লক্কড়-ঝক্কড় বাস-মালিকদের খুঁটির জোর কোথায়?
রাজধানীতে চলাচলকারী লক্কড়-ঝক্কড় ও ত্রুটিপূর্ণ বাস ঠিকঠাক করার জন্য সরকারের বেঁধে দেওয়া তিন মাস সময় ২৭ আগস্ট অতিক্রান্ত হওয়ার পরও এ ক্ষেত্রে কোনো উন্নতি নেই। মালিকরা এখন বর্ষাকালকে সরকারি নির্দেশ না মানার অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাচ্ছেন।
বর্ষাকাল শেষ হয়ে গেলেও রাজধানীতে চলাচলকারী লক্কড়-ঝক্কড় বাসগুলো রাতারাতি নতুন রঙ ও যন্ত্রপাতি লাগিয়ে মনোহর রূপে যে আবির্ভূত হবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ এর আগেও যতবার সরকার ও বিআরটিএর পক্ষ থেকে রাজধানী থেকে ত্রুটিপূর্ণ ও ফিটনেসবিহীন বাস অপসারণের চেষ্টা হয়েছে, নানা অজুহাতে তা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ, যেমন_ ট্রাফিক পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিআরটিএ, সিটি করপোরেশন এবং বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও নাগরিক আন্দোলন এ ব্যাপারে সমন্বিত উদ্যোগ নিলে রাজধানী থেকে লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা বাস তুলে দেওয়া সম্ভব। সরকারের তরফে এ ব্যাপারে কোনো সমন্বিত উদ্যোগ বরাবরের মতো এবারও লক্ষ্য করা যায়নি। সরকার কেবল গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন, বাস মালিকদের নোটিশ দেওয়াসহ প্রশাসনিক উপায়েই সাফল্য অর্জনের চেষ্টা করে। এতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, বিআরটিএর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ট্রাফিক পুলিশের পকেট ভারী হলেও যাত্রীসাধারণের নিত্য ভোগান্তি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। বিআরটিএর হিসাবেই রাজধানীতে এখন চার হাজারের বেশি লক্কড়-ঝক্কড় বাস চলাচল করছে। সংখ্যাটি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। এ ধরনের যানবাহন নগরীর সৌন্দর্য যেমন নষ্ট করে, তেমনি নিত্য ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটিয়ে হতাহতের কারণ হয়। তাছাড়া জনবহুল রাস্তায় এসব বাস-মিনিবাস অচল হয়ে হঠাৎ যানজটের সৃষ্টি করে যাত্রীদের অশেষ কষ্টের কারণ হয়। আসলে রাজধানীর গণপরিবহনে এ কারণে নৈরাজ্য দীর্ঘকাল থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থান পেয়ে গেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছে জালের মতো বাস মালিক থেকে শুরু অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠান। তাই সরকারকে রাজধানী থেকে লক্কড়-ঝক্কড় ও ফিটনেসবিহীন বাস এবং মিনিবাস তুলে দেওয়া বা চলাচলের উপযোগী করে নামানোয় এর মালিকদের বাধ্য করার জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাস্তবায়নের সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে শুধু রাজধানী নয়, সারাদেশের সামগ্রিক গণপরিবহন ব্যবস্থায় বিরাজমান নৈরাজ্যের অবসান ঘটবে।
No comments