গাজীপুর দখলে সাঁড়াশি অভিযান by লায়েকুজ্জামান, কাফি কামাল ও এমএ হায়দার সরকার
এমন দৃশ্য বাংলাদেশে অভিনব নয়। আবার
একেবারে নিয়মিতও নয়। নির্বাচনে কে-ই বা হারতে চায়? কিন্তু একটি সিটি
করপোরেশন নির্বাচন জিততে সরকার যখন তার সর্বশক্তি নিয়োগ করে তা বিস্ময়ের
জন্ম না দিয়ে পারে না।
যদিও চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে
পরাজয়ের পর সরকারের মিশন গাজীপুর একেবারে আচমকা নয়। ঠিক এই মুহূর্তে
বাংলাদেশের রাজনীতির কেন্দ্র যেন গাজীপুর, যেখানে নাটকের শুরুটা হয়েছিল
জাহাঙ্গীর আলমকে ঘিরে। এক স্বল্পখ্যাত প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে
হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে। যদিও ছোট গল্পের মতো সে গল্প
এখনও শেষ হয়নি। তবে এত সব গল্পের পরও এখন পুরো গাজীপুর দখলে নেয়ার চেষ্টায়
রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। বসে নেই বিএনপি-ও। এ রিপোর্ট যখন লেখা
হচ্ছে তখন দলটির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্যসহ অনেক নেতাই অবস্থান করছেন
গাজীপুরে। প্রতিদিন রীতিমতো মহড়া দিচ্ছেন বিরোধী জোটের সদস্যরা। অন্যদিকে,
সরকারি দলের কমপক্ষে ১০০ হাইপ্রোফাইল নেতা অবস্থান করছেন গাজীপুরে। নিজের
নির্বাচনী এলাকায় যাওয়ার সময় না পেলেও ক্ষমতাসীন দলের ৭০ জনের মতো এমপি
রয়েছেন গাজীপুরে। বিস্ময়কর হলেও বহিরাগত ক্ষমতাসীন নেতারা রয়েছেন প্রশাসনের
প্রটেকশনে। সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় অবস্থান করছেন তারা। নির্বাচনী
কেন্দ্রের বাইরে যখন ছাত্রলীগ নেতারা তখন সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের কেন্দ্রের
অভ্যন্তরে রাখারও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। খুঁজে খুঁজে বের করা হয়েছে এক সময়
ছাত্রলীগের রাজনীতি জড়িত থাকা বর্তমান সরকারি কর্মকর্তাদের। তাদের নিয়োগ
দেয়া হয়েছে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রিজাইডিং
অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ১০১ জনকে। যাদের ৯০ জনই ক্ষমতাসীন দলের
রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। নির্বাচন কমিশনে এ নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে আপত্তি
জানানো হলেও তা আমলে নেয়া হয়নি। উল্টো গাজীপুর জুড়েই চলছে অভিযান। সাদা
পোশাকের শৃঙ্খলাবাহিনী হানা দিচ্ছে বিএনপি-জামায়াত আর হেফাজত সমর্থকদের
বাড়ি বাড়ি। রাজনৈতিক মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের আগ্রহ এখন
সীমাহীন। গাজীপুরের পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া মনিটর করা হচ্ছে উত্তরার ৯
নম্বর সেক্টরের রোজ গার্ডেন নামের একটি ভবন থেকে। সেখানে প্রতিদিন জড়ো
হচ্ছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। স্বাস্থ্যসচিব এমএম নিয়াজ, বাংলাদেশ
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামিম মোহাম্মদ আফজাল, কৃষি গবেষণা
ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মদন কুমার সাহার বিরুদ্ধেও
অভিযোগ উঠেছে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার। আজমত-মান্নানের লড়াই ছাপিয়ে
গাজীপুর নির্বাচন এখন পরিণত হয়েছে জোট-মহাজোটের লড়াইয়ে। চার সিটি করপোরেশন
নির্বাচনে পরাজয়ের পর গাজীপুরে যে কোন মূল্যে জেতার চেষ্টা করছে ক্ষমতাসীন
আওয়ামী লীগ। এই মরিয়া চেষ্টার কারণে এরই মধ্যে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে
গাজীপুরে। এমএ মান্নানের পক্ষের নির্বাচনী এজেন্টদের কেনার চেষ্টাও চলছে।
ভোটার সংখ্যার চেয়ে বেশি ব্যালট ছাপার গুঞ্জনও ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও গাজীপুরে
সরকারের জেতার মরিয়া চেষ্টা নিয়ে খোদ আওয়ামী লীগেই নানা মত রয়েছে। সরকারেরই
কেউ কেউ মনে করছেন, চার সিটি করপোরেশন নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে
অনুষ্ঠানের কারণে সরকার যে সুনাম কুড়িয়েছে গাজীপুরে তা নষ্ট করা ঠিক হবে
না। তারা বলছেন, মাগুরা উপ-নির্বাচনের কারণে বিএনপির গায়ে যে কালি লেগেছিল
গাজীপুরে আওয়ামী লীগের গায়ে সে কালি লাগানো ঠিক হবে না।
