অবশেষে সংসদে গ্রামীণ ব্যাংক ০ ‘গ্রামীণ ব্যাংক কাঠামো ভেঙ্গে দিয়ে সরকার ব্যাংকটি ধ্বংসের কাজে লিপ্ত’ ॥ মওদুদ আহমদ ০ ‘আমি দৃঢ়কণ্ঠে বলতে চাই, গ্রামীণ ব্যাংকের চরিত্র বা কাঠামো পরিবর্তনের কোন ইনটেনশন সরকারের নেই। গ্রামীণ ব্যাংক যেভাবে চলছে, সেভাবেই চলবে’ ॥ মুহিত
গ্রামীণ ব্যাংক ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ
ইউনূসকে নিয়ে বুধবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মধ্যে প্রাণবন্ত
বিতর্ক হয়েছে।
মওদুদ আহমদের অভিযোগ, সরকার নোবেল বিজয়ী ড.
ইউনূসকে যথাযথ সম্মান জানাতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন গ্রামীণ ব্যাংকের কাঠামো
ভেঙ্গে দিয়ে ব্যাংকটি ধ্বংস করার আত্মঘাতী কর্মকা-ে লিপ্ত। অভিযোগটি
প্রত্যাখ্যান করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকটির জন্মলগ্ন থেকে আমি জড়িত, ৩০
বছরের সম্পর্ক। ড. মুহাম্মদ ইউনূস আসলে একজন রাজনীতিবিদ। ড. ইউনূস চলে
যাওয়ার পর গ্রামীণ ব্যাংক অনেক উন্নতি করেছে। গত প্রায় তিনটি বছর ধরে তিনি
সারাবিশ্বে অভিযোগ করে বেড়াচ্ছেন যে, সরকার গ্রামীণ ব্যাংক বন্ধ করে
দিচ্ছে। যা সম্পূর্ণই অসত্য। আমি দৃঢ়কণ্ঠে বলতে চাই, গ্রামীণ ব্যাংকের
চরিত্র বা কাঠামো পরিবর্তনের কোন ইনটেনশন সরকারের নেই। গ্রামীণ ব্যাংক
যেভাবে চলছে, সেভাবেই চলবে।
স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনের শুরুতেই পয়েন্ট অব অর্ডারে অনির্ধারিত এ বিতর্কের সূত্রপাত ঘটান বিএনপির এই প্রবীণ সংসদ সদস্য। গ্রামীণ ব্যাংক ছাড়াও বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় সময় বরাদ্দ নিয়েও সরকারী দলের চীফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ ও বিরোধী দলের ভারপ্রাপ্ত চীফ হুইপ শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর মধ্যেও মৃদু বিতর্ক হয়।
গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে বিএনপির ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে ব্যাংকটির জন্মলগ্ন থেকে তাঁর সংশ্লিষ্টতার দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ ব্যাংককে সরকার কখনও ধ্বংস করতে পারে না। ড. ইউনূস সাহেব তিনটি বছর সারাবিশ্বে বলে বেড়িয়েছেন সরকার এই গ্রামীণ ব্যাংকে নাকি বন্ধ করতে চাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে তার কোনই সত্যতা নেই। ড. ইউনূস সাহেব বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে গ্রামীণফোনের নাকি কোন সম্পর্ক নেই। আসলে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য। গ্রামীণ ব্যাংক থেকেই অর্থ নিয়েই গ্রামীণফোন তিনি প্রতিষ্ঠা করেন। গ্রামীণফোনের গ্যারান্টি দিতে হয় গ্রামীণ ব্যাংককেই। নরওয়ের তদন্তের বিষয়টিও ছিল এটিই। ড. ইউনূস সাহেব এই গ্রামীণফোন থেকেই কয়েক হাজার কোটি টাকার ডিভিডেন্ড পেয়েছেন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বিস্তারিতভাবে এ বিষয়টি আমি দেশবাসীকে অবহিত করব।