বিশেষ সাক্ষাৎকার : ড. শামসুদ্দোহা খন্দকার-যাত্রীদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনতে কাজ করছি
নৌপথের গুরুত্ব আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। ঈদ-পূজাসহ বিভিন্ন বড় উৎসবের সময় মানুষের ভিড়-ভোগান্তির সীমা থাকে না। জানমালের নিরাপত্তার বিষয়টিও বড় হয়ে দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আসন্ন ঈদুল আজহা
উপলক্ষে নৌপথের যাত্রীদের আগের তুলনায় ভোগান্তি আরো কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ)। বিআইডাব্লিউটিএর চেয়ারম্যান ড. মো. শামসুদ্দোহা খন্দকার কালের কণ্ঠের সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে জানান নানা উদ্যোগের কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তৌফিক মারুফ
কালের কণ্ঠ : নৌপথে যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দীর্ঘদিনের। প্রতিবার ঈদে পরিস্থিতি আরো উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে কেন?
শামসুদ্দোহা খন্দকার : যাত্রীসেবার দায়িত্ববোধ থেকে আমরা কিন্তু অনেক পদক্ষেপ নিয়ে থাকি। কিছু ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেকটা পাল্টানো গেছে। এ জন্যই গত তিন ঈদে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। এটা আমাদের পদক্ষেপ, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সহায়তা, মিডিয়ার ভূমিকা, লঞ্চ মালিকদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন- সব কিছু মিলিয়ে এমন সফলতা এসেছে। অন্য সময়ে প্রতিদিন ৩০-৩৫ হাজার যাত্রী থাকলেও ঈদের সময় দিনে দেড় থেকে দুই লাখ যাত্রীর ভিড় সামলাতে হয়। এ ছাড়া যাত্রীসাধারণেরও আরো সচেতন হওয়া দরকার।
কলের কণ্ঠ : যাত্রী সচেতনতা বাড়াতে আপনাদের দিক থেকে আরো অনেক বেশি দায়িত্বশীলতা আশা করে মানুষ। এ ছাড়া মানুষ তো পর্যাপ্ত সুবিধাটুকুও পায় না। এ ক্ষেত্রে যাত্রীদের দিক থেকে বেশি কিছু করণীয় আছে কি?
শামসুদ্দোহা খন্দকার : অনেক সময় দেখা যায়, অত্যধিক ভিড় দেখেও আরো যাত্রী উঠতে থাকেন। যাত্রীদের এমন মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। আমরা সব সময়ই বলে থাকি, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেন কোনো যাত্রী কোনো পরিবহনে না ওঠেন। যাত্রীদের ঠেকাতে গেলে অনেক ক্ষেত্রেই বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা থাকে। ঈদের সময় নৌযান সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকায় এ সমস্যা হয়। সরকার অবশ্য এ সমস্যা সমাধানে নতুন সরকারি নৌযান সংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া এবার ঈদুল আজহা উপলক্ষে ইতিমধ্যেই নৌযান মালিক, চালক ও যাত্রীদের জন্য সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক প্রচারণার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করা, অতিরিক্ত যাত্রী বহন না করা, মাঝনদীতে গিয়ে নৌকাযোগে যাত্রী ওঠানামা না করা, অনুমোদনহীন কোনো লঞ্চ চলাচল না করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ মনিটরিং টিম গঠন, কন্ট্রোল রুম চালু, বিভিন্ন নৌবন্দরে যাত্রী ছাউনি সংস্কার ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা, নদীতে মোবাইল কোর্ট চালু, পন্টুনে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা, টার্মিনালে যাত্রী আসা-যাওয়া নির্বিঘ্ন করতে আশপাশের পথে ট্রাফিক সিস্টেম কার্যকর করা, রাতে তেল ও মালবাহী কার্গো-জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা, উদ্ধারকারী জাহাজ প্রস্তুত রাখা, নৌপথের বয়া-বিকন বাতি সচল রাখা, নদীর মধ্যে সেতু বা পিলারগুলোকে দৃশ্যমান রাখাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
কালের কণ্ঠ : বাস-ট্রেনের মতো লঞ্চেরও সব শ্রেণীর আগাম টিকিটপ্রাপ্তি সাধারণ যাত্রীদের জন্য সহজলভ্য করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া যায় না? আগে একাধিকবার তো স্বল্প পরিসরে হলেও এমন উদ্যোগ নেওয়ার পর তা আবার বন্ধ হয়ে গেল কেন?
