প্রথম দিনেই নতুন বই by মাহফুজুর রহমান মানিক
নতুন বছরে নতুন কাসের সাথে সাথে নতুন বই শিার্থীদের প্রত্যাশা। শিশুদের েেত্র এ প্রত্যাশা চিরন্তন সত্য। পৃথিবীটা তাদের কাছে নতুন। নতুন পৃথিবীতে সবকিছুতে নতুনই ভালবাসে শিশু। শিশুদের পড়ার জন্য চাই নতুন বই।
এজন্যই আমাদের দেশে অনেক আগে থেকেই সরকার বিনামূল্যে নতুন বই বিতরণ করছে। প্রাথমিক স্তরে বিতরণ করা এ বইয়ের আগের চিত্র মোটেই সুখকর নয়। সবাই প্রথম দিনই শিার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়ার প্রতিশ্রুতি করলেও বাস্তবে ফলেনি। বিগত বছরগুলোতে দেখা যায় শিার্থীরা শিাবর্ষের প্রথম দিন দূরে থাক, গোটা জানুয়ারি এমনকি ফেব্রুয়ারিতেও বই পায়নি। ফলে শিার্থীদের অর্ধেক পুরনো বই এবং অর্ধেক নতুন বই দিয়ে কাস করতে হতো। শিার্থীদের সম্পূর্ণ নতুন বই দিয়ে প্রথম দিন থেকে কাস করার স্বপ্ন কখনই বাস্তবে ধরা দেয়নি। এবারের চিত্র অবশ্য ভিন্ন। দিন বদলের সরকার মতায়। এ সরকার শিাকে তাদের অন্যতম প্রাধান্য দিয়ে শিা সংক্রান্ত নানা কর্মসূচী নিয়েছে। শিানীতি যার অন্যতম। গত বছরের সূচনাতে মতা গ্রহণ করেই বই নিয়ে সরকার এক বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। একেতো নতুন সরকার, তার ওপর এ বইয়ের বিষয়টি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটি কাজ ছিল। ফলে এখন নানা সমস্যায় শিার্থীরা যথাসময়ে বই পায়নি। বইয়ের এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের ল্যে সরকার অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে "পাঠ্যবই সঙ্কট উত্তরণে" জাতীয় পরামর্শ কমিটি গঠন করে। কমিটির পরামর্শক্রমে বইয়ের বাজার সিন্ডিকেটমুক্ত করতে নানা ব্যবস্থা নেয় সরকার। তার অংশ হিসেবে এবারই প্রথম প্রাথমিকের পাশাপাশি মাধ্যমিকেও বই বিনামূল্যে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বলা চলে শিামন্ত্রী একটা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে বইয়ের কাজে হাত দেন। শুরু থেকেই ভালভাবে কাজ করেন। ল্য ছিল ডিসেম্বরের মধ্যেই অর্থাৎ নতুন শিাবর্ষের পূর্বেই শিার্থীদের হাতে বই পেঁৗছানো। সে ল্যে পুরোদমে কাজ চললেও মাঝ পথে এ কাজ কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়। ১৮ অক্টোবর রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত জাতীয় শিা কার্যক্রম ও পাঠ্য পুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) গুদামে ভয়াবহ অগি্নকাণ্ড ঘটে। তবুও সরকারের এ প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয় না। শিামন্ত্রী অত্যন্ত বলিষ্ঠ কণ্ঠে তখন বলেছেন, যে করেই হোক আমরা সঠিক সময়ে শিার্থীদের হাতে বই পেঁৗছাবই। মোট ৯২০টি প্রেসে করা এ কাজ সম্পন্ন না হলে বিদেশ থেকেই বই আমদানি করে হলেও বই দেয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন মন্ত্রী। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে মোট ১৯ কোটি বই অত্যন্ত দুরূহ হলেও সরকার তার কাজে সফল হতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যায়। এর মধ্যে আবার নোট-গাইড ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম বাঁধাই শ্রমিক সঙ্কট সৃষ্টি করে। ডিসেম্বরের শেষ দিকে অনেক বই ব্যবসায়ী পুরনো বইয়ে নতুন মলাট দিয়ে ঢাকার বইয়ের বাজারে বই বিক্রির চেষ্টা করে। শিামন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে অভিভাবকদের সে বই না কিনে প্রতারিত না হওয়ার আহ্বান জানান। সকল বাধা মাড়িয়ে শিামন্ত্রী নিজে শিার্থীদের হাতে বই বিতরণের মাধ্যমে তাঁর সফলতার দ্বারপ্রান্তে পেঁৗছান। দেশের প্রায় সকল স্থানেই বই পেঁৗছে গেছে। শিার্থীরাও পেয়েছে। সরকারের ইচ্ছা, চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও হয়তো কিছু শিার্থী এখনও বই পায়নি। দেশের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাধারণ মাধ্যমিক, এবতেদায়ী স্তরে ৯০ শতাংশের মতো বই বিতরণ করা হলেও কিছুটা পিছিয়ে আছে প্রাথমিক ও দাখিলের কাজ। রাজধানীসহ সারাদেশের স্কুলগুলোতে প্রাথমিকের বই পেঁৗছেছে ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ। বাকি কাজের জন্য সরকারের গোটা কার্যক্রম যে অসফল তা কখনও বলা যাবে না। বইয়ের েেত্র এ মাঝখানের বিরাট বাধা সত্ত্বেও এত বেশি সংখ্যক শিার্থীর বই পাওয়া ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এসব বাধা না থাকলে সরকার যে ১০০ ভাগ সফল হতো তা নিশ্চিত করে বলা যায়। গত ৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী এ বইগুলোকে ইন্টারনেটে এনসিটিবির ওয়েব সাইট (ষষষ.ভর্ডঠ.থমশ.ঠঢ)-এ দিয়েছেন। নিঃসন্দেহে এটি ভাল উদ্যোগ। এখান থেকে গোটা বিশ্বের যে কেউ দেখতে পারবে এবং প্রয়োজনীয় ডাউনলোড করতে পারবে। পাঠ্য পুস্তকের েেত্র ডিজিটালের একটি অন্যতম চমক এটি। এর সাথে দেশের সকল প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটারসহ ইন্টারনেট প্রদান করে ডিজিটালের েেত্র আরও এক ধাপ অগ্রসর হওয়া যায়। যাতে ফলাফলসহ প্রশাসনিক সকল কাজকর্ম ইন্টারনেটেই সম্পন্ন করা যায়।লেখক : শিার্থী, আইইআর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
No comments