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এই গ্রামীণ ব্যাংক থেকে পরবর্তীতে প্রায় ৫৪টি প্রতিষ্ঠান করা হয়েছে, যার সবগুলোই ড. ইউনূস সাহেব ব্যক্তি মালিকানার পর্যায়ে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ১৯৮৮ সালে গ্রামীণ ব্যাংক যখন খুব বিপদে পড়ে তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুপারিশেই প্রায় ৪শ’ কোটি টাকা দিয়ে ড. ইউনূসকে সহযোগিতা করেছিলেন। গ্রামীণফোনের লাইসেন্সও দেয় শেখ হাসিনার সরকার। তাই গ্রামীণ ব্যাংক বর্তমান সরকারের অত্যন্ত প্রিয়। যারা শেয়ারহোল্ডার নারী উদ্যোক্তাদের জন্য মায়াকান্না করছেন বাস্তবে গ্রামীণ ব্যাংকসহ এর থেকে জন্ম নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো যত লাভ করেছে তা উদ্যোক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হলে সবাই বড় লোক হয়ে যেত, কেউই আর দুস্থ থাকত না।
আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকা অবস্থায় গবেষণার শুরু থেকেই তাঁর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এরপর আমি অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আমার কাছে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তখন অন্যান্য ব্যাংক বিরোধিতা করলেও ১৯৮২ সালে অর্ডিন্যান্স জারি করে গ্রামীণ ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়। এরশাদ সাহেবও তখন এ ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠায় যথেষ্ট সহযোগিতা করেন। তিনি বলেন, ওই সময় ব্যাংকটির ৬০ শতাংশ শেয়ার ছিল সরকারের, বাকি ৪০ ভাগ শেয়ার গ্রামীণ ব্যাংকের। পরবর্তীতে প্রথম দফা সংশোধন করে সরকারী শেয়ার ২৫ ভাগে নেমে আনা হয়।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নিজের করা আইন অনুযায়ীই তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে অবৈধ হয়ে যান। তিনিই বিধান করেন ৬০ বছরের বেশি কেউ এ পদে থাকতে পারবেন না। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক অডিট করে রিপোর্ট দেয় ড. ইউনূস সাহেবের বয়স ৬০ বছর পেরিয়ে গেছে, তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে থাকতে পারবেন না। পরবর্তীতে এ নিয়ে কিছু করা হয়নি বরং তা উপেক্ষা করা হয়। ড. ইউনূস সাহেব অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি হওয়ায় কেউই বলতে সাহস পাননি যে আপনি অন্যায় করে ওই পদে রয়েছেন।
তিনি বলেন, এরপর ড. ইউনূস সাহেবকে ডেকে নিয়ে আমি বলেছি আপনি এমডির পদ থেকে পদত্যাগ করুন, আমি আপনাকে গ্রামীণ ব্যাংকের এমিকাসকিউরি করব। ড. ইউনূস বললেন, চিন্তা করে দেখি। এরপর গ্রামীণ ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দিলাম। এরপর ড. ইউনূস সাহেব বললেন, তিনি এমডির পদ থেকে চলে গেলে ব্যাংকটি নাকি বন্ধ হয়ে যাবে! তিনি নিয়োগকৃত চেয়ারম্যানের বিরোধিতা করে বললেন, তাঁর নাকি নতুন চেয়ারম্যান পছন্দ নয়। আমি বললাম, এতদিন আপনি একজন উত্তরাধিকার তৈরি করতে পারেননি যা সত্যিই দুঃখজনক।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ ফিরে পেতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সর্বোচ্চ আদালতে গেলেন। আদালতের রায় বিপক্ষে যাওয়ার পর তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদ থেকে পদত্যাগ করলেন। এরপর তিনি অনেকবারই ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাস্তায় নামতেও বলেছেন। কিন্তু আমি দৃঢ়কণ্ঠে বলতে চাই, ড. ইউনূস সাহেব চলে যাওয়ার পর গ্রামীণ ব্যাংক অনেক ভাল চলছে। যাতে আমি খুবই সন্তুষ্ট। আগে ব্যাংকটিতে কেউ কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারত না, ড. ইউনূস সাহেব যা বলতেন তাই হত। এখন ব্যাংকটিতে সিদ্ধান্ত হয়, বাস্তবায়িতও হয়।
