ধূমপানের চেয়ে কম কিছু নয় একাকীত্বের বিপদ
বাবা মারা গিয়েছেন ক’মাসও পেরোয়নি, ঘুমের মধ্যেই চলে গেলেন আজিমপুরের মাহমুদা! অথচ আপাতদৃষ্টিতে দিব্যি সুস্থ-সবল ছিলেন। বাবাকে দেখার কেউ নেই বলে বিয়ে করেননি, চাকরিও নেননি। বাবার মৃত্যুর পরে একাই থাকতেন বাড়িতে। ডাক্তার দেখে জানালেন, বছর পঁয়তাল্লিশের ওই মহিলা ঘুমোতে ঘুমোতে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
বছর পঞ্চান্নর সালেহা বেগম স্বামী মারা যাওয়ার পরে উত্তরায় নিজের বাড়িতে একা থাকেন। দুই ছেলে-মেয়ে বিদেশে, দু’বছরে একবার বাড়ি আসেন। কিছু দিন যাবৎ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন প্রৌঢ়া। পরীক্ষায় ধরা পড়ে, ডায়াবেটিস হয়েছে, সঙ্গে হার্টের সমস্যা। ওষুধে বিশেষ কাজ দিচ্ছে না। ডাক্তারের মতে, দেখাশোনার কেউ নেই বলেই ওর এই হাল।
মাহমুদার মৃত্যু বা সালেহার অসুখ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। চিকিৎসক-মনোবিদেরা বলছেন, বেশি দিন একা থাকলে যে কেউ এ জাতীয় অসুস্থতার কবলে পড়তে পারেন। বস্তুত একাকীত্ব এখন আর শুধু রোগের উপসর্গ নয়, উৎসও। শহুরে জীবনযাত্রায় নিঃসঙ্গতার প্রভাব যত বাড়ছে, তত বাড়ছে কঠিন রোগের প্রকোপ। একাকীত্বের গায়ে এখন রীতিমতো ‘লাইফস্টাইল ডিজিজ’-এর তকমা! কী রকম?
এক মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাপত্রে প্রকাশ, যথেষ্ট ভালোবাসা বা সহানুভূতি অভাব থাকলে এবং অন্য কারও জীবনে নিজের ‘প্রয়োজনীয়তা’ অনুভব না-করলে মানুষের মনে সমস্যা দেখা দেয়। সামাজিকতা থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে, কারও সঙ্গে মানসিকভাবে যুক্ত থাকতে না-পারলে কষ্টটা বাড়তে থাকে, যা ধীরে ধীরে শরীরে প্রভাব ফেলে। এ দিকে জীবনযাত্রার গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পারিবারিক বন্ধন দিন দিন আলগা হয়ে পড়ছে। একা থাকাটা কিছু মানুষের প্রবণতা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, কিছু ক্ষেত্রে বাধ্যতা। এবং গবেষকদের দাবি, এ সব ক্ষেত্রে নিঃসঙ্গ মানুষটির রক্তচাপ বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউন সিস্টেম) দুর্বল হয়ে পড়ার সমূহ আশঙ্কা। তারা সহজে অবসাদ কিংবা ডিমেনশিয়ার (স্মৃতিভ্রংশ বা ভাবনা-চিন্তায় অসঙ্গতির মতো স্নায়বিক রোগ) শিকার হতে পারেন, এমনকি হৃদরোগেও আক্রান্ত হতে পারেন।
বস্তুত বৃদ্ধ বয়সে যারা একা থাকেন, পরিবারের সঙ্গে থাকা একই বয়সীদের তুলনায় তাদের মধ্যে হৃদ্রোগে মৃত্যুর হার অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জে ডেভিড ক্রেসওয়েলের দাবি, ধূমপানের কুপ্রভাবের তুলনায় নিঃসঙ্গতার বিপদ কোনো অংশে কম নয়। “তবু একাকীত্বের ব্যাপারটাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না।” গবেষণা-রিপোর্টে আক্ষেপ করেছেন ক্রেসওয়েল।
পশ্চিমী দুনিয়ায় না-হয় অসুখটা চেনা। এ দেশের সামাজিক গঠনের প্রেক্ষিতেও কি একাকিত্ব এতটা চিন্তার খোরাক দিতে পারে?
সমাজতত্ত্ববিদ থেকে চিকিৎসকদের অধিকাংশ মনে করছেন, সমস্যাটা এ দেশেও ক্রমে বাড়ছে। কেউ দায়ী করছেন যৌথ পরিবারের ভাঙনকে। কারো মতে, সাধারণভাবে মানুষের সম্পর্কের দায়িত্ব নেয়ার ইচ্ছে কমে গিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে অল্পবয়সীরাও কাছাকাছি কাউকে পাচ্ছেন না, যাকে নিজেদের সুবিধা-অসুবিধের কথা বলে হাল্কা হতে পারেন। এই মানসিক চাপ থেকে শারীরিক বিপদের আশঙ্কা ঘিরে শহরের চিকিৎসক, মনোবিদ, সমাজতাত্ত্বিকেরা কতটা চিন্তিত?
