হারিয়ে যাবে ওয়ানডে?
ওয়ানডে ক্রিকেট হারিয়ে যাবে বলে যাঁদের আশঙ্কা, তাঁদের কাতারে সর্বশেষ এসে মিলেছেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। আসলেই কি হারিয়ে যাবে ওয়ানডে?
তিন বছরের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যাবে ওয়ানডে ক্রিকেট!
তিন বছরের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যাবে ওয়ানডে ক্রিকেট!
এই ভবিষ্যদ্বাণীটা করেছেন এমন একজন, যাঁকে ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বকালের সেরাদের একজন হিসেবেই মানা হয়। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান অ্যাডাম গিলক্রিস্ট কিছু দিন আগে করেছেন এমন মন্তব্য। তাঁর আগেও অনেকেই ওয়ানডে ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, ক্রিকেটের তিন সংস্করণের মধ্যে ৫০ ওভারের ভবিষ্যৎই অন্ধকার। গিলির আগে সাল-তারিখ দিয়ে কেউ খেলাটার ‘মৃত্যু’ ঘোষণা করেননি।
গিলক্রিস্টের আশঙ্কার কারণও আছে। পরিসংখ্যানই সাক্ষ্য দিচ্ছে, ১৭ বছরের মধ্যে ২০১২ সালেই সবচেয়ে কম ওয়ানডে হয়েছে। ১৯৯৫ সালের পর গত বছরই প্রথম ওয়ানডের সংখ্যা তিন অঙ্ক ছাড়িয়ে যায়নি। এ পর্যন্ত ২০১২ সালে মাত্র ৯০টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলা হয়েছে। ২০১১ সালে হয়েছিল ১৪৬টি।
যা-ই হোক, খেলাটা এখনো স্বর্ণপ্রসবিনী। বিশেষ করে উপমহাদেশে যে পরিমাণ টেলিভিশন-রাজস্ব পাওয়া যায়, সেটা অবিশ্বাস্য! আর হর্তাকর্তারাও মনেপ্রাণে চাইছেন, টিকে থাকুক ৫০ ওভারের খেলা। টিকিয়ে রাখতে চাইলে ওয়ানডে ক্রিকেটকে সময়োপযোগী করে তুলতে হবে। আর এটা কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন প্রস্তাব এসেছে। ভারতীয় ক্রিকেট গ্রেট শচীন টেন্ডুলকার যেমন বলেছেন ওয়ানডেতে এক পক্ষেরই দুই দফায় ব্যাট করার কথা। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী সাবেক ক্রিকেটার টম মুডি রেখেছেন এক ইনিংসেই এক ব্যাটসম্যানের দুবার ব্যাট করার প্রস্তাব। অস্ট্রেলিয়ারই সাবেক ফাস্ট বোলার ডেমিয়েন ফ্লেমিং বলেছেন বোলারদের বোনাস ওভার দেওয়ার কথা। ওয়ানডে বাঁচাতে উঠে আসা এ রকম আরও কিছু প্রস্তাবের সারসংক্ষেপই তুলে ধরা হলো এখানে।
‘ইমপ্যাক্ট’ খেলোয়াড়
এক ইনিংসে কোনো ব্যাটসম্যানের দুবার ব্যাট করার ধারণাটি এসেছে টম মুডির মাথা থেকে। টস করার সময়ই কোনো দলের অধিনায়ক ঠিক করবেন তাঁর দলের কোন খেলোয়াড় দুবার ব্যাট করবেন। দুবার ব্যাট করা ব্যাটসম্যানই হবেন ‘ইমপ্যাক্ট’ খেলোয়াড়। দ্বিতীয়বার তিনি ব্যাট করবেন টেলএন্ডের কোনো ব্যাটসম্যানের বদলি হিসেবে। ইমপ্যাক্ট খেলোয়াড় কে হবেন, সেটা নির্ভর করতে পারে মাঠ, পিচ, বিপক্ষ ও কে ফর্মে আছে, কে ফর্মে নেই, তার ওপর। তবে কোনো ব্যাটসম্যান একবার আউট হওয়ার পরপরই আবার ব্যাট করতে নামতে পারবেন না। অন্তত একটি উইকেট পড়তে হবে। ধরা যাক, বাংলাদেশের তামিম ইকবাল অল্পতেই আউট হয়ে গেলেন, কিন্তু শেষের দিকে নেমে আবার দ্রুত কিছু রান করে গেলেন। ভালোই তো হবে, তাই না!
