মেয়ে! হাত বাড়ানোর আগে বন্ধুকে চিনে নাও by ফিরোজ শিবলী

বন্ধুত্ব একটি সর্বজনীন ব্যাপার। মনের ও মানসিকতার মিল থাকলে যে কেউ বন্ধু হতে পারে। কথাটি সত্য, কিন্তু পরিবর্তিত বর্তমান সময়ে বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক না হলে বন্ধু রূপধারী কিছু দুষ্ট কীটের কাছ থেকে দুঃখ পাওয়া ছাড়া কিছুই থাকে না। এসব মুখোশধারী বন্ধুর প্রতারণার শিকার হয়ে অনেকে আত্মহননের পথও বেছে নিয়েছেন।


প্রতিনিয়ত মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন অনেকে।
একসময় বন্ধুত্ব শুধু ছেলেদের সঙ্গে ছেলেদের , মেয়েদের সঙ্গে মেয়েদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ছেলে আর মেয়েদের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল না। এখন সময় পাল্টেছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ কাজের ক্ষেত্রে ছেলে আর মেয়েদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠছে। কিন্তু একশ্রেণীর নোংরা মনমানসিকতার বন্ধু মুখোশধারী কিছু তরুণ মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। মেয়েরাও হাত বাড়িয়ে দেয় সরল বিশ্বাসে। মেয়েটির অজান্তে মেলামেশার কিছু দৃশ্য ছবি ও ভিডিও করে রাখে। ট্রাম্পকার্ড হিসেবে ব্যবহার করা হয় ছবি ও ভিডিওগুলো। যখনই নিজের স্বার্থ হাসিল হয় না, তখনই ছবিগুলো ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় মেয়েটিকে। অনন্যপায় হয়ে মেয়েরা পরিবারকে জানাতে বাধ্য হয়। পরিবারকেও হুমকি দেওয়া হয় প্রকাশ্যে। দাবি করে লাখ লাখ টাকা। চাহিদামতো টাকা না দিলে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি। বাধ্য হয়ে অনেক পরিবার নীরবে টাকা দেয় বন্ধু নামধারী দুষ্ট কীটগুলোকে। অনেকে পুলিশের হাতে ধরাও পড়েছে। এই হলো বর্তমান সমাজে বন্ধুত্বের চিত্র।
প্রতারণার শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রী সমকালকে বলেন, 'বন্ধুত্ব এমন সম্পর্ক যেখানে বিশ্বাসই বড়। সে বিশ্বাস নিয়ে খেলা করছে কিছু প্রতারক। ছবি সংগ্রহ করে তা এডিট করে নগ্ন ছবি প্রকাশের হুমকি দিয়ে আসছে। নিজের ও পরিবারের সম্মানের কথা ভেবে আত্মহত্যার পথও বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু মরলেও তাদের শাস্তি দেখে যেতে চাই।'
সরল বিশ্বাসে মেয়েরা ছেলে বন্ধু ও সহপাঠীর সঙ্গে মিশছে। অনেক সময় বন্ধুরা সবাই মিলে কিংবা দু'জন কোথাও ক্লাসের ফাঁকে বেড়াতে যাচ্ছে। আড্ডায় হয়তো এ ওর পাশে বসছে, হাত ধরছে, সেসব ছবিই উদ্দেশ্যমূলকভাবে তুলে রাখছে। আবার গোপনে মেয়ে বন্ধুটির কিছু ছবি ভিডিও করে রাখছে ছেলে বন্ধুরা। পরে ওই ছবিগুলো দিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে মেয়েটির সঙ্গে। কলেজছাত্রী শান্তা আচার্য। তার ফেসবুকে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই। কিন্তু তার নামে কে বা কারা ফেসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে বিভিন্ন জনকে মেসেজ দিচ্ছে। এমনকি তার ছবিও ব্যবহার করা হয়েছে ওই ফেসবুকে। যখন পরিচিতরা বলে শান্তা তোমার মেসেজ পেয়েছি, তখন খুবই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় শান্তাকে। আবার অনেকে ফোন করেও বিরক্ত করে। শান্তা কিছু না করলেও তার পরিচিত কেউ এ কাজ করেছে বলে তার ধারণা। শান্তার মতো শত শত মেয়েকে বন্ধুত্বের মুখোশধারী দুষ্টলোকের পাল্লায় পড়তে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
