জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মিডিয়ার অবরোধ by এ কে এম শাহনাওয়াজ
গত কয়েক মাস জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের
উপাচার্যের বিরুদ্ধে শিক্ষক সমিতির ব্যানারে শিক্ষকদের একাংশ আন্দোলন
করছে। একপর্যায়ে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করা হয়। শিক্ষকদের দাবির প্রতি
সম্মান দেখিয়ে ভিসি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন পদত্যাগের ঘোষণাও দিয়েছিলেন।
শিক্ষক
রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত কোনো কোনো বলয়ের শিক্ষকরা এত দিন অস্বস্তি বোধ
করছিলেন অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা শিক্ষককে ভিসি হিসেবে পেয়ে।
অনেক আগেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে বৈশ্বিক ধারণা পাল্টে অনেক বেশি সংকীর্ণ হয়ে গেছে। জাতীয় রাজনীতির নষ্ট প্রভাব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এড়াতে পারেনি। শিক্ষা গবেষণাসহ সাংস্কৃতিক আচরণের বদলে পদ-পদবির মোহ ও দলীয় শক্তি প্রদর্শন এখন যেন গা সওয়া হয়ে গেছে। এমন সত্য প্রতিষ্ঠার পেছনে আমাদের জাতীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতির দায় অনেকখানি। এ কারণে উপাচার্য নিয়োগের সময় সরকারযন্ত্রকেই আরো ভাবার দরকার ছিল। যা হোক, উপাচার্য মহোদয় পদত্যাগ করার ঘোষণা দিলে দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অনেক শিক্ষক বা শিক্ষক গ্রুপ স্বস্তি প্রকাশ করে। তবে সাধারণ শিক্ষকদের অনেকে এবং বিশেষ করে ছাত্রলীগসহ সাধারণ ছাত্ররা তা মেনে নিতে পারেননি। ছাত্রছাত্রীদের দাবি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে অবশেষে ভিসি মহোদয় পদত্যাগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেন।
স্বাভাবিকভাবেই আন্দোলনকারী শিক্ষক গ্রুপগুলো এই সিদ্ধান্তে হতাশ হয়। বলা যায়, এর ধারাবাহিকতাতেই এখন চলছে পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা এবং তার মধ্য দিয়ে প্রশাসনে একটি অচলাবস্থা তৈরি করা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৬০০ শিক্ষকের মধ্যে ১৫০ থেকে ১৭৫ শিক্ষক বরাবর উপস্থিত থাকছেন ভিসিবিরোধী এজেন্ডার শিক্ষক সমিতির সভাগুলোতে। বিভিন্ন শিক্ষক গ্রুপের সদস্যরাই সাধারণত এই সংখ্যা পূরণ করছেন। সাধারণ শিক্ষকরা ক্ষমতাবান হওয়া বা ক্ষমতাকেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে অতটা ভাবেন না। তাঁরা অনেকে বাস্তব কারণেই শিক্ষক সমিতির সভায় যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসরে ভিসির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন শুধু শিক্ষক নন, শিক্ষার্থীরাও। বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ভিসি ড. আনোয়ার হোসেনের পদত্যাগ দাবিতে তাঁকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণার আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা নিজেদের যুক্ত করেনি। বরঞ্চ তারা এ ধরনের আন্দোলনে নিজেদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করছে মিডিয়ার সামনে।
