তাঁরা এখন পাঠ্যবইয়েশৈশব থেকে বৃক্ষ রোপণ করে চলেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের কার্তিক পরামানিক। শত বাধাবিপত্তি, প্রতিকূলতা পেরিয়ে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পান চট্টগ্রামের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তৌফাতুর রাব্বী ও রাজশাহীর রোজিনা খাতুন। তাঁদের কথা প্রথম প্রকাশিত হয় প্রথম আলোয়। বৃক্ষের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, সংগ্রামের কথা, অদম্য মেধার কথা জানতে পারে দেশবাসী। সেই সাফল্যের নায়কেরা এখন পাঠ্যবইয়ে। এবার ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ের পাতায় স্থান পেয়েছে তাঁদের সংগ্রামের কাহিনি, তাঁদের নায়ক হয়ে ওঠার কথা। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) এ স্বীকৃতিতে উৎফুল্ল ও গর্বিত কার্তিক পরামানিক, রোজিনা ও রাব্বী। আনন্দিত তাঁদের পরিবার, স্বজন ও এলাকার মানুষ। বৃক্ষপ্রেমী কার্তিক পরামানিকের সাফল্যের কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে অষ্টম শ্রেণীর ইংলিশ ফর টুডে বইয়ে। বইয়ের ৫৮ পৃষ্ঠায় ‘এ ম্যান হু লাভস ট্রিজ’ শিরোনামে প্রকাশিত অধ্যায়ে কার্তিক পরামানিকের ১০ বছর বয়স থেকে গাছ লাগানোর কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে। রাব্বী ও রোজিনার কথা আছে ষষ্ঠ শ্রেণীর কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা বইয়ের শিক্ষায় সাফল্য অধ্যায়ে। রোজিনার কাহিনি ছাপা হয়েছে ৫১ পৃষ্ঠায়। রাব্বীর কথা ৫২ পৃষ্ঠায়। দুজনেরই খবর ছাপা হয়েছিল ২০১০ সালের ১৬ মে প্রথম আলোর শেষের পাতায়। শিরোনাম ছিল, ‘রোজিনার জীবনে অন্য রকম পাওয়া’ ও ‘অবহেলার জবাব দিয়েছে রাব্বী’। সংবাদ দুটি হুবহু পাঠ্যবইয়ে তুলে দেওয়া হয়েছে। দুটি জীবনকথা শিক্ষার্থীদের মনোযোগ দিয়ে পড়তে বলা হয়েছে। পরে এ দুটির ওপর শিক্ষার্থীদের দলগত কাজ করে দুটি প্রশ্নের উত্তর বের করতে বলা হয়েছে। প্রশ্ন দুটি হলো: ১. রোজিনা আর রাব্বীর জীবনে শিক্ষার পথে কী কী বাধাবিপত্তি ছিল। ২. কেন রোজিনা আর রাব্বীকে ‘অদম্য মেধাবী’ বলা হয়েছে। রোজিনা ও রাব্বীর কাহিনি দুটি প্রকাশের পাশাপাশি বইয়ের ৫৩ পৃষ্ঠায় প্রথম আলোয় প্রকাশিত অদম্য মেধাবীদের সংবর্ধনার একটি দলগত ছবিও ছাপা হয়েছে। প্রথম আলো এ ধরনের আরও অনেক সাফল্যের নায়ককে খুঁজে বের করেছে, তাঁদের কাহিনি ছেপেছে। তাঁদের একজন পলান সরকার। ২০০৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোর সাপ্তাহিক আয়োজন ‘ছুটির দিনে’ তাঁকে নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। শিরোনাম ছিল ‘বিনি পয়সায় বই বিলাই’। তিনি বই হাতে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ান। সাধারণ মানুষের মধ্যে বই পড়ার তৃষ্ণা জাগিয়ে তুলতে জীবনভর কাজ করে চলেছেন। এর স্বীকৃতি হিসেবে ২০১১ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন পলান সরকার। কার্তিক পরামানিক: বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী চরাঞ্চলের তারাপুর ঠুটাপাড়া গ্রামে। গাছপাগল এই মানুষটির বিশাল কর্মযজ্ঞের কথা প্রথম প্রকাশ করে প্রথম আলো। ‘বিশাল বিশাল বৃক্ষগুলো যেন একেকটি কার্তিকনামা’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি ছাপা হয় ২০০৩ সালের ২ ডিসেম্বর। প্রতিবেদনটি লিখেন চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন। অষ্টম শ্রেণীর ইংরেজি বইয়ে ‘এ ম্যান হু লাভস ট্রিজ’ শিরোনামে প্রকাশিত কার্তিক পরামানিকের গল্পটি যে প্রথম আলোর ওই প্রতিবেদন থেকে নেওয়া, সে কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। বইয়ে বলা আছে, বাংলাদেশের দূরের এক প্রান্তের একটি গ্রাম তারাপুর। ওই গ্রামে বাস করেন কার্তিক পরামানিক নামের এক ব্যক্তি। কিন্তু তারাপুরের অবস্থান কোন জেলা ও উপজেলায়, তা উল্লেখ করা হয়নি। তবু কার্তিক পরামানিকের কথা পাঠ্যবইয়ে প্রকাশের কথা জেনে গেছে তাঁর গ্রাম ও পাশের এলাকাসহ জেলা সদরের মানুষ। তারাপুরসহ পাশের এলাকার মানুষ, বিভিন্ন উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এ খবরে দারুণ খুশি। এমনই একজন তারাপুর বাজারের পাঠ্যপুস্তক বিক্রেতা সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে বই কিনতে গেলে পুস্তক বিক্রেতারা জানান, আমাদের গ্রামের কার্তিক পরামানিক এখন পাঠ্যপুস্তকে। এ কথা শুনে খুব আনন্দ ও গর্ব হয়েছে।’ সরকারের স্বীকৃতিতে খুশি কার্তিক পরামানিকও। শিবগঞ্জের মনাকষা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক খাইরুল ইসলাম বাড়ি এসে তাঁকে খবরটি জানান। এ ছাড়া বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফোনে তাঁকে অভিনন্দন জানান। প্রথম আলোর কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে কার্তিক পরামানিক বলেন, ‘মানুষ, গাছগাছালি, পাখপাখালির আশীর্বাদ পেয়েছি বলেই আমি সমঞ্চানিত হয়েছি। আমার মূল্যায়ন হয়েছে। আর এসব কিছুই হয়েছে প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশের পর। জাতীয় পুরস্কার, চ্যানেল আই কৃষিপদকসহ নানা পুরস্কার পেয়েছি। অবশেষে পাঠ্যপুস্তকেও স্থান হলো। এখন থেকে সারা দেশের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও অভিভাবকেরাও আমার কথা জানতে পারবে। বৃক্ষের প্রতি তাদের ভালোবাসা বাড়বে। এই জীবনে এর চাইতে আর বড় পাওয়া কী হতে পারে!’ গত বুধবার জেলা সদরের চরমোহনপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ একদল শিক্ষক-শিক্ষার্থী কার্তিক পরামানিকের বাড়ি গিয়ে তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। অভিনন্দন জানান চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার সদস্যরাও। তারাপুরের পাশের মনোহরপুর নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কৃষি বিষয়ের শিক্ষক, কার্তিক পরামানিকের বড় ছেলে স্বপন কুমার পরামানিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বিদ্যালয়সহ সারা দেশের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমার বাবাকে নিয়ে পড়বে—বিষয়টি ভাবতেই গর্বে বুক ভরে উঠছে।’ রোজিনা খাতুন: নিজ গ্রামের মেয়ের নাম নিজের পাঠ্যবইয়ে দেখে আবরার শাহরিয়ার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারে না। বাড়িতে সবাইকে দেখায়। এ নিয়ে সারা গ্রামে হইচই পড়ে যায়। সবাই খুঁজতে থাকে ষষ্ঠ শ্রেণীর কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা বইটি। শাহরিয়ার রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ধোপাপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। তার বাড়ি ধোপাপাড়া গ্রামে। একই গ্রামের মেয়ে মেধাবী রোজিনা। শাহরিয়ার বলে, ‘এ আমার গর্ব। আমার আনন্দ।’ রোজিনাদের বাড়ি ছিল গ্রামের রাস্তার পাশে অন্যের জমিতে। ছোট্ট একটি কুঁড়েঘরে থাকত এক ভাই ও এক বোনকে নিয়ে। বাবা-মা থাকতেন বারান্দায়। বাবা আবদুল লতিফ ভ্যান চালাতেন। মা রেনু বেগম কাজ করতেন ধানের চাতালে। পড়ার খরচ চালাতে না পেরে অষ্টম শ্রেণীতে থাকতেই বিয়ে দেওয়া হয় রোজিনাকে। এরপর যৌতুকের দাবিতে শুরু হয় স্বামীর নির্যাতন। তালাকের মাধ্যমে মুক্তি পায় রোজিনা। বাবার বাড়ি ফিরে আবার পড়াশোনা শুরু করে সে। মেধাবী এই ছাত্রীকে সাগ্রহে নবম শ্রেণীর মানবিক বিভাগে ভর্তি করে নেন ধোপাপাড়া বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। চরম অভাবের মধ্যেই ২০১০ সালে ওই বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায় রোজিনা। ফল প্রকাশের পরদিন ১৬ মে ‘রোজিনার জীবনে অন্য রকম পাওয়া’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয় প্রথম আলোয়। প্রতিবেদনটি লেখেন রাজশাহীর প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ। খবরটি ছাপা হওয়ার পর ঢাকা মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষ রোজিনাকে ঢাকায় তাদের হোস্টেলে রেখে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীতে পড়াশোনার দায়িত্ব নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। আর রোজিনার পড়াশোনার অন্যান্য খরচ বহন করার দায়িত্ব নেন তারেক উদ্দিন আহমেদ নামের একজন নৌ-প্রকৌশলী। ২০১২ সালে রোজিনা এইচএসসি পাস করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা নার্সিং কলেজে ধাত্রীবিদ্যায় ডিপ্লোমা করছেন। গত বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে রোজিনা বলেন, ‘আমি জীবনেও চিন্তা করিনি যে আমার জীবনের গল্প পাঠ্যবইয়ে তুলে দেওয়া হবে। আমার জীবনটা অনেক কষ্টের। তার পরও মনে হচ্ছে আমি আজ অনেক সুখী।’ রোজিনার মতো আনন্দিত তাঁর ধোপাপাড়া বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এ আনন্দ প্রকাশ করার ভাষা নেই। কারণ, যে মেয়ের ভালো ফলাফলের জন্য আমার বিদ্যালয়ের কত সুনাম হলো, সেই মেয়ের গল্প আমরা আবার আমাদের শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছি।’ তৌফাতুর রাব্বী: চট্টগ্রাম দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণীর পাট চুকানোর পর নবম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার জন্য হন্যে হয়ে ঘোরে রাব্বী ও তার বাবা-মা। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেও কোনো লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের তৎকালীন কমিশনার আলী আকবরের সুপারিশে রাব্বী ভর্তি হতে পেরেছিল চট্টগ্রাম পুলিশ ইনস্টিটিউট স্কুলে। সেই সময়ের কষ্ট নিয়ে ২০০৮ সালের মে মাসে প্রথম আলোর খোলা কলামে ছাপা হয়েছিল ‘একজন রাব্বীর সংগ্রাম ও উপলব্ধি’ শিরোনামে নিবন্ধ। জন্মগতভাবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রাব্বীর অপটিক নার্ভ বিকশিত হয়নি। পুলিশ ইনস্টিটিউট স্কুল থেকে ২০১০ সালে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পায় রাব্বী। তখন পুরো স্কুল তাকে নিয়ে আত্মহারা হয়ে পড়ে। তার বাবা ব্যাংকার মো. কামাল উদ্দিন ও মা তাহরীর-ই-শাহনাজ নগরের বাওয়া স্কুলের শিক্ষক। ছেলেকে নিয়ে তাঁদেরও কম যুদ্ধ করতে হয়নি। সেই যুদ্ধে সাফল্য আসে এসএসসিতে। ফল প্রকাশের পরদিন ১৬ মে ‘অবহেলার জবাব দিয়েছে রাব্বী’ শিরোনামে প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি লেখেন চট্টগ্রামের নিজস্ব প্রতিবেদক প্রণব বল। এই সংবাদটিই এবার ষষ্ঠ শ্রেণীর কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে। মা শাহনাজ বইটি এনে রাব্বীকে পড়ে শুনিয়েছেন। শাহনাজ বলেন, ‘অনেক বড় একটি বিষয় এটি। কী যে ভালো লাগছে। আমার ছেলের সাফল্য ছোটরা পড়বে, এটা ভেবে খুব আনন্দ হচ্ছে।’ রাব্বী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমঞ্চু আমাকে পড়ে শুনিয়েছেন। কী যে ভালো লাগছে বোঝানো যাবে না। সারা দেশের শিক্ষার্থীরা আমার কাহিনি পড়বে। এটা অনেক বড় পাওয়া, অনেক গর্বের। আরও আনন্দের বিষয় হলো, বইয়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও বেগম রোকেয়ার জীবনকাহিনির সঙ্গে আমারটাও রয়েছে।’ ষষ্ঠ শ্রেণীর ওই বইয়ে ‘শিক্ষামাধ্যমে খ্যাতিমান হয়ে ওঠার গল্প’ রয়েছে। ৪৯ পৃষ্ঠায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও ৫০ পৃষ্ঠায় বেগম রোকেয়ার গল্প আছে। এরপর আছে রোজিনা ও রাব্বীর জীবনকাহিনি। রাব্বী এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ ও আইন অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাঁর ইচ্ছা আইন নিয়ে পড়ার। রাব্বী বলেন, ‘আমার এই সংগ্রাম যদি ছোটদের পড়ালেখার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে, তাহলে শান্তি পাব।’ প্রথম আলো ট্রাস্টের অদম্য মেধাবীদের ছবি: রোজিনা ও রাব্বীর মতো শত বাধাবিপত্তি ও দরিদ্রতা অতিক্রম করে ২০১১ সালের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। তাদের কথা প্রথম আলোর পাতায় তুলে এনেছিলেন সারা দেশে থাকা প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা। ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ওই অদম্য মেধাবীদের ২০১১ সালের ১২ ডিসেম্বর কারওয়ান বাজারে সিএ ভবনের মিলনায়তনে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অতিথিদের সঙ্গে অদম্য মেধাবীদের ছবিসহ সংবাদ পরদিন ১৩ ডিসেম্বর ছাপা হয় প্রথম আলোর পৃষ্ঠা ৩-এ। অদম্য মেধাবীদের ওই ছবিটি ষষ্ঠ শ্রেণীর কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা বইয়ের ৫৩ পাতায় ছাপা হয়েছে ‘শিক্ষাক্ষেত্রে সফল অদম্য মেধাবী শিরোনামে’।
শৈশব থেকে বৃক্ষ রোপণ করে চলেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের কার্তিক পরামানিক। শত বাধাবিপত্তি, প্রতিকূলতা পেরিয়ে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পান চট্টগ্রামের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তৌফাতুর রাব্বী ও রাজশাহীর রোজিনা খাতুন। তাঁদের কথা প্রথম প্রকাশিত হয় প্রথম আলোয়।
বৃক্ষের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, সংগ্রামের কথা, অদম্য মেধার কথা জানতে পারে দেশবাসী। সেই সাফল্যের নায়কেরা এখন পাঠ্যবইয়ে।
এবার ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ের পাতায় স্থান পেয়েছে তাঁদের সংগ্রামের কাহিনি, তাঁদের নায়ক হয়ে ওঠার কথা। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) এ স্বীকৃতিতে উৎফুল্ল ও গর্বিত কার্তিক পরামানিক, রোজিনা ও রাব্বী। আনন্দিত তাঁদের পরিবার, স্বজন ও এলাকার মানুষ।
