রেশমি পথ, যেতে হবে বহু দূর by সাজেদা হক
'রোড এশিয়া'র উপমহাদেশীয় অঞ্চলগুলোর মধ্য
দিয়ে পূর্ব ও পশ্চিম এশিয়া, ইউরোপ ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলকে সংযুক্ত করে একটি
প্রাচীন বাণিজ্যিক পথ তৈরি হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতক থেকে
খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতক পর্যন্ত।
প্রায় চার হাজার মাইল
দীর্ঘ এই পথ পরিচিতি পেয়েছিল সিল্ক রুট নামে। চীনা, ভারতীয়, ফারসি, আরব ও
ইউরোপীয় সভ্যতার উন্নয়নে 'সিল্ক রুটে'র সেই বাণিজ্যপথই পরবর্তী সময়ে খ্যাতি
পেয়েছে 'ট্রান্স-এশিয়ান প্রাচীন বাণিজ্যপথ' হিসেবে।
সিল্ক রুট বা রোডে মূলত দুটি পথ। একটি সড়কপথ, অন্যটি সমুদ্রপথ। সাগরের বুকে তিব্বত থেকে যেমন যেত সোহাগা, চামরি গাইয়ের লেজ, উট ও বাঁধাকপি, তেমনি মিয়ানমার থেকে আসত অ্যাম্বার ও ময়ূরপুচ্ছ, মথুরা থেকে পালংশাক, মধ্য ও দক্ষিণ ভারত থেকে সুগন্ধি জুঁই, ওষুধ আর চন্দনকাঠ, পারস্য থেকে পিচগাছ, উল, খেজুর আর ট্যাপেস্ট্রি, সিরিয়া থেকে কাচের বাসনকোসন। আর সবার ওপরে বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে থাকত চীনা মসলিন, যে জিনিস চীনারা আবিষ্কার করেছিল খ্রিস্টজন্মের প্রায় তিন হাজার বছর আগে।
এর মধ্যে কেটে গেছে বহু সময়। বেড়েছে বাণিজ্য, বাণিজ্য পথও। দেশে দেশে দ্বন্দ্বের চেয়ে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি পেয়েছে নতুন দিশা। বাণিজ্যে যোগ হয়েছে নতুন নতুন পথ। চতুর্দশ শতাব্দীর পর সিল্ক রোডের মাধ্যমে ভারত উপমহাদেশের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যিক যোগাযোগ শুরু হয়, যা মধ্য চীন থেকে শুরু করে ইউরোপ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের যোগাযোগের এ পথটি দক্ষিণাঞ্চলের তৃতীয় 'সিল্ক রোড' নামে পরিচিত। বাংলাদেশের ঢাকার সোনারগাঁ অঞ্চলের বিখ্যাত মসলিন এ সিল্ক রোডের মাধ্যমে মধ্য এশিয়া ও ইউরোপ হয়ে পারস্য পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে। ভূমধ্যসাগরের আশপাশের অঞ্চলগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের কারণে মসলিন, সিল্ক বা রেশমি চাদর, খোদাইকৃত হাতির দাঁতের তৈজসপত্র, মূল্যবান পাথর দিয়ে চীন, ব্যাবিলন ও গ্রিসের সঙ্গে শুরু হয় বিনিময় ব্যবসা।
তৃতীয় এই 'সিল্ক রোড' গঠনে বাংলাদেশের সহযোগিতা চায় যুক্তরাষ্ট্র। কাবুলে দূতাবাস চালু করার সিদ্ধান্ত, মিয়ানমারের উন্মুক্ত বাজারের কারণে দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, চীন, বিশেষ করে কুনমিংয়ের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় বাণিজ্য রুটের মধ্যখানে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। সে কারণেই বাংলাদেশের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন উদ্যোগে সড়ক উন্নয়ন, রেলওয়ে নেটওয়ার্ক, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ও গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে আঞ্চলিক উন্নয়ন সম্ভব হবে বলেও মনে করে দেশটি। এশিয়ায় বাজারের উত্থানের কারণে গুরুত্বহীন হয়ে পড়া আগের মূল রুটের পুনরুত্থান চায় প্রতাপশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। সাম্প্রতিক সফরে বাংলাদেশে এসে নতুন এই 'সিল্ক রোডে'র ইস্যুটি বারবার টেনে আনেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা।