আমি আমার প্রায় ৩০ বছরের শিক্ষকতার সময়কালে নিজেকে কখনো দলীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়াইনি। তাই বোধ হয় মনভূমিতে মুক্তচিন্তা করার শক্তি অনুভব করি। তবু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবারে শিক্ষক আন্দোলন নিয়ে আর লিখব না। কারণ আমি আমার বিবেক ও বিবেচনা বোধ থেকে শিক্ষক সমিতির ব্যানারে এই আন্দোলনের বস্তুনিষ্ঠতা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। গত মাসে গ্রীষ্মের ছুটির আগে আমি আন্দোলন সম্পর্কে আমার প্রতিক্রিয়া নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে কলাম লিখেছিলাম। তাতে আন্দোলনকারী সহকর্মীদের কেউ কেউ খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। শিক্ষক সমিতির সভায় আমার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করেছিলেন তাঁরা। একজন কলাম লেখক হিসেবে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর কর্মী-সমর্থকদের কাছ থেকে প্রায়ই বকাঝকা খেতে হয়। আমি এসব প্রতিক্রিয়া উপভোগ করি। ভালো লাগে এই ভেবে যে হুল যথাযথ জায়গায় ফুটেছে। কিন্তু তাই বলে আমার সহকর্মী- প্রতিদিন যাঁদের সঙ্গে ওঠাবসা তাঁদের মনে কষ্ট দেওয়াটা অন্যায় হবে ভেবে আমি নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিলাম।
আজকের এ লেখাটির পেছনে একটি ভিন্ন তাড়না আছে। আন্দোলনসংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি প্রতিক্রিয়া এসেছে আমার কাছে। তার ভেতর সামগ্রিক অবস্থার একটি চিত্র পাওয়া যায়। আগ্রহী পাঠকদের কাছে তা উপস্থাপন করার জন্যই এই লেখার প্রয়াস। আমাদের মিডিয়া নিয়ে আমরা সবাই গর্ব করি। বর্তমান সময়ে নানা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে মিডিয়া শক্তিশালী ভূমিকা পালন করছে। এর পরও একটি ক্ষত দিন দিন বড় হচ্ছে। বিশেষ করে প্রিন্ট মিডিয়ার পরিবেশিত সংবাদের প্রতি মানুষ সব সময় আস্থা রাখতে পারছে না। ইলেকট্রনিক মিডিয়াও এমন অভিযোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। কোনো অঘটনের খবর প্রকাশিত হলে সচেতন অনেকেই ফোন করে নিশ্চিত হতে চায় প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে। এমনই গোলমেলে অবস্থায় পড়েছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান শিক্ষক আন্দোলন-সংশ্লিষ্ট নানা প্রতিক্রিয়া প্রকাশ ও টেলিফোনকারীদের জিজ্ঞাস্যে।
২২ জুন আমার স্ত্রী ফোন করছেন আমার ক্যাম্পাসের বাসা থেকে। ক্যাম্পাসের এক প্রান্তে থেকেও তিনি ক্যাম্পাসের অবস্থা জানতে চাচ্ছেন। কারণ টেলিভিশন চ্যানেলের ব্রেকিং নিউজে দেখছেন 'শিক্ষক আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অচল।' আমি জানালাম, আমি তো সব সচল দেখছি। এই মাত্র ছাত্রছাত্রীদের ভরপুর উপস্থিতিতে ক্লাস নিলাম। করিডর ছাত্রছাত্রীদের পদচারণায় মুখর। ঢাকা থেকে কে একজন তার কাছে ফোন করে জানতে চেয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা নাকি ভিসি অফিস ভাঙচুর করেছেন। আমি তাকে আশ্বস্ত করে বললাম, এসব গুজব। সকাল ১০টার দিকে আমি ভিসি অফিসের সামনের রাস্তা দিয়ে টিএসসির দিকে গিয়েছিলাম। দেখেছি ভিসি অফিস ও প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে আট-দশজন শিক্ষক চেয়ার