বৃক্ষপ্রেমী কার্তিক পরামানিকের সাফল্যের কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে অষ্টম শ্রেণীর ইংলিশ ফর টুডে বইয়ে। বইয়ের ৫৮ পৃষ্ঠায় ‘এ ম্যান হু লাভস ট্রিজ’ শিরোনামে প্রকাশিত অধ্যায়ে কার্তিক পরামানিকের ১০ বছর বয়স থেকে গাছ লাগানোর কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে।
রাব্বী ও রোজিনার কথা আছে ষষ্ঠ শ্রেণীর কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা বইয়ের শিক্ষায় সাফল্য অধ্যায়ে। রোজিনার কাহিনি ছাপা হয়েছে ৫১ পৃষ্ঠায়। রাব্বীর কথা ৫২ পৃষ্ঠায়। দুজনেরই খবর ছাপা হয়েছিল ২০১০ সালের ১৬ মে প্রথম আলোর শেষের পাতায়। শিরোনাম ছিল, ‘রোজিনার জীবনে অন্য রকম পাওয়া’ ও ‘অবহেলার জবাব দিয়েছে রাব্বী’। সংবাদ দুটি হুবহু পাঠ্যবইয়ে তুলে দেওয়া হয়েছে।
দুটি জীবনকথা শিক্ষার্থীদের মনোযোগ দিয়ে পড়তে বলা হয়েছে। পরে এ দুটির ওপর শিক্ষার্থীদের দলগত কাজ করে দুটি প্রশ্নের উত্তর বের করতে বলা হয়েছে। প্রশ্ন দুটি হলো: ১. রোজিনা আর রাব্বীর জীবনে শিক্ষার পথে কী কী বাধাবিপত্তি ছিল। ২. কেন রোজিনা আর রাব্বীকে ‘অদম্য মেধাবী’ বলা হয়েছে।
রোজিনা ও রাব্বীর কাহিনি দুটি প্রকাশের পাশাপাশি বইয়ের ৫৩ পৃষ্ঠায় প্রথম আলোয় প্রকাশিত অদম্য মেধাবীদের সংবর্ধনার একটি দলগত ছবিও ছাপা হয়েছে।
প্রথম আলো এ ধরনের আরও অনেক সাফল্যের নায়ককে খুঁজে বের করেছে, তাঁদের কাহিনি ছেপেছে। তাঁদের একজন পলান সরকার। ২০০৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোর সাপ্তাহিক আয়োজন ‘ছুটির দিনে’ তাঁকে নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। শিরোনাম ছিল ‘বিনি পয়সায় বই বিলাই’। তিনি বই হাতে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ান। সাধারণ মানুষের মধ্যে বই পড়ার তৃষ্ণা জাগিয়ে তুলতে জীবনভর কাজ করে চলেছেন। এর স্বীকৃতি হিসেবে ২০১১ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন পলান সরকার।
কার্তিক পরামানিক: বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী চরাঞ্চলের তারাপুর ঠুটাপাড়া গ্রামে। গাছপাগল এই মানুষটির বিশাল কর্মযজ্ঞের কথা প্রথম প্রকাশ করে প্রথম আলো। ‘বিশাল বিশাল বৃক্ষগুলো যেন একেকটি কার্তিকনামা’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি ছাপা হয় ২০০৩ সালের ২ ডিসেম্বর। প্রতিবেদনটি লিখেন চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন।
অষ্টম শ্রেণীর ইংরেজি বইয়ে ‘এ ম্যান হু লাভস ট্রিজ’ শিরোনামে প্রকাশিত কার্তিক পরামানিকের গল্পটি যে প্রথম আলোর ওই প্রতিবেদন থেকে নেওয়া, সে কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
বইয়ে বলা আছে, বাংলাদেশের দূরের এক প্রান্তের একটি গ্রাম তারাপুর। ওই গ্রামে বাস করেন কার্তিক পরামানিক নামের এক ব্যক্তি। কিন্তু তারাপুরের অবস্থান কোন জেলা ও উপজেলায়, তা উল্লেখ করা হয়নি। তবু কার্তিক পরামানিকের কথা পাঠ্যবইয়ে প্রকাশের কথা জেনে গেছে তাঁর গ্রাম ও পাশের এলাকাসহ জেলা সদরের মানুষ। তারাপুরসহ পাশের এলাকার মানুষ, বিভিন্ন উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এ খবরে দারুণ খুশি।
এমনই একজন তারাপুর বাজারের পাঠ্যপুস্তক বিক্রেতা সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে বই কিনতে গেলে পুস্তক বিক্রেতারা জানান, আমাদের গ্রামের কার্তিক পরামানিক এখন পাঠ্যপুস্তকে। এ কথা শুনে খুব আনন্দ ও গর্ব হয়েছে।’
সরকারের স্বীকৃতিতে খুশি কার্তিক পরামানিকও। শিবগঞ্জের মনাকষা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক খাইরুল ইসলাম বাড়ি এসে তাঁকে খবরটি জানান। এ ছাড়া বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফোনে তাঁকে অভিনন্দন জানান।
প্রথম আলোর কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে কার্তিক পরামানিক বলেন, ‘মানুষ, গাছগাছালি, পাখপাখালির আশীর্বাদ পেয়েছি বলেই আমি সমঞ্চানিত হয়েছি। আমার মূল্যায়ন হয়েছে। আর এসব কিছুই হয়েছে প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশের পর। জাতীয় পুরস্কার, চ্যানেল আই কৃষিপদকসহ নানা পুরস্কার পেয়েছি। অবশেষে পাঠ্যপুস্তকেও স্থান হলো। এখন থেকে সারা দেশের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও অভিভাবকেরাও আমার কথা জানতে পারবে। বৃক্ষের প্রতি তাদের ভালোবাসা বাড়বে। এই জীবনে এর চাইতে আর বড় পাওয়া কী হতে পারে!’
