকারা তখনই সেবা দিতে পারেন, যখন কেউ ভয়াবহ কোনো ঘটনার
শিকার হন। আগে তাদের সেটি বুঝতে পারা সম্ভব নয়।
তাই এ সফটওয়্যারটি তৈরি
করা হয়েছে। নির্মাতারা বলেন, এটি ব্যবহারের জন্য আলাদা বিশেষ কোনো
যন্ত্রপাতির দরকার হবে না। হাসপাতালে এখন যে নজরদারি ব্যবস্থাগুলো চালু
রয়েছে, সেগুলো ব্যবহার করেই নতুন এ প্রযুক্তি কাজ করবে। বাস্তবতা হল- অনেক
হাসপাতালেই রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসক বা কর্মী থাকে না। এমনকি একজন
রোগীর সব তথ্য যাচাই-বাছাই করাও হয়তো তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। আর এ
সমস্যারই সমাধান দেবে ওয়েভ ক্লিনিক্যাল প্লাটফর্ম নামে এ সফটওয়্যার। সেটি
রোগীর বিভিন্ন তথ্য যাচাই-বাছাই এবং শারীরিক অবস্থা, ধরন পর্যালোচনা করবে,
যা হয়তো মানুষের সাধারণ চোখে ধরা পড়ে না। জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের
গবেষণা অনুযায়ী, চিকিৎসার ভুলের কারণে যুক্তরাষ্ট্রই অন্তত ১০ শতাংশ
রোগীর মৃত্যু হয়, যা দেশটির মানুষের মৃত্যুর তৃতীয় বড় কারণ। এখন ওয়েব
সফটওয়্যার নির্মাতারা আশা করছেন, এর মাধ্যমে বছরে এ ধরনের অন্তত আড়াই লাখ
মানুষের মৃত্যু ঠেকানো যাবে। সফটওয়্যারটি হার্টবিট, ফুসফুসের শ্বাস
নেয়ার ধরন, রক্তের চাপ, শরীরের তাপমাত্রা আর অক্সিজেনের মাত্রা যাচাই
করবে। এসব তথ্য স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের ফোন, ট্যাবলেট বা কম্পিউটারেও দেখতে
পারবেন। ফলে বিছানার পাশে না এসেও তারা যে কোনো স্থানে বসে রোগীর ওপর
নজরদারি করতে পারবেন। রোগীদের ০-৫ মাত্রায় নজরদারি করা হবে। কোনো রোগীর
অবস্থা যদি ৩-এর বেশি হয়ে যায়, তখনই সফটওয়্যারটি সতর্কবার্তা পাঠাতে
শুরু করবে। তবে ওয়েবের সবচেয়ে বড় সাফল্য হল, এই সফটওয়্যারের
অ্যালগোরিদম ব্যবস্থা, যার নামকরণ করা হয়েছে ভিসেনশিয়া সেফটি ইনডেক্স।
প্রথমবারের মতো মার্কিন স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এ ধরণের কোনো স্বাস্থ্য
সফটওয়্যারের অনুমোদন দিয়েছে। তবে এর মাধ্যমে সব রোগীকেই যে বাঁচানো যাবে,
সেই আশা করছেন না বিজ্ঞানীরা। তারা এখন শুধু সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা
নিশ্চিত করে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে চাইছেন। এর মধ্যেই সফটওয়্যারটি
পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হয়েছে এবং সেখানে আশাতীত সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে।
এখনও যদিও এই সফটওয়্যারটি শুধু নিবিড় পরিচর্যাকন্দ্রগুলোয় ব্যবহার করা
সম্ভব।
No comments