নিয়ে বসে অবরোধ তৈরি করেছেন। এই ভবনটি ছাড়া পুরো ক্যাম্পাস স্বাভাবিক। দুপুর ১২টার পর বদরুন্নেসা কলেজের শিক্ষক স্নেহভাজন শায়লা তায়েফ ফোন করল। ও পিএইচডি থিসিস জমা দিতে আসবে পরদিন। পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চায়। একপর্যায়ে শায়লা জিজ্ঞাসা করল, গাড়ি নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকা নিরাপদ হবে কি না? আমি বললাম, এমন আশঙ্কা কেন তোমার? বলল, পত্রিকার খবর পড়ে আমরা আতঙ্কে আছি।
মিডিয়ার প্রচারণার সঙ্গে কিছু মিল পেয়েছেন পিএইচডি গবেষক রেজোয়ান (?)। তিনি একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। রেজোয়ান সময় বৃদ্ধির জন্য দরখাস্ত করেছিলেন। জুন মাসের মধ্যে তা অনুমোদন হওয়া জরুরি। আন্দোলনকারী শিক্ষকরা তালাবদ্ধ করে রাখায় সব গুবলেট হয়ে গেছে। ডেপুটি রেজিস্ট্রারের সঙ্গে রেজোওয়ানের জরুরি কথা বলাও দরকার। কিন্তু পুরো বিল্ডিংই তো অবরুদ্ধ। ক্ষুব্ধ গবেষক প্রশ্ন রাখলেন শিক্ষক সমিতি তো উপাচার্য মহোদয়কে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। তা হলে কার্যত এই বিল্ডিংয়ে থাকা দুজন উপউপাচার্য, রেজিস্ট্রার, বেশ কয়েকজন ডেপুটি ও সহকারী রেজিস্ট্রারসহ শতাধিক কর্মচারীও অবাঞ্ছিত হয়ে গেলেন কেন? গত তিন দিন কেউ অফিসে ঢুকতে পারছেন না। এটি কি নৈতিকভাবে ঠিক হলো? নিজের জরুরি কাজ আটকে থাকায় ক্ষুব্ধ রেজোয়ান। বললেন এখন তো দেখছি আমাদের শিক্ষক রাজনীতি জাতীয় রাজনীতির পর্যায়ে নেমে গেছে। বিরোধী দল ক্রমাগত হরতাল-অবরোধ ডাকছে। নির্দ্বিধায় গাড়ি ভাঙছে, আগুন দিচ্ছে, মানুষকে আহত-নিহত করছে। অথচ নেতারা এ ব্যাপারে টুঁ-শব্দটিও করছেন না। বসে বসে নিরোর মতো বাঁশি বাজাচ্ছেন। ঠিক একইভাবে আমাদের একাডেমিক ক্ষতি হচ্ছে জেনেও নিজেদের রাজনৈতিক লাভের জন্য শিক্ষক নেতারাও চোখ বন্ধ করে পিকেটিংয়ের ব্যবস্থা করেছেন।
২৩ জুন রাতে ফোন করেলেন গাজীপুরের সাংস্কৃতিক সংগঠন 'সুনজরে'র মহাসচিব হুমায়ুন কবীর। আমার সঙ্গে মাঝেমধ্যে ভাব বিনিময় করেন। একজন অভিভাবক হিসেবে তাঁর বক্তব্য। টেলিভিশনে তিনি ছাত্রছাত্রীদের উদ্বেগের কথা জেনেছেন। সেই সঙ্গে একটি চ্যানেলের রিপোর্টও দেখেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, নানা দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছিল। এখন একই পরিণতির দিকে যাচ্ছেন ড. আনোয়ার। হুমায়ুন সাহেবের মন্তব্য মিডিয়ার এমন অসতর্ক প্রচারণায় মানুষ বিভ্রান্ত হবে। ইতিমধ্যে সাবেক উপাচার্যের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে সচেতন মানুষ ওয়াকিবহাল। তিনি অনির্বাচিত ভিসি ছিলেন, দলীয় বিবেচনায় দুই শতাধিক শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ ছিল, তিনি সন্ত্রাসী ছাত্রদের লেলিয়ে দিয়েছিলেন শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর। এসব অভিযোগ একজন ভিসির পদত্যাগের দাবি করার মতো যুক্তি ছিল। কিন্তু একটি দৈনিকে পড়া ভিসির বিরুদ্ধে করা শিক্ষক সমিতির অভিযোগ দেখে তিনি থ। তিনি বললেন, স্যার আপনারা জ্ঞানী মানুষ। আপনাদের সমালোচনা করা আমাদের সাজে না। তবু বলি অভিযোগগুলো কি একজন নির্বাচিত ভিসিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা