পাঁচ মন্ত্রীর ক্ষমতা খর্ব-নতুনদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন by আশরাফুল হক রাজীব ও মোশতাক আহমেদ
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতার দায় নিয়ে সরে যেতে হলো সাহারা খাতুনকে। প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুকে সেই দায় নিতে হলো না। বহাল তবিয়তে রয়ে গেলেন তিনি। প্রতিমন্ত্রীকে রেখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী করা হলো নবনিযুক্ত ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে।
এভাবে গতকাল শনিবার মন্ত্রিসভায় ব্যাপক রদবদলের মাধ্যমে আরো 'কাট টু সাইজ' হলেন মন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, আবুল কালাম আজাদ, ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু।
এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবার শপথ নেওয়া নতুন মন্ত্রীদের মধ্যে গতকাল দপ্তর বণ্টন করা হয়েছে। পাশাপাশি পুরনো মন্ত্রীদেরও কয়েকজনের দপ্তর বদল করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনকে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী করা হয়েছে। মন্ত্রিসভায় নবনিযুক্ত হাসানুল হক ইনুকে দেওয়া হয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। ডাক ও টেলিযোগাযোগ থেকে রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুকে সরিয়ে কম গুরুত্বের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর নবনিযুক্ত মুজিবুল হককে দেওয়া হয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। এত দিন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে রেলপথের দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবার শপথ নেওয়া মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী এবং এ এইচ মাহমুদ আলীকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী করা হয়েছে। আর ওমর ফারুক চৌধুরীকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং মো. আবদুল হাইকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের শ্রম ও কর্মস্থান মন্ত্রণালয় ছেঁটে দিয়ে তাঁকে শুধু প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তথ্য ও সংস্কৃতি- দুটি মন্ত্রণালয়েরই দায়িত্বে ছিলেন আবুল কালাম আজাদ। তাঁর কাছ থেকেও তথ্য কেড়ে নিয়ে এখন শুধু সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন হাসানুল হক ইনু। অন্যদিকে ড. আবদুর রাজ্জাকও খাদ্য এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ- এ দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর কাছ থেকেও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কেড়ে নিয়ে তাঁকে শুধু খাদ্য মন্ত্রণালয়ে রাখা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন এ এইচ মাহমুদ আলী।
গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে দায়িত্ব পুনর্বণ্টনের গেজেট জারি করা হয়েছে।
২০০৯ সালের জানুয়ারিতে বর্তমান মহাজোট সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর ২৫ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত হয় বিডিআর বিদ্রোহ। খুন করা হয় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে। এরপর রাজনৈতিক নেতাসহ একের পর এক গুমের ঘটনা ঠেকাতেই পারছিল না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বছরের শুরুতে সংঘটিত হয় সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের দাবিতে এখনো রাজপথে আন্দোলন করছেন সাংবাদিকরা। এ বছরেই রাজধানী থেকে গুম হন বিএনপির সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী। তাঁর বিষয়ে আজও কোনো সন্ধান করতে পারেনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিছুদিন আগে রাজধানীর কাঁঠালবাগানে নিজ বাসায় খুন হন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের একসময়ের এপিএস। সাংবাদিক পেটানোয় পুলিশের সঙ্গে নেমে পড়েন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর ভাই-ভাতিজারা। এমনকি প্রতিমন্ত্রী টুকু 'পুলিশ থেকে দূরে থাকার' পরামর্শ দেন। ইদানীং শয়নকক্ষে পর্যন্ত মানুষ নিরাপদ নয়। একের পর এক শয়নকক্ষে খুন-খারাবির ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ রাজধানীর মহাখালীতে নিজ বাসায় খুন হন বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নিতাই। এ ছাড়া বর্তমান সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিচেনায় দায়ের করা প্রায় সাত হাজার মামলা প্রত্যাহার করার সুপারিশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যার মূল দায়িত্বে ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। প্রত্যাহার করা এসব মামলার মধ্যে খুন, ধর্ষণ, চোখ তুলে নেওয়া, জমি জালিয়াতির মতো গুরুতর অপরাধের মামলাও ছিল। এসব কারণে অভিযোগের পর অভিযোগ উঠেছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে।
এ ছাড়া মন্ত্রী রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজুর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে নরসিংদীর পৌর মেয়র লোকমান হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার। আবুল কালাম আজাদ পেরে উঠছিলেন না দুটি মন্ত্রণালয় চালাতে। একই চিত্র ছিল ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফের ক্ষেত্রেও।
No comments