শামসুদ্দোহা খন্দকার : নৌপথের যাত্রী ব্যবস্থাপনা এখনো অনেকটা পিছিয়ে আছে। যাত্রীদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে অনেক ফারাক রয়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি এ দূরত্ব কতটা কমিয়ে আনা যায়। বিশেষ করে অন্য সব পরিবহনে টিকিট বুকিং ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হলেও নৌযাত্রী পরিবহনে এখনো এর ছোঁয়া লাগেনি। অথচ খুব সহজেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বুকিং কাউন্টার করে কম্পিউটার ব্যবহার করে সুশৃঙ্খলভাবে টিকিট বেচাকেনা করা যায়। এ জন্য কেবল আমাদের উদ্যোগ আর লঞ্চ মালিকদের সক্রিয় ভূমিকা দরকার। এ ব্যবস্থা চালু হলে যেমন মানুষকে একটি টিকিট সংগ্রহে সড়কের যানজট-দুর্ভোগ ঠেলে বাড়তি অর্থ ও সময় ব্যয় করে সদরঘাটে যেতে হবে না, তেমনি লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহনের সুযোগ কমে যাবে, বন্ধ হবে টিকিট কালোবাজারি।
কালের কণ্ঠ : টার্মিনালে যাত্রী হয়রানি বন্ধ হচ্ছে না কেন, এখনো তো টানাহেঁচড়া, ভবঘুরে, ভাসমান বিক্রেতাদের উপদ্রব দেখা যায়।
শামসুদ্দোহা খন্দকার : ইতিমধ্যে এসব ক্ষেত্রে দায়িত্বে অবহেলার জন্য ঢাকা নৌবন্দরের দায়িত্বে ছিলেন এমন এক কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন আবার পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাচ্ছে। ঘাটে কোনো যাত্রীকে টানাটানি, জোর করে মালামাল বহন, অন্যায্য পন্থায় টাকা আদায়, ভাসমান দোকান, ভবঘুরেদের উৎপাত- এগুলো চলবে না। এ ছাড়া গত রোজার ঈদের সময় থেকে বিশেষ উপলক্ষে বন্দর এলাকায় নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের কর্মীদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এবার ঈদের সময়ও তারা দায়িত্ব পালন করবেন যাত্রীদের সহায়তা ও শৃঙ্খলার স্বার্থে।
কালের কণ্ঠ : নৌপথের যাত্রীসেবার মান বাড়াতে নতুন কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
শামসুদ্দোহা খন্দকার : শিগগিরই ঢাকা নৌবন্দরসহ অন্য বড় বড় বন্দর এলাকায় ফ্লাড লাইট স্থাপন করা হবে। রেলস্টেশনের মতো প্রতিটি জাহাজের টাইম শিডিউল ডিজিটাল মনিটর ও সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে যাত্রীদের অবহিত করার ব্যবস্থা করা হবে। আধুনিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক বিশুদ্ধ পানি, চা-কফির ব্যবস্থাও রাখা হবে। পর্যায়ক্রমে সব নৌবন্দর এলাকাকে এমন আধুনিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
কালের কণ্ঠ : মাঝেমধ্যেই জানা যায়, লঞ্চ মালিকদের অধিক ব্যবসায়িক আচরণের কাছে আপনারা অসহায় হয়ে পড়েন। মালিকপক্ষ কি আপনাদের সহায়তা করে না?