বা পদত্যাগ করতে বলার জন্য যথেষ্ট? এত দেখছি 'দেখতে নারি তার চরণ বাঁকা'। আপনাদের বেশির ভাগ অভিযোগ ভিসি মহোদয়ের আচরণ নিয়ে। তিনি গণমাধ্যমে কী বক্তব্য রাখলেন, কোনো শিক্ষককে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করলেন। কাকে জামায়াত-শিবির বললেন ইত্যাদি। আমরা সাধারণভাবে বুঝি এগুলো খুবই ব্যক্তিক ও আপেক্ষিক। কে কিভাবে ব্যাখ্যা করছে সেটি বড় কথা। এসব অভিযোগ দিয়ে পদত্যাগ কেন ছোটখাটো আন্দোলন করাও যায় না। বলা হচ্ছে, কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি কুক্ষিগত করছেন। এর তাৎপর্য আমরা খুঁজে পেলাম না। বুঝলাম না ভিসি মহোদয় কি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি দখল করে নিজ নামে রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন? অভিযোগ আছে, ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূদৃশ্য নষ্ট করছেন। জেনেছি ড. আনোয়ার হোসেন সরকার থেকে বহু টাকা বরাদ্দ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক-পুকুর সংস্কার বনায়ন ইত্যাদি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছেন। পরিচিত এক শিক্ষার্থী উৎফুল্ল হয়ে সে বর্ণনাই দিচ্ছিল। আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞান বলে, এসব কর্মযজ্ঞ ভিসি একা করেন না। শিক্ষকদের নানা কমিটি থাকে। তাহলে ভিসির বিরুদ্ধে অমন অভিযোগ কি ঈর্ষা কাতরতার প্রকাশ? অভিযোগ আছে, সন্ত্রাসী ছাত্রদের বিচার করেননি ভিসি। একজন ভিসি কিভাবে বিচার করেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়। এ জন্য নিশ্চয়ই তদন্ত কমিটি আছে। রয়েছে সিন্ডিকেট। তাহলে কি এটি খণ্ডিত মতলবি অভিযোগ? হুমায়ুন সাহেবের মতে, একটি অভিযোগ মোটামুটি ধর্তব্যের মধ্যে আনা যায়। তা হচ্ছে দুজন অযোগ্য শিক্ষককে নিয়োগদান এবং প্রভাব খাটিয়ে দুজন ছাত্রকে ভর্তি করানো। আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ ও ভর্তি-বাণিজ্য নিয়ে যেসব খবর বেরোয় তার সঙ্গে মেলালে এই ঘটনা তো নস্যি। তাও বিষয়টি বিশেষ শিক্ষক গ্রুপের অভিযোগ পর্যায়ে রয়েছে। এর জন্য তদন্ত ও প্রমাণের অবকাশ আছে। ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে আপনারা একজন ভিসির ওপর গুরুদণ্ড চাপিয়ে দিলেন।
আমি লেখাটি শেষ করব একজন প্রবাসীর বক্তব্য দিয়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ড. হবিবুল্লাহ কানাডা থেকে ফোন করলেন। মিডিয়ার প্রচারণায় তিনিও বিভ্রান্ত। ভেবেছিলেন শিক্ষক আন্দোলনে অবরুদ্ধ তাঁর প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়টি। পরে তথ্য সংগ্রহ করে প্রকৃত সত্যের খোঁজ পেয়েছেন। বললেন, রাজনৈতিক সংকীর্ণ উদ্দেশ্যে শিক্ষকদের গ্রুপ এভাবে যদি ঝাঁপিয়ে পড়ে, তাহলে তো সরকারও আর গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে চাইবে না। একমাত্র নির্বাচিত ভিসি পাওয়ার অহংকার ছিল আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের। এখানে ব্যক্তি ভিসির জাত-পরিচয় খোঁজা জরুরি কেন! এই পদের মর্যাদা ধরে রাখা কি আমাদের কর্তব্য হওয়া উচিত নয়? এ ধারার আচরণ থাকলে আপনারা আর গণতন্ত্রের কথা বলবেন কিভাবে?