এর আগে পয়েন্ট অব অর্ডারে বিতর্কের সূত্রপাত করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ গ্রামীণ ব্যাংকের ওপর সরকারী হস্তক্ষেপের সমালোচনা করে বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের ওপর ৪ কোটি মানুষের ভাগ্য নির্ভরশীল। ব্যাংকটির ৯৭ ভাগ উদ্যোক্তাই নারী। সরকার এই ব্যাংকটির কাঠামো ভেঙ্গে দিয়ে ৫১ ভাগ শেয়ার নিতে চাইছে। এটা হলে গ্রামীণ ব্যাংক সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে। যা দেশ ও জাতির জন্য আত্মঘাতী হবে।
নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সরকার অসন্মানিত করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সারাবিশ্ব এই নোবেল বিজয়ীকে সম্মান জানালেও বর্তমান সরকার তাঁকে হেয়প্রতিপন্ন করছে। যে জাতি সম্মানিত ব্যক্তিকে সম্মান দিতে পারে না, সেই জাতি কখনও বড় হতে পারে না। আমরা ইচ্ছে করলেও সারাবিশ্বে সম্মানিত কাউকে ছোট বা খাট করতে পারব না। আমরা যদি ক্ষমতায় আসতে পারি তবে গ্রামীণ ব্যাংক আগে যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সর্বস্তরে নারীদের অংশগ্রহণ ও সমতা নিশ্চিত করা রয়েছে। আজ নারীদের ক্ষমতায়নে বিপ্লব ঘটেছে, সরকারেরও অনেক অবদান রয়েছে এটা স্বীকার করি। ১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হয়। যার মাত্র ৫ ভাগ শেয়ার সরকারের, বাকি ৯৫ ভাগ শেয়ারের মালিক শেয়ারহোল্ডাররা। যার মধ্যে ৯৭ ভাগই নারী। ব্যাংকটির মালিকও নারী। পর্যদেও রয়েছে দুস্থ নারী শেয়ারধারীরা। অথচ সেই গ্রামীণ ব্যাংককে সরকার ধ্বংস করে দিতে চায়। ব্যাংকটির ৮৪ লাখ নারী মালিকই কাঠামো পরিবর্তনে সরকারের উদ্যোগের বিরুদ্ধে। কাঠামো ভেঙ্গে দেয়া হলে গ্রামীণ ব্যাংকটিই ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই গ্রামীণ ব্যাংকের কাঠামো যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থাতেই রাখতে হবে। সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেয়া হলে বা ১৯ ভাগে ভাগ করা হলে পল্লী বিদ্যুত সমিতির মতোই ব্যাংকটি শেষ হয়ে যাবে। দুস্থ নারীরা মালিকানা হারাবে, যা হবে সত্যিই আত্মঘাতী।
স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনের শুরুতেই পয়েন্ট অব অর্ডারে অনির্ধারিত এ বিতর্কের সূত্রপাত ঘটান বিএনপির এই প্রবীণ সংসদ সদস্য। গ্রামীণ ব্যাংক ছাড়াও বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় সময় বরাদ্দ নিয়েও সরকারী দলের চীফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ ও বিরোধী দলের ভারপ্রাপ্ত চীফ হুইপ শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর মধ্যেও মৃদু বিতর্ক হয়।
গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে বিএনপির ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে ব্যাংকটির জন্মলগ্ন থেকে তাঁর সংশ্লিষ্টতার দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ ব্যাংককে সরকার কখনও ধ্বংস করতে পারে না। ড. ইউনূস সাহেব তিনটি বছর সারাবিশ্বে বলে বেড়িয়েছেন সরকার এই গ্রামীণ ব্যাংকে নাকি বন্ধ করতে চাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে তার কোনই সত্যতা নেই। ড. ইউনূস সাহেব বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে গ্রামীণফোনের নাকি কোন সম্পর্ক নেই। আসলে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য। গ্রামীণ ব্যাংক থেকেই অর্থ নিয়েই গ্রামীণফোন তিনি প্রতিষ্ঠা করেন। গ্রামীণফোনের গ্যারান্টি দিতে হয় গ্রামীণ ব্যাংককেই। নরওয়ের তদন্তের বিষয়টিও ছিল এটিই। ড. ইউনূস সাহেব এই গ্রামীণফোন থেকেই কয়েক হাজার কোটি টাকার ডিভিডেন্ড পেয়েছেন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বিস্তারিতভাবে এ বিষয়টি আমি দেশবাসীকে অবহিত করব।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এই গ্রামীণ ব্যাংক থেকে পরবর্তীতে প্রায় ৫৪টি প্রতিষ্ঠান করা হয়েছে, যার সবগুলোই ড. ইউনূস সাহেব ব্যক্তি মালিকানার পর্যায়ে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ১৯৮৮ সালে গ্রামীণ ব্যাংক যখন খুব বিপদে পড়ে তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুপারিশেই প্রায় ৪শ’ কোটি টাকা দিয়ে ড. ইউনূসকে সহযোগিতা করেছিলেন। গ্রামীণফোনের লাইসেন্সও দেয় শেখ হাসিনার সরকার। তাই গ্রামীণ ব্যাংক বর্তমান সরকারের অত্যন্ত প্রিয়। যারা শেয়ারহোল্ডার নারী উদ্যোক্তাদের জন্য মায়াকান্না করছেন বাস্তবে গ্রামীণ ব্যাংকসহ এর থেকে জন্ম নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো যত লাভ করেছে তা উদ্যোক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হলে সবাই বড় লোক হয়ে যেত, কেউই আর দুস্থ থাকত না।
আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকা অবস্থায় গবেষণার শুরু থেকেই তাঁর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এরপর আমি অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আমার কাছে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তখন অন্যান্য ব্যাংক বিরোধিতা করলেও ১৯৮২ সালে অর্ডিন্যান্স জারি করে গ্রামীণ ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়। এরশাদ সাহেবও তখন এ ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠায় যথেষ্ট সহযোগিতা করেন। তিনি বলেন, ওই সময় ব্যাংকটির ৬০ শতাংশ শেয়ার ছিল সরকারের, বাকি ৪০ ভাগ শেয়ার গ্রামীণ ব্যাংকের। পরবর্তীতে প্রথম দফা সংশোধন করে সরকারী শেয়ার ২৫ ভাগে নেমে আনা হয়।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নিজের করা আইন অনুযায়ীই তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে অবৈধ হয়ে যান। তিনিই বিধান করেন ৬০ বছরের বেশি কেউ এ পদে থাকতে পারবেন না। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক অডিট করে রিপোর্ট দেয় ড. ইউনূস সাহেবের বয়স ৬০ বছর পেরিয়ে গেছে, তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে থাকতে পারবেন না। পরবর্তীতে এ নিয়ে কিছু করা হয়নি বরং তা উপেক্ষা করা হয়। ড. ইউনূস সাহেব অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি হওয়ায় কেউই বলতে সাহস পাননি যে আপনি অন্যায় করে ওই পদে রয়েছেন।