বন্ধু খুব আপনজন। বন্ধু ছাড়া মানুষ চলতে পারে না। কিন্তু বর্তমান সময়ে বন্ধুত্বের নামে এমন যখন প্রতারণা চলছে, তখন বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক হতেই হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. ওবায়দুল করিম বলেন, 'বন্ধু সে ছেলে হোক বা মেয়ে হোক তার প্রভাব মানুষের জীবনে পড়বে। একজন মাদকাসক্ত বন্ধুর বন্ধুরাও মাদকাসক্ত হবে। এ জন্য বন্ধুত্ব করার আগে ভালোভাবে খোঁজ-খবর নিয়ে বন্ধুত্ব করা দরকার। মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে বন্ধুবৎসল। বন্ধু ছাড়া মানুষ চলতে পারে না। জীবনকে সুন্দরভাবে সাজাতে ভালো বন্ধুর সাহচর্যে থাকা প্রয়োজন।' একই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, 'একজন ভালো বন্ধু মানুষের মনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই বন্ধুত্ব নির্বাচনে সতর্ক হওয়া উচিত সবার। তা ছাড়া বন্ধুত্বের সম্পর্কের মধ্যে একটা নির্দিস্ট দুরত্ব বজায় রাখা উচিত, বিশেষ করে ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে। '
মুখোসধারী বন্ধুর প্রতারণার কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হলো :
কেস স্টাডি-১ : আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম ক্যাম্পাসের এলএলবি অনার্সের এক ছাত্রীর সঙ্গে ছয় মাস আগে পরিচয় হয় নগরীর আগ্রাবাদ এলাকার জাকির হোসেন হৃদয় (২২) নামে এক যুবকের। পরিচয়ের পর তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। দু'জনে বিভিন্ন জায়গায়ও যায় ঘুরতে। এরই মধ্যে গোপনে ওই ছাত্রীটির ছবি ও ভিডিও তুলে রাখে হৃদয়। প্রযুক্তির মাধ্যমে ছবি ও ভিডিও এডিট করে ছাত্রীটির মুখ ঠিক রেখে নগ্ন ছবি লাগিয়ে দেয়। পরে ছাত্রীটিকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। তাতে সাড়া না দেওয়ায় ক্যাম্পাসে ও ইন্টারনেটে ওই নগ্ন ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় হৃদয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে পথ আটকে প্রস্তাবে রাজি না হলে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়। ছাত্রীটি রাজি না হওয়ায় তার বাবা ও মাকেও হুমকি দেয় তাকে রাজি করাতে। ওই ছাত্রীটি বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০০০ (সংশোধিত) ৩-এর ১০/৩০ যৌন নিপীড়ন ও সহায়তায় হৃদয় এবং তার অজ্ঞাত পরিচয় বন্ধুদের বিরুদ্ধে পাহাড়তলী থানায় মামলা করেন। পরে পুলিশ হৃদয়কে গ্রেফতার করে।
কেস স্টাডি-২ :বন্ধুত্বের পর দুই তরুণীর ছবি ও ভিডিওচিত্র ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে দুই বন্ধুকে গ্রেফতার করে পুলিশ গত ৭ জুলাই। তারা হলো রাসু বড়ূয়া (২৭) ও শাহ আজিজ (২৫)। নগরীর সিজিএস কলোনি নাসিরাবাদ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে র‌্যাব-৭।
কেস স্ট্যাডি-৩ :কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়পড়ূয়া মেয়েদের সঙ্গে প্রথমে ভালো সেজে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে রাশেদুল হাসান নামে এক যুবক। বন্ধুত্বের পর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। একপর্যায়ে মেয়েদের ফুসলিয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে তা ভিডিও করে মেয়ের অভিভাবকের কাছ থেকে টাকা আদায় করে। টাকা না পেলে সিডি করে তা বাজারজাত করে। ছেলেটির কাছ থেকে এ ধরনের কিছু সিডি উদ্ধার করে পুলিশ। হ

No comments

Powered by Blogger.