আমি আগেই বলেছি, আজ আমি আন্দোলন নিয়ে কথা বলে আন্দোলনকারী সহকর্মীদের বিরাগভাজন হব না। কৌতূহলী পাঠকের কৌতূহল যদি মেটে তাই কয়েকটি সংগ্রহ উপস্থাপন করলাম। সংগ্রহে আরো কয়েকটি প্রতিক্রিয়া ছিল। সেগুলো আপাতত তোলা থাক।
লেখক : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
shahnawaz7b@gmail.com
অনেক আগেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে বৈশ্বিক ধারণা পাল্টে অনেক বেশি সংকীর্ণ হয়ে গেছে। জাতীয় রাজনীতির নষ্ট প্রভাব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এড়াতে পারেনি। শিক্ষা গবেষণাসহ সাংস্কৃতিক আচরণের বদলে পদ-পদবির মোহ ও দলীয় শক্তি প্রদর্শন এখন যেন গা সওয়া হয়ে গেছে। এমন সত্য প্রতিষ্ঠার পেছনে আমাদের জাতীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতির দায় অনেকখানি। এ কারণে উপাচার্য নিয়োগের সময় সরকারযন্ত্রকেই আরো ভাবার দরকার ছিল। যা হোক, উপাচার্য মহোদয় পদত্যাগ করার ঘোষণা দিলে দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অনেক শিক্ষক বা শিক্ষক গ্রুপ স্বস্তি প্রকাশ করে। তবে সাধারণ শিক্ষকদের অনেকে এবং বিশেষ করে ছাত্রলীগসহ সাধারণ ছাত্ররা তা মেনে নিতে পারেননি। ছাত্রছাত্রীদের দাবি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে অবশেষে ভিসি মহোদয় পদত্যাগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেন।
স্বাভাবিকভাবেই আন্দোলনকারী শিক্ষক গ্রুপগুলো এই সিদ্ধান্তে হতাশ হয়। বলা যায়, এর ধারাবাহিকতাতেই এখন চলছে পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা এবং তার মধ্য দিয়ে প্রশাসনে একটি অচলাবস্থা তৈরি করা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৬০০ শিক্ষকের মধ্যে ১৫০ থেকে ১৭৫ শিক্ষক বরাবর উপস্থিত থাকছেন ভিসিবিরোধী এজেন্ডার শিক্ষক সমিতির সভাগুলোতে। বিভিন্ন শিক্ষক গ্রুপের সদস্যরাই সাধারণত এই সংখ্যা পূরণ করছেন। সাধারণ শিক্ষকরা ক্ষমতাবান হওয়া বা ক্ষমতাকেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে অতটা ভাবেন না। তাঁরা অনেকে বাস্তব কারণেই শিক্ষক সমিতির সভায় যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসরে ভিসির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন শুধু শিক্ষক নন, শিক্ষার্থীরাও। বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ভিসি ড. আনোয়ার হোসেনের পদত্যাগ দাবিতে তাঁকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণার আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা নিজেদের যুক্ত করেনি। বরঞ্চ তারা এ ধরনের আন্দোলনে নিজেদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করছে মিডিয়ার সামনে।