চাপে তটস্থ প্রশাসন: পুলিশ প্রশাসনের গোপন বৈঠকের খবরে তোলপাড় চলছে গাজীপুর জুড়ে। বলা হচ্ছে, সরকারি দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর পক্ষে ওই বৈঠকটি হয়েছিল। এমন অভিযোগ প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী অধ্যাপক এমএ মান্নানের পক্ষ থেকেও তোলা হয়েছে। গাজীপুর পুলিশ প্রশাসনের ওই গোপন বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় রোববার রাতে। সেখানে গাজীপুরের পুলিশ সুপার সহ পুলিশের বাছাই করা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন বলে সূত্রে জানা গেছে। সূত্রটি দাবি করেছে সরকারের বিশেষ চাপে ওই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে নির্বাচনের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনার সঙ্গে ১৪ দলের প্রার্থীর বিষয়টিও আলোচিত হয়। বৈঠকটিতে কেবলমাত্র বিশ্বস্ত কিছু পুলিশ কর্মকর্তাকে উপস্থিত থাকতে বলা হয় এবং তাদের নিয়েই বৈঠক হয়। তবে গাজীপুরের পুলিশ সুপার গোপন বৈঠকের কথা পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। অন্যদিকে আরেকটি গোপন বৈঠকের বিষয়ে গতকাল রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন ১৮ দল সমর্থিত প্রার্থী এমএ মান্নান নিজে। লিখিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন বর্তমান স্বাস্থ্য সচিব নিয়াজউদ্দিন মিয়া গত ১লা জুলাই জয়দেবপুর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে বসে প্রিজাইডিং অফিসারদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করে মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে জিতিয়ে আনার ছক আঁকা হয়েছে। ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের এমপি কৃষিবিদ আবদুল মান্নান উপস্থিত ছিলেন বলে তিনি লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন। অভিযোগে তিনি আরও বলেছেন সেখানে উপস্থিত ছিলেন কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের রফিকুল ইসলাম মণ্ডল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর আওলাদ হোসেন এবং প্রিজাইডিং অফিসারদের মধ্যে ছিলেন সাইন্টিফিক কর্মকর্তা বিমল কুমার কুণ্ডু, ফয়েজউল্লাহ, ডা. শরাফ হোসেন, হারুনার রশিদ, ওহিদুজ্জামান প্রমুখ। এমএ মান্নানের অভিযোগ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে রিটার্নিং অফিসার মতিয়ার রহমান বলেন, এমএ মান্নানের দেয়া এমন একটি লিখিত অভিযোগ গতকালই হাতে পেয়েছি। এ বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখবো, সঠিক হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে গত কয়েক দিনে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, পুরো নির্বাচনী এলাকায় সরকারের চাপে তটস্থ অবস্থায় রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সরকারি দলের অর্ধশত সংসদ সদস্য, দলের সিনিয়র নেতারাও চষে বেড়াচ্ছেন গাজীপুরে।
এদিকে কঠোর গোপনীয়তার মাঝে অনুষ্ঠিত পুলিশ প্রশাসনের গোপন বৈঠক সম্পর্কে মুখ খুলতে নারাজ গাজীপুর জেলা পুলিশের কর্তাব্যক্তিরা। প্রকাশ্যে তারা বলছেন এমন কোন গোপন বৈঠক হয়নি। তবে পুলিশ প্রশাসনের গোপন বৈঠকের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে একাধিক সূত্রে। গোপন ওই বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন এমন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন ওই বৈঠকের কথা। তিনি জানিয়েছেন বৈঠকে নির্বাচন নিয়েই অলোচনা হয়েছে। নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা কি হবে সে বিষয়ে কথা হয়েছে। উপরের নির্দেশ কি সে বিষয়ে কথা হয়েছে। বৈঠকে অংশ নেয়া ওই পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকেই জানা গেছে নির্বাচন নিয়ে তটস্থ আছে পুলিশ প্রশাসন। চাপের মুখে কাজ করতে হচ্ছে তাদের। সূত্রমতে নির্বাচনের দিন সিটি করপোরেশন এলাকায় দায়িত্ব পালন করতে গাজীপুরের পুলিশ ছাড়াও বাইরের জেলাগুলো থেকে আনা হচ্ছে ৮ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং ৩২ জন সহকারী পুলিশ সুপার। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের মধ্যে আনা হচ্ছে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয় কুমার বসাক, সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোকতার হোসেন, ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার, কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফুল ইসলাম, মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন মজুমদার, নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোখলেসুর রহমান ও শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলামকে। এছাড়াও নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে গাজীপুরে আসছেন ৩২ জেলার সহকারী পুলিশ সুপাররা। যে সব জেলা থেকে সহকারী পুলিশ সুপাররা আসছেন সে জেলাগুলো হচ্ছে মাদারীপুর, ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, জামালপুর, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, যশোর, কুষ্টিয়া, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভী বাজার, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, নওগাঁ, রাজশাহী এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম আরআরএফ থেকে। বিএনপির অভিযোগ সিভিল প্রশাসনের মতো পুলিশ প্রশাসনকেও আজমত উল্লা’র উপযোগী করে সাজানো হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্ব বণ্টনের ক্ষেত্রে সরকারের উপর মহলের নির্দেশ অনুসরণ করা হচ্ছে। গাজীপুর জেলা পুলিশের গোপন বৈঠকের অভিযোগের বিষয়ে গাজীপুরের পুলিশ সুপার আবদুল বাতেন বলেন, আমি তো এমন কিছু জানি না। আমরা পুলিশের প্রয়োজনে পুলিশি ব্যবস্থা নিয়ে বৈঠক করি, এটা আমাদের করতে হয়। গোপন বৈঠক করতে যাবো কেন? এটা করেন রাজনীতিবিদেরা, আমাদের কোন গোপন বৈঠকের প্রয়োজন নেই। কারণ পুলিশ দলনিরপেক্ষ, পুলিশ কারও পক্ষে না। আমরা সে ভাবেই কাজ করছি, সে ভাবেই করবো।
