বিরোধী দলের বাজেট প্রস্তাবনা-সংসদে এসেও বলুন
সংসদের ফ্লোরেই গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ১ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ও উন্নয়ন বাজেট পেশ করেছেন। বাজেট পেশের সময় প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং তাদের মিত্ররা অধিবেশনকক্ষে অনুপস্থিত ছিল।
বাজেট পেশের সময় উপস্থিত না থাকলেও বিএনপির পক্ষ থেকে বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে 'মানুষ, উন্নয়ন ও উৎপাদনের জন্য' বাজেট প্রত্যাশা ব্যক্ত করে কিছু প্রস্তাবনা সরকারের কাছে উপস্থিত করেছে। এতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ভৌত অবকাঠামো খাতকে অধিকতর গুরুত্ব প্রদান এবং সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম জোরদার, ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা দ্বিগুণ করা, কিছু ক্ষেত্রে ভ্যাটের আওতা কমানো কিংবা প্রত্যাহার, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার যৌক্তিক করা এবং উৎসে কর প্রত্যাহার, বস্ত্র খাতে নগদ সহায়তা ৮ শতাংশ করা, বিনা সুদের প্রবাসীদের জন্য ঋণ প্রদানসহ বিভিন্ন প্রস্তাব-সুপারিশ রয়েছে। এ ছাড়াও রাজস্ব বাজেটের তুলনায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার কম রাখা, শেয়ারবাজারে বিপর্যয়, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা ইত্যাদি ইস্যুতে সরকারের কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে। বিএনপি কয়েক দফায় ক্ষমতাসীন ছিল। সরকারের ক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে তাদের ধারণা স্পষ্ট হওয়াই স্বাভাবিক। আমাদের দেশে সরকার যা যা অঙ্গীকার করে তার সবটা রক্ষা করে না। আবার বিরোধী দলে থেকে যা প্রত্যাশা করা হয়, ক্ষমতায় গেলে তার সবটা পূরণ করাও সম্ভব নয়। সরকার এবং প্রধান বিরোধী দল বিএনপির বাজেট সম্পর্কেও একই কথা বলা চলে। দুই পক্ষের বক্তব্যেই কিছু যৌক্তিক বিষয় রয়েছে, আবার রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য এমন কিছু দাবি-প্রস্তাব রয়েছে, যার কতটা বাস্তবায়ন করা যাবে সে বিষয়ে এর প্রণেতাদের মধ্যেই যথেষ্ট সংশয়। তবে সংসদে এসব বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হলে দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি ভালো বাজেট প্রণীত হতে পারে বলেই আমরা মনে করি। বিএনপির বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপনার দিনে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'বিরোধীদলীয় নেতা তার বাজেট ভাবনা সংসদে এসে বললে অর্থমন্ত্রী তা থেকে কিছু গ্রহণ করতে পারতেন।' এ মনোভাব ইতিবাচক এবং বাজেট পেশের সময় উপস্থিত না থাকলেও বিরোধী দল এ অধিবেশনে যোগদান করে তাদের বক্তব্য রাখবে বলে আমরা আশা করব। তবে তারা না এলেও বিরোধী দলের যৌক্তিক দাবি ও প্রস্তাব গ্রহণ করে নিতে অর্থমন্ত্রীর কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়। বাজেট সম্পর্কে প্রস্তাব কেবল সংসদ সদস্যরাই দেবেন, এমন কথা নেই। সমাজের যে কোনো পর্যায় থেকেই এ বিষয়ে বক্তব্য আসতে পারে এবং তা বিবেচনার মনোভাব সরকারের থাকতে হয়। বিরোধী দলের প্রস্তাব-সুপারিশে সরকারের ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব থাকে, কিন্তু আয়ের বিষয়টি অনুলি্লখিত কিংবা কর-শুল্ক কমানোর এমন সব প্রস্তাব থাকে, যা বরং আয় কমিয়ে দেয়। সংসদে আলোচনা হলে এসব বিষয়ও স্পষ্ট হতে পারে। এ প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে বিরোধী দল তাদের অনমনীয় মনোভাব পরিবর্তন করবে এবং সরকার পক্ষও বিরোধী দলকে সংসদে আনার জন্য নিরন্তর চেষ্টা রাখবে_ এটাই কাম্য। বিএনপি দাবি করেছে, দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। তাদের এ বক্তব্য নিয়ে মতপার্থক্য থাকতেই পারে। তবে অর্থনীতির চিত্র নাজুক, এমন মত যদি তাদের থেকেই থাকে তবে তাদের তরফে হরতাল-অবরোধসহ এমন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি যেন না দেওয়া হয়, যাতে এ পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে। এর পরিবর্তে বরং অর্থনীতির ভিত মজবুত করায় সম্মিলিত উদ্যোগই প্রত্যাশিত এবং তা আসতে পারে সংসদের ফ্লোর থেকেই।
No comments