মাদকাসক্তি
প্রতিরোধে চাই জাতীয় উদ্যোগমাদকদ্রব্যের
অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে ২৬ জুন সমকাল
'বন্ধু ভয়ঙ্কর' শিরোনামে প্রথম পৃষ্ঠায় যে গবেষণাভিত্তিক তথ্যসমৃদ্ধ
রিপোর্টটি প্রকাশ করেছে, সে তথ্য আতঙ্কিত হওয়ার মতো।
বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গ দোষে কিংবা সংসর্গের প্রভাবে তরুণ প্রজন্ম মাদকাসক্ত
হয়ে পড়ছে দিন দিন। আর এ তথ্য কে না জানেন যে, সমাজে সংঘটিত নানা অপরাধের বড়
অংশের সঙ্গে জড়িত মাদকাসক্তি বা নেশার প্রভাব। আরও ভয়াবহ তথ্য হচ্ছে,
মাদকসেবীর ৮০ শতাংশই যুবক। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে এমন মাদকসেবীদের ওপর
পরিচালিত গবেষণা জরিপের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, যে বিপুলসংখ্যক তরুণ মাদকাসক্ত,
তাদের শতকরা ৬১.৪৭ ভাগেরই নেশার হাতেখড়ি হয়েছে বন্ধু-বান্ধবের মাধ্যমে। গত
দুই বছরের পরিসংখ্যানে বেরিয়ে এসেছে মাদকাসক্তের সংখ্যা বৃদ্ধির ভয়ঙ্কর
চিত্র। যেখানে ২০১১ সালে মাদকাসক্ত ছিল শতকরা ৫২.২৩ ভাগ, সেখানে এক বছরের
ব্যবধানে ২০১২ সালে তার সংখ্যা শতকরা ৬১.৪৭ ভাগ। নেশার জগতে প্রবেশের এই যে
হার বৃদ্ধি, এ তথ্য মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সর্বশেষ গবেষণা থেকে পাওয়া।
বন্ধু-বান্ধবের মাধ্যমে প্রথমে নেশার জগতে যারা প্রবেশ করছে, তাদের পরেই
রয়েছে কৌতূহলে নেশার জগতে প্রবেশকারীর সংখ্যা। স্রেফ কৌতূহল থেকে
মাদকসেবী হয়েছে ৩২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। আমাদের জন্য এ তথ্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।
বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশ, যার জনশক্তির এক বিশাল
সম্ভাবনার নাম তারুণ্য বা তরুণ সমাজ, সেই তরুণ সমাজ যদি সর্বনাশা নেশার
জগতে এভাবে চলে যেতে থাকে, তাহলে তা সমগ্র জাতির জন্যই বয়ে আনবে চরম
বিপর্যয়। সুতরাং এ অবস্থায় নেশার বস্তু সহজলভ্য করা যাবে না কিছুতেই। তরুণ
প্রজন্মকেও সযত্ন পরিচর্যা দিতে হবে অভিভাবকদের। কারণ, আমাদের বিপদ একদিকে
নয়, নানান দিকের। প্রথমত, তরুণ সমাজ নেশার অন্ধকার জগতে ধাবিত হচ্ছে
বন্ধু-বান্ধবের পাল্লায় পড়ে, অন্যদিকে কৌতূহলের বশে। তার ওপর রয়েছে
আন্তর্জাতিক বিপদ। বিশ্বব্যাপী মাদক চোরাচালান রুটগুলোতে কড়াকড়ি আরোপ করায়
এখন বাংলাদেশকে মাদক চোরাচালানিরা নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে।
ইতিমধ্যে একাধিক বিদেশি মাদক পাচারচক্র ঢাকায় ধরা পড়েছে। তৃতীয়ত, বাংলাদেশে
দুর্নীতি এমন পর্যায়ে হয় যে, শর্ষের মধ্যেই ভূত থেকে যায়। অপরাধ দমনেও তাই
নানা অন্তরায়। এ অবস্থায় মাদকের ভয়াবহ বিস্তার সমাজে নানামুখী অপরাধ
সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে দেবে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, পুলিশসহ
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং সর্বোপরি সমাজের সংশ্লিষ্ট সব মহলকেই
মাদকাসক্তি রোধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়তে হবে। মাদকের সরবরাহ বন্ধ করতে চাই
সর্বাত্মক পদক্ষেপ। মাদক সংক্রান্ত মামলার বিচারে কোনো রকম শৈথিল্য বা
সংশ্লিষ্টদের সামান্য ঔদাসীন্যও কাম্য নয়। দুর্ভাগ্যজনক সত্য হলো,
সাক্ষ্যপ্রমাণসহ প্রয়োজনীয় আইনি কঠোরতার অভাবে মাদক মামলার অধিকাংশ আসামি
খালাস পেয়ে যাচ্ছে, যা কাম্য নয়। সবচেয়ে বড় কথা, প্রতিটি সন্তানের
অভিভাবককে সতর্ক থাকতে হবে, জানতে হবে_ তার সন্তান কোথায় কাদের সঙ্গে
মিশছে। মাদকের যে ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে, তাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়,
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, তথ্য, সমাজকল্যাণ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সর্বস্তরের
প্রতিনিধিত্ব নিয়ে অবিলম্বে একটি জাতীয় মাদক প্রতিরোধ সেল গঠন করা জরুরি
বলে আমরা মনে করি।
No comments