অজনপ্রিয় রাজনীতিবিদরা জনগণের কাছে কি বার্তা দেন by নুরুন্নাহার শিরীন
এই দেশে একটি অপ্রিয়-অনাকাক্সিক্ষত সত্যচিত্র জনপ্রিয়তা নেই, এমন রাজনীতিবিদগণ সদাসর্বদা অযথাই অপরাজনীতির ধন্দে ফেলেন জনতাকে ! অহরহই তাঁরা প্রবীণ-নবীন-নবিসদের মাঝে বক্তৃতা-বিবৃতি-বচন দান করে বেড়ান।
তাতে জনগণের উপকার হচ্ছে না অপকার; সে খোঁজ নিতে চান না তাঁরা নিজস্ব স্বার্থে। জনস্বার্থের কথা মাথায় রাখেন না এবং দেশ কি এগুচ্ছে না পিছিয়েই পড়ছে, তার কোন যৌক্তিক ব্যাখ্যাও কিন্তু তাঁদের কাছে পাওয়া সম্ভব নয়। কেননা, তাঁরা সদাসর্বদা সত্য কথাটি সত্যচিত্রটি সযতেœ এড়িয়েই চলেন। আইনের মানুষ হয়েও আইনের বাইরে বৈধ সরকারের পতনের অপেক্ষা করে থাকেন। অথচ, পতন ঘটলেও জনগণ যে তাঁদেরকে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা আরোহণের প্রথম সুযোগটি করেই দেবে তেমন নিশ্চয়তা মোটেও নেই ! অজনপ্রিয় এসব রাজনীতিবিদ অনেকটা যেনবা - ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ এর দশা ! তাঁদের সম্মুখেই যখন বিশ্ব বর্তমানের বাংলাদেশকে অগ্রসরমান উদাহরণ হিসেবেই উল্লেখযোগ্য বলছে এবং প্রশংসাবাণী দিচ্ছে তখন তাদের উল্টো কথা কেউ না শুনুক, তবুও বলা ! হ্যাঁ, তাঁরা বর্তমান হাসিনা সরকারের পতন চান; যদিও বৈধ একটি সরকার মেয়াদকাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন না করে নেমে যাবেন, এ কেমন অন্যায় আবদার ! গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে এমন কথা নিশ্চয় অশোভন এবং নিন্দনীয়। অথচ, এইদেশে সরকারবিরোধী রাজনীতি মানেই নবগঠিত সরকার ক্ষমতারোহণের শুরু থেকেই যে কোন ছুতোনাতায় সরকারের পতন ছাড়া তাদের অন্য চাওয়া নেই ! যে করে হোক পতন চাই ! কালেভদ্রেও এই রাজনীতিবিদরা জনগণের দুঃখদিনে সেভাবে পাশে দাঁড়িয়ে কাছে টানতে জানেন না। জানলে তাঁরা নিশ্চয় জনপ্রিয় হতেন। সুতরাং তাঁরা যে কেমন জনদরদী আর কেমন ভালবাসবেন জনগণকে সরকারের পতন ঘটানোর পরবর্তীতে প্রশ্নটি এসেই যায়। তাছাড়া নিকট অতীতে তাঁদের ভূমিকা আর বাংলাদেশের ঐতিহাসিক অর্জনেও তাঁদের কার কেমন অবদান সেসব তথ্যও নিশ্চয় - ‘কান টানলে মাথা আসে’র মতোই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ সত্য এই যে, ঐতিহাসিক সত্য পদদলিত করে কেউই দেশের মঙ্গল বয়ে আনতে অতীতে পারেননি, বর্তমানেও সেটি অসম্ভবের বাগাড়ম্বর জেনেও বাক্যবাণ ছুঁড়েই যাওয়া ! এবং সেটি বাংলাদেশে বর্তমান সরকার যে গণতান্ত্রিক ধারামতেই বাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছেন না বলেই সম্ভব হচ্ছে; তারও ন্যূনতম স্বীকৃতি দিতে নারাজ এসব রাজনীতিবিদ। এতে তাঁদের ইমেজ কতটা উঁচুদরে উঠছে আর সরকারের ইমেজ কতটা নিম্নে নামছে তাও বিচার্য। কেননা, আন্তর্জাতিক তথ্যমতেই বাংলাদেশ আজ অর্থনীতি-কৃষি-শিক্ষা-স্বাস্থ্য সমেত ডিজিটাল অগ্রগতিতে অগ্রসরমান একটি দেশ হিসেবে লক্ষণীয় উন্নয়নশীলতা অর্জনের স্বীকৃতি পাচ্ছে। সেখানে নিজ দেশের এইসব অজনপ্রিয় রাজনীতিবিদ উল্টোরথে চড়ে উড়িয়ে চলেছেন রোজই নিত্যনতুন বাক্যবাণের তুবড়ি। জনগণ কি কান দিচ্ছে না এক কানের শোনা কথাটি অন্যকানে যাবার আগেই আবর্জনার মতো বাতাসে ঝেড়ে ফেলছে সেই কথাটি তাঁদের জানতে বলি। তাঁদের নিশ্চয় অজানা নয়, বাংলাদেশের আমজনতা আজ আগের মতো - ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’ অর্থাৎ আওয়ামী লীগ ভাল না, শেখ হাসিনা সরকার অযোগ্য সরকার, এমন বস্তাপচা থিওরি শুনতে রাজি নয়। আমজনতার কাছে তাবত দল-উপদল যে যা-ই বলুক না তাদের চোখ-কান অনেক খোলা এখন। তারা দেশের হালচাল ভালই বোঝে। এবং তরুণ প্রজন্ম যারা নিহায়ত ‘মগজ ধোলাই’ হয়ে যায়নি এখনও তাদের কাছে এখন বর্তমানে বিচারাধীন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াটিই প্রাধান্য পাবে বলেই ইতোমধ্যে প্রতীয়মান হয়েছে। দেশের জনগোষ্ঠীর বিশাল অংশও আজ যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে একাট্টা। দেশের মানুষ জানে, আগামী নির্বাচনে হাসিনা সরকার ক্ষমতা হারালে এই বিচার বানচাল অবধারিত। ফলে চিহ্নিত অপরাধীরা বেরিয়ে এসে প্রথম সুযোগেই প্রতিহিংসা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে সর্বত্র। দেশে একটি অনাকাক্সিক্ষত ধ্বংসযজ্ঞ শুরু“ হবার সম্ভাবনা শতভাগ। সকল উন্নয়নশীল প্রজেক্ট মুখ থুবড়ে পড়বেই এটিই এদেশে বিরোধীনীতি। আগের সরকারের সকল উন্নয়নশীল প্রজেক্ট বন্ধ করাই চাই। নইলে সেটি হাসিনা সরকারের আমলে গৃহীত কাজের স্বীকৃতি হয় যে! সেটি কি করে অন্য কোন সরকারের আমলে সম্ভব, এমন রাজনীতি এদেশে বিরোধী দলের ইতিহাসে নেই যে!সুতরাং আমরা যারা জনসাধারণের দল, আমরা চোখ-কান খুলেই পথচলতি বচন-বক্তৃতা-বিবৃতি শুনি এবং সতর্কতা অবলম্বন করে আগাম সাবধানতায় বলি যে ‘সাধু সাবধান!’
nurunnaharshireen@gmail.com
No comments