আমি আমার প্রায় ৩০ বছরের শিক্ষকতার সময়কালে নিজেকে কখনো দলীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়াইনি। তাই বোধ হয় মনভূমিতে মুক্তচিন্তা করার শক্তি অনুভব করি। তবু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবারে শিক্ষক আন্দোলন নিয়ে আর লিখব না। কারণ আমি আমার বিবেক ও বিবেচনা বোধ থেকে শিক্ষক সমিতির ব্যানারে এই আন্দোলনের বস্তুনিষ্ঠতা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। গত মাসে গ্রীষ্মের ছুটির আগে আমি আন্দোলন সম্পর্কে আমার প্রতিক্রিয়া নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে কলাম লিখেছিলাম। তাতে আন্দোলনকারী সহকর্মীদের কেউ কেউ খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। শিক্ষক সমিতির সভায় আমার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করেছিলেন তাঁরা। একজন কলাম লেখক হিসেবে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর কর্মী-সমর্থকদের কাছ থেকে প্রায়ই বকাঝকা খেতে হয়। আমি এসব প্রতিক্রিয়া উপভোগ করি। ভালো লাগে এই ভেবে যে হুল যথাযথ জায়গায় ফুটেছে। কিন্তু তাই বলে আমার সহকর্মী- প্রতিদিন যাঁদের সঙ্গে ওঠাবসা তাঁদের মনে কষ্ট দেওয়াটা অন্যায় হবে ভেবে আমি নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিলাম।
আজকের এ লেখাটির পেছনে একটি ভিন্ন তাড়না আছে। আন্দোলনসংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি প্রতিক্রিয়া এসেছে আমার কাছে। তার ভেতর সামগ্রিক অবস্থার একটি চিত্র পাওয়া যায়। আগ্রহী পাঠকদের কাছে তা উপস্থাপন করার জন্যই এই লেখার প্রয়াস। আমাদের মিডিয়া নিয়ে আমরা সবাই গর্ব করি। বর্তমান সময়ে নানা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে মিডিয়া শক্তিশালী ভূমিকা পালন করছে। এর পরও একটি ক্ষত দিন দিন বড় হচ্ছে। বিশেষ করে প্রিন্ট মিডিয়ার পরিবেশিত সংবাদের প্রতি মানুষ সব সময় আস্থা রাখতে পারছে না। ইলেকট্রনিক মিডিয়াও এমন অভিযোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। কোনো অঘটনের খবর প্রকাশিত হলে সচেতন অনেকেই ফোন করে নিশ্চিত হতে চায় প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে। এমনই গোলমেলে অবস্থায় পড়েছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান শিক্ষক আন্দোলন-সংশ্লিষ্ট নানা প্রতিক্রিয়া প্রকাশ ও টেলিফোনকারীদের জিজ্ঞাস্যে।
২২ জুন আমার স্ত্রী ফোন করছেন আমার ক্যাম্পাসের বাসা থেকে। ক্যাম্পাসের এক প্রান্তে থেকেও তিনি ক্যাম্পাসের অবস্থা জানতে চাচ্ছেন। কারণ টেলিভিশন চ্যানেলের ব্রেকিং নিউজে দেখছেন 'শিক্ষক আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অচল।' আমি জানালাম, আমি তো সব সচল দেখছি। এই মাত্র ছাত্রছাত্রীদের ভরপুর উপস্থিতিতে ক্লাস নিলাম। করিডর ছাত্রছাত্রীদের পদচারণায় মুখর। ঢাকা থেকে কে একজন তার কাছে ফোন করে জানতে চেয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা নাকি ভিসি অফিস ভাঙচুর করেছেন। আমি তাকে আশ্বস্ত করে বললাম, এসব গুজব। সকাল ১০টার দিকে আমি ভিসি অফিসের সামনের রাস্তা দিয়ে টিএসসির দিকে গিয়েছিলাম। দেখেছি ভিসি অফিস ও প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে আট-দশজন শিক্ষক চেয়ার নিয়ে বসে অবরোধ তৈরি করেছেন। এই ভবনটি ছাড়া পুরো ক্যাম্পাস স্বাভাবিক। দুপুর ১২টার পর বদরুন্নেসা কলেজের শিক্ষক স্নেহভাজন শায়লা তায়েফ ফোন করল। ও পিএইচডি থিসিস জমা দিতে আসবে পরদিন। পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চায়। একপর্যায়ে শায়লা জিজ্ঞাসা করল, গাড়ি নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকা নিরাপদ হবে কি না? আমি বললাম, এমন আশঙ্কা কেন তোমার? বলল, পত্রিকার খবর পড়ে আমরা আতঙ্কে আছি।