রাজনীতির কেন্দ্র এখন গাজীপুর: গাজীপুর যেন দেশের রাজনীতির কেন্দ্র। প্রধান দুই রাজনৈতিক জোটের মর্যাদার লড়াইয়ে হারতে চাইছেন না কেউই। চার সিটি নির্বাচনে হারের পর অন্তত এই সিটি করপোরেশনে জয় ঘরে তুলতে মরিয়া সরকারি দল। ১৮ দল চার সিটির জয়ের ধারা রক্ষায় গাজীপুরকেও ধরে রাখতে চালাচ্ছে প্রাণান্ত চেষ্টা। জাতীয় নির্বাচনের আগে এ নির্বাচন নিয়ে কৌতূহল দেশজুড়ে। সারা দেশের দৃষ্টিও এখানে। শেষ মেয়াদে সরকারের সামনেও এই নির্বাচন অগ্নিপরীক্ষা। প্রেস্টিজ লড়াইয়ে দুই দলের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে সংসদ সদস্য, সাংস্কৃতিক কর্মী সবাই ছুটছেন গাজীপুর। রাজনৈতিক দলের নেতাদের পদভারে গাজীপুর যেন রাজনীতির রাজধানীতে পরিণত হয়েছে। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তারা ছুটছেন গাজীপুরের অলি-গলি। ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজনের বসবাস এখানে। তাই সেসব জেলার আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতারা এখন নিজ নিজ অঞ্চলের লোকজনকে নিয়ে মতবিনিময় ও বৈঠক করছেন একের পর এক। এতে গাজীপুরের আদি বাসিন্দাদের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি হয়েছে বহিরাগতদের। আলোচনায় উঠে এসেছেন গাজীপুরে বসবাসরত বিভিন্ন জেলা সমিতির নেতারা। এদিকে জেলা নেতাদের পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন সরকারদলীয় এমপিরা। গত দু’দিন এরকম কয়েকটি বৈঠক হয়েছে চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয় ও ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন জায়গায়। গতকাল সরকার দলীয় দুই এমপি আবদুল মান্নান ও সানজিদা খানমের নেতৃত্বে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে গোপন বৈঠকের সংবাদ সংগ্রহ করতে লাঞ্ছিত হয়েছেন এক সাংবাদিক। তাকে মারধর ও তার ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। পরে সাংবাদিকরা খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করেন। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ওই বৈঠকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নিলেও সেটা ছিল একান্তই সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন প্রস্তুতিমূলক সভা। সোমবার রাতে চান্দনা হাইস্কুলে এ ধরনের আরেকটি বৈঠকে অংশ নেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা পেশাজীবী সংগঠনের নেতা পরিচয়ে ওইসব বৈঠকে আজমতউল্লা খানের সমর্থন জানিয়ে বক্তব্যও দিয়েছেন। এছাড়া নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গাজীপুরে অবস্থান করছেন অর্ধশতাধিক সাবেক আমলা। এমনকি বর্তমান স্বাস্থ্য সচিব এমএম রিয়াজউদ্দিন তার বাড়ি পুবাইল এলাকায় বৈঠকের মাধ্যমে আজমতউল্লাহর পক্ষে প্রচারণা চালানোর খবরও আলোচিত হচ্ছে গাজীপুরে। ওদিকে আওয়ামী লীগ-বিএনপির অন্তত দুই ডজন হেভিওয়েট নেতা ও সরকারদলীয় অর্ধশতাধিক এমপি সপ্তাহ ধরে অবস্থান করছেন গাজীপুরে। রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীদের বাগানবাড়ি ও রেস্টহাউজগুলোতে এখন উপচেপড়া ভিড়। দুই শতাধিক নেতা প্রতিদিন সাত সকালে ছুটছেন গাজীপুর। দিনভর স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন মেয়রপ্রার্থীদের পক্ষে। স্থানীয়রা আগে কখনও একসঙ্গে এত হেভিওয়েট নেতাকে গ্রামে বা হাটবাজারে খেটে খাওয়া মানুষের সঙ্গে দেখেননি। তাই এলাকাবাসী অনেকটা স্বপ্ন দেখার মতো হাতের নাগালে পেয়ে বেশ আগ্রহের সঙ্গে এসব ভিআইপিকে সময় দিচ্ছেন। শুক্রবার গাজীপুরে এসেছেন আওয়ামী লীগের ৪০ এমপি। পরদিন শনিবার একযোগে প্রচারণা চালান বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও। প্রতিদিন এত এমপির উপস্থিতি দেখে অবাক ভোটাররাও। সরকার সমর্থিত শ্রমিক সংগঠনের মাধ্যমে শুরু হয় আঞ্চলিক মতবিনিময়। কয়েকদিন ধরে দিনাজপুরের এমপি খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও বগুড়ার এমপি আবদুল মান্নান মিলে গাজীপুরে কর্মরত উত্তরাঞ্চলের শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তাদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম সিরাজগঞ্জ-পাবনা, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ বৃহত্তর বরিশাল ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদুল হাসান রিপন গাইবান্ধাসহ উত্তরাঞ্চলের লোকজনকে নিয়ে মতবিনিময় ও আজমত উল্লাহর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। গতকাল চাঁদপুর ও কুমিল্লার লোকজনকে নিয়ে প্রচারণা চালান আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। বিপরীতে গাজীপুরে কর্মরত কুমিল্লার লোকজনকে নিয়ে কুমিল্লা সমিতির ব্যানারে পরপর দু’দিন মতবিনিময় করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। একই ভাবে বৃহত্তর ফরিদপুরের লোকজনকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ ও শ্রমিক নেতা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর, উত্তরাঞ্চলের শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু। সভায় রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট সহ বৃহত্তর রংপুরের বিভিন্ন জেলার বিএনপির নেতারাও বক্তব্য দেন। এদিকে গতকালও বৃহত্তর যশোরের লোকজনকে নিয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, খন্দকার মাহবুব হোসেন, কিশোরগঞ্জ সমিতির ব্যানারে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুক, কেন্দ্রীয় নেতা শরিফুল আলম ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, বৃহত্তর চট্টগ্রামের লোকজনকে নিয়ে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং বৃহত্তর বরিশালের লোকজনকে নিয়ে টঙ্গী বিসিকে মতবিনিময় ও প্রচারণা চালিয়েছেন বরিশালের সাবেক মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ার ও কেন্দ্রীয় নেতা আকন আবদুল কুদ্দুস। রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশাপাশি দৌড়ঝাঁপ করছেন বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারাও। প্রচারণায় অংশ নিয়ে জিসিসি নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তিকে বেছে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোর্শেদ খান। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ছয়টি মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটসহ মোট আটটি নির্বাচনী ক্যাম্প করবে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। এসব ক্যাম্পে নির্বাচনের দিন জাতীয় পতাকা উড়ানো হবে। একই দিন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি সোহরাবউদ্দিন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। গাজীপুরে প্রফেসর মান্নানের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেয়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, স্থানীয় নির্বাচন হলেও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে পড়েছে। নানা ইস্যুতে নিশ্চিতভাবেই জাতীয় রাজনীতির প্রভাব পড়বে গাজীপুরে। এছাড়া শিল্পাঞ্চল গাজীপুরে দেশের বিভিন্ন এলাকার লোকজনের বসবাস রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এ নির্বাচনে তাদের মনোভাব প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে। বিএনপি সূত্র জানায়, বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে পোলিং এজেন্টদের এ ট্রেনিংয়ের সুফল পেয়েছে বিএনপি। ওদিকে জিসিসি নির্বাচনে দুই প্রধান প্রার্থীর পক্ষে প্রতিদিনই প্রচারণার অংশ নিচ্ছেন- আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, হুইপ এডভোকেট ফজলে রাব্বী, গাজীপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক আখতারুজ্জামান, এমপিদের মধ্যে- এডভোকেট রহমত আলী, আবদুল মান্নান, জাহিদ আহসান রাসেল, এবিএম মাজহার আনাম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আমানুর রহমান খান, মমতাজ বেগম, তারানা হালিম, রওশন জাহান সাথী, ফজিলাতুন নেছা ইন্দিরা, জাহানারা বেগম, এডভোকেট সানজিদা খানম, সাফিয়া খাতুন, এডভোকেট শাহ আলম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে- ছাত্রলীগ সভাপতি এনামুল হক শামীম, লিয়াকত শিকদার, শাহজাদা মহিউদ্দিন, সুজিত রায় নন্দী, আমিনুল ইসলাম, পঙ্কজ দেবনাথ, কেন্দ্রীয় শ্রমিক নেতা ফজলুল হক মন্টু, বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু, আমান উল্লাহ আমান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, মুন্সিগঞ্জ বিএনপি সভাপতি আবদুল হাই, কিশোরগঞ্জ বিএনপি সভাপতি ফজলুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী সিরাজুল হক, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবদুস সালাম, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া এমপি, সাবেক এমপি শহিদুল ইসলাম, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু অক্লান্ত প্রচারণা চালাচ্ছেন। এদিকে বিএনপি-আওয়ামীলীগের পাশাপাশি যুবদল-যুবলীগ, ছাত্রদল-ছাত্রলীগ, শ্রমিকদল-শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা একাধিক টিমে ভাগ হয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে বিএনপির স্থানীয় নেতারা অক্লান্তভাবে প্রচারণায় অংশ নিলেও অনেকটাই গাছাড়াভাব স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের। বিশেষ করে বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমকে জোর করে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেয়ার ঘটনায় যে ফাটল ধরেছে তা এখনও মিটেনি।