তিনি বলেন, এরপর ড. ইউনূস সাহেবকে ডেকে নিয়ে আমি বলেছি আপনি এমডির পদ থেকে পদত্যাগ করুন, আমি আপনাকে গ্রামীণ ব্যাংকের এমিকাসকিউরি করব। ড. ইউনূস বললেন, চিন্তা করে দেখি। এরপর গ্রামীণ ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দিলাম। এরপর ড. ইউনূস সাহেব বললেন, তিনি এমডির পদ থেকে চলে গেলে ব্যাংকটি নাকি বন্ধ হয়ে যাবে! তিনি নিয়োগকৃত চেয়ারম্যানের বিরোধিতা করে বললেন, তাঁর নাকি নতুন চেয়ারম্যান পছন্দ নয়। আমি বললাম, এতদিন আপনি একজন উত্তরাধিকার তৈরি করতে পারেননি যা সত্যিই দুঃখজনক।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ ফিরে পেতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সর্বোচ্চ আদালতে গেলেন। আদালতের রায় বিপক্ষে যাওয়ার পর তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদ থেকে পদত্যাগ করলেন। এরপর তিনি অনেকবারই ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাস্তায় নামতেও বলেছেন। কিন্তু আমি দৃঢ়কণ্ঠে বলতে চাই, ড. ইউনূস সাহেব চলে যাওয়ার পর গ্রামীণ ব্যাংক অনেক ভাল চলছে। যাতে আমি খুবই সন্তুষ্ট। আগে ব্যাংকটিতে কেউ কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারত না, ড. ইউনূস সাহেব যা বলতেন তাই হত। এখন ব্যাংকটিতে সিদ্ধান্ত হয়, বাস্তবায়িতও হয়।
এর আগে পয়েন্ট অব অর্ডারে বিতর্কের সূত্রপাত করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ গ্রামীণ ব্যাংকের ওপর সরকারী হস্তক্ষেপের সমালোচনা করে বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের ওপর ৪ কোটি মানুষের ভাগ্য নির্ভরশীল। ব্যাংকটির ৯৭ ভাগ উদ্যোক্তাই নারী। সরকার এই ব্যাংকটির কাঠামো ভেঙ্গে দিয়ে ৫১ ভাগ শেয়ার নিতে চাইছে। এটা হলে গ্রামীণ ব্যাংক সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে। যা দেশ ও জাতির জন্য আত্মঘাতী হবে।
নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সরকার অসন্মানিত করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সারাবিশ্ব এই নোবেল বিজয়ীকে সম্মান জানালেও বর্তমান সরকার তাঁকে হেয়প্রতিপন্ন করছে। যে জাতি সম্মানিত ব্যক্তিকে সম্মান দিতে পারে না, সেই জাতি কখনও বড় হতে পারে না। আমরা ইচ্ছে করলেও সারাবিশ্বে সম্মানিত কাউকে ছোট বা খাট করতে পারব না। আমরা যদি ক্ষমতায় আসতে পারি তবে গ্রামীণ ব্যাংক আগে যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সর্বস্তরে নারীদের অংশগ্রহণ ও সমতা নিশ্চিত করা রয়েছে। আজ নারীদের ক্ষমতায়নে বিপ্লব ঘটেছে, সরকারেরও অনেক অবদান রয়েছে এটা স্বীকার করি। ১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হয়। যার মাত্র ৫ ভাগ শেয়ার সরকারের, বাকি ৯৫ ভাগ শেয়ারের মালিক শেয়ারহোল্ডাররা। যার মধ্যে ৯৭ ভাগই নারী। ব্যাংকটির মালিকও নারী। পর্যদেও রয়েছে দুস্থ নারী শেয়ারধারীরা। অথচ সেই গ্রামীণ ব্যাংককে সরকার ধ্বংস করে দিতে চায়। ব্যাংকটির ৮৪ লাখ নারী মালিকই কাঠামো পরিবর্তনে সরকারের উদ্যোগের বিরুদ্ধে। কাঠামো ভেঙ্গে দেয়া হলে গ্রামীণ ব্যাংকটিই ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই গ্রামীণ ব্যাংকের কাঠামো যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থাতেই রাখতে হবে। সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেয়া হলে বা ১৯ ভাগে ভাগ করা হলে পল্লী বিদ্যুত সমিতির মতোই ব্যাংকটি শেষ হয়ে যাবে। দুস্থ নারীরা মালিকানা হারাবে, যা হবে সত্যিই আত্মঘাতী।
No comments