শামসুদ্দোহা খন্দকার : এ ক্ষেত্রে মালিকপক্ষ আগে যেভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকতে চাইত, এখন তেমনটা নেই। তারা ব্যবসার দিক দেখবে সেটা ঠিক আছে, তবে যাত্রীদের স্বার্থও তাদের দেখতে হবে। তারা সারা বছর সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়ায় যাত্রী বহন করে, তবে ঈদের সময় সারা বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। আমরা বলতে চাই, আমরা এখন লঞ্চ মালিকদের সঙ্গে কোনো হয়রানিমূলক আচরণ করি না। ফলে তারাও যেন বিষয়টি বিবেচনায় রাখেন।
কালের কণ্ঠ : যাত্রী নিরাপত্তা ও নৌযান চলাচল নির্বিঘ্ন রাখা ও অন্যান্য নিরাপত্তা সম্পর্কে আপনার অবস্থান কী?
শামসুদ্দোহা খন্দকার : কেবল লঞ্চই নয়, নৌপথের মধ্যে ফেরি সার্ভিসও অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তাই ফেরি সার্ভিস সহজতর করাও আমাদের আরেকটি উদ্যোগ। এ জন্য আমাদের আওতায় থাকা পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, মাওয়া-কাওরাকান্দি-চরজানাজাতসহ অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ফেরিঘাটের পরিবহন ও যাত্রীসেবা নির্বিঘ্ন করার কাজ সব সময়ই অব্যাহত থাকে। বিশেষ করে এসব ফেরি পারাপারের ক্ষেত্রে আগে বড় সমস্যা ছিল নাব্যতা। মাঝনদীতে হঠাৎ করেই ডুবোচরে ফেরি আটকে যেত। এখন তেমনটা নেই বললেই চলে। তবু মাঝেমধ্যে নাব্যসংকট বড় হয়ে দেখা দেয়। এ জন্য আমরা মাওয়া ও পাটুরিয়া এলাকায় মোট ১৩টি ড্রেজার ইউনিট সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রেখেছি। একইভাবে কোনো লঞ্চ রুটের জন্য জরুরি ড্রেজার ইউনিট রাখা আছে। এ ছাড়া ফেরিঘাটে ফ্লাড লাইটের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। বিশাল আকারের পার্কিং ইয়ার্ড করা হয়েছে। আরো অনেক রকম পদক্ষেপ আছে।
কালের কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।
শামসুদ্দোহা খন্দকার : আপনাকেও ধন্যবাদ।
কালের কণ্ঠ : নৌপথে যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দীর্ঘদিনের। প্রতিবার ঈদে পরিস্থিতি আরো উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে কেন?
শামসুদ্দোহা খন্দকার : যাত্রীসেবার দায়িত্ববোধ থেকে আমরা কিন্তু অনেক পদক্ষেপ নিয়ে থাকি। কিছু ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেকটা পাল্টানো গেছে। এ জন্যই গত তিন ঈদে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। এটা আমাদের পদক্ষেপ, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সহায়তা, মিডিয়ার ভূমিকা, লঞ্চ মালিকদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন- সব কিছু মিলিয়ে এমন সফলতা এসেছে। অন্য সময়ে প্রতিদিন ৩০-৩৫ হাজার যাত্রী থাকলেও ঈদের সময় দিনে দেড় থেকে দুই লাখ যাত্রীর ভিড় সামলাতে হয়। এ ছাড়া যাত্রীসাধারণেরও আরো সচেতন হওয়া দরকার।
কলের কণ্ঠ : যাত্রী সচেতনতা বাড়াতে আপনাদের দিক থেকে আরো অনেক বেশি দায়িত্বশীলতা আশা করে মানুষ। এ ছাড়া মানুষ তো পর্যাপ্ত সুবিধাটুকুও পায় না। এ ক্ষেত্রে যাত্রীদের দিক থেকে বেশি কিছু করণীয় আছে কি?