গত বুধবার জেলা সদরের চরমোহনপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ একদল শিক্ষক-শিক্ষার্থী কার্তিক পরামানিকের বাড়ি গিয়ে তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। অভিনন্দন জানান চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার সদস্যরাও।
তারাপুরের পাশের মনোহরপুর নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কৃষি বিষয়ের শিক্ষক, কার্তিক পরামানিকের বড় ছেলে স্বপন কুমার পরামানিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বিদ্যালয়সহ সারা দেশের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমার বাবাকে নিয়ে পড়বে—বিষয়টি ভাবতেই গর্বে বুক ভরে উঠছে।’
রোজিনা খাতুন: নিজ গ্রামের মেয়ের নাম নিজের পাঠ্যবইয়ে দেখে আবরার শাহরিয়ার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারে না। বাড়িতে সবাইকে দেখায়। এ নিয়ে সারা গ্রামে হইচই পড়ে যায়। সবাই খুঁজতে থাকে ষষ্ঠ শ্রেণীর কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা বইটি। শাহরিয়ার রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ধোপাপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। তার বাড়ি ধোপাপাড়া গ্রামে। একই গ্রামের মেয়ে মেধাবী রোজিনা। শাহরিয়ার বলে, ‘এ আমার গর্ব। আমার আনন্দ।’
রোজিনাদের বাড়ি ছিল গ্রামের রাস্তার পাশে অন্যের জমিতে। ছোট্ট একটি কুঁড়েঘরে থাকত এক ভাই ও এক বোনকে নিয়ে। বাবা-মা থাকতেন বারান্দায়। বাবা আবদুল লতিফ ভ্যান চালাতেন। মা রেনু বেগম কাজ করতেন ধানের চাতালে। পড়ার খরচ চালাতে না পেরে অষ্টম শ্রেণীতে থাকতেই বিয়ে দেওয়া হয় রোজিনাকে। এরপর যৌতুকের দাবিতে শুরু হয় স্বামীর নির্যাতন। তালাকের মাধ্যমে মুক্তি পায় রোজিনা। বাবার বাড়ি ফিরে আবার পড়াশোনা শুরু করে সে। মেধাবী এই ছাত্রীকে সাগ্রহে নবম শ্রেণীর মানবিক বিভাগে ভর্তি করে নেন ধোপাপাড়া বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। চরম অভাবের মধ্যেই ২০১০ সালে ওই বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায় রোজিনা।
ফল প্রকাশের পরদিন ১৬ মে ‘রোজিনার জীবনে অন্য রকম পাওয়া’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয় প্রথম আলোয়। প্রতিবেদনটি লেখেন রাজশাহীর প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ। খবরটি ছাপা হওয়ার পর ঢাকা মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষ রোজিনাকে ঢাকায় তাদের হোস্টেলে রেখে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীতে পড়াশোনার দায়িত্ব নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। আর রোজিনার পড়াশোনার অন্যান্য খরচ বহন করার দায়িত্ব নেন তারেক উদ্দিন আহমেদ নামের একজন নৌ-প্রকৌশলী। ২০১২ সালে রোজিনা এইচএসসি পাস করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা নার্সিং কলেজে ধাত্রীবিদ্যায় ডিপ্লোমা করছেন।
গত বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে রোজিনা বলেন, ‘আমি জীবনেও চিন্তা করিনি যে আমার জীবনের গল্প পাঠ্যবইয়ে তুলে দেওয়া হবে। আমার জীবনটা অনেক কষ্টের। তার পরও মনে হচ্ছে আমি আজ অনেক সুখী।’
রোজিনার মতো আনন্দিত তাঁর ধোপাপাড়া বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এ আনন্দ প্রকাশ করার ভাষা নেই। কারণ, যে মেয়ের ভালো ফলাফলের জন্য আমার বিদ্যালয়ের কত সুনাম হলো, সেই মেয়ের গল্প আমরা আবার আমাদের শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছি।’
তৌফাতুর রাব্বী: চট্টগ্রাম দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণীর পাট চুকানোর পর নবম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার জন্য হন্যে হয়ে ঘোরে রাব্বী ও তার বাবা-মা। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেও কোনো লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের তৎকালীন কমিশনার আলী আকবরের সুপারিশে রাব্বী ভর্তি হতে পেরেছিল চট্টগ্রাম পুলিশ ইনস্টিটিউট স্কুলে। সেই সময়ের কষ্ট নিয়ে ২০০৮ সালের মে মাসে প্রথম আলোর খোলা কলামে ছাপা হয়েছিল ‘একজন রাব্বীর সংগ্রাম ও উপলব্ধি’ শিরোনামে নিবন্ধ।
জন্মগতভাবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রাব্বীর অপটিক নার্ভ বিকশিত হয়নি। পুলিশ ইনস্টিটিউট স্কুল থেকে ২০১০ সালে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পায় রাব্বী। তখন পুরো স্কুল তাকে নিয়ে আত্মহারা হয়ে পড়ে। তার বাবা ব্যাংকার মো. কামাল উদ্দিন ও মা তাহরীর-ই-শাহনাজ নগরের বাওয়া স্কুলের শিক্ষক। ছেলেকে নিয়ে তাঁদেরও কম যুদ্ধ করতে হয়নি। সেই যুদ্ধে সাফল্য আসে এসএসসিতে।
