মাঠে আজ মধূৎসব by রণজিৎ বিশ্বাস
ঘৃত, মধু, শর্করা, দধি ও দুগ্ধ। উপকরণের এই পঞ্চসম্পৃক্তি নিয়ে অসামান্য স্বাদু নিয়ে যে বস্তু তৈরি, তার নাম মধুপর্ক। আজ মধুপর্কস্বাদের যে ম্যাচ দেখার জন্য আমরা রক্তের রেণুতেরেণুতে, অস্থির মজ্জায়মজ্জায় ও স্নায়ুর নিউরনেনিউরনে আগ্রহের ব্যগ্রতা নিয়ে অপেক্ষা করছি, সে ম্যাচের অনেক মাত্রা। সে ম্যাচ ক্রিকেটের হয়েও ক্রিকেটের বাড়া কিছু।
ম্যাচটি টুর্নামেন্টের অংশ; কিন্তু এর আকর্ষণে আর সব ম্যাচের মতো কোনো হারাহারি ভাগ থাকছে না। এশিয়া কাপ ২০১২-এর সাত ম্যাচের পঞ্চম এই রণদ্বৈরথের দুই দণ্ডনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি নামের ঝাড়খণ্ডী ও মিসবাহ-উল-হক নামের জবরদস্ত পাকিস্তানি নিজ নিজ সহযোদ্ধাদের নিয়ে আমাদের পাতে দেওয়ার জন্য মাঠে নামবেন, এক অভিধায় তার নাম হতে পারে ‘পঞ্চব্যঞ্জনের পরিতোষ’।
এমন ওদের বেলাতেই কেন হয়, আর সবার বেলায় কেন নয়—এ প্রশ্ন পুরোনো। তার পরও অনুসন্ধানের কাঙ্ক্ষা বারবার বলে—সন্ধিৎসু হ তুই সন্ধিৎসু হ!
প্রথম কারণ, পাকিস্তান ও ভারতের বেলায় যেমন হয়, ক্রিকেটের ভুবনে ঐতিহ্যের লড়াই আরও থাকার পরও, আর কোনো কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীজোড়ের মধ্যে তেমন কড়া পাকের হয় না। ক্রিকেটের বাইরে, সংসারের সব বিষয়ে ওরা যখন জন্মসঙ্গী হওয়ার পাশাপাশি জন্মপ্রতিদ্বন্দ্বী, ক্রিকেটে তার আর রহিত থাকে কেন! এক দেশের প্রস্তাবনায় আরেক দেশ, ভারতের সুপারিশে পাকিস্তান, ১৯৫২ সালে, বিশ্বক্রিকেটের সর্বালোকিত ভুবন টেস্ট পরিবারে ঢোকার পর থেকে দর্শকদের কাছে এই সত্য বড় প্রবলভাবে প্রকট, সংসারের আর সবার সঙ্গে ওদের লড়াইয়ের মেজাজ আর চরিত্রচারিত্র্য এক রকম, এক পক্ষ আরেক পক্ষকে মুখোমুখি পেলে হয়ে যায় অন্য রকম। তখন ওরা ক্রিকেটের গান বাঁধে ভিন্ন এক লিপিতেস্বরলিপিতে।
এর মধ্যে নিরেট ক্রিকেট-প্রতিদ্বন্দ্বিতার উপকরণ ছাড়া অক্রিকেটীয় কিছু উপকরণও মাত্রায়মাত্রায় যুক্ত হয়। এসব উপকরণের যুক্তিসংযুক্তি গ্যালারি ও গ্যালারির বাইরের দর্শক ও ক্রিকেটের ভক্ত ও ভোক্তাদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। তৃতীয় দেশ বাংলাদেশের দর্শকদের মধ্যেও। সবকিছু মিলিয়ে উপভোগের একটা মধূৎসব তৈরি হয়।
