যুদ্ধাপরাধীদের বিচার : প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি by সুলতান মাহমুদ রানা
মহান বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের শেষ এবং সরকারের চার বছর পূর্তি। প্রতিবারের মতো এবারের বিজয়ের মাসেও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও চেতনায় বাঙালির জাতীয় জীবন সিক্ত হয়। অন্যান্য বছর থেকে এবারের বিজয়ের মাসে ছিল একটু ভিন্ন মাত্রা।
দেশের অসংখ্য মানুষ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের দাবিতে ছিল সোচ্চার। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের (পূর্ববর্তী চারদলীয় জোট) কর্মসূচির নামে হরতাল ও সহিংসতায় সারা দেশে জনদুর্ভোগের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। জনমনে একটি অন্যতম আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় এবং তা কখন কার্যকর হবে। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার অন্যতম অঙ্গীকার মানবতাবিরোধীদের বিচার জনগণের মনে এখন আশার বাণী ছাড়া কিছুই নয়। সরকারের প্রথম বছর থেকেই দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ঐতিহ্য লালনকারী জনসাধারণ বিশেষ করে সমগ্র জাতির গোটা তরুণ সমাজ (বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার অধিকাংশ ভোটার) যুদ্ধাপরাধী নামের এই হায়েনাদের বিচার দেখতে উন্মুখ হয়ে আছে। সবার মধ্যে একটি ধারণা জাগ্রত হয়েছিল এবং বিশেষ করে স্বপ্ন জাগ্রত হয়েছিল- এ বছরের বিজয়ের মাসেই বিচারের রায় হবে। হয়তো বা দু-একটি রায় হয়েও যেত; কিন্তু স্কাইপিতে কথোপকথনের নামে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের জের ধরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যানের পদত্যাগে বিচারপ্রক্রিয়া হঠাৎ হোঁচট খায়। এ ধরনের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখতে অথবা ষড়যন্ত্র সৃষ্টিতে জামায়াতে ইসলামীর অপচেষ্টা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা যায়। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও ইসলামী দলগুলো বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতা, যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিল, তাদের বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন কৌশলে কিংবা অপকৌশল গ্রহণ করে দেশের রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে দেশের তরুণ সমাজের অধিকাংশেরই অবস্থান একই প্ল্যাটফর্মে। এ পর্যন্ত জনগণের কাছে স্পষ্ট নয় যে আগামী নির্বাচন কোন ধরনের সরকারের অধীনে হবে অর্থাৎ এর কাঠামো, ধরন, গঠনপ্রক্রিয়া কেমন হবে তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। আর এমন অনিশ্চয়তায় বিরোধী দলগুলো যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, তাহলে নির্বাচন যতই সুষ্ঠু হোক না কেন, তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন থেকে যাওয়ার আশঙ্কা।
যেসব কর্মসূচিতে বিজয়ের মাসে সারা দেশে শান্তিশৃঙ্খলা চরম বিঘ্নিত হয়েছে, তা আমি সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। গত ৩ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামী মানবতাবিরোধী অপরাধে আটক দলীয় নেতাদের মুক্তির দাবিতে পূর্বঘোষিত সমাবেশ করতে না পারায় ৪ ডিসেম্বর সারা দেশে হরতালের ডাক দেয়। জামায়াতের ওই হরতালকে ১৮ দল নৈতিকভাবে সমর্থন জানালে আন্দোলনের ইস্যু নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন তৈরি হয়। উল্লেখ্য, ৩ ডিসেম্বরই জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা গাড়ি পোড়ানোসহ নানাবিধ সহিংসতা সৃষ্টিতে মাঠে নেমে পড়ে। ৪ ডিসেম্বরের হরতালের দিনও ব্যাপক ভাঙচুর, গাড়ি পোড়ানো ও সহিংসতার সীমাহীন ঘটনা ঘটে। আর এই হরতাল ছিল যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির দাবিতে। যাতে বিএনপিসহ এর শরিক দলগুলো নৈতিক সমর্থন দান করে। বিএনপির এমন অবস্থান নিঃসন্দেহে দেশের সাধারণ জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। ৯ ডিসেম্বর ১৮ দলের দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচিতে নৈরাজ্য