রাজশাহীতে বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় ১০ জনের মৃত্যু- অন্যত্র নিহত ১৫

রাজশাহীতে শনিবার বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় দুই কলেজছাত্র ও এক ব্র্যাক কর্মকর্তাসহ ১০ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছে আরও ৮ জন। এদিকে ফরিদপুরের মধুখালীতে ট্রাকচাপায় পাঁচ নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।


এছাড়া সাভার, গাজীপুর, যশোর, মাগুরা, হবিগঞ্জ, ফেনী ও গোপালগঞ্জে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ১৫ জন নিহত এবং ৩৬ জন আহত হয়েছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার, নিজস্ব সংবাদদাতা, সংবাদদাতা ও বিডি নিউজের।
রাজশাহী ॥ জেলার মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি এলাকায় শনিবার সকালে বাস ও হিউম্যান হলারের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই তিনজন ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর আরও সাতজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় গুরুতর আহত অপর ৮ জনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে দু’জনের আবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
নিহতের মধ্যে ৯ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলেন মোহনপুরের মতিহার গ্রামের মোজাম্মেল হক (৪৫), পালশা গ্রামের ব্র্যাক কর্মকর্তা অজিত কুমার সরকার (৩৮) ও সইপাড়া গ্রামের হাফিজ উদ্দিন (৩০), রাজশাহী কলেজের একাদশ শ্রেণীর মানবিক বিভাগের ছাত্র একই গ্রামের শামীম হোসেন (১৮), বাকশিমইল গ্রামের আফজাল হোসেন (২৭), নওগাঁর মান্দা উপজেলার ছোটমুল¬ুক গ্রামের শহীদুল ইসলাম (৪০), রাজশাহী রয়েল মেডিক্যাল টেকনোলজির ছাত্র মান্দার মোহাম্মদপুর গ্রামের জসিমউদ্দিন (২৬), একই উপজেলার কালিসোবা গ্রামের সাইফুল ইসলাম (২৮) ও মহানগরীর দরগাপাড়া এলাকার রবিন (২৬)। অপরজনের স্বজনরা না আসায় বিকেল পর্যন্ত তার নাম পরিচয়-পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে রবিন হিউম্যান হলার চালক এবং বাকিরা সবাই তাঁর যাত্রী ছিলেন। তাঁরা নওগাঁর মান্দা ও মোহনপুর থেকে রাজশাহী শহরে আসছিলেন।
মোহনপুর থানার ওসি জাকিরুল ইসলাম জানান, সকাল ৭টার দিকে রাজশাহী- নওগাঁ মহাসড়কে মৌগাছি এলাকায় রাজশাহী থেকে নওগাঁগামী বুলবুলি পরিবহনের একটি বাস এবং মোহনপুর থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী হিউম্যান হলারের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষে ওই হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহতদের লাশ রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, যাত্রীবাহী বাসটি হিউম্যান হলারকে সরাসরি ধাক্কা দেয়। এতে হিউম্যান হলারটি দুমড়েমুচড়ে এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ও এলাকাবাসী এসে হিউম্যান হলার থেকে হতাহতদের উদ্ধার করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুটি গাড়ির গতিই ছিল বেপরোয়া। সকালের দিকে সড়ক প্রায় ফাঁকা থাকায় দ্রুতগতিতে গাড়ি দু’টি চলার কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এতে মুখোমুখি সংঘর্ষ বাঁধে। হিউমান হালারের যাত্রী আহত আফজাল হোসেন ও মিলন বলেন, হিউম্যান হলারের চালক ছিল একজন ১৩/১৪ বছরের কিশোর। সে গাড়িতে বসে থেকেই ঝিমুচ্ছিল। আর হিউম্যান হলারের হেল্পার পেছনের পাদানিতে (যাত্রী ওঠার স্থান) দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠাচ্ছিল-নামাচ্ছিল। এ অবস্থায় হঠাৎ গাড়ির গতি বেড়ে গেলে সামনে থেকে সমান গতিতে আসা বাসের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। ঘটনার পর বাসচালক ও হেল্পার পালিয়ে যায়।
ফরিদপুর ॥ জেলার মধুখালীতে একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে থাকা নারী শ্রমিকদের চাপা দিলে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। এরা সবাই আলতু খান জুটমিলের শ্রমিক। নিহতের সংখ্যা অরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন মধুখালী থানার কর্মকর্তা আব্দুর রব।
গাজীপুর ॥ গাজীপুরে শনিবার পৃথক ঘটনায় গাড়িচাপায় এক নারীসহ তিন জন নিহত হয়েছে। নিহতরা হলো চানবানু (৭০), সজীব পাল (৪০) ও সাজেদুল ইসলাম (৩০)।