ফল প্রকাশের পরদিন ১৬ মে ‘অবহেলার জবাব দিয়েছে রাব্বী’ শিরোনামে প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি লেখেন চট্টগ্রামের নিজস্ব প্রতিবেদক প্রণব বল। এই সংবাদটিই এবার ষষ্ঠ শ্রেণীর কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে। মা শাহনাজ বইটি এনে রাব্বীকে পড়ে শুনিয়েছেন।
শাহনাজ বলেন, ‘অনেক বড় একটি বিষয় এটি। কী যে ভালো লাগছে। আমার ছেলের সাফল্য ছোটরা পড়বে, এটা ভেবে খুব আনন্দ হচ্ছে।’
রাব্বী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমঞ্চু আমাকে পড়ে শুনিয়েছেন। কী যে ভালো লাগছে বোঝানো যাবে না। সারা দেশের শিক্ষার্থীরা আমার কাহিনি পড়বে। এটা অনেক বড় পাওয়া, অনেক গর্বের। আরও আনন্দের বিষয় হলো, বইয়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও বেগম রোকেয়ার জীবনকাহিনির সঙ্গে আমারটাও রয়েছে।’
ষষ্ঠ শ্রেণীর ওই বইয়ে ‘শিক্ষামাধ্যমে খ্যাতিমান হয়ে ওঠার গল্প’ রয়েছে। ৪৯ পৃষ্ঠায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও ৫০ পৃষ্ঠায় বেগম রোকেয়ার গল্প আছে। এরপর আছে রোজিনা ও রাব্বীর জীবনকাহিনি।
রাব্বী এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ ও আইন অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাঁর ইচ্ছা আইন নিয়ে পড়ার। রাব্বী বলেন, ‘আমার এই সংগ্রাম যদি ছোটদের পড়ালেখার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে, তাহলে শান্তি পাব।’
প্রথম আলো ট্রাস্টের অদম্য মেধাবীদের ছবি: রোজিনা ও রাব্বীর মতো শত বাধাবিপত্তি ও দরিদ্রতা অতিক্রম করে ২০১১ সালের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। তাদের কথা প্রথম আলোর পাতায় তুলে এনেছিলেন সারা দেশে থাকা প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা। ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ওই অদম্য মেধাবীদের ২০১১ সালের ১২ ডিসেম্বর কারওয়ান বাজারে সিএ ভবনের মিলনায়তনে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অতিথিদের সঙ্গে অদম্য মেধাবীদের ছবিসহ সংবাদ পরদিন ১৩ ডিসেম্বর ছাপা হয় প্রথম আলোর পৃষ্ঠা ৩-এ।
অদম্য মেধাবীদের ওই ছবিটি ষষ্ঠ শ্রেণীর কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা বইয়ের ৫৩ পাতায় ছাপা হয়েছে ‘শিক্ষাক্ষেত্রে সফল অদম্য মেধাবী শিরোনামে’।
এবার ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ের পাতায় স্থান পেয়েছে তাঁদের সংগ্রামের কাহিনি, তাঁদের নায়ক হয়ে ওঠার কথা। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) এ স্বীকৃতিতে উৎফুল্ল ও গর্বিত কার্তিক পরামানিক, রোজিনা ও রাব্বী। আনন্দিত তাঁদের পরিবার, স্বজন ও এলাকার মানুষ।
বৃক্ষপ্রেমী কার্তিক পরামানিকের সাফল্যের কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে অষ্টম শ্রেণীর ইংলিশ ফর টুডে বইয়ে। বইয়ের ৫৮ পৃষ্ঠায় ‘এ ম্যান হু লাভস ট্রিজ’ শিরোনামে প্রকাশিত অধ্যায়ে কার্তিক পরামানিকের ১০ বছর বয়স থেকে গাছ লাগানোর কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে।
রাব্বী ও রোজিনার কথা আছে ষষ্ঠ শ্রেণীর কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা বইয়ের শিক্ষায় সাফল্য অধ্যায়ে। রোজিনার কাহিনি ছাপা হয়েছে ৫১ পৃষ্ঠায়। রাব্বীর কথা ৫২ পৃষ্ঠায়। দুজনেরই খবর ছাপা হয়েছিল ২০১০ সালের ১৬ মে প্রথম আলোর শেষের পাতায়। শিরোনাম ছিল, ‘রোজিনার জীবনে অন্য রকম পাওয়া’ ও ‘অবহেলার জবাব দিয়েছে রাব্বী’। সংবাদ দুটি হুবহু পাঠ্যবইয়ে তুলে দেওয়া হয়েছে।
দুটি জীবনকথা শিক্ষার্থীদের মনোযোগ দিয়ে পড়তে বলা হয়েছে। পরে এ দুটির ওপর শিক্ষার্থীদের দলগত কাজ করে দুটি প্রশ্নের উত্তর বের করতে বলা হয়েছে। প্রশ্ন দুটি হলো: ১. রোজিনা আর রাব্বীর জীবনে শিক্ষার পথে কী কী বাধাবিপত্তি ছিল। ২. কেন রোজিনা আর রাব্বীকে ‘অদম্য মেধাবী’ বলা হয়েছে।
রোজিনা ও রাব্বীর কাহিনি দুটি প্রকাশের পাশাপাশি বইয়ের ৫৩ পৃষ্ঠায় প্রথম আলোয় প্রকাশিত অদম্য মেধাবীদের সংবর্ধনার একটি দলগত ছবিও ছাপা হয়েছে।
প্রথম আলো এ ধরনের আরও অনেক সাফল্যের নায়ককে খুঁজে বের করেছে, তাঁদের কাহিনি ছেপেছে। তাঁদের একজন পলান সরকার। ২০০৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোর সাপ্তাহিক আয়োজন ‘ছুটির দিনে’ তাঁকে নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। শিরোনাম ছিল ‘বিনি পয়সায় বই বিলাই’। তিনি বই হাতে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ান। সাধারণ মানুষের মধ্যে বই পড়ার তৃষ্ণা জাগিয়ে তুলতে জীবনভর কাজ করে চলেছেন। এর স্বীকৃতি হিসেবে ২০১১ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন পলান সরকার।