একজন হৃদরোগ-বিশেষজ্ঞের মতে, বিদেশের তুলনায় আমাদের সমস্যাটা আরো মারাত্মক। “কারণ, এখানে মানুষে মনোবিদের কাছে যেতেই চান না, পাছে লোকে পাগল বলে! উপরন্তু বয়স্কদের দেখাশোনার ব্যবস্থাও তেমন পোক্ত নয়।”
মাহমুদার মৃত্যু বা সালেহার অসুখ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। চিকিৎসক-মনোবিদেরা বলছেন, বেশি দিন একা থাকলে যে কেউ এ জাতীয় অসুস্থতার কবলে পড়তে পারেন। বস্তুত একাকীত্ব এখন আর শুধু রোগের উপসর্গ নয়, উৎসও। শহুরে জীবনযাত্রায় নিঃসঙ্গতার প্রভাব যত বাড়ছে, তত বাড়ছে কঠিন রোগের প্রকোপ। একাকীত্বের গায়ে এখন রীতিমতো ‘লাইফস্টাইল ডিজিজ’-এর তকমা! কী রকম?
এক মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাপত্রে প্রকাশ, যথেষ্ট ভালোবাসা বা সহানুভূতি অভাব থাকলে এবং অন্য কারও জীবনে নিজের ‘প্রয়োজনীয়তা’ অনুভব না-করলে মানুষের মনে সমস্যা দেখা দেয়। সামাজিকতা থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে, কারও সঙ্গে মানসিকভাবে যুক্ত থাকতে না-পারলে কষ্টটা বাড়তে থাকে, যা ধীরে ধীরে শরীরে প্রভাব ফেলে। এ দিকে জীবনযাত্রার গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পারিবারিক বন্ধন দিন দিন আলগা হয়ে পড়ছে। একা থাকাটা কিছু মানুষের প্রবণতা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, কিছু ক্ষেত্রে বাধ্যতা। এবং গবেষকদের দাবি, এ সব ক্ষেত্রে নিঃসঙ্গ মানুষটির রক্তচাপ বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউন সিস্টেম) দুর্বল হয়ে পড়ার সমূহ আশঙ্কা। তারা সহজে অবসাদ কিংবা ডিমেনশিয়ার (স্মৃতিভ্রংশ বা ভাবনা-চিন্তায় অসঙ্গতির মতো স্নায়বিক রোগ) শিকার হতে পারেন, এমনকি হৃদরোগেও আক্রান্ত হতে পারেন।
বস্তুত বৃদ্ধ বয়সে যারা একা থাকেন, পরিবারের সঙ্গে থাকা একই বয়সীদের তুলনায় তাদের মধ্যে হৃদ্রোগে মৃত্যুর হার অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জে ডেভিড ক্রেসওয়েলের দাবি, ধূমপানের কুপ্রভাবের তুলনায় নিঃসঙ্গতার বিপদ কোনো অংশে কম নয়। “তবু একাকীত্বের ব্যাপারটাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না।” গবেষণা-রিপোর্টে আক্ষেপ করেছেন ক্রেসওয়েল।
পশ্চিমী দুনিয়ায় না-হয় অসুখটা চেনা। এ দেশের সামাজিক গঠনের প্রেক্ষিতেও কি একাকিত্ব এতটা চিন্তার খোরাক দিতে পারে?
সমাজতত্ত্ববিদ থেকে চিকিৎসকদের অধিকাংশ মনে করছেন, সমস্যাটা এ দেশেও ক্রমে বাড়ছে। কেউ দায়ী করছেন যৌথ পরিবারের ভাঙনকে। কারো মতে, সাধারণভাবে মানুষের সম্পর্কের দায়িত্ব নেয়ার ইচ্ছে কমে গিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে অল্পবয়সীরাও কাছাকাছি কাউকে পাচ্ছেন না, যাকে নিজেদের সুবিধা-অসুবিধের কথা বলে হাল্কা হতে পারেন। এই মানসিক চাপ থেকে শারীরিক বিপদের আশঙ্কা ঘিরে শহরের চিকিৎসক, মনোবিদ, সমাজতাত্ত্বিকেরা কতটা চিন্তিত?
একজন হৃদরোগ-বিশেষজ্ঞের মতে, বিদেশের তুলনায় আমাদের সমস্যাটা আরো মারাত্মক। “কারণ, এখানে মানুষে মনোবিদের কাছে যেতেই চান না, পাছে লোকে পাগল বলে! উপরন্তু বয়স্কদের দেখাশোনার ব্যবস্থাও তেমন পোক্ত নয়।”
No comments