মনিরার করুণ মৃত্যু- দুর্বৃত্তরা যেন রেহাই না পায়
রাজধানীর খিলক্ষেত থানার কলেজছাত্রী মনিরা
পারভীনকে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা প্রকাশ্য দিবালোকে অনেক লোকের উপস্থিতিতে
আঘাতের পর আঘাত হেনে রক্তাক্ত করে ফেলল; কিন্তু কেউ তার পাশে এগিয়ে এলো না।
একাধিক সংবাদপত্রের খবরে প্রকাশ, মনিরাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল নাসির
হোসেন, যার পরিবার ধনী ও প্রভাবশালী। বিয়ে হয় ২১ জুন। কিন্তু পরিবার মেনে
না নেওয়ায় তারা একদিন লুকিয়ে থাকে। ২২ জুন নবদম্পতি নাসির হোসেনের বাড়িতে
এলে শর্ত দেওয়া হয়_ ১০ লাখ টাকা যৌতুক দেওয়া হলে 'অসম বিয়ে' বৈধতা পাবে।
মনিরার অটোরিকশা চালক বাবার এই বিপুল অঙ্কের টাকা জোগানোর ক্ষমতা ছিল না।
কিন্তু তাই বলে এই একবিংশ শতাব্দীতে রাজধানীর বুকে এক কলেজছাত্রীকে এভাবে
পিটিয়ে মেরে ফেলা হবে? আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হতে
পারে যে, তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল না। কিন্তু নাসির হোসেনের পরিবার এই
সমাজেই দানব হয়ে উঠেছিল এবং তারা নিশ্চিত ছিল যে, ধরাকে সরা জ্ঞান করা হলেও
কেউ তাদের কিছু করতে পারবে না। এ ধরনের অপরাধী সমাজের সর্বত্রই কমবেশি
রয়েছে। তারা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পায়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী 'বোধগম্য কারণে'
ক্রমাগত উপেক্ষা করে চলে তাদের অপরাধকর্ম। মনিরার সুরতহালের রিপোর্টে বলা
হয়েছে, ডান চোখের পাশে, হাঁটু ও মাথায় কালো জখম রয়েছে। ময়নাতদন্তকারী ঢাকা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের একজন চিকিৎসক বলেছেন, মাথায়
মারাত্মক আঘাতেই তার মৃত্যু হয়েছে। মনিরা 'সৌভাগ্যবতী' যে তার স্বামী
নাসির হোসেনই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়, যেখানে ২২ জুন সকালে তার মৃত্যু হয়।
কেন এক কলেজছাত্রীকে প্রকাশ্যে মরণ আঘাত হানতে দেখেও উপস্থিত এত মানুষের
মধ্যে একজনও প্রতিবাদ করতে পারে না, তা নিয়ে সমাজবিজ্ঞানী ও মনসতত্ত্ববিদরা
আলোচনা চালাতেই পারেন। তাতে অকালে হারিয়ে যাওয়া মনিরার কিছু আসবে যাবে না।
দরিদ্র পরিবারটির শোকতাপও তাতে সামান্য কমবে না। যদি এ হত্যাকাণ্ডের
ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যায়, তাহলে কেবল মিলতে পারে কিছুটা সান্ত্বনা। সে
ভরসা কেউ দেবে কি? পুলিশ ইতিমধ্যে দু'জনকে গ্রেফতার করেছে। অভিযুক্ত অনেকেই
পলাতক। তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করবে না তো? রাজনৈতিক কিংবা
প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপ মামলাকে দুর্বল করে ফেলবে না তো? এসব প্রশ্ন
অবশ্যম্ভাবীরূপে এখনও কাঁটার মতো জেগে আছে। আমরা চাই দুর্বৃত্তরা যেন রেহাই
না পায়। প্রশ্নহীন ন্যায়বিচার হোক এ হত্যাকাণ্ডের।
No comments