মিডিয়ার প্রচারণার সঙ্গে কিছু মিল পেয়েছেন পিএইচডি গবেষক রেজোয়ান (?)। তিনি একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। রেজোয়ান সময় বৃদ্ধির জন্য দরখাস্ত করেছিলেন। জুন মাসের মধ্যে তা অনুমোদন হওয়া জরুরি। আন্দোলনকারী শিক্ষকরা তালাবদ্ধ করে রাখায় সব গুবলেট হয়ে গেছে। ডেপুটি রেজিস্ট্রারের সঙ্গে রেজোওয়ানের জরুরি কথা বলাও দরকার। কিন্তু পুরো বিল্ডিংই তো অবরুদ্ধ। ক্ষুব্ধ গবেষক প্রশ্ন রাখলেন শিক্ষক সমিতি তো উপাচার্য মহোদয়কে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। তা হলে কার্যত এই বিল্ডিংয়ে থাকা দুজন উপউপাচার্য, রেজিস্ট্রার, বেশ কয়েকজন ডেপুটি ও সহকারী রেজিস্ট্রারসহ শতাধিক কর্মচারীও অবাঞ্ছিত হয়ে গেলেন কেন? গত তিন দিন কেউ অফিসে ঢুকতে পারছেন না। এটি কি নৈতিকভাবে ঠিক হলো? নিজের জরুরি কাজ আটকে থাকায় ক্ষুব্ধ রেজোয়ান। বললেন এখন তো দেখছি আমাদের শিক্ষক রাজনীতি জাতীয় রাজনীতির পর্যায়ে নেমে গেছে। বিরোধী দল ক্রমাগত হরতাল-অবরোধ ডাকছে। নির্দ্বিধায় গাড়ি ভাঙছে, আগুন দিচ্ছে, মানুষকে আহত-নিহত করছে। অথচ নেতারা এ ব্যাপারে টুঁ-শব্দটিও করছেন না। বসে বসে নিরোর মতো বাঁশি বাজাচ্ছেন। ঠিক একইভাবে আমাদের একাডেমিক ক্ষতি হচ্ছে জেনেও নিজেদের রাজনৈতিক লাভের জন্য শিক্ষক নেতারাও চোখ বন্ধ করে পিকেটিংয়ের ব্যবস্থা করেছেন।
২৩ জুন রাতে ফোন করেলেন গাজীপুরের সাংস্কৃতিক সংগঠন 'সুনজরে'র মহাসচিব হুমায়ুন কবীর। আমার সঙ্গে মাঝেমধ্যে ভাব বিনিময় করেন। একজন অভিভাবক হিসেবে তাঁর বক্তব্য। টেলিভিশনে তিনি ছাত্রছাত্রীদের উদ্বেগের কথা জেনেছেন। সেই সঙ্গে একটি চ্যানেলের রিপোর্টও দেখেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, নানা দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছিল। এখন একই পরিণতির দিকে যাচ্ছেন ড. আনোয়ার। হুমায়ুন সাহেবের মন্তব্য মিডিয়ার এমন অসতর্ক প্রচারণায় মানুষ বিভ্রান্ত হবে। ইতিমধ্যে সাবেক উপাচার্যের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে সচেতন মানুষ ওয়াকিবহাল। তিনি অনির্বাচিত ভিসি ছিলেন, দলীয় বিবেচনায় দুই শতাধিক শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ ছিল, তিনি সন্ত্রাসী ছাত্রদের লেলিয়ে দিয়েছিলেন শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর। এসব অভিযোগ একজন ভিসির পদত্যাগের দাবি করার মতো যুক্তি ছিল। কিন্তু একটি দৈনিকে পড়া ভিসির বিরুদ্ধে করা শিক্ষক সমিতির অভিযোগ দেখে তিনি থ। তিনি বললেন, স্যার আপনারা জ্ঞানী মানুষ। আপনাদের সমালোচনা করা আমাদের সাজে না। তবু বলি অভিযোগগুলো কি একজন নির্বাচিত ভিসিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা বা পদত্যাগ করতে বলার জন্য যথেষ্ট? এত দেখছি 'দেখতে নারি তার চরণ বাঁকা'। আপনাদের বেশির ভাগ অভিযোগ ভিসি মহোদয়ের আচরণ নিয়ে। তিনি গণমাধ্যমে কী বক্তব্য রাখলেন, কোনো শিক্ষককে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করলেন। কাকে জামায়াত-শিবির বললেন ইত্যাদি। আমরা সাধারণভাবে বুঝি এগুলো