সমুদ্রসৈকত রক্ষায় হাইকোর্ট-প্রশাসনের দায়িত্বশীলতা কোথায়?
এবার কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত রক্ষায় আদালতকে সামনে এগিয়ে আসতে হলো। এসব দেখভালের দায়িত্ব যাদের ওপর বিধিসম্মতভাবেই অর্পণ করা আছে, সেই প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা যখন কর্তাভজা মনোভাব নিয়ে কুম্ভকর্ণের মতো আচরণ করছেন তখন দেশের উচ্চ ন্যায়ালয়কেই জনস্বার্থ ও পরিবেশ স্বার্থের পক্ষে দাঁড়াতে হয়েছে।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে সব স্থায়ী ও অস্থায়ী স্থাপনা আগামী ৩০ দিনের মধ্যে অপসারণে হাইকোর্টের গত মঙ্গলবারের নির্দেশটি জনস্বার্থে উচ্চ আদালতের সক্রিয়তাকেই নির্দেশ করে। নির্দেশনা অনুযায়ী প্রশাসন কতটুকু দায়িত্ব সম্পাদন করতে পেরেছে তা আগামী ৪০ দিনের মধ্যে আদালতকে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। কিন্তু আদালতের নির্দেশনা আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি-না এ নিয়ে আমাদের প্রশাসনের মনমর্জির খবর যারা রাখেন তাদের পক্ষে নিঃসন্দেহ হওয়া সম্ভব নয়। কারণ এর আগে আদালত শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, বুড়িগঙ্গাসহ বেশ কয়েকটি নদী, মহাস্থানগড়সহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শনের স্থানগুলো রক্ষা, দখলমুক্ত করার জন্য আদেশ জারি করেছিলেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আদেশ বাস্তবায়নের সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কয়েকটি ক্ষেত্র ছাড়া অধিকাংশই প্রশাসন লোক দেখানো কাজ করা ছাড়া উচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়নের চেষ্টা করেনি। কতক ক্ষেত্রে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিদের আদালতে তলব করেও দেখা গেছে, তারা চোখ-কান বন্ধ করে চলতেই অভ্যস্ত। ভাবখানা এমন, এ আদালত যত পারে নির্দেশনা দিক, আমরা হাঁ-হুঁ করেই দায়িত্ব সারব আর যেটা করার অর্থাৎ নিশ্চেষ্ট থেকে অবৈধ দখলদার ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটকারীদের অনৈতিক এবং জনস্বার্থবিরোধী কাজে আশকারা দিয়ে যাব। রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে জনস্বার্থ বিবেচনার মতো মানসিকতা লোপ পেতে থাকলে এ ধরনের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। কেউ কেউ আদালতের জনস্বার্থে অধিকমাত্রায় সক্রিয় হওয়াকে সমীচীন মনে নাও করতে পারেন। কিন্তু প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব যখন চোখ থাকতে অন্ধ সাজার ভান করে এবং নিজেদের ওপর জনগণ ও জাতীয় স্বার্থ দেখার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় তখন শেষ ভরসাস্থল হিসেবে আদালতকেই বারবার সামনে এগিয়ে আসতে হয়, রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রশাসনের ওপর অর্পিত দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই। আমরা উচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনে নির্ধারিত ৪০ দিনের সময়সীমার মধ্যেই কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও নির্মাণ বন্ধের ব্যবস্থা করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই। তবে বিভাগীয় এবং প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে আদালতের নির্দেশনা বাস্তাবায়ন পর্যবেক্ষণ করার প্রয়োজন রয়েছে।
No comments