তারকাদের ছড়াছড়ি: রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি গাজীপুরে এখন বিনোদন জগতের তারকাদের ছড়াছড়ি। প্রধান দুই প্রার্থীর পক্ষে দিনের পর দিন গাজীপুরের নানা এলাকায় গণসংযোগ করছেন রঙিন জগতের এক ঝাঁক তারকা। কেউ কণ্ঠশিল্পী, কেউ বা অভিনেতা-অভিনেত্রী। সাধারণ মানুষের কৌতূহল ও ভালবাসার পাত্র তারা। কিন্তু রাজনীতির মাঠে তারাও এখন দারুণ ব্যস্ত। সাধারণ মানুষ যাদের টেলিভিশন-সিনেমার পর্দায় দেখতে অভ্যস্ত তারা এখন হাজির হচ্ছেন দুয়ারে। গাজীপুরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী আজমতউল্লাহ খানের পক্ষে অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান, অভিনেত্রী তারানা হালিম এমপি, কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম এমপি এবং বিএনপি সমর্থিত প্রফেসর এমএ মান্নানের পক্ষে চিত্রপরিচালক গাজী মাজহারুল আনোয়ার, নায়ক উজ্জল, হেলাল খান, অভিনেতা বাবুল আহমেদ, কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন ও কণ্ঠশিল্পী হাসান চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ঘরনার নানা সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত সাংস্কৃতিক কর্মীরা। এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হঠাৎ করেই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে গাজীপুরে। রাস্তাঘাট মেরামত, খানাখন্দ ভরাট, পানি নিষ্কাশন শুরু হয়েছে।
চাপে তটস্থ প্রশাসন: পুলিশ প্রশাসনের গোপন বৈঠকের খবরে তোলপাড় চলছে গাজীপুর জুড়ে। বলা হচ্ছে, সরকারি দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর পক্ষে ওই বৈঠকটি হয়েছিল। এমন অভিযোগ প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী অধ্যাপক এমএ মান্নানের পক্ষ থেকেও তোলা হয়েছে। গাজীপুর পুলিশ প্রশাসনের ওই গোপন বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় রোববার রাতে। সেখানে গাজীপুরের পুলিশ সুপার সহ পুলিশের বাছাই করা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন বলে সূত্রে জানা গেছে। সূত্রটি দাবি করেছে সরকারের বিশেষ চাপে ওই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে নির্বাচনের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনার সঙ্গে ১৪ দলের প্রার্থীর বিষয়টিও আলোচিত হয়। বৈঠকটিতে কেবলমাত্র বিশ্বস্ত কিছু পুলিশ কর্মকর্তাকে উপস্থিত থাকতে বলা হয় এবং তাদের নিয়েই বৈঠক হয়। তবে গাজীপুরের পুলিশ সুপার গোপন বৈঠকের কথা পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। অন্যদিকে আরেকটি গোপন বৈঠকের বিষয়ে গতকাল রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন ১৮ দল সমর্থিত প্রার্থী এমএ মান্নান নিজে। লিখিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন বর্তমান স্বাস্থ্য সচিব নিয়াজউদ্দিন মিয়া গত ১লা জুলাই জয়দেবপুর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে বসে প্রিজাইডিং অফিসারদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করে মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে জিতিয়ে আনার ছক আঁকা হয়েছে। ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের এমপি কৃষিবিদ আবদুল মান্নান উপস্থিত ছিলেন বলে তিনি লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন। অভিযোগে তিনি আরও বলেছেন সেখানে উপস্থিত ছিলেন কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের রফিকুল ইসলাম মণ্ডল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর আওলাদ হোসেন এবং প্রিজাইডিং অফিসারদের মধ্যে ছিলেন সাইন্টিফিক কর্মকর্তা বিমল কুমার কুণ্ডু, ফয়েজউল্লাহ, ডা. শরাফ হোসেন, হারুনার রশিদ, ওহিদুজ্জামান প্রমুখ। এমএ মান্নানের অভিযোগ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে রিটার্নিং অফিসার মতিয়ার রহমান বলেন, এমএ মান্নানের দেয়া এমন একটি লিখিত অভিযোগ গতকালই হাতে পেয়েছি। এ বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখবো, সঠিক হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে গত কয়েক দিনে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, পুরো নির্বাচনী এলাকায় সরকারের চাপে তটস্থ অবস্থায় রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সরকারি দলের অর্ধশত সংসদ সদস্য, দলের সিনিয়র নেতারাও চষে বেড়াচ্ছেন গাজীপুরে।
