সড়কের বেহাল অবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী- আরাকান সড়কে কষ্ট আর কত দিন by হামিদ উল্লাহ

কোরবানির ঈদে যখন পশু কেনার পরিকল্পনা নিয়ে সারা দেশের মানুষ ব্যস্ত, চট্টগ্রামের ঘরমুখী মানুষের তখন অন্য চিন্তা। নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর বেহাল অবস্থার কারণে শহর থেকে কীভাবে ভোগান্তি এড়িয়ে নিরাপদে বাড়ি ফেরা যায়, সে পথ খুঁজছেন তাঁরা।


এরই মধ্যে আরাকান সড়কের বেহাল অবস্থা নিয়ে স্বয়ং স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁদের মনের কথাটাই বলে দিয়েছেন।
রমজানের ঈদেও এ সড়কটির বেহাল অবস্থা নিয়ে জনগণকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল। তখন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) থেকে বলা হয়েছিল, ঈদের পরই সড়কটি যান চলাচলের উপযোগী করা হবে। কিন্তু পরে তা আর হয়নি। চউকের প্রকৌশলীরা এ জন্য নিজেদের ব্যর্থতাকে নয়, দায়ী করছেন অতিবর্ষণকে।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গত রোববার বহদ্দারহাট ও আরাকান সড়ক হয়ে রাঙ্গুনিয়া যান। যাওয়ার পথে বহদ্দারহাটে উড়ালসড়ক নির্মাণের কারণে সেখানে যান চলাচলের সমস্যা এবং আরাকান সড়কের বেহাল অবস্থা নিজের চোখে দেখেন। এরপর পোমরায় ওয়াসার প্রকল্প উদ্বোধন করতে গিয়ে ক্ষোভের কথা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘অনভিজ্ঞ লোককে কাজ দেওয়াও এক প্রকার দুর্নীতি। জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলাও অপরাধ।’ ওই সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন চউক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বক্তব্য দেওয়ার আগেই ওই দিন সকালে চান্দগাঁও এলাকার মানুষ সড়কের গর্তের পানিতে কৈ মাছ ফেলে প্রতিবাদ জানান। এর আগে তাঁরা সড়কের ওপর ধানগাছ রোপণ করে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।
মন্ত্রীর ক্ষোভের পরদিন চউকও এ পরিস্থিতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ ছয় মাসের মধ্যেই সড়কটি পুরোপুরি যান চলাচলের উপযোগী করার আশ্বাস দিয়েছে নগরবাসীকে।
জানা যায়, উত্তর চট্টগ্রামের একাংশ, দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজারের বিপুলসংখ্যক মানুষ মূলত যাওয়া-আসার জন্য আরাকান সড়ক ও শাহ আমানত সংযোগ সড়ক ব্যবহার করে। বহদ্দারহাট মোড় থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত সড়কটি সরাসরি ব্যবহার করা যায় না। উড়ালসড়ক নির্মাণের কারণে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে শহর থেকে যাঁরা শাহ আমানত সেতু দিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামে যেতে চান, তাঁদের বহদ্দারহাট বাস টারমিনাল দিয়ে ঘুরে যেতে হয়। এতে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে এক থেকে দেড় ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়। আর বহদ্দারহাট থেকে আরাকান সড়ক দিয়ে উত্তর চট্টগ্রাম ও কালুরঘাট হয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামে যেতে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। আর এতে সময় লাগে কয়েক ঘণ্টা।
এ অবস্থায় কোরবানির মৌসুমে সড়ক দুটি দিয়ে কীভাবে নিরাপদে, নির্বিঘ্নে বাড়ি পৌঁছানো যায়, সে চিন্তায় অস্থির নগরবাসী।
একজন ব্যাংক কর্মকর্তা ও রামুর বাসিন্দা নুরুল আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বাড়ি যাওয়ার কথা ভাবলেই মনে হয়, গরু কোরবানি দিতে যাওয়ার আগে যেন নিজেকেই কোরবানি দিতে হচ্ছে।’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘অনেক সময়ের অপচয় আর ভোগান্তির মধ্য দিয়ে বাড়ি যেতে হবে। অথচ সড়কগুলো একটু ভালো থাকলে নিশ্চিন্তে মা-বাবার কাছে যেতে পারতাম।’
আরাকান সড়ক সংস্কার প্রকল্পের পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সম্প্রসারণকাজের পাশাপাশি আমরা জরুরি ভিত্তিতে মেরামতের কিছু কাজ করছি। যাতে কোরবানির সময় মানুষ নিরাপদে বাড়ি যেতে পারে। সড়কে যেসব গর্ত ছিল তা ইতিমধ্যে কংক্রিট দিয়ে সমান করে দেওয়া হয়েছে। কোরবানি আসার আগেই সড়কটির অবস্থার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সড়কটি সংস্কারের জন্য আমরা গত এপ্রিলে দায়িত্ব পেয়েছি। এর আগে থেকেই সড়কটির অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। এখন সবকিছুর জন্য আমাদের দোষারোপ করা হচ্ছে।’
জানা যায়, ২০০০ সালে প্রথম আরাকান সড়কটির নির্মাণ ও সম্প্রসারণকাজ শুরু হয়। ২০০৩ সালে সে কাজ শেষ করে চউক সড়কটি সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সড়কটির কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সড়কে তিন ফুট কংক্রিটের ঢালাই দেওয়ার কথা থাকলেও কোথাও কোথাও এক ফুট কিংবা আরও কম উচ্চতার ঢালাই দেখা যায়। দুর্নীতি দমন কমিশন বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে এর সত্যতা পায়। ফলে সড়কটির সম্প্রসারণের কাজে জড়িত ঠিকাদার ও প্রকৌশলীসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে ২০টি মামলা করে দুদক। মামলাগুলো বর্তমানে তদন্তাধীন।

No comments

Powered by Blogger.