বিশেষ করে নতুন 'সিল্ক রোড' ও ইন্দো-প্যাসিফিক করিডরকে উৎসাহিত করতে চান তাঁরা। দক্ষিণ এশিয়া থেকে দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব এশিয়ায় কম মূল্যে পণ্য চলাচলের জন্য বিকল্প রাস্তা তৈরিতে নেপাল, বাংলাদেশ, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ডসহ সব অঞ্চলের জন্য মার্কিন সমন্বয় বাড়াতে চান। এ জন্য সীমান্ত অতিক্রম কেন্দ্রের উন্নয়ন, রেললাইন, মহাসড়ক, জ্বালানি অবকাঠামো ও বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার সুপারিশ করেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন।
এ তো গেল যুক্তরাষ্ট্রের কথা। আসি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত প্রসঙ্গে। দক্ষিণ রেশমি পথের একটি প্রধান অংশজুড়েই রয়েছে কলকাতা-কুনমিং এলাকা। ২০০৬ সালে এই অঞ্চলকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও সার্বিক উন্নয়নের মূল স্রোতের সঙ্গে যুক্ত করতে দিলি্ল ফোরাম সভায় এর প্রস্তাব নেওয়া হয় এবং ওই বছরই একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও চীনের তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি হু জিনতাও এ প্রস্তাবে সহমত পোষণ করেন। এ প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে বাধাহীন সংযোগ, উন্নত বাণিজ্যিক সুবিধা, সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে ব্যবসায়িক যোগাযোগ ও ব্যবহারযোগ্য সম্পদের একত্র অন্বেষণের মাধ্যমে বিসিআইএম অঞ্চলে উত্তরোত্তর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, দারিদ্র্য হ্রাস ও জনসাধারণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন সম্ভব বলেও মনে করা হচ্ছে।
সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরের শেষেই শুরু হচ্ছে লন্ডন-নয়াদিলি্ল-ঢাকা ট্রেন যোগাযোগও। প্রায় সাত হাজার মাইল লম্বা পথে চলবে ট্রেন। সে ট্রেন বলা যায়, পুরনো সিল্ক রোড ধরে ইস্তাম্বুল, তেহরান, লাহোর হয়ে দিলি্ল ও শেষে ঢাকা পৌঁছবে ২৩ দিনে। ইউনাইটেড নেশনের এ প্রজেক্টে ভারত এরই মধ্যে ব্যয় করেছে ৯০ মিলিয়ন পাউন্ড। ভবিষ্যতে এ পথে লন্ডন থেকে চীনের ইউনান প্রদেশ ও সিঙ্গাপুরের যোগাযোগ স্থাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে। এই নেটওয়ার্কে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিতে নীতিগত আপত্তি থাকা উচিত নয়, তবে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জানা জরুরি।
* ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রাচীন এই রেশমি পথটি কতটা মসৃণ হবে?
* ২০১৪ সালের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার বন্ধু দেশগুলোর সেনা প্রত্যাহারের পরও সেখানে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে কি না?
* পাকিস্তান, ভারত, চীন কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাবুলের বাণিজ্যিক ও কৌশলগত সম্পর্ক কেমন হবে?
* ভিসামুক্ত সার্ক করা হবে কি না?
* সিল্ক রোড পুনরুজ্জীবনে বিনিয়োগের প্রশ্নে বাংলাদেশের পক্ষে ব্যয় বহন করা কতটা বাস্তব?
* আফগানিস্তানে বাংলাদেশের দূতাবাস চালুর উদ্যোগ ও গৃহীত পদক্ষেপ কতটা নির্বিঘ্ন হবে?
* সীমিত যেসব বাংলাদেশি পণ্য সেখানে রপ্তানির সুযোগ রয়েছে, তার বাজার সম্প্রসারণ ও সমৃদ্ধির দিকে নজর বাড়ানো হবে কি না?