এদিকে কঠোর গোপনীয়তার মাঝে অনুষ্ঠিত পুলিশ প্রশাসনের গোপন বৈঠক সম্পর্কে মুখ খুলতে নারাজ গাজীপুর জেলা পুলিশের কর্তাব্যক্তিরা। প্রকাশ্যে তারা বলছেন এমন কোন গোপন বৈঠক হয়নি। তবে পুলিশ প্রশাসনের গোপন বৈঠকের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে একাধিক সূত্রে। গোপন ওই বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন এমন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন ওই বৈঠকের কথা। তিনি জানিয়েছেন বৈঠকে নির্বাচন নিয়েই অলোচনা হয়েছে। নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা কি হবে সে বিষয়ে কথা হয়েছে। উপরের নির্দেশ কি সে বিষয়ে কথা হয়েছে। বৈঠকে অংশ নেয়া ওই পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকেই জানা গেছে নির্বাচন নিয়ে তটস্থ আছে পুলিশ প্রশাসন। চাপের মুখে কাজ করতে হচ্ছে তাদের। সূত্রমতে নির্বাচনের দিন সিটি করপোরেশন এলাকায় দায়িত্ব পালন করতে গাজীপুরের পুলিশ ছাড়াও বাইরের জেলাগুলো থেকে আনা হচ্ছে ৮ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং ৩২ জন সহকারী পুলিশ সুপার। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের মধ্যে আনা হচ্ছে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয় কুমার বসাক, সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোকতার হোসেন, ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার, কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফুল ইসলাম, মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন মজুমদার, নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোখলেসুর রহমান ও শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলামকে। এছাড়াও নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে গাজীপুরে আসছেন ৩২ জেলার সহকারী পুলিশ সুপাররা। যে সব জেলা থেকে সহকারী পুলিশ সুপাররা আসছেন সে জেলাগুলো হচ্ছে মাদারীপুর, ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, জামালপুর, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, যশোর, কুষ্টিয়া, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভী বাজার, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, নওগাঁ, রাজশাহী এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম আরআরএফ থেকে। বিএনপির অভিযোগ সিভিল প্রশাসনের মতো পুলিশ প্রশাসনকেও আজমত উল্লা’র উপযোগী করে সাজানো হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্ব বণ্টনের ক্ষেত্রে সরকারের উপর মহলের নির্দেশ অনুসরণ করা হচ্ছে। গাজীপুর জেলা পুলিশের গোপন বৈঠকের অভিযোগের বিষয়ে গাজীপুরের পুলিশ সুপার আবদুল বাতেন বলেন, আমি তো এমন কিছু জানি না। আমরা পুলিশের প্রয়োজনে পুলিশি ব্যবস্থা নিয়ে বৈঠক করি, এটা আমাদের করতে হয়। গোপন বৈঠক করতে যাবো কেন? এটা করেন রাজনীতিবিদেরা, আমাদের কোন গোপন বৈঠকের প্রয়োজন নেই। কারণ পুলিশ দলনিরপেক্ষ, পুলিশ কারও পক্ষে না। আমরা সে ভাবেই কাজ করছি, সে ভাবেই করবো।
রাজনীতির কেন্দ্র এখন গাজীপুর: গাজীপুর যেন দেশের রাজনীতির কেন্দ্র। প্রধান দুই রাজনৈতিক জোটের মর্যাদার লড়াইয়ে হারতে চাইছেন না কেউই। চার সিটি নির্বাচনে হারের পর অন্তত এই সিটি করপোরেশনে জয় ঘরে তুলতে মরিয়া সরকারি দল। ১৮ দল চার সিটির জয়ের ধারা রক্ষায় গাজীপুরকেও ধরে রাখতে চালাচ্ছে প্রাণান্ত চেষ্টা। জাতীয় নির্বাচনের আগে এ নির্বাচন নিয়ে কৌতূহল দেশজুড়ে। সারা দেশের দৃষ্টিও এখানে। শেষ মেয়াদে সরকারের সামনেও এই নির্বাচন অগ্নিপরীক্ষা। প্রেস্টিজ লড়াইয়ে দুই দলের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে সংসদ সদস্য, সাংস্কৃতিক কর্মী সবাই ছুটছেন গাজীপুর। রাজনৈতিক দলের নেতাদের পদভারে গাজীপুর যেন রাজনীতির রাজধানীতে পরিণত হয়েছে। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তারা ছুটছেন গাজীপুরের অলি-গলি। ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজনের বসবাস এখানে। তাই সেসব জেলার আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতারা এখন নিজ নিজ অঞ্চলের লোকজনকে নিয়ে মতবিনিময় ও বৈঠক করছেন একের পর এক। এতে গাজীপুরের আদি বাসিন্দাদের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি হয়েছে বহিরাগতদের। আলোচনায় উঠে এসেছেন গাজীপুরে বসবাসরত বিভিন্ন জেলা সমিতির নেতারা। এদিকে জেলা নেতাদের পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন সরকারদলীয় এমপিরা। গত দু’দিন এরকম কয়েকটি বৈঠক হয়েছে চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয় ও ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন জায়গায়। গতকাল সরকার দলীয় দুই এমপি আবদুল মান্নান ও সানজিদা খানমের নেতৃত্বে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে গোপন বৈঠকের সংবাদ সংগ্রহ করতে লাঞ্ছিত হয়েছেন এক সাংবাদিক। তাকে মারধর ও তার ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। পরে সাংবাদিকরা খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করেন। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ওই বৈঠকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নিলেও সেটা ছিল একান্তই সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন প্রস্তুতিমূলক সভা। সোমবার রাতে চান্দনা হাইস্কুলে এ ধরনের আরেকটি বৈঠকে অংশ নেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা পেশাজীবী সংগঠনের নেতা পরিচয়ে ওইসব বৈঠকে আজমতউল্লা খানের সমর্থন জানিয়ে বক্তব্যও দিয়েছেন। এছাড়া নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গাজীপুরে অবস্থান করছেন অর্ধশতাধিক সাবেক আমলা। এমনকি বর্তমান স্বাস্থ্য সচিব এমএম রিয়াজউদ্দিন তার বাড়ি পুবাইল এলাকায় বৈঠকের মাধ্যমে আজমতউল্লাহর পক্ষে প্রচারণা চালানোর খবরও আলোচিত হচ্ছে গাজীপুরে। ওদিকে আওয়ামী লীগ-বিএনপির অন্তত দুই ডজন হেভিওয়েট নেতা ও সরকারদলীয় অর্ধশতাধিক এমপি সপ্তাহ ধরে অবস্থান করছেন গাজীপুরে। রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীদের বাগানবাড়ি ও রেস্টহাউজগুলোতে এখন উপচেপড়া ভিড়। দুই শতাধিক নেতা প্রতিদিন সাত সকালে ছুটছেন গাজীপুর। দিনভর স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন মেয়রপ্রার্থীদের পক্ষে। স্থানীয়রা আগে কখনও একসঙ্গে এত হেভিওয়েট নেতাকে গ্রামে বা হাটবাজারে খেটে খাওয়া মানুষের সঙ্গে দেখেননি। তাই এলাকাবাসী অনেকটা স্বপ্ন দেখার মতো হাতের নাগালে পেয়ে বেশ আগ্রহের সঙ্গে এসব ভিআইপিকে সময় দিচ্ছেন। শুক্রবার গাজীপুরে এসেছেন আওয়ামী লীগের ৪০ এমপি। পরদিন শনিবার একযোগে প্রচারণা চালান বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও। প্রতিদিন এত এমপির উপস্থিতি দেখে অবাক ভোটাররাও। সরকার সমর্থিত শ্রমিক সংগঠনের মাধ্যমে শুরু হয় আঞ্চলিক মতবিনিময়। কয়েকদিন ধরে দিনাজপুরের এমপি খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও বগুড়ার এমপি আবদুল মান্নান মিলে গাজীপুরে কর্মরত উত্তরাঞ্চলের শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তাদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম সিরাজগঞ্জ-পাবনা, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ বৃহত্তর বরিশাল ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদুল হাসান রিপন গাইবান্ধাসহ উত্তরাঞ্চলের লোকজনকে নিয়ে মতবিনিময় ও আজমত উল্লাহর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। গতকাল চাঁদপুর ও কুমিল্লার লোকজনকে নিয়ে প্রচারণা চালান আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। বিপরীতে গাজীপুরে কর্মরত কুমিল্লার লোকজনকে নিয়ে কুমিল্লা সমিতির ব্যানারে পরপর দু’দিন মতবিনিময় করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। একই ভাবে বৃহত্তর ফরিদপুরের লোকজনকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ ও শ্রমিক নেতা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর, উত্তরাঞ্চলের শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু। সভায় রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট সহ বৃহত্তর রংপুরের বিভিন্ন জেলার বিএনপির নেতারাও বক্তব্য দেন। এদিকে গতকালও বৃহত্তর যশোরের লোকজনকে নিয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, খন্দকার মাহবুব হোসেন, কিশোরগঞ্জ সমিতির ব্যানারে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুক, কেন্দ্রীয় নেতা শরিফুল আলম ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, বৃহত্তর চট্টগ্রামের লোকজনকে নিয়ে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং বৃহত্তর বরিশালের লোকজনকে নিয়ে টঙ্গী বিসিকে মতবিনিময় ও প্রচারণা চালিয়েছেন বরিশালের সাবেক মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ার ও কেন্দ্রীয় নেতা আকন আবদুল কুদ্দুস। রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশাপাশি দৌড়ঝাঁপ করছেন বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারাও। প্রচারণায় অংশ নিয়ে জিসিসি নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তিকে বেছে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোর্শেদ খান। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ছয়টি মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটসহ মোট আটটি নির্বাচনী ক্যাম্প করবে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। এসব ক্যাম্পে নির্বাচনের দিন জাতীয় পতাকা উড়ানো হবে। একই দিন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি সোহরাবউদ্দিন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। গাজীপুরে প্রফেসর মান্নানের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেয়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, স্থানীয় নির্বাচন হলেও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে পড়েছে। নানা ইস্যুতে নিশ্চিতভাবেই জাতীয় রাজনীতির প্রভাব পড়বে গাজীপুরে। এছাড়া শিল্পাঞ্চল গাজীপুরে দেশের বিভিন্ন এলাকার লোকজনের বসবাস রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এ নির্বাচনে তাদের মনোভাব প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে। বিএনপি সূত্র জানায়, বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে পোলিং এজেন্টদের এ ট্রেনিংয়ের সুফল পেয়েছে বিএনপি। ওদিকে জিসিসি নির্বাচনে দুই প্রধান প্রার্থীর পক্ষে প্রতিদিনই প্রচারণার অংশ নিচ্ছেন- আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, হুইপ এডভোকেট ফজলে রাব্বী, গাজীপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক আখতারুজ্জামান, এমপিদের মধ্যে- এডভোকেট রহমত আলী, আবদুল মান্নান, জাহিদ আহসান রাসেল, এবিএম মাজহার আনাম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আমানুর রহমান খান, মমতাজ বেগম, তারানা হালিম, রওশন জাহান সাথী, ফজিলাতুন নেছা ইন্দিরা, জাহানারা বেগম, এডভোকেট সানজিদা খানম, সাফিয়া খাতুন, এডভোকেট শাহ আলম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে- ছাত্রলীগ সভাপতি এনামুল হক শামীম, লিয়াকত শিকদার, শাহজাদা মহিউদ্দিন, সুজিত রায় নন্দী, আমিনুল ইসলাম, পঙ্কজ দেবনাথ, কেন্দ্রীয় শ্রমিক নেতা ফজলুল হক মন্টু, বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু, আমান উল্লাহ আমান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, মুন্সিগঞ্জ বিএনপি সভাপতি আবদুল হাই, কিশোরগঞ্জ বিএনপি সভাপতি ফজলুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী সিরাজুল হক, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবদুস সালাম, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া এমপি, সাবেক এমপি শহিদুল ইসলাম, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু অক্লান্ত প্রচারণা চালাচ্ছেন। এদিকে বিএনপি-আওয়ামীলীগের পাশাপাশি যুবদল-যুবলীগ, ছাত্রদল-ছাত্রলীগ, শ্রমিকদল-শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা একাধিক টিমে ভাগ হয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে বিএনপির স্থানীয় নেতারা অক্লান্তভাবে প্রচারণায় অংশ নিলেও অনেকটাই গাছাড়াভাব স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের। বিশেষ করে বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমকে জোর করে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেয়ার ঘটনায় যে ফাটল ধরেছে তা এখনও মিটেনি।
তারকাদের ছড়াছড়ি: রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি গাজীপুরে এখন বিনোদন জগতের তারকাদের ছড়াছড়ি। প্রধান দুই প্রার্থীর পক্ষে দিনের পর দিন গাজীপুরের নানা এলাকায় গণসংযোগ করছেন রঙিন জগতের এক ঝাঁক তারকা। কেউ কণ্ঠশিল্পী, কেউ বা অভিনেতা-অভিনেত্রী। সাধারণ মানুষের কৌতূহল ও ভালবাসার পাত্র তারা। কিন্তু রাজনীতির মাঠে তারাও এখন দারুণ ব্যস্ত। সাধারণ মানুষ যাদের টেলিভিশন-সিনেমার পর্দায় দেখতে অভ্যস্ত তারা এখন হাজির হচ্ছেন দুয়ারে। গাজীপুরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী আজমতউল্লাহ খানের পক্ষে অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান, অভিনেত্রী তারানা হালিম এমপি, কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম এমপি এবং বিএনপি সমর্থিত প্রফেসর এমএ মান্নানের পক্ষে চিত্রপরিচালক গাজী মাজহারুল আনোয়ার, নায়ক উজ্জল, হেলাল খান, অভিনেতা বাবুল আহমেদ, কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন ও কণ্ঠশিল্পী হাসান চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ঘরনার নানা সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত সাংস্কৃতিক কর্মীরা। এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হঠাৎ করেই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে গাজীপুরে। রাস্তাঘাট মেরামত, খানাখন্দ ভরাট, পানি নিষ্কাশন শুরু হয়েছে।
গাজীপুর থেকে: লায়েকুজ্জামান, কাফি কামাল ও এমএ হায়দার সরকার
No comments