শামসুদ্দোহা খন্দকার : অনেক সময় দেখা যায়, অত্যধিক ভিড় দেখেও আরো যাত্রী উঠতে থাকেন। যাত্রীদের এমন মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। আমরা সব সময়ই বলে থাকি, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেন কোনো যাত্রী কোনো পরিবহনে না ওঠেন। যাত্রীদের ঠেকাতে গেলে অনেক ক্ষেত্রেই বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা থাকে। ঈদের সময় নৌযান সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকায় এ সমস্যা হয়। সরকার অবশ্য এ সমস্যা সমাধানে নতুন সরকারি নৌযান সংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া এবার ঈদুল আজহা উপলক্ষে ইতিমধ্যেই নৌযান মালিক, চালক ও যাত্রীদের জন্য সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক প্রচারণার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করা, অতিরিক্ত যাত্রী বহন না করা, মাঝনদীতে গিয়ে নৌকাযোগে যাত্রী ওঠানামা না করা, অনুমোদনহীন কোনো লঞ্চ চলাচল না করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ মনিটরিং টিম গঠন, কন্ট্রোল রুম চালু, বিভিন্ন নৌবন্দরে যাত্রী ছাউনি সংস্কার ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা, নদীতে মোবাইল কোর্ট চালু, পন্টুনে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা, টার্মিনালে যাত্রী আসা-যাওয়া নির্বিঘ্ন করতে আশপাশের পথে ট্রাফিক সিস্টেম কার্যকর করা, রাতে তেল ও মালবাহী কার্গো-জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা, উদ্ধারকারী জাহাজ প্রস্তুত রাখা, নৌপথের বয়া-বিকন বাতি সচল রাখা, নদীর মধ্যে সেতু বা পিলারগুলোকে দৃশ্যমান রাখাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
কালের কণ্ঠ : বাস-ট্রেনের মতো লঞ্চেরও সব শ্রেণীর আগাম টিকিটপ্রাপ্তি সাধারণ যাত্রীদের জন্য সহজলভ্য করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া যায় না? আগে একাধিকবার তো স্বল্প পরিসরে হলেও এমন উদ্যোগ নেওয়ার পর তা আবার বন্ধ হয়ে গেল কেন?
শামসুদ্দোহা খন্দকার : নৌপথের যাত্রী ব্যবস্থাপনা এখনো অনেকটা পিছিয়ে আছে। যাত্রীদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে অনেক ফারাক রয়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি এ দূরত্ব কতটা কমিয়ে আনা যায়। বিশেষ করে অন্য সব পরিবহনে টিকিট বুকিং ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হলেও নৌযাত্রী পরিবহনে এখনো এর ছোঁয়া লাগেনি। অথচ খুব সহজেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বুকিং কাউন্টার করে কম্পিউটার ব্যবহার করে সুশৃঙ্খলভাবে টিকিট বেচাকেনা করা যায়। এ জন্য কেবল আমাদের উদ্যোগ আর লঞ্চ মালিকদের সক্রিয় ভূমিকা দরকার। এ ব্যবস্থা চালু হলে যেমন মানুষকে একটি টিকিট সংগ্রহে সড়কের যানজট-দুর্ভোগ ঠেলে বাড়তি অর্থ ও সময় ব্যয় করে সদরঘাটে যেতে হবে না, তেমনি লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহনের সুযোগ কমে যাবে, বন্ধ হবে টিকিট কালোবাজারি।
কালের কণ্ঠ : টার্মিনালে যাত্রী হয়রানি বন্ধ হচ্ছে না কেন, এখনো তো টানাহেঁচড়া, ভবঘুরে, ভাসমান বিক্রেতাদের উপদ্রব দেখা যায়।