জ্বালানি ও অবকাঠামোর সম্পৃক্ততার মাধ্যমে পণ্য, সেবা ও মানুষের মধ্যে যোগাযোগ, বাণিজ্য উদারীকরণের আওতায় অশুল্ক বাধা অপসারণ ও আইনসম্মত সুশাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে পণ্য ও সেবার বিনিময়ে গতি সঞ্চার করা হবে এ রুটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা এমন একটি রাস্তা চাই, যা ছয়টি দেশ ও দুটি মহাদেশের মধ্য দিয়ে বিস্তৃত হবে। শুধু ব্যবসায়িক কার্যক্রম নয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়াবলিও সুসম্পন্ন করা হবে এ রুটের মাধ্যমেই। এক ও অভিন্ন বিশ্বে সৌহার্দ্যের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হয়ে উঠুক এই 'তৃতীয় সিল্ক রোড'। আশার, সম্ভাবনার অফুরন্ত উৎস হয়ে উঠুক এই 'তৃতীয় সিল্ক রোড'। বিশ্বময় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা দ্বন্দ্ব-সংঘাত নির্মূলে, সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি বৃদ্ধিতে 'তৃতীয় সিল্ক রোড' হয়ে উঠুক উত্তরণের অন্যতম পথ, বিশ্বায়নের এক অনন্য উদাহরণ।
লেখক : সাংবাদিক
সিল্ক রুট বা রোডে মূলত দুটি পথ। একটি সড়কপথ, অন্যটি সমুদ্রপথ। সাগরের বুকে তিব্বত থেকে যেমন যেত সোহাগা, চামরি গাইয়ের লেজ, উট ও বাঁধাকপি, তেমনি মিয়ানমার থেকে আসত অ্যাম্বার ও ময়ূরপুচ্ছ, মথুরা থেকে পালংশাক, মধ্য ও দক্ষিণ ভারত থেকে সুগন্ধি জুঁই, ওষুধ আর চন্দনকাঠ, পারস্য থেকে পিচগাছ, উল, খেজুর আর ট্যাপেস্ট্রি, সিরিয়া থেকে কাচের বাসনকোসন। আর সবার ওপরে বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে থাকত চীনা মসলিন, যে জিনিস চীনারা আবিষ্কার করেছিল খ্রিস্টজন্মের প্রায় তিন হাজার বছর আগে।
এর মধ্যে কেটে গেছে বহু সময়। বেড়েছে বাণিজ্য, বাণিজ্য পথও। দেশে দেশে দ্বন্দ্বের চেয়ে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি পেয়েছে নতুন দিশা। বাণিজ্যে যোগ হয়েছে নতুন নতুন পথ। চতুর্দশ শতাব্দীর পর সিল্ক রোডের মাধ্যমে ভারত উপমহাদেশের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যিক যোগাযোগ শুরু হয়, যা মধ্য চীন থেকে শুরু করে ইউরোপ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের যোগাযোগের এ পথটি দক্ষিণাঞ্চলের তৃতীয় 'সিল্ক রোড' নামে পরিচিত। বাংলাদেশের ঢাকার সোনারগাঁ অঞ্চলের বিখ্যাত মসলিন এ সিল্ক রোডের মাধ্যমে মধ্য এশিয়া ও ইউরোপ হয়ে পারস্য পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে। ভূমধ্যসাগরের আশপাশের অঞ্চলগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের কারণে মসলিন, সিল্ক বা রেশমি চাদর, খোদাইকৃত হাতির দাঁতের তৈজসপত্র, মূল্যবান পাথর দিয়ে চীন, ব্যাবিলন ও গ্রিসের সঙ্গে শুরু হয় বিনিময় ব্যবসা।
তৃতীয় এই 'সিল্ক রোড' গঠনে বাংলাদেশের সহযোগিতা চায় যুক্তরাষ্ট্র। কাবুলে দূতাবাস চালু করার সিদ্ধান্ত, মিয়ানমারের উন্মুক্ত বাজারের কারণে দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, চীন, বিশেষ করে কুনমিংয়ের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় বাণিজ্য রুটের মধ্যখানে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। সে কারণেই বাংলাদেশের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন উদ্যোগে সড়ক উন্নয়ন, রেলওয়ে নেটওয়ার্ক, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ও গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে আঞ্চলিক উন্নয়ন সম্ভব হবে বলেও মনে করে দেশটি। এশিয়ায় বাজারের উত্থানের কারণে গুরুত্বহীন হয়ে পড়া আগের মূল রুটের পুনরুত্থান চায় প্রতাপশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। সাম্প্রতিক সফরে বাংলাদেশে এসে নতুন এই 'সিল্ক রোডে'র ইস্যুটি বারবার টেনে আনেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা।
