খাদ্যে ভেজাল রোধ- আইনের কঠোর প্রয়োগ চাই
ভেজাল প্রতিরোধ ও খাদ্যের নিরাপত্তা
নিশ্চিত করতে ২০ ধরনের অপরাধের শাস্তির জন্য বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও
জরিমানার বিধান রেখে 'নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩'-এর খসড়া সোমবার মন্ত্রিসভায়
নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে।
এ আইন অনুযায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ কোনো
মাছ, খাদ্য বা পশুখাদ্য বা খাদ্যপণ্য আমদানি বা মজুদ কিংবা বিতরণ অথবা
বিক্রয় করা যাবে না। ইচ্ছাকৃত বা অবহেলার কারণে ক্ষতির জন্য যথাযথ
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে কোনো কাজের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি,
খাদ্য ব্যবস্থাপনা বা ব্যবসা-বাণিজ্যের যদি ক্ষতি করে, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত
ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ
আদায়ে উপযুক্ত আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবে। এ আইনটির আওতা ব্যাপক এবং
বলা যায়, বিশ্বব্যবস্থার সঙ্গে তাল মেলাতে চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ। তবে এখন
পর্যন্ত মন্ত্রিসভায় কেবল খসড়া অনুমোদন হয়েছে। এরপর জনমত যাচাই,
বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ, খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন, আইন মন্ত্রণালয়ে
যাচাই-বাছাই, সংসদে উপস্থাপন, স্থায়ী কমিটির মতামত গ্রহণ এবং সর্বোপরি
সংসদে পাস ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদন_ কতই না সময়সাপেক্ষ ও জটিল প্রক্রিয়া।
প্রকৃতপক্ষে আইনটি কবে আলোর মুখ দেখবে, সেটা এখন বলার উপায় নেই। আমরা জানি,
খাদ্যপণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত এবং নিম্নমানের পণ্য বিক্রি বন্ধ করতে না
পারা বাংলাদেশে গুরুতর সমস্যা। খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার ঘটনা দেশের সর্বত্র
ঘটছে। এমনকি শিশুখাদ্যেও দেওয়া হচ্ছে ভেজাল। ছোট-বড় কারখানায় তৈরি হচ্ছে
ভেজাল ওষুধ। নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানির নামে সুদৃশ্য বোতল-মোড়কে বিক্রয় হয়
দূষিত পানি। ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহারের কারণে আম, আপেল, কলা, পেঁপেসহ
নানা ধরনের মুখরোচক ও পুুষ্টিকর ফলের ওপর থেকে মানুষের বিশ্বাস ক্রমে উবে
যাচ্ছে। এ ধরনের গুরুতর অপরাধ প্রচলিত আইনে রোধ করা একেবারে অসম্ভব, এটা
কেউ বলছে না। মাঝেমধ্যে র্যাব বা ম্যাজিস্ট্রেটের ভেজালবিরোধী অভিযানের
কথা শোনা যায়। এতে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের খবর
আসে সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে। অনেক অপরাধের ঘটনা জনস্বাস্থ্যের জন্য রীতিমতো
ভীতিকর। কিন্তু দুই-চার দিন যেতে না যেতেই সবকিছু চলে আগের মতো। ভেজাল ও
বিষাক্ত খাদ্য প্রতিরোধে আইনের যেমন অভাব নেই, তেমনি রয়েছে হাইকোর্টের
একাধিক রুল। ২০১২ সালের ১৫ জুলাই হাইকোর্ট খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার দায়ে
অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন। তার আগে
২০১০ সালের ১৬ আগস্ট ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যর্ক্রম অব্যাহত রাখার
নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ভেজাল খাদ্য বিক্রি ও বেআইনিভাবে মূল্যবৃদ্ধি
প্রতিরোধে সরকারের গঠিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়ার
প্রেক্ষাপটে এক রিট আবেদনের পর এ নির্দেশ এসেছিল। কিন্তু সাধারণ মানুষের
ধারণা, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তরফে আদালতের নির্দেশনা যথাযথ অনুসরণ
করা হয় না। প্রচলিত আইনের বাস্তবায়ন কাজেও থাকে শ্লথগতি। এর সুযোগ নেন
অসাধু ব্যবসায়ীরা। এতে জনস্ব্বাস্থ্যের গুরুতর ক্ষতি হয়। বিশেষভাবে ভবিষ্যৎ
প্রজন্মের জন্য বিষয়টি উদ্বেগের। এর প্রতিকারে কঠোর পদক্ষেপ কাম্য। নতুন
আইন প্রণয়ন হলে অপরাধীদের দণ্ড কঠোর হবে। এ কারণে আইনটি অনুমোদনে বিলম্ব
করা উচিত হবে না। কিন্তু এ আইনের ভরসায় থাকারও দরকার নেই। এ ধরনের অপরাধ
দমনে সরকারের হাতে যেসব আইনি হাতিয়ার রয়েছে, তার কার্যকর প্রয়োগ করতে
সমস্যা কোথায়? আমরা মনে করি, খাদ্যে ভেজাল রোধে আইনের যথাযথ ও কঠোর প্রয়োগই
জরুরি এখন।
No comments