উইকেট ও মেডেন = অতিরিক্ত ওভার
অস্ট্রেলিয়ার রায়োবি ওয়ানডে কাপে একজন বোলার সর্বোচ্চ ১৩ ওভার পর্যন্ত বোলিং করার সুযোগ পান। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পেসার ডেমিয়েন ফ্লেমিংয়ের এই আইডিয়াটা দারুণ পছন্দ! এতে আরেকটু বৈচিত্র্য আনতে চান ফ্লেমিং। কোনো বোলার উইকেট কিংবা মেডেন পেলেই শুধু অতিরিক্ত ওভার বল করার সুযোগ পাবেন। ‘ধরুন, কেউ একটি উইকেট পেল কিংবা মেডেন পেল, তবেই সে ১১ ওভার বোলিং করতে পারবে। আর এ কারণেই কেউ যদি টানা পাঁচটি ডট বল করে, তখন ব্যাটসম্যান শেষ বলটায় রান নিতে মরিয়া থাকবে। আর এতে তাকে ঝুঁকি নিতেই হবে। আর আপনি কাকে দিয়ে বেশি বল করাবেন, সেটাও আগেভাগে ঠিক করে দিতে পারবেন না। কারণ, আপনি তো জানেন না কে উইকেট ও মেডেন পাবে।’ এ নিয়ে টম মুডির চিন্তাভাবনাটা একটু অন্য রকম। সাবেক এই অলরাউন্ডার চান কোন বোলার ১০ ওভারের বেশি বল করবেন, সেটা আগেই ঠিক করে রাখতে।
ইনিংস ভাগ করে খেলা
দুই ইনিংসে ভাগ করে ওয়ানডে খেলা ২০১০-১২ রায়োবি ওয়ানডে টুর্নামেন্ট দেখে ফেলেছে। তবে আইসিসি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার এ ধারণাটি গ্রহণ করেনি। ২৫-২৫ ধারণাটিই যখন প্রত্যাখ্যাত, তখন দক্ষিণ আফ্রিকান ডিক উড নামের এক ভদ্রলোক নিয়ে এসেছেন পাঁচ ওভারের তত্ত্ব। দুই দলের প্রথমটি পাঁচ ওভার করার পর দ্বিতীয় দল করবে ১০ ওভার ব্যাটিং। এরপর প্রথম দল আবার পাঁচ ওভার ব্যাট করে পুরো করবে চক্র। আর প্রতি চক্রেই থাকবে বোনাস পয়েন্ট। এভাবে চক্রাকারে পুরো ৫০ ওভার পূর্ণ করার পরই শেষ হবে খেলা, নির্ধারিত হবে বিজয়ী।
বেশি বেশি বাউন্সার
এক ওভারে দুই বাউন্সার, গত জুনেই ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রচলন হয়েছে। আর এতে কিছুটা হলেও সীমিত ওভারের ম্যাচে সুবিধা পাচ্ছেন ফাস্ট বোলাররা। ফ্লেমিং মনে করছেন, ওভারপ্রতি বাউন্সারের সংখ্যাটি আরও বাড়ানো উচিত। তাঁর মতে, সংখ্যাটা হওয়া উচিত তিন। তাঁর যুক্তি, ‘আরও বেশি বাউন্সার দিলে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একটু হলেও অনিশ্চয়তার ছায়া পড়বে। আর এটা ফাস্ট বোলারদের তূণে বাড়তি অস্ত্র জোগান দেবে। তা ছাড়া ওয়ানডে ক্রিকেটে তো তেমন একটা পুল আর হুক দেখা যায় না। বাড়তি বাউন্সার হয়তো ফিরিয়ে আনবে এই শট দুটোকেও। আকর্ষণীয় এই শটগুলো দেখাটাও হবে দৃষ্টিসুখকর।’
টি-টোয়েন্টি শুধু ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট
অনেকেই মনে করেন, ক্রিকেটের নবতম টি-টোয়েন্টি সংস্করণ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আয়োজন করাই উচিত নয়। ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম এই সংস্করণ শুধু ঘরোয়া ও ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে আয়োজন করা উচিত বলেই মতামত তাঁদের। আইপিএল, বিগ ব্যাশ লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগের জনপ্রিয়তাই তাদের যুক্তিটাকে জোরালো করছে। আর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি বন্ধ হয়ে গেলে আপনা-আপনিই ওয়ানডে ক্রিকেট ফিরে পাবে তার হূৎগৌরব।
বিদেশি পত্রিকা অবলম্বনে মোহাম্মদ সোলায়মান
গিলক্রিস্টের আশঙ্কার কারণও আছে। পরিসংখ্যানই সাক্ষ্য দিচ্ছে, ১৭ বছরের মধ্যে ২০১২ সালেই সবচেয়ে কম ওয়ানডে হয়েছে। ১৯৯৫ সালের পর গত বছরই প্রথম ওয়ানডের সংখ্যা তিন অঙ্ক ছাড়িয়ে যায়নি। এ পর্যন্ত ২০১২ সালে মাত্র ৯০টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলা হয়েছে। ২০১১ সালে হয়েছিল ১৪৬টি।
যা-ই হোক, খেলাটা এখনো স্বর্ণপ্রসবিনী। বিশেষ করে উপমহাদেশে যে পরিমাণ টেলিভিশন-রাজস্ব পাওয়া যায়, সেটা অবিশ্বাস্য! আর হর্তাকর্তারাও মনেপ্রাণে চাইছেন, টিকে থাকুক ৫০ ওভারের খেলা। টিকিয়ে রাখতে চাইলে ওয়ানডে ক্রিকেটকে সময়োপযোগী করে তুলতে হবে। আর এটা কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন প্রস্তাব এসেছে। ভারতীয় ক্রিকেট গ্রেট শচীন টেন্ডুলকার যেমন বলেছেন ওয়ানডেতে এক পক্ষেরই দুই দফায় ব্যাট করার কথা। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী সাবেক ক্রিকেটার টম মুডি রেখেছেন এক ইনিংসেই এক ব্যাটসম্যানের দুবার ব্যাট করার প্রস্তাব। অস্ট্রেলিয়ারই সাবেক ফাস্ট বোলার ডেমিয়েন ফ্লেমিং বলেছেন বোলারদের বোনাস ওভার দেওয়ার কথা। ওয়ানডে বাঁচাতে উঠে আসা এ রকম আরও কিছু প্রস্তাবের সারসংক্ষেপই তুলে ধরা হলো এখানে।
‘ইমপ্যাক্ট’ খেলোয়াড়
এক ইনিংসে কোনো ব্যাটসম্যানের দুবার ব্যাট করার ধারণাটি এসেছে টম মুডির মাথা থেকে। টস করার সময়ই কোনো দলের অধিনায়ক ঠিক করবেন তাঁর দলের কোন খেলোয়াড় দুবার ব্যাট করবেন। দুবার ব্যাট করা ব্যাটসম্যানই হবেন ‘ইমপ্যাক্ট’ খেলোয়াড়। দ্বিতীয়বার তিনি ব্যাট করবেন টেলএন্ডের কোনো ব্যাটসম্যানের বদলি হিসেবে। ইমপ্যাক্ট খেলোয়াড় কে হবেন, সেটা নির্ভর করতে পারে মাঠ, পিচ, বিপক্ষ ও কে ফর্মে আছে, কে ফর্মে নেই, তার ওপর। তবে কোনো ব্যাটসম্যান একবার আউট হওয়ার পরপরই আবার ব্যাট করতে নামতে পারবেন না। অন্তত একটি উইকেট পড়তে হবে। ধরা যাক, বাংলাদেশের তামিম ইকবাল অল্পতেই আউট হয়ে গেলেন, কিন্তু শেষের দিকে নেমে আবার দ্রুত কিছু রান করে গেলেন। ভালোই তো হবে, তাই না!
