নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং- কেন এই পথ চলা

সারাবিশ্বে প্রতিনিয়ত কমছে প্রাকৃতিক জ্বালানির পরিমাণ। তাই প্রয়োজন বিকল্প জ্বালানি। এক্ষেত্রে নিউক্লিয়ার বা পারমাণবিক জ্বালানির দিকে ঝুঁকছে সবাই। বাংলাদেশও সম্প্রতি পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদনে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
জাতীয় চাহিদার কথা বিবেচনা করে দক্ষ নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ার তৈরির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। এই লক্ষ্য অর্জনে বৈশ্বিক বিষয়বস্তু বিবেচনা করে বিভাগের পাঠ্যসূচী বিন্যাস করা হয়েছে। এছাড়া পাবনায় রূপপুরে বাস্তবায়িতব্য পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র এবং পরমাণু শক্তির সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন দক্ষ জনবল। যাত্রা হলো শুরু ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের অধীনে চালু হয়েছে বিভাগটি। ২ ডিসেম্বর ২০১২ উদ্বোধন করা হয় বিভাগটি। ৪ ডিসেম্বর ২০১২ আনুষ্ঠানিকভাবে ছাব্বিশ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা করে সম্ভাবনাময় এ বিভাগ। নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কি
নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং হলো প্রকৌশল বিদ্যার একটি শাখা। যেখানে পরমাণুর নিউক্লিয়াস ভাঙ্গার ঘটনার প্রয়োগ ঘটানো হয় এই বিষয়ের মূল ভিত্তি নিউক্লিয়ার পদার্থবিজ্ঞান। আরও অন্তর্ভুক্ত আছে নিউক্লিয়ার ফিউশন ব্যবস্থা ও উপাদান।

ভর্তি যোগ্যতা
নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং এমএস কোর্সটিতে আবেদন করতে হলে শিক্ষার্থীকে নিম্নলিখিত বিষয়- ফিজিক্স, এ্যাপ্লাইড ফিজিক্স, ইলেক্ট্রনিক্স এ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, কেমিস্ট্রি, এ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি এ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যাথমেটিক্স, ইলেক্ট্রিক্যাল, কেমিক্যাল, মেকানিক্যাল, মেট্যালজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, থিওরেটিক্যাল ফিজিক্স ও কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে চার বছর মেয়াদি বিএসসি অথবা তিন বছর মেয়াদি বিএসসি ও এক বছর মেয়াদি এমএসসি পাস এবং ন্যূনতম সিজিপিএ ৩.০০ পেতে হবে।

ভর্তি পদ্ধতি
আবেদনকারীকে এক শ’ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে (লিখিত পরীক্ষার বিষয়- ফিজিক্স, ম্যাথমেটিক্স, কেমিস্ট্রি ও সাধারণন জ্ঞান)। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীকে সাক্ষাতকারের মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হয়।

কোর্স কারিকুলাম
দেড় বছর মেয়াদি এ কোর্সকে তিন সেমিস্টারে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম সেমিস্টার-ফান্ডামেন্টাল অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, রিঅ্যাক্টর ফিজিক্স এ্যান্ড নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর থিওরি, নিউক্লিয়ার কেমিস্ট্রি এ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যানেজমেন্ট অব নিউক্লিয়ার ফিউল সাইকল এ্যান্ড রিঅ্যাক্টর থার্মাল হাইড্রোডাইন্যামিক্স। দ্বিতীয় সেমিস্টার- নিউক্লিয়ার পাওয়ার সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড প্রডাকশন অব এনার্জি, নিউক্লিয়ার এ্যানালাইটিক্যাল টেকনিকস, হেলথ ফিজিক্স এ্যান্ড রেডিয়েশন সায়েন্স, নিউক্লিয়ার ও এইস্ট ম্যানেজমেন্ট এ্যান্ড নিউক্লিয়ার অ্যাকসিডেন্ট এ্যান্ড সেফটি ইস্যুজ এবং প্র্যাকটিক্যাল। তৃতীয় সেমিস্টার-অপশনাল কোর্সেস, থিসিস/প্রজেক্ট এবং ভাইভা।

কাজের ধরন
আণবিক চুল্লির ডিজাইন মূলত একজন নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ার করে থাকে। যদিও এটি সমষ্টিগত বিষয়। একজন নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ার আণবিক চুল্লির মেনটেনেন্স, ম্যানেজমেন্ট, মনিটরিং, ফিউল ম্যানেজমেন্ট, ডিসপোজাল, ওএইস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রভৃতি কাজ করে। এ ছাড়াও আণবিক চুল্লির গবেষণার কাজও করে থাকেন।

কর্মক্ষেত্র
নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং একটি সম্ভাবনাময় পেশা। এমএস কোর্স সম্পন্নকারী শিক্ষার্থী, সরকারী বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে তার চাকরি জীবন শুরু“ করতে পারবেন। বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিকে রয়েছে কাজের সুযোগ। বিদেশেও রয়েছে নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের ব্যাপক সুযোগ। বিভাগের চেয়ারম্যান ড. খোরশেদ আহমদ কবির বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার জরুরী। বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু এ জন্য দরকার দক্ষ জনশক্তি। এই দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য এ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ভবিষ্যত বাংলাদেশ নির্মাণে এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করি।

ভর্তি তথ্য
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার বিভাগ, ২০১২ সেশন থেকে এমএস কোর্স চালু করেছে। প্রতি সেশনের ভর্তি প্রক্রিয়া প্রতিবছরের জুন মাস থেকে শুরু করার পরিকল্পনা হাতে রয়েছে।

বৃত্তি
এমএস কোর্স সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য মেধাক্রম অনুযায়ী স্কলারশিপের মাধ্যমে রাশিয়া পাঠানো হবে; যাতে তারা উচ্চতর জ্ঞান লাভ করতে পারে।

যোগাযোগ
নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, কার্জন হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ফোন : ৮৮০-০২৯৬৬১৯০০, ০১৭১৫৯৫৪৭৬৯, ০১৬১১৯৫২৪১৫।

No comments

Powered by Blogger.