জেল থেকে জেলে by সুশান্ত ঘোষ
উপমহাদেশের সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ এক বিপ্লবী পুরুষের নাম। ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সশস্ত্রবাদী যুদ্ধ, নিপীড়ক পাকিস্তানের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করে জেল জীবন ভোগ করেছেন।
এমনকি স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন সামরিক শাসক ৮৫ বছর বয়সে তাকে জেলে নিক্ষেপ করেছিল। জীবনের এক-চতুর্থাংশ সময় (প্রায় ২৬ বছর) তিনি জেলে কাটিয়েছেন। ছেলেবেলায় থেকেই নিরন্ন মানুষের প্রতি ছিল গভীর মমত্ববোধ। এমনও হয়েছে, দুপুরে ভিখিরি এসে উঠোনে দাঁড়াতেই দেবেন্দ্রনাথ নিজের থালার ভাত তাকে দিয়ে নিজে না খেয়ে থেকেছেন। আবার কোনো দিন নিজের গায়ের শার্ট গরিব বন্ধুকে দিয়ে অবলীলায় খালি গায়ে বাড়ি ফিরেছেন।
দেবেন্দ্রনাথ তার শিক্ষাজীবন শুরু করেন মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত প্রতিষ্ঠিত এবং তার সত্য প্রেম পবিত্রতার আলোকে উদ্ভাসিত ব্রজমোহন বিদ্যালয়ে। ১৯০৬ সালে জাতীয় কংগ্রেসের বরিশাল অধিবেশনকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ সরকারের নির্যাতন ও দমননীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আন্দোলনে শামিল হন দেবেন্দ্রনাথ। পরে তিনি অনুশীলন দলের সঙ্গে যুক্ত হন। বাহ্যিকভাবে এ দলের কর্মকাণ্ড শরীর চর্চা, লাঠিখেলা, ছোরা খেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও ভেতরে চলত অস্ত্রশিক্ষা ও সামরিক প্রশিক্ষণ। ১৯০৭ সালে বরিশাল বাজার রোড বিস্টেম্ফারণের কারণে দেবেন্দ্রনাথ ঘোষসহ আরও অনেকে গ্রেফতার হন। ব্রিটিশ সরকার এই বিপল্গবীদের নামে যে মামলা করে, সেটাই বিখ্যাত 'বরিশাল ষড়যন্ত্র মামলা'। ব্রিটিশের বিরুদ্ধে এটাই প্রথম ষড়যন্ত্র মামলা। বলা হয় যুদ্ধের মাধ্যমে ব্রিটিশ গভর্নমেন্টকে তারা খতম করতে চেয়েছিল। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগের নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলনকে সংগঠিত করতে দেবেন্দ্রনাথ কলকাতায় যান। ১৯২৬ সালে বরিশাল কৃষি প্রদর্শনীর নামে জুয়া খেলা এবং কুলকাঠি গ্রামে ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট বল্গান্ডির নির্দেশে মুসলিম হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। ১৯২৮ সালে আরএসপিতে যোগ দেন। তার এই বিপল্গবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন ভাইপো দেব কুমার ঘোষ (মনাদা)। ১৯৩০ সালে বরিশালে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা প্রশমনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি। ১৯৩০ সালে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখলের নায়ক মাস্টারদা সূর্য সেন ও তার সঙ্গীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৩১ সালে বারাসাত জেল থেকে পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়ার জেলে তাকে আটক রাখা হয়। বাঁকুড়া থেকে বরিশালে ফিরে আসতেই তাকে আবার গ্রেফতার করে কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে পাঠানো হয়। জেলে জেলে ঘুরতে থাকে তার জীবনচক্র। ১৯৪০ সালে নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের আগমন কর্মসূচিকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান ভূমিকা পালন করেন। ব্রিটিশরাজ বিদায় নেওয়ার সময় তিনি জেল থেকে মুক্তি পান। ১৯৪৮ সালে 'যুব সংঘ' গঠন করে একই সঙ্গে দুর্ভিক্ষ মোচন ও কালোবাজারি দমনে নিয়োজিত হন। ১৯৫০ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময়ে দাঙ্গাবিরোধী ভূমিকা রাখায় তাকে পাকিস্তান সরকার নিরাপত্তাবন্দির নামে আটক করে।
যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে অন্য প্রার্থীকে পরাজিত করে দেবেন্দ্রনাথ ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় দেবেন্দ্রনাথকে দেশরক্ষা আইনে বন্দি করা হয়। এক বছর পরে মুক্তি পেয়ে দেবেন্দ্রনাথ বঙ্গবন্ধুর প্রণীত ছয় দফা বাস্তবায়নের আন্দোলনে যোগ দেন এবং ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাযজ্ঞের পরপরই তাকে জেলে নিক্ষেপ করা হয়। প্রায় এক বছর তিনি ছাড়া পান। সামরিক শাসন ও স্বৈরাচারদের বিরুদ্ধে যখন কেউ কথা বলতেন না, তখন তিনি নিশ্চুপ থাকতে পারতেন না। ১৯৯৯ সালের ১১ জানুয়ারি এই মহাপ্রাণ সংগ্রামী পুরুষের জীবনাবসান ঘটে।
দেবেন্দ্রনাথ তার শিক্ষাজীবন শুরু করেন মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত প্রতিষ্ঠিত এবং তার সত্য প্রেম পবিত্রতার আলোকে উদ্ভাসিত ব্রজমোহন বিদ্যালয়ে। ১৯০৬ সালে জাতীয় কংগ্রেসের বরিশাল অধিবেশনকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ সরকারের নির্যাতন ও দমননীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আন্দোলনে শামিল হন দেবেন্দ্রনাথ। পরে তিনি অনুশীলন দলের সঙ্গে যুক্ত হন। বাহ্যিকভাবে এ দলের কর্মকাণ্ড শরীর চর্চা, লাঠিখেলা, ছোরা খেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও ভেতরে চলত অস্ত্রশিক্ষা ও সামরিক প্রশিক্ষণ। ১৯০৭ সালে বরিশাল বাজার রোড বিস্টেম্ফারণের কারণে দেবেন্দ্রনাথ ঘোষসহ আরও অনেকে গ্রেফতার হন। ব্রিটিশ সরকার এই বিপল্গবীদের নামে যে মামলা করে, সেটাই বিখ্যাত 'বরিশাল ষড়যন্ত্র মামলা'। ব্রিটিশের বিরুদ্ধে এটাই প্রথম ষড়যন্ত্র মামলা। বলা হয় যুদ্ধের মাধ্যমে ব্রিটিশ গভর্নমেন্টকে তারা খতম করতে চেয়েছিল। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগের নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলনকে সংগঠিত করতে দেবেন্দ্রনাথ কলকাতায় যান। ১৯২৬ সালে বরিশাল কৃষি প্রদর্শনীর নামে জুয়া খেলা এবং কুলকাঠি গ্রামে ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট বল্গান্ডির নির্দেশে মুসলিম হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। ১৯২৮ সালে আরএসপিতে যোগ দেন। তার এই বিপল্গবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন ভাইপো দেব কুমার ঘোষ (মনাদা)। ১৯৩০ সালে বরিশালে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা প্রশমনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি। ১৯৩০ সালে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখলের নায়ক মাস্টারদা সূর্য সেন ও তার সঙ্গীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৩১ সালে বারাসাত জেল থেকে পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়ার জেলে তাকে আটক রাখা হয়। বাঁকুড়া থেকে বরিশালে ফিরে আসতেই তাকে আবার গ্রেফতার করে কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে পাঠানো হয়। জেলে জেলে ঘুরতে থাকে তার জীবনচক্র। ১৯৪০ সালে নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের আগমন কর্মসূচিকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান ভূমিকা পালন করেন। ব্রিটিশরাজ বিদায় নেওয়ার সময় তিনি জেল থেকে মুক্তি পান। ১৯৪৮ সালে 'যুব সংঘ' গঠন করে একই সঙ্গে দুর্ভিক্ষ মোচন ও কালোবাজারি দমনে নিয়োজিত হন। ১৯৫০ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময়ে দাঙ্গাবিরোধী ভূমিকা রাখায় তাকে পাকিস্তান সরকার নিরাপত্তাবন্দির নামে আটক করে।
যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে অন্য প্রার্থীকে পরাজিত করে দেবেন্দ্রনাথ ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় দেবেন্দ্রনাথকে দেশরক্ষা আইনে বন্দি করা হয়। এক বছর পরে মুক্তি পেয়ে দেবেন্দ্রনাথ বঙ্গবন্ধুর প্রণীত ছয় দফা বাস্তবায়নের আন্দোলনে যোগ দেন এবং ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাযজ্ঞের পরপরই তাকে জেলে নিক্ষেপ করা হয়। প্রায় এক বছর তিনি ছাড়া পান। সামরিক শাসন ও স্বৈরাচারদের বিরুদ্ধে যখন কেউ কথা বলতেন না, তখন তিনি নিশ্চুপ থাকতে পারতেন না। ১৯৯৯ সালের ১১ জানুয়ারি এই মহাপ্রাণ সংগ্রামী পুরুষের জীবনাবসান ঘটে।
No comments