ও সহিংসতার ব্যাপক নজির সৃষ্টি হয়। ওই দিনই অবরোধ ঠেকানের নামে পুরান ঢাকায় ছাত্রলীগকর্মীরা বিশ্বজিৎ নামের এক পথচারীকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে, যা দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় তুলে দেয়, এমনকি সরকারও চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পতিত হয়। এ অবস্থায় ১৮ দল ১১ ডিসেম্বর নতুন করে হরতালের ডাক দিয়ে দেশের পরিস্থিতি আরো নাজুক করে তোলে। সেদিনও পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা, চোরাগোপ্তা হামলা ও গাড়ি পোড়ানোর ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে ১৮ ডিসেম্বর বাম দলগুলো ধর্মভিত্তিক দলগুলো নিষিদ্ধ করার দাবিতে যে হরতাল ডাকে, তা সহিংসতার কোনো ঘটনা না ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণ হরতালের নজির সৃষ্টি করে। ২০ ডিসেম্বর ১৮ তারিখের হরতালের প্রতিবাদে কয়েকটি ইসলামী দল হরতালের ডাক দেয়। সেখানেও গাড়ি ভাঙচুরসহ বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ২৬ ডিসেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে পথসভায় জনজীবন ব্যাপক দুর্ভোগের সম্মুখীন হয়। এভাবে ইচ্ছামতো কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে তথা দেশের জনসাধারণকে বিপাকে ফেলে মহান বিজয়ের মাস ডিসেম্বরকে সম্পূর্ণভাবে অন্ধকারে নিমজ্জিত করে রাখা হয়, যা স্বাধীন দেশের জন্য অত্যন্ত লজ্জার বিষয় ছাড়া কিছু নয়। স্বাধীনতার ৪১ বছর পার হলেও আমরা জাতি হিসেবে এখনো নিজেদের শিকলে বাঁধা পড়ে আছি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (দ্বিতীয়বার) ও সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, আপনারা দুজনই দেশকে ভালোবাসেন, দেশের জনগণকে ভালোবাসেন। দেশের জনগণ কোনো বিপাকে পড়ুক- এটা আপনারা কেউই চান না; তা আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। একজন জাতির জনকের কন্যা আর অন্যজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সেক্টর কমান্ডারের স্ত্রী- দুজনেরই দেশের প্রতি অনেক মায়ামমতা রয়েছে। কাজেই এমন কোনো আচরণ করবেন না, যাতে দেশের মানুষ হতাশায় নিমজ্জিত হয়। এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করা উচিত হবে না, যাতে দেশ কোনো তৃতীয় শক্তির হাতে জিম্মি হয়ে যায়। তৃতীয় শক্তির হাতে দেশকে জিম্মি হতে না দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব, যা গণতন্ত্রকে সুসংহত ও সমুন্নত রাখবে। বিশেষ করে বিএনপি নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বলতে চাই, আপনি সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হিসেবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে নিজেই সোচ্চার হোন, তাহলে জনগণের মনে একটি বড় জায়গা দখল করে নিতে সক্ষম হবেন। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার নামে জামায়াতের কর্মসূচিতে নৈতিক সমর্থন না দিয়ে বরং বাধা সৃষ্টি করুন, জনগণ অবশ্যই আপনার পাশে এসে দাঁড়াবে। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই- আপনি যে মিশন হাতে নিয়ে মাঠে নেমেছেন তা কোনো মোহ বা আবেগতাড়িত হয়ে পিছপা না হয়ে যথাযথভাবে সম্পাদন করার চেষ্টা করুন, বিশেষ করে জাতির অন্যতম আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করার পদক্ষেপ সফল করার প্রয়াস চালিয়ে যান, তাহলেই জনগণের মনে আপনিও সীমাহীন স্থান করে নিতে পারবেন বলে আশা করি। আগামী নির্বাচন কেমন ধরনের সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে, তা জনগণের কাছে পরিষ্কার করে দিন। আপনার সরকারের ইতিমধ্যেই চার বছর শেষ হয়ে সংবিধান অনুযায়ী সরকারের মেয়াদ ৯ মাসের বেশি নেই, এই অল্প সময়ে বিরোধী দল তথা জামায়াতের অপতৎপরতা রুখে দাঁড়িয়ে নিজেদের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করে ইশতেহারে বর্ণিত অন্যতম অঙ্গীকার পূরণের সময় খুবই কম।
