চোর সন্দেহে যুবক পিটিয়ে হত্যা-আইন হাতে তুলে নেওয়া রোধ করুন

আমরা প্রায়ই লক্ষ করি, দেশের বিভিন্ন স্থানে চোর-ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। একাধিক মানুষ বা একটি এলাকার মানুষ আইন হাতে তুলে নিয়ে চুরি বা ডাকাতির অভিযোগে অথবা সন্দেহে নিষ্ঠুরভাবে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করছে। শুক্রবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলারপার এলাকায় বাইসাইকেল চোর সন্দেহে


কাওসার আহমেদ নামে ১৮ বছর বয়সের এক যুবককে তথাকথিত গণপিটুনির নামে হত্যা করা হয়েছে। এ নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের শিকার কাওসারের স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, মিথ্যা অভিযোগ তুলে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। নিহত কাওসারের বাবা জানিয়েছেন, আট স্থানীয় যুবক তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে একটি রিকশার গ্যারেজে আটকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে।
সাধারণ্যে বোধগম্য নয়, এই সুনির্দিষ্ট অপরাধ কী করে গণপিটুনি হতে পারে। এর আগে গত বছরের ১৮ জুলাই শবেবরাতের রাতে রাজধানী ঢাকার অদূরে আমিনবাজারে ছয় ছাত্রকে ডাকাত সন্দেহে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সে হত্যাকাণ্ড সারা দেশের মানুষকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। এরপর নরসিংদী সদর উপজেলায় তিনজনকে ডাকাতির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায়ই দেখা যায় এমন গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনা।
দেশে আইনের শাসনের অভাব রয়েছে বটে; কিন্তু তাই বলে আইন হাতে তুলে নেওয়া চরম শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কেউ সত্যিকার চুরি বা ডাকাতি করে থাকলে তাকে আইনের হাতে তুলে দেওয়াই একজন নাগরিকের কাজ। যত বড় অপরাধী হোক, একজন ব্যক্তিকে বিচারের বাইরে শারীরিকভাবে নির্যাতন করার অধিকার কারো নেই। সাধারণত দেখা যায়, গণপিটুনির নামে যে হত্যাকাণ্ড ঘটে তা বিচারিক ক্ষেত্রে অনেকটা জটিল হয়ে পড়ে এবং সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে দোষী প্রমাণ না করতে পারায় প্রকৃত দোষী পার পেয়ে যায়। এমন অবস্থায় শুধু চোর-ডাকাত নয়, ব্যক্তিগত শত্রুতা চরিতার্থ করতে গিয়ে চোর-ডাকাত আখ্যা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগও পাওয়া যায়। যে ঘটনা যাত্রাবাড়ীর এই হতভাগ্য যুবকের বেলায় ঘটেছে। এ ধরনের সব ঘটনার যথাযথ বিচার ও প্রকৃত অন্যায়কারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে একদিকে যেমন আইনের শাসনের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাবে, অন্যদিকে নিরীহ-নিরপরাধ মানুষের ওপর চুরি-ডাকাতির অপবাদ দিয়ে হত্যা করার ঘটনা বৃদ্ধি পাবে। তবে এটা স্পষ্ট যে আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হলে এ ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনার পরিমাণ কমে যেতে বাধ্য। সেই সঙ্গে দেশের জনগণের মধ্যে একটা সচেতনতা প্রয়োজন। চোর বা ডাকাত বলে কাউকে জোটবেঁধে প্রহার করা হচ্ছে দেখলেই সেখানে গিয়ে অংশগ্রহণ করার সংস্কৃতিও পাল্টাতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকারের সংস্থাগুলোকে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে এবং জনগণেরও আইনের প্রতি আস্থা রাখতে হবে। শান্তিপ্রিয় জনতা এ ধরনের হত্যাকাণ্ড আর দেখতে চায় না।

No comments

Powered by Blogger.