কার্তিক পরামানিক: বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী চরাঞ্চলের তারাপুর ঠুটাপাড়া গ্রামে। গাছপাগল এই মানুষটির বিশাল কর্মযজ্ঞের কথা প্রথম প্রকাশ করে প্রথম আলো। ‘বিশাল বিশাল বৃক্ষগুলো যেন একেকটি কার্তিকনামা’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি ছাপা হয় ২০০৩ সালের ২ ডিসেম্বর। প্রতিবেদনটি লিখেন চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন।
অষ্টম শ্রেণীর ইংরেজি বইয়ে ‘এ ম্যান হু লাভস ট্রিজ’ শিরোনামে প্রকাশিত কার্তিক পরামানিকের গল্পটি যে প্রথম আলোর ওই প্রতিবেদন থেকে নেওয়া, সে কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
বইয়ে বলা আছে, বাংলাদেশের দূরের এক প্রান্তের একটি গ্রাম তারাপুর। ওই গ্রামে বাস করেন কার্তিক পরামানিক নামের এক ব্যক্তি। কিন্তু তারাপুরের অবস্থান কোন জেলা ও উপজেলায়, তা উল্লেখ করা হয়নি। তবু কার্তিক পরামানিকের কথা পাঠ্যবইয়ে প্রকাশের কথা জেনে গেছে তাঁর গ্রাম ও পাশের এলাকাসহ জেলা সদরের মানুষ। তারাপুরসহ পাশের এলাকার মানুষ, বিভিন্ন উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এ খবরে দারুণ খুশি।
এমনই একজন তারাপুর বাজারের পাঠ্যপুস্তক বিক্রেতা সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে বই কিনতে গেলে পুস্তক বিক্রেতারা জানান, আমাদের গ্রামের কার্তিক পরামানিক এখন পাঠ্যপুস্তকে। এ কথা শুনে খুব আনন্দ ও গর্ব হয়েছে।’
সরকারের স্বীকৃতিতে খুশি কার্তিক পরামানিকও। শিবগঞ্জের মনাকষা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক খাইরুল ইসলাম বাড়ি এসে তাঁকে খবরটি জানান। এ ছাড়া বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফোনে তাঁকে অভিনন্দন জানান।
প্রথম আলোর কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে কার্তিক পরামানিক বলেন, ‘মানুষ, গাছগাছালি, পাখপাখালির আশীর্বাদ পেয়েছি বলেই আমি সমঞ্চানিত হয়েছি। আমার মূল্যায়ন হয়েছে। আর এসব কিছুই হয়েছে প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশের পর। জাতীয় পুরস্কার, চ্যানেল আই কৃষিপদকসহ নানা পুরস্কার পেয়েছি। অবশেষে পাঠ্যপুস্তকেও স্থান হলো। এখন থেকে সারা দেশের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও অভিভাবকেরাও আমার কথা জানতে পারবে। বৃক্ষের প্রতি তাদের ভালোবাসা বাড়বে। এই জীবনে এর চাইতে আর বড় পাওয়া কী হতে পারে!’
গত বুধবার জেলা সদরের চরমোহনপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ একদল শিক্ষক-শিক্ষার্থী কার্তিক পরামানিকের বাড়ি গিয়ে তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। অভিনন্দন জানান চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার সদস্যরাও।
তারাপুরের পাশের মনোহরপুর নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কৃষি বিষয়ের শিক্ষক, কার্তিক পরামানিকের বড় ছেলে স্বপন কুমার পরামানিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বিদ্যালয়সহ সারা দেশের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমার বাবাকে নিয়ে পড়বে—বিষয়টি ভাবতেই গর্বে বুক ভরে উঠছে।’
রোজিনা খাতুন: নিজ গ্রামের মেয়ের নাম নিজের পাঠ্যবইয়ে দেখে আবরার শাহরিয়ার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারে না। বাড়িতে সবাইকে দেখায়। এ নিয়ে সারা গ্রামে হইচই পড়ে যায়। সবাই খুঁজতে থাকে ষষ্ঠ শ্রেণীর কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা বইটি। শাহরিয়ার রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ধোপাপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। তার বাড়ি ধোপাপাড়া গ্রামে। একই গ্রামের মেয়ে মেধাবী রোজিনা। শাহরিয়ার বলে, ‘এ আমার গর্ব। আমার আনন্দ।’
রোজিনাদের বাড়ি ছিল গ্রামের রাস্তার পাশে অন্যের জমিতে। ছোট্ট একটি কুঁড়েঘরে থাকত এক ভাই ও এক বোনকে নিয়ে। বাবা-মা থাকতেন বারান্দায়। বাবা আবদুল লতিফ ভ্যান চালাতেন। মা রেনু বেগম কাজ করতেন ধানের চাতালে। পড়ার খরচ চালাতে না পেরে অষ্টম শ্রেণীতে থাকতেই বিয়ে দেওয়া হয় রোজিনাকে। এরপর যৌতুকের দাবিতে শুরু হয় স্বামীর নির্যাতন। তালাকের মাধ্যমে মুক্তি পায় রোজিনা। বাবার বাড়ি ফিরে আবার পড়াশোনা শুরু করে সে। মেধাবী এই ছাত্রীকে সাগ্রহে নবম শ্রেণীর মানবিক বিভাগে ভর্তি করে নেন ধোপাপাড়া বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। চরম অভাবের মধ্যেই ২০১০ সালে ওই বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায় রোজিনা।
