সরকারী বিদ্যুত কেন্দ্রের ৫০ কোটি টাকার মাল ৬৬ লাখে বিক্রি!- চার ব্যক্তি চিহ্নিত ॥ মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে দুদক by মহিউদ্দিন আহমেদ
খুলনার ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিব (ওজোপাডিকো) ৪ অফিসের প্রায় ৫০ কোটি টাকার পুরনো মালামাল মাত্র ৬৬ লাখ টাকায় বিক্রির প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত চার ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ কমিশনে জমা দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।গত বছরের এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে দুুদকে এ অভিযোগ আসে। খুলনা, বরিশাল ও বৃহত্তর ফরিদপুরের ২১ জেলা নিয়ে গঠিত সরকারের বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিষ্ঠান পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছাড়া ২০০৮ সালে একটি নিলাম টেন্ডার করা হয়। পরিচালনা ও সংরক্ষণ সার্কেল খুলনা, বিদ্যুত বিতরণ বিভাগ-৩ বিদ্যুত বিতরণ বিভাগ-২ এবং বিদ্যুত বিতরণ বিভাগ বাগেরহাটের গোডাউনে রক্ষিত পুরনো মালপত্র বিক্রির জন্য এ নিলাম ডাকা হয়। চার অফিসের ৬ শ্রেণীর মালের মধ্যে বিভিন্ন সাইজের স্টিল পোল ৮ হাজার ৮শ’ কেজি ৪৮ টাকা দর হিসেবে ৪ লাখ ২২ হাজার ৪শ’ টাকা, বিভিন্ন সাইজের টাওয়ার এ্যাঙ্গেল ১ লাখ ১ হাজার ৭০১ কেজি ৫৬ টাকা দর হিসেবে ৫৬ লাখ ৯৫ হাজার ২৫৬ টাকা, বিভিন্ন সাইজের এমএস এ্যাঙ্গেল ৪ হাজার ৭শ’ কেজি ৪৫ টাকা হিসেবে ২ লাখ ১১ হাজার ৫শ’ টাকা, বিভিন্ন সাইজের এমএস রড ২২৫ কেজি ৪৫ টাকা দরে ১০ হাজার ১২৫ টাকা, ৫শ’ কেজি নাট-বোল্ট ৫৫ টাকা দরে ২৭ হাজার ৫শ’ টাকা টেন্ডার নির্ধারণ হয় ও বিভিন্ন সাইজের এলটি জার্ক, ব্যান্ড, ক্লাম্প, থাইরড, ক্রসআর্ম ও ব্যাকেট ৬ হাজার ৯৬১ কেজি ৪৩ টাকা দরে ২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। যার মোট মূল্য দাঁড়ায় ৬৬ লাখ ৬৬ হাজার ১০৪ টাকা। এছাড়া তালিকার বাইরে অনেক দামী মাল বের করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ২০০৮ সালে খুলনা খালিশপুর বিআইডিসি সড়কের মেসার্স শিখা এন্টারপ্রাইজকে মাল দেয়ার জন্য তৈরি করা হয় সাজানো নিলামের। নিলামের সঙ্গে জড়িত মহলটি বর্তমানে ওজোপাডিকোতে প্রভাবশালী হওয়ায় ওই কাগজপত্রের ওপর ভিত্তি করে ২০১২ সালের প্রথমদিকে মাল দেয়া হয়। স্টোরগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ওই কাগজপত্রের ওপর ভিত্তি করে মাল দিতে না চাইলে প্রভাবশালী এক কর্মকর্তা নিজে গোডাউনে গিয়ে চাপ দিয়ে মাল দিতে বাধ্য করেন। এভাবে মালামাল হস্তান্তর ঠিক হচ্ছে না মন্তব্য করে তা বন্ধ করার জন্য ওই কর্মকর্তাকে ওজোপাডিকোর আরেক কর্মকর্তা নিষেধ করলেও তিনি কোন ব্যবস্থা না নিয়ে মাল বের করার সুযোগ করে দেন।
অভিযোগে বলা হয়, ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ ও উপ-মহাব্যবস্থাপক অনিল চন্দ্র হালদার অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ৬৬ লাখ টাকার নিলাম দেখিয়ে ওজোপাডিকোর ৪ অফিসের ৫০ কোটি টাকার মাল দেয়ার ঘটনা অনুসন্ধান করতে ২০১২ সালের এপ্রিলে দুদক উপ-পরিচালক জাহিদ হোসেনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র যাচাই-বাছাই করেন। বিক্রীত পুরনো মালের তখনকার সময়ের বাজার দরসহ প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ করেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা। অভিযুক্তরা বরাবরের মতো নিজেদের নির্দোষ এবং নিয়ম মেনে মালামাল বিক্রি করা হয়েছে বলে দাবি করেন। একই সঙ্গে এক কর্মকর্তা দাবি করেন, তিনি নিজে উপস্থিত থেকে মাল মেপে বুঝে দিয়েছেন। তাছাড়া নিলামের মালের বাইরে অতিরিক্ত কোন মাল দেয়া হয়নি। তবে দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে ওজোপাডিকো চারটি অফিসের যেসব পুরনো মাল মাত্র ৬৬ লাখ ৬৬ হাজার ১০৪ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে যথাযথ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ওসব মাল বিক্রি করা হলে আরও অনেক অনেক বেশি টাকা বিক্রি করা যেত। নিলামের কাগজপত্র ২০০৮ সালে তৈরি হলেও ২০০৯ সালে এর কার্যাদেশ দেয়ার বিষয়টি রহস্যজনক মনে হয়েছে। তবে এই ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা দাবি করেন, পার্টি টাকা দিতে দেরি করায় মাল হস্তান্তরে বিলম্ব হয়েছে। পরে টাকা দেয়ায় মালামাল হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে অনিয়মের মাধ্যমে করা ওই টেন্ডারের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দীর্ঘ প্রায় ৪ বছর পর ২০১২ সালে বাস্তবায়ন করার বিষয়টিকেও অনিয়ম মনে করছে দুদক। তাই দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত চার ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করার মতো আলামত পাওয়া গেছে। তবে চূড়ান্ত যাচাই-বাছাইতে অভিযুক্ত ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি বা কমতে পারে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
No comments