শামসুদ্দোহা খন্দকার : ইতিমধ্যে এসব ক্ষেত্রে দায়িত্বে অবহেলার জন্য ঢাকা নৌবন্দরের দায়িত্বে ছিলেন এমন এক কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন আবার পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাচ্ছে। ঘাটে কোনো যাত্রীকে টানাটানি, জোর করে মালামাল বহন, অন্যায্য পন্থায় টাকা আদায়, ভাসমান দোকান, ভবঘুরেদের উৎপাত- এগুলো চলবে না। এ ছাড়া গত রোজার ঈদের সময় থেকে বিশেষ উপলক্ষে বন্দর এলাকায় নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের কর্মীদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এবার ঈদের সময়ও তারা দায়িত্ব পালন করবেন যাত্রীদের সহায়তা ও শৃঙ্খলার স্বার্থে।
কালের কণ্ঠ : নৌপথের যাত্রীসেবার মান বাড়াতে নতুন কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
শামসুদ্দোহা খন্দকার : শিগগিরই ঢাকা নৌবন্দরসহ অন্য বড় বড় বন্দর এলাকায় ফ্লাড লাইট স্থাপন করা হবে। রেলস্টেশনের মতো প্রতিটি জাহাজের টাইম শিডিউল ডিজিটাল মনিটর ও সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে যাত্রীদের অবহিত করার ব্যবস্থা করা হবে। আধুনিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক বিশুদ্ধ পানি, চা-কফির ব্যবস্থাও রাখা হবে। পর্যায়ক্রমে সব নৌবন্দর এলাকাকে এমন আধুনিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
কালের কণ্ঠ : মাঝেমধ্যেই জানা যায়, লঞ্চ মালিকদের অধিক ব্যবসায়িক আচরণের কাছে আপনারা অসহায় হয়ে পড়েন। মালিকপক্ষ কি আপনাদের সহায়তা করে না?
শামসুদ্দোহা খন্দকার : এ ক্ষেত্রে মালিকপক্ষ আগে যেভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকতে চাইত, এখন তেমনটা নেই। তারা ব্যবসার দিক দেখবে সেটা ঠিক আছে, তবে যাত্রীদের স্বার্থও তাদের দেখতে হবে। তারা সারা বছর সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়ায় যাত্রী বহন করে, তবে ঈদের সময় সারা বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। আমরা বলতে চাই, আমরা এখন লঞ্চ মালিকদের সঙ্গে কোনো হয়রানিমূলক আচরণ করি না। ফলে তারাও যেন বিষয়টি বিবেচনায় রাখেন।
কালের কণ্ঠ : যাত্রী নিরাপত্তা ও নৌযান চলাচল নির্বিঘ্ন রাখা ও অন্যান্য নিরাপত্তা সম্পর্কে আপনার অবস্থান কী?
শামসুদ্দোহা খন্দকার : কেবল লঞ্চই নয়, নৌপথের মধ্যে ফেরি সার্ভিসও অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তাই ফেরি সার্ভিস সহজতর করাও আমাদের আরেকটি উদ্যোগ। এ জন্য আমাদের আওতায় থাকা পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, মাওয়া-কাওরাকান্দি-চরজানাজাতসহ অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ফেরিঘাটের পরিবহন ও যাত্রীসেবা নির্বিঘ্ন করার কাজ সব সময়ই অব্যাহত থাকে। বিশেষ করে এসব ফেরি পারাপারের ক্ষেত্রে আগে বড় সমস্যা ছিল নাব্যতা। মাঝনদীতে হঠাৎ করেই ডুবোচরে ফেরি আটকে যেত। এখন তেমনটা নেই বললেই চলে। তবু মাঝেমধ্যে নাব্যসংকট বড় হয়ে দেখা দেয়। এ জন্য আমরা মাওয়া ও পাটুরিয়া এলাকায় মোট ১৩টি ড্রেজার ইউনিট সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রেখেছি। একইভাবে কোনো লঞ্চ রুটের জন্য জরুরি ড্রেজার ইউনিট রাখা আছে। এ ছাড়া ফেরিঘাটে ফ্লাড লাইটের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। বিশাল আকারের পার্কিং ইয়ার্ড করা হয়েছে। আরো অনেক রকম পদক্ষেপ আছে।
কালের কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।
শামসুদ্দোহা খন্দকার : আপনাকেও ধন্যবাদ।
No comments