ফল প্রকাশের পরদিন ১৬ মে ‘রোজিনার জীবনে অন্য রকম পাওয়া’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয় প্রথম আলোয়। প্রতিবেদনটি লেখেন রাজশাহীর প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ। খবরটি ছাপা হওয়ার পর ঢাকা মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষ রোজিনাকে ঢাকায় তাদের হোস্টেলে রেখে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীতে পড়াশোনার দায়িত্ব নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। আর রোজিনার পড়াশোনার অন্যান্য খরচ বহন করার দায়িত্ব নেন তারেক উদ্দিন আহমেদ নামের একজন নৌ-প্রকৌশলী। ২০১২ সালে রোজিনা এইচএসসি পাস করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা নার্সিং কলেজে ধাত্রীবিদ্যায় ডিপ্লোমা করছেন।
গত বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে রোজিনা বলেন, ‘আমি জীবনেও চিন্তা করিনি যে আমার জীবনের গল্প পাঠ্যবইয়ে তুলে দেওয়া হবে। আমার জীবনটা অনেক কষ্টের। তার পরও মনে হচ্ছে আমি আজ অনেক সুখী।’
রোজিনার মতো আনন্দিত তাঁর ধোপাপাড়া বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এ আনন্দ প্রকাশ করার ভাষা নেই। কারণ, যে মেয়ের ভালো ফলাফলের জন্য আমার বিদ্যালয়ের কত সুনাম হলো, সেই মেয়ের গল্প আমরা আবার আমাদের শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছি।’
তৌফাতুর রাব্বী: চট্টগ্রাম দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণীর পাট চুকানোর পর নবম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার জন্য হন্যে হয়ে ঘোরে রাব্বী ও তার বাবা-মা। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেও কোনো লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের তৎকালীন কমিশনার আলী আকবরের সুপারিশে রাব্বী ভর্তি হতে পেরেছিল চট্টগ্রাম পুলিশ ইনস্টিটিউট স্কুলে। সেই সময়ের কষ্ট নিয়ে ২০০৮ সালের মে মাসে প্রথম আলোর খোলা কলামে ছাপা হয়েছিল ‘একজন রাব্বীর সংগ্রাম ও উপলব্ধি’ শিরোনামে নিবন্ধ।
জন্মগতভাবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রাব্বীর অপটিক নার্ভ বিকশিত হয়নি। পুলিশ ইনস্টিটিউট স্কুল থেকে ২০১০ সালে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পায় রাব্বী। তখন পুরো স্কুল তাকে নিয়ে আত্মহারা হয়ে পড়ে। তার বাবা ব্যাংকার মো. কামাল উদ্দিন ও মা তাহরীর-ই-শাহনাজ নগরের বাওয়া স্কুলের শিক্ষক। ছেলেকে নিয়ে তাঁদেরও কম যুদ্ধ করতে হয়নি। সেই যুদ্ধে সাফল্য আসে এসএসসিতে।
ফল প্রকাশের পরদিন ১৬ মে ‘অবহেলার জবাব দিয়েছে রাব্বী’ শিরোনামে প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি লেখেন চট্টগ্রামের নিজস্ব প্রতিবেদক প্রণব বল। এই সংবাদটিই এবার ষষ্ঠ শ্রেণীর কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে। মা শাহনাজ বইটি এনে রাব্বীকে পড়ে শুনিয়েছেন।
শাহনাজ বলেন, ‘অনেক বড় একটি বিষয় এটি। কী যে ভালো লাগছে। আমার ছেলের সাফল্য ছোটরা পড়বে, এটা ভেবে খুব আনন্দ হচ্ছে।’
রাব্বী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমঞ্চু আমাকে পড়ে শুনিয়েছেন। কী যে ভালো লাগছে বোঝানো যাবে না। সারা দেশের শিক্ষার্থীরা আমার কাহিনি পড়বে। এটা অনেক বড় পাওয়া, অনেক গর্বের। আরও আনন্দের বিষয় হলো, বইয়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও বেগম রোকেয়ার জীবনকাহিনির সঙ্গে আমারটাও রয়েছে।’
ষষ্ঠ শ্রেণীর ওই বইয়ে ‘শিক্ষামাধ্যমে খ্যাতিমান হয়ে ওঠার গল্প’ রয়েছে। ৪৯ পৃষ্ঠায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও ৫০ পৃষ্ঠায় বেগম রোকেয়ার গল্প আছে। এরপর আছে রোজিনা ও রাব্বীর জীবনকাহিনি।
রাব্বী এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ ও আইন অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাঁর ইচ্ছা আইন নিয়ে পড়ার। রাব্বী বলেন, ‘আমার এই সংগ্রাম যদি ছোটদের পড়ালেখার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে, তাহলে শান্তি পাব।’
প্রথম আলো ট্রাস্টের অদম্য মেধাবীদের ছবি: রোজিনা ও রাব্বীর মতো শত বাধাবিপত্তি ও দরিদ্রতা অতিক্রম করে ২০১১ সালের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। তাদের কথা প্রথম আলোর পাতায় তুলে এনেছিলেন সারা দেশে থাকা প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা। ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ওই অদম্য মেধাবীদের ২০১১ সালের ১২ ডিসেম্বর কারওয়ান বাজারে সিএ ভবনের মিলনায়তনে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অতিথিদের সঙ্গে অদম্য মেধাবীদের ছবিসহ সংবাদ পরদিন ১৩ ডিসেম্বর ছাপা হয় প্রথম আলোর পৃষ্ঠা ৩-এ।
অদম্য মেধাবীদের ওই ছবিটি ষষ্ঠ শ্রেণীর কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা বইয়ের ৫৩ পাতায় ছাপা হয়েছে ‘শিক্ষাক্ষেত্রে সফল অদম্য মেধাবী শিরোনামে’।
No comments