খুবই ব্যক্তিক ও আপেক্ষিক। কে কিভাবে ব্যাখ্যা করছে সেটি বড় কথা। এসব অভিযোগ দিয়ে পদত্যাগ কেন ছোটখাটো আন্দোলন করাও যায় না। বলা হচ্ছে, কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি কুক্ষিগত করছেন। এর তাৎপর্য আমরা খুঁজে পেলাম না। বুঝলাম না ভিসি মহোদয় কি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি দখল করে নিজ নামে রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন? অভিযোগ আছে, ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূদৃশ্য নষ্ট করছেন। জেনেছি ড. আনোয়ার হোসেন সরকার থেকে বহু টাকা বরাদ্দ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক-পুকুর সংস্কার বনায়ন ইত্যাদি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছেন। পরিচিত এক শিক্ষার্থী উৎফুল্ল হয়ে সে বর্ণনাই দিচ্ছিল। আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞান বলে, এসব কর্মযজ্ঞ ভিসি একা করেন না। শিক্ষকদের নানা কমিটি থাকে। তাহলে ভিসির বিরুদ্ধে অমন অভিযোগ কি ঈর্ষা কাতরতার প্রকাশ? অভিযোগ আছে, সন্ত্রাসী ছাত্রদের বিচার করেননি ভিসি। একজন ভিসি কিভাবে বিচার করেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়। এ জন্য নিশ্চয়ই তদন্ত কমিটি আছে। রয়েছে সিন্ডিকেট। তাহলে কি এটি খণ্ডিত মতলবি অভিযোগ? হুমায়ুন সাহেবের মতে, একটি অভিযোগ মোটামুটি ধর্তব্যের মধ্যে আনা যায়। তা হচ্ছে দুজন অযোগ্য শিক্ষককে নিয়োগদান এবং প্রভাব খাটিয়ে দুজন ছাত্রকে ভর্তি করানো। আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ ও ভর্তি-বাণিজ্য নিয়ে যেসব খবর বেরোয় তার সঙ্গে মেলালে এই ঘটনা তো নস্যি। তাও বিষয়টি বিশেষ শিক্ষক গ্রুপের অভিযোগ পর্যায়ে রয়েছে। এর জন্য তদন্ত ও প্রমাণের অবকাশ আছে। ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে আপনারা একজন ভিসির ওপর গুরুদণ্ড চাপিয়ে দিলেন।
আমি লেখাটি শেষ করব একজন প্রবাসীর বক্তব্য দিয়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ড. হবিবুল্লাহ কানাডা থেকে ফোন করলেন। মিডিয়ার প্রচারণায় তিনিও বিভ্রান্ত। ভেবেছিলেন শিক্ষক আন্দোলনে অবরুদ্ধ তাঁর প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়টি। পরে তথ্য সংগ্রহ করে প্রকৃত সত্যের খোঁজ পেয়েছেন। বললেন, রাজনৈতিক সংকীর্ণ উদ্দেশ্যে শিক্ষকদের গ্রুপ এভাবে যদি ঝাঁপিয়ে পড়ে, তাহলে তো সরকারও আর গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে চাইবে না। একমাত্র নির্বাচিত ভিসি পাওয়ার অহংকার ছিল আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের। এখানে ব্যক্তি ভিসির জাত-পরিচয় খোঁজা জরুরি কেন! এই পদের মর্যাদা ধরে রাখা কি আমাদের কর্তব্য হওয়া উচিত নয়? এ ধারার আচরণ থাকলে আপনারা আর গণতন্ত্রের কথা বলবেন কিভাবে?
আমি আগেই বলেছি, আজ আমি আন্দোলন নিয়ে কথা বলে আন্দোলনকারী সহকর্মীদের বিরাগভাজন হব না। কৌতূহলী পাঠকের কৌতূহল যদি মেটে তাই কয়েকটি সংগ্রহ উপস্থাপন করলাম। সংগ্রহে আরো কয়েকটি প্রতিক্রিয়া ছিল। সেগুলো আপাতত তোলা থাক।
লেখক : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
shahnawaz7b@gmail.com
No comments