উইকেট ও মেডেন = অতিরিক্ত ওভার
অস্ট্রেলিয়ার রায়োবি ওয়ানডে কাপে একজন বোলার সর্বোচ্চ ১৩ ওভার পর্যন্ত বোলিং করার সুযোগ পান। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পেসার ডেমিয়েন ফ্লেমিংয়ের এই আইডিয়াটা দারুণ পছন্দ! এতে আরেকটু বৈচিত্র্য আনতে চান ফ্লেমিং। কোনো বোলার উইকেট কিংবা মেডেন পেলেই শুধু অতিরিক্ত ওভার বল করার সুযোগ পাবেন। ‘ধরুন, কেউ একটি উইকেট পেল কিংবা মেডেন পেল, তবেই সে ১১ ওভার বোলিং করতে পারবে। আর এ কারণেই কেউ যদি টানা পাঁচটি ডট বল করে, তখন ব্যাটসম্যান শেষ বলটায় রান নিতে মরিয়া থাকবে। আর এতে তাকে ঝুঁকি নিতেই হবে। আর আপনি কাকে দিয়ে বেশি বল করাবেন, সেটাও আগেভাগে ঠিক করে দিতে পারবেন না। কারণ, আপনি তো জানেন না কে উইকেট ও মেডেন পাবে।’ এ নিয়ে টম মুডির চিন্তাভাবনাটা একটু অন্য রকম। সাবেক এই অলরাউন্ডার চান কোন বোলার ১০ ওভারের বেশি বল করবেন, সেটা আগেই ঠিক করে রাখতে।
ইনিংস ভাগ করে খেলা
দুই ইনিংসে ভাগ করে ওয়ানডে খেলা ২০১০-১২ রায়োবি ওয়ানডে টুর্নামেন্ট দেখে ফেলেছে। তবে আইসিসি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার এ ধারণাটি গ্রহণ করেনি। ২৫-২৫ ধারণাটিই যখন প্রত্যাখ্যাত, তখন দক্ষিণ আফ্রিকান ডিক উড নামের এক ভদ্রলোক নিয়ে এসেছেন পাঁচ ওভারের তত্ত্ব। দুই দলের প্রথমটি পাঁচ ওভার করার পর দ্বিতীয় দল করবে ১০ ওভার ব্যাটিং। এরপর প্রথম দল আবার পাঁচ ওভার ব্যাট করে পুরো করবে চক্র। আর প্রতি চক্রেই থাকবে বোনাস পয়েন্ট। এভাবে চক্রাকারে পুরো ৫০ ওভার পূর্ণ করার পরই শেষ হবে খেলা, নির্ধারিত হবে বিজয়ী।
বেশি বেশি বাউন্সার
এক ওভারে দুই বাউন্সার, গত জুনেই ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রচলন হয়েছে। আর এতে কিছুটা হলেও সীমিত ওভারের ম্যাচে সুবিধা পাচ্ছেন ফাস্ট বোলাররা। ফ্লেমিং মনে করছেন, ওভারপ্রতি বাউন্সারের সংখ্যাটি আরও বাড়ানো উচিত। তাঁর মতে, সংখ্যাটা হওয়া উচিত তিন। তাঁর যুক্তি, ‘আরও বেশি বাউন্সার দিলে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একটু হলেও অনিশ্চয়তার ছায়া পড়বে। আর এটা ফাস্ট বোলারদের তূণে বাড়তি অস্ত্র জোগান দেবে। তা ছাড়া ওয়ানডে ক্রিকেটে তো তেমন একটা পুল আর হুক দেখা যায় না। বাড়তি বাউন্সার হয়তো ফিরিয়ে আনবে এই শট দুটোকেও। আকর্ষণীয় এই শটগুলো দেখাটাও হবে দৃষ্টিসুখকর।’
টি-টোয়েন্টি শুধু ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট
অনেকেই মনে করেন, ক্রিকেটের নবতম টি-টোয়েন্টি সংস্করণ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আয়োজন করাই উচিত নয়। ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম এই সংস্করণ শুধু ঘরোয়া ও ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে আয়োজন করা উচিত বলেই মতামত তাঁদের। আইপিএল, বিগ ব্যাশ লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগের জনপ্রিয়তাই তাদের যুক্তিটাকে জোরালো করছে। আর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি বন্ধ হয়ে গেলে আপনা-আপনিই ওয়ানডে ক্রিকেট ফিরে পাবে তার হূৎগৌরব।
বিদেশি পত্রিকা অবলম্বনে মোহাম্মদ সোলায়মান
No comments