শনিবার সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুর সদর উপজেলার কড্ডা ব্রিজের পাশে ছালছাবিল পরিবহনের একটি বাসে চানবানু গুরুতর আহত হওয়ার পর তাকে গাজীপুর সদর হাসপাতালে পাঠালে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। চানবানু ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের গোবরাকোলা গ্রামের মৃত আব্দুল গফুরের স্ত্রী। একই দিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সদর উপজেলার বড়বাড়িতে বলাকা পরিবহনের একটি বাসের চাপায় সজীব পাল নামের এক পোশাক শ্রমিক ঘটনাস্থলেই মারা যান। সজীব পাল ময়মনসিংহের হালুয়াট থানার ফনিয়া এলাকার প্রফুল্ল পালের ছেলে। অপরদিকে সাড়ে ১০টার দিকে রাজেন্দ্রপুর এলাকায় ট্রাকচাপায় সাজেদুল ইসলাম নামের এক যুবক মারা যান। তিনি নওগাঁর মান্দা থানার দ্বারিয়ারপুর গ্রামের সামছুদ্দিন মোল্লার ছেলে। পুলিশ তিনটি লাশ উদ্ধার করে গাজীপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছেন।
যশোর ॥ শনিবার সকালে যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের সাতমাইলে ট্রাকের ধাক্কায় ব্র্যাক কর্মকর্তা এবং বেনাপোলের কাগজপুকুর রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী এক যুবক নিহত হয়েছেন।
নিহত ব্র্যাক কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম সদর উপজেলার ঝাউদিয়া গ্রামের জামাত আলী মোল্লার ছেলে। তিনি ব্র্যাকের চুয়াডাঙ্গা জেলার সরোজগঞ্জ প্রগতি শাখার প্রোগ্রাম অর্গানাইজার ছিলেন। জাহিদুল সকালে মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি থেকে কর্মস্থল চুয়াডাঙ্গা যাচ্ছিলেন। পথে যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের সাতমাইলে পেছন দিক থেকে দ্রুতগামী একটি ট্রাক তাকে ধাক্কা দেয়। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।
এদিকে সকালে বেনাপোলের কাগজপুকুর রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় রিকন (২২) নামে মোটরসাইকেল আরোহী এক যুবক নিহত হন। রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় খুলনা থেকে ছেড়ে আসা বেনাপোলগামী কমিউটার ট্রেন তাঁকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, এ সময় রিকন মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। রিকন বেনাপোলের আলী কদরের ছেলে।
সাভার ॥ শনিবার সকালে হেমায়েতপুর ও বলিয়ারপুরে পৃথক সড়ক দুূর্ঘটনায় এক গার্মেন্টস শ্রমিকসহ ২ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তার নাম জাকারিয়া। তিনি হেমায়েতপুরের ‘আমান নিটিংস’ নামের একটি সোয়েটার কারখানার শ্রমিক ছিলেন। সকাল ৮টার দিকে গার্মেন্টসে যাওয়ার সময় হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ডের রাস্তা পার হতে গেলে হানিফ এন্টারপ্রাইজের যাত্রীবাহী একটি বাস পিছন দিক থেকে জাকারিয়াকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। এদিকে ভোর ৬টার দিকে সাভারের বালিয়ারপুর থেকে অজ্ঞাত এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। রাতে কোন এক সময় গাড়িচাপায় সে নিহত হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
মাগুরা ॥ জেলা ক্রিকেট দলের কৃতী খেলোয়াড় কৌশিক খান (২২) শুক্রবার বিকেলে মাগুরা-যশোর সড়কের পৌর এলাকার ভিটাসাইরে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় নিহত হয়েছে। এ সময় তাঁর বন্ধু মনিরুল ইসলাম (২২) গুরুতর আহত হন। তাঁরা দু’জন মোটরসাইকেল করে মাগুরা শহরের দিকে যাওয়ার সময় বিপরীতমুখী একটি বাসের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটে। আহত মনিরুল ইসলামকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কৌশিক খান মাগুরা শহরের পারলা গ্রামের যুবদল নেতা ফরিদ খানের ছেলে। সে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পাস করেছিল। শনিবার সকালে পারলা গ্রামের নিজ বাড়িতে নামাজে জানাজা শেষে তাঁকে দাফন করা হয়।
হবিগঞ্জ ॥ শনিবার সকাল ১১টায় নবীগঞ্জ করগাও সড়কের জন্তরী গ্রামের নিকটে যাত্রীবাহী দুটি টমটমের মুখোমুখি সংঘর্ষে সাবিনা বেগম (৭) নামে এক স্কুলছাত্রী নিহত এবং ৪ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে জাহির মিয়া (৬০) ও মৌলদ মিয়াকে (২৫) নবীগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি ও অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। সাবিনা সদর ইউনিয়নের বড় আলীপুর গ্রামের মাসুক মিয়ার কন্যা।
গোপালগঞ্জ ॥ জেলায় দু’টি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২০ যাত্রী আহত হয়েছে। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে সদর উপজেলার হরিদাসপুর ব্রিজের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত মোঃ রবিউল ইসলাম (২৫) ও তার স্ত্রী কেয়া মনি (১৮), শামিমা (২৩), তানিয়া (১৮), হেনা বেগম (৫০), আঃ সামাদ (৪৭), জুয়েল (৩৮), সাজাহান (৩০), রাবেয়াকে (৫০) গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ও অন্যদের বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের অধিকাংশেরই বাড়ি খুলনা ও ফরিদপুর জেলায়।

No comments

Powered by Blogger.