চরাচর-শেকড় সন্ধানের পরিক্রমায় by মো. মুজিবুর রহমান
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল গাজীপুরেও। কালীগঞ্জ উপজেলার তেমনি একটি স্মৃতিবহুল স্থান ঘুরে এল মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী প্রজন্মের ১০ অনুসন্ধিৎসু তরুণ-তরুণী। তারা ওই স্থানের অধিবাসীদের মুখে শুনে এল পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের সেই বর্বরতার কাহিনী।
একাত্তরের ১ ডিসেম্বর বুধবার কালীগঞ্জের খলাপাড়া গ্রামে পাকিস্তানি বাহিনী তাণ্ডবলীলা চালিয়েছিল প্রায় সারা দিন। ওই গ্রামে একেবারে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত ন্যাশনাল জুট মিল। গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে সুদেব চন্দ্র গোপ ও বাসুদেব চন্দ্র গোপের বাবা সাম চন্দ্র গোপকে হত্যা করে ওই ন্যাশনাল জুটমিলে প্রবেশ করে সকাল ৮টা নাগাদ পাকিস্তানিরা শ্রমিকদের আবাসস্থল টিনশেডে ও তাদের ক্লাব ঘরে আগুন দেয়। আবাসস্থলে প্রবেশ করে অফিসারদের বের করে নিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। এ অফিসাররা ছাড়া পেয়ে মিলের আবাসস্থল ছেড়ে চলে যাওয়া মনস্থির করে। সন্ধ্যার কাছাকাছি সময় আবার আবাসিক কলোনি থেকে প্রায় ১১০ অফিসারকে ডেকে নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী ব্রাশফায়ার করে নির্মমভাবে হত্যা করে। লাইনে সারিবদ্ধ অবস্থায় গুলিতে আহত হয়ে তিনজন বেঁচে যান। তাঁরা ছিলেন গণেশচন্দ্র দেবনাথ, আবদুর রহমান ও নিজাম উদ্দিন। গুলিতে আহত হয়ে পড়ে ছিলেন ও ৪০ মিনিট বেঁচেও ছিলেন, এমন এক জুনিয়র অফিসার আহসান উল্লাহ। আহতাবস্থায় তিনি তাঁর স্ত্রী নূরজাহান ও সন্তানদের সঙ্গে কথাও বলে গিয়েছিলেন। তিনি পরে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর ছোট ভাই জীবিত ছিলেন। তিনি গোডাউন ঘরে আত্মগোপন করে নিজের জীবন রক্ষা করেন। শহীদ আহসান উল্লাহকে কবর দেওয়া হয়েছিল খলাপাড়া গ্রাম থেকে একটু দূরে ভাওয়াল জামালপুরে। ওখানে আরেকজন অফিসার শহীদ আবু তালেবকে কবর দেওয়া হয়। আরো কয়েকজনকে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে কবর দেওয়া হয়। আবার কয়েকজনের লাশ তাঁদের নিজস্ব গ্রামে নিয়ে সমাধিস্থ করা হয়। অন্য শহীদদের মিলের পাশেই গণকবর দেওয়া হয়েছিল। তবে গণকবরে বা বধ্যভূমির পাশে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। প্রতিবছর সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় শহীদদের প্রতি। ন্যাশনাল জুটমিলে অসংখ্য অফিসার ও স্টাফ শহীদ হলেন। ওই মিলের নিরাপত্তা অফিসার আব্বাস উদ্দিন পাকিস্তানি বাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছিল। যাঁদের আত্মহত্যা আজকের অর্জিত দেশ_সে রকম এক পরিবারের সঙ্গে পরিচিত হয়ে এ প্রজন্মের প্রতিনিধি এক দলের প্রত্যেকের ভেতরে যে অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছিল তা আজকের প্রজন্মকে শেকড় সন্ধানের পরিক্রমায় অনুপ্রাণিত করবে।
মো. মুজিবুর রহমান
মো. মুজিবুর রহমান
No comments