বিশেষ করে নতুন 'সিল্ক রোড' ও ইন্দো-প্যাসিফিক করিডরকে উৎসাহিত করতে চান তাঁরা। দক্ষিণ এশিয়া থেকে দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব এশিয়ায় কম মূল্যে পণ্য চলাচলের জন্য বিকল্প রাস্তা তৈরিতে নেপাল, বাংলাদেশ, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ডসহ সব অঞ্চলের জন্য মার্কিন সমন্বয় বাড়াতে চান। এ জন্য সীমান্ত অতিক্রম কেন্দ্রের উন্নয়ন, রেললাইন, মহাসড়ক, জ্বালানি অবকাঠামো ও বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার সুপারিশ করেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন।
এ তো গেল যুক্তরাষ্ট্রের কথা। আসি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত প্রসঙ্গে। দক্ষিণ রেশমি পথের একটি প্রধান অংশজুড়েই রয়েছে কলকাতা-কুনমিং এলাকা। ২০০৬ সালে এই অঞ্চলকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও সার্বিক উন্নয়নের মূল স্রোতের সঙ্গে যুক্ত করতে দিলি্ল ফোরাম সভায় এর প্রস্তাব নেওয়া হয় এবং ওই বছরই একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও চীনের তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি হু জিনতাও এ প্রস্তাবে সহমত পোষণ করেন। এ প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে বাধাহীন সংযোগ, উন্নত বাণিজ্যিক সুবিধা, সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে ব্যবসায়িক যোগাযোগ ও ব্যবহারযোগ্য সম্পদের একত্র অন্বেষণের মাধ্যমে বিসিআইএম অঞ্চলে উত্তরোত্তর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, দারিদ্র্য হ্রাস ও জনসাধারণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন সম্ভব বলেও মনে করা হচ্ছে।
সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরের শেষেই শুরু হচ্ছে লন্ডন-নয়াদিলি্ল-ঢাকা ট্রেন যোগাযোগও। প্রায় সাত হাজার মাইল লম্বা পথে চলবে ট্রেন। সে ট্রেন বলা যায়, পুরনো সিল্ক রোড ধরে ইস্তাম্বুল, তেহরান, লাহোর হয়ে দিলি্ল ও শেষে ঢাকা পৌঁছবে ২৩ দিনে। ইউনাইটেড নেশনের এ প্রজেক্টে ভারত এরই মধ্যে ব্যয় করেছে ৯০ মিলিয়ন পাউন্ড। ভবিষ্যতে এ পথে লন্ডন থেকে চীনের ইউনান প্রদেশ ও সিঙ্গাপুরের যোগাযোগ স্থাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে। এই নেটওয়ার্কে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিতে নীতিগত আপত্তি থাকা উচিত নয়, তবে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জানা জরুরি।
* ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রাচীন এই রেশমি পথটি কতটা মসৃণ হবে?
* ২০১৪ সালের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার বন্ধু দেশগুলোর সেনা প্রত্যাহারের পরও সেখানে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে কি না?
* পাকিস্তান, ভারত, চীন কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাবুলের বাণিজ্যিক ও কৌশলগত সম্পর্ক কেমন হবে?
* ভিসামুক্ত সার্ক করা হবে কি না?
* সিল্ক রোড পুনরুজ্জীবনে বিনিয়োগের প্রশ্নে বাংলাদেশের পক্ষে ব্যয় বহন করা কতটা বাস্তব?
* আফগানিস্তানে বাংলাদেশের দূতাবাস চালুর উদ্যোগ ও গৃহীত পদক্ষেপ কতটা নির্বিঘ্ন হবে?
* সীমিত যেসব বাংলাদেশি পণ্য সেখানে রপ্তানির সুযোগ রয়েছে, তার বাজার সম্প্রসারণ ও সমৃদ্ধির দিকে নজর বাড়ানো হবে কি না?
জ্বালানি ও অবকাঠামোর সম্পৃক্ততার মাধ্যমে পণ্য, সেবা ও মানুষের মধ্যে যোগাযোগ, বাণিজ্য উদারীকরণের আওতায় অশুল্ক বাধা অপসারণ ও আইনসম্মত সুশাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে পণ্য ও সেবার বিনিময়ে গতি সঞ্চার করা হবে এ রুটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা এমন একটি রাস্তা চাই, যা ছয়টি দেশ ও দুটি মহাদেশের মধ্য দিয়ে বিস্তৃত হবে। শুধু ব্যবসায়িক কার্যক্রম নয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়াবলিও সুসম্পন্ন করা হবে এ রুটের মাধ্যমেই। এক ও অভিন্ন বিশ্বে সৌহার্দ্যের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হয়ে উঠুক এই 'তৃতীয় সিল্ক রোড'। আশার, সম্ভাবনার অফুরন্ত উৎস হয়ে উঠুক এই 'তৃতীয় সিল্ক রোড'। বিশ্বময় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা দ্বন্দ্ব-সংঘাত নির্মূলে, সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি বৃদ্ধিতে 'তৃতীয় সিল্ক রোড' হয়ে উঠুক উত্তরণের অন্যতম পথ, বিশ্বায়নের এক অনন্য উদাহরণ।
লেখক : সাংবাদিক
No comments