সরকারের পাশাপাশি বিরোধী দলের উচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধানে পুনঃস্থাপনের দাবিতে অটল না থেকে যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা প্রণয়ন করা। এ ক্ষেত্রে সত্যিকার অর্থে গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব হলে সরকারের মেনে না নেওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না বলে আমি আশা করি। বিরোধী দল কোনো প্রস্তাব দিলে সুশীল সমাজ, মিডিয়াসহ বিভিন্ন পর্যবেক্ষক সংস্থা তার নিরপেক্ষ মূল্যায়ন সরকারের কাছে তুলে ধরতে পারে। এ ক্ষেত্রে সরকার কোনোভাবেই মূল্যায়িত প্রস্তাব অগ্রাহ্য করার দুঃসাহস দেখাবে না বলে আমার মনে হয়। এ ছাড়া বর্তমান প্রেক্ষাপটে কারচুপি কিংবা ভোট চুরির মাধ্যমে কোনোভাবেই ক্ষমতায় আসা সম্ভব নয় বলে আমার মনে হয়। কাজেই কোনো কিছুই জনগণের বাইরে চিন্তা করা যায় না, প্রকৃতপক্ষে কে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবে, তা জনগণই নির্ধারণ করবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই বিশেষ করে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার ভিত্তিতে সরকার নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা চূড়ান্ত করবে বলে আশা রাখছি।
লেখক : শিক্ষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
sultanmahmud.rana@gmail.com
বর্তমানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে দেশের তরুণ সমাজের অধিকাংশেরই অবস্থান একই প্ল্যাটফর্মে। এ পর্যন্ত জনগণের কাছে স্পষ্ট নয় যে আগামী নির্বাচন কোন ধরনের সরকারের অধীনে হবে অর্থাৎ এর কাঠামো, ধরন, গঠনপ্রক্রিয়া কেমন হবে তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। আর এমন অনিশ্চয়তায় বিরোধী দলগুলো যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, তাহলে নির্বাচন যতই সুষ্ঠু হোক না কেন, তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন থেকে যাওয়ার আশঙ্কা।
যেসব কর্মসূচিতে বিজয়ের মাসে সারা দেশে শান্তিশৃঙ্খলা চরম বিঘ্নিত হয়েছে, তা আমি সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। গত ৩ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামী মানবতাবিরোধী অপরাধে আটক দলীয় নেতাদের মুক্তির দাবিতে পূর্বঘোষিত সমাবেশ করতে না পারায় ৪ ডিসেম্বর সারা দেশে হরতালের ডাক দেয়। জামায়াতের ওই হরতালকে ১৮ দল নৈতিকভাবে সমর্থন জানালে আন্দোলনের ইস্যু নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন তৈরি হয়। উল্লেখ্য, ৩ ডিসেম্বরই জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা গাড়ি পোড়ানোসহ নানাবিধ সহিংসতা সৃষ্টিতে মাঠে নেমে পড়ে। ৪ ডিসেম্বরের হরতালের দিনও ব্যাপক ভাঙচুর, গাড়ি পোড়ানো ও সহিংসতার সীমাহীন ঘটনা ঘটে। আর এই হরতাল ছিল যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির দাবিতে। যাতে বিএনপিসহ এর শরিক দলগুলো নৈতিক সমর্থন দান করে। বিএনপির এমন অবস্থান নিঃসন্দেহে দেশের সাধারণ জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। ৯ ডিসেম্বর ১৮ দলের দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচিতে নৈরাজ্য ও সহিংসতার ব্যাপক নজির সৃষ্টি হয়। ওই দিনই অবরোধ ঠেকানের নামে পুরান ঢাকায় ছাত্রলীগকর্মীরা বিশ্বজিৎ নামের এক পথচারীকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে, যা দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় তুলে দেয়, এমনকি সরকারও চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পতিত হয়। এ অবস্থায় ১৮ দল ১১ ডিসেম্বর নতুন করে হরতালের ডাক দিয়ে দেশের পরিস্থিতি আরো নাজুক করে তোলে। সেদিনও পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা, চোরাগোপ্তা হামলা ও গাড়ি পোড়ানোর ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে ১৮ ডিসেম্বর বাম দলগুলো ধর্মভিত্তিক দলগুলো নিষিদ্ধ করার দাবিতে যে হরতাল ডাকে, তা সহিংসতার কোনো ঘটনা না ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণ হরতালের নজির সৃষ্টি করে। ২০ ডিসেম্বর ১৮ তারিখের হরতালের প্রতিবাদে কয়েকটি ইসলামী দল হরতালের ডাক দেয়। সেখানেও গাড়ি ভাঙচুরসহ বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ২৬ ডিসেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে পথসভায় জনজীবন ব্যাপক দুর্ভোগের সম্মুখীন হয়। এভাবে ইচ্ছামতো কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে তথা দেশের জনসাধারণকে বিপাকে ফেলে মহান বিজয়ের মাস ডিসেম্বরকে সম্পূর্ণভাবে অন্ধকারে নিমজ্জিত করে রাখা হয়, যা স্বাধীন দেশের জন্য অত্যন্ত লজ্জার বিষয় ছাড়া কিছু নয়। স্বাধীনতার ৪১ বছর পার হলেও আমরা জাতি হিসেবে এখনো নিজেদের শিকলে বাঁধা পড়ে আছি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (দ্বিতীয়বার) ও সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, আপনারা দুজনই দেশকে ভালোবাসেন, দেশের জনগণকে ভালোবাসেন। দেশের জনগণ কোনো বিপাকে পড়ুক- এটা আপনারা কেউই চান না; তা আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। একজন জাতির জনকের কন্যা আর অন্যজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সেক্টর কমান্ডারের স্ত্রী- দুজনেরই দেশের প্রতি অনেক মায়ামমতা রয়েছে। কাজেই এমন কোনো আচরণ করবেন না, যাতে দেশের মানুষ হতাশায় নিমজ্জিত হয়। এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করা উচিত হবে না, যাতে দেশ কোনো তৃতীয় শক্তির হাতে জিম্মি হয়ে যায়। তৃতীয় শক্তির হাতে দেশকে জিম্মি হতে না দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব, যা গণতন্ত্রকে সুসংহত ও সমুন্নত রাখবে। বিশেষ করে বিএনপি নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বলতে চাই, আপনি সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হিসেবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে নিজেই সোচ্চার হোন, তাহলে জনগণের মনে একটি বড় জায়গা দখল করে নিতে সক্ষম হবেন। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার নামে জামায়াতের কর্মসূচিতে নৈতিক সমর্থন না দিয়ে বরং বাধা সৃষ্টি করুন, জনগণ অবশ্যই আপনার পাশে এসে দাঁড়াবে। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই- আপনি যে মিশন হাতে নিয়ে মাঠে নেমেছেন তা কোনো মোহ বা আবেগতাড়িত হয়ে পিছপা না হয়ে যথাযথভাবে সম্পাদন করার চেষ্টা করুন, বিশেষ করে জাতির অন্যতম আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করার পদক্ষেপ সফল করার প্রয়াস চালিয়ে যান, তাহলেই জনগণের মনে আপনিও সীমাহীন স্থান করে নিতে পারবেন বলে আশা করি। আগামী নির্বাচন কেমন ধরনের সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে, তা জনগণের কাছে পরিষ্কার করে দিন। আপনার সরকারের ইতিমধ্যেই চার বছর শেষ হয়ে সংবিধান অনুযায়ী সরকারের মেয়াদ ৯ মাসের বেশি নেই, এই অল্প সময়ে বিরোধী দল তথা জামায়াতের অপতৎপরতা রুখে দাঁড়িয়ে নিজেদের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করে ইশতেহারে বর্ণিত অন্যতম অঙ্গীকার পূরণের সময় খুবই কম।
সরকারের পাশাপাশি বিরোধী দলের উচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধানে পুনঃস্থাপনের দাবিতে অটল না থেকে যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা প্রণয়ন করা। এ ক্ষেত্রে সত্যিকার অর্থে গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব হলে সরকারের মেনে না নেওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না বলে আমি আশা করি। বিরোধী দল কোনো প্রস্তাব দিলে সুশীল সমাজ, মিডিয়াসহ বিভিন্ন পর্যবেক্ষক সংস্থা তার নিরপেক্ষ মূল্যায়ন সরকারের কাছে তুলে ধরতে পারে। এ ক্ষেত্রে সরকার কোনোভাবেই মূল্যায়িত প্রস্তাব অগ্রাহ্য করার দুঃসাহস দেখাবে না বলে আমার মনে হয়। এ ছাড়া বর্তমান প্রেক্ষাপটে কারচুপি কিংবা ভোট চুরির মাধ্যমে কোনোভাবেই ক্ষমতায় আসা সম্ভব নয় বলে আমার মনে হয়। কাজেই কোনো কিছুই জনগণের বাইরে চিন্তা করা যায় না, প্রকৃতপক্ষে কে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবে, তা জনগণই নির্ধারণ করবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই বিশেষ করে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার ভিত্তিতে সরকার নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা চূড়ান্ত করবে বলে আশা রাখছি।
লেখক : শিক্ষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
sultanmahmud.rana@gmail.com
No comments