এ উৎসবে যারা ভাগ নেয়, তাদের উন্মাদনায় কখনো কখনো যে কেমন অভাবনীয় ও কৌতুককর ঘটনা তৈরি হয়, তার একটি সাক্ষী লেখক নিজে। ১৯৭৯ সালে সতেরো বছর পর ভারত-পাকিস্তান টেস্ট সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের সিরিজে, এক ম্যাচে, পাকিস্তানের জেতার মুহূর্তে ভারতের একজন বোলার ‘নেগেটিভ বোলিং’ করছিলেন। ঠিক ওয়াইড ডেলিভারিও নয়, আবার ব্যাটসম্যানের জন্য জুত-এরও নয়। রেডিওতে খেলা শুনছিল এমন দুই বন্ধু, যাদের একজন ভারতের, অন্যজন পাকিস্তানের এমন সাপোর্টার যে তেমন সাপোর্টার ভূভারত ও পাকমুলুকে তখন ছিল না, এখনো সম্ভবত পয়দা হয়নি। পাকিস্তানের সাপোর্টার সহসা ভারতের সাপোর্টারের চোয়াল বরাবর ধাঁ করে মেরে দিল এক ঘুষি, সঙ্গে জগৎসংসারের সবচেয়ে ‘অকাট্য’ ও অতিগুরুতর অভিযোগ: ‘অই ব্যাটা, স্টাম্পের বাইরে বল ফেকিস কেন?!’ ক্রিকেটের অনেক কিছু স্মৃতিছুট হওয়ার পরও এটি এখনো লেগে আছে মনের সঙ্গে।
পাকিস্তান ও ভারতকে নিয়ে, তাদের ক্রিকেটকে নিয়ে, মূলত মনেমনে এমন ক্রোধের ও উদ্বাহুপ্রার্থনার বোধ যে দেশে বসেছে ক্রিকেটের এশীয় শিরোপার একাদশ আসর, সে দেশের দর্শককুলে এখনো জাগরূক। হয়তো কারও কারও বেলায় কিছুটা শীলনপরিশীলন হয়েছে, কারও কারও বেলায় কিছুটা ছদ্মাবরণ এসেছে, তবে ছবিটা এখনো অনেকটা তেমনই থাকতে চাইছে। খেলা উপভোগের জন্য একটা পক্ষে সমর্থন যে জুড়তেই হয়, এটি তার অতিরিক্ত।
এই বোধ নিয়ে বাইশ গজের যে রণচাতাল আমরা সামনে রাখব, তাতে আজ স্নায়ুর খেলা হবে, মেধার খেলা হবে এবং ব্যাট ও বলের খেলার সঙ্গে সঙ্গে অঙ্গীকার সংকল্প ও প্রতিশ্রুতির মজবুতির খেলা হবে। যদি পাকিস্তান জেতে, তারা ফাইনালে যাবে সবার শিরে বসে, যদি তার উল্টো হয়, ভারতের ফাইনাল-সম্ভাবনা ভেস্তে যাবে না।
তার পরও মানের ও সম্মানের লড়াইয়ে সবাই সবকিছুই করবে, আপস ছাড়া।
এমন ওদের বেলাতেই কেন হয়, আর সবার বেলায় কেন নয়—এ প্রশ্ন পুরোনো। তার পরও অনুসন্ধানের কাঙ্ক্ষা বারবার বলে—সন্ধিৎসু হ তুই সন্ধিৎসু হ!
প্রথম কারণ, পাকিস্তান ও ভারতের বেলায় যেমন হয়, ক্রিকেটের ভুবনে ঐতিহ্যের লড়াই আরও থাকার পরও, আর কোনো কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীজোড়ের মধ্যে তেমন কড়া পাকের হয় না। ক্রিকেটের বাইরে, সংসারের সব বিষয়ে ওরা যখন জন্মসঙ্গী হওয়ার পাশাপাশি জন্মপ্রতিদ্বন্দ্বী, ক্রিকেটে তার আর রহিত থাকে কেন! এক দেশের প্রস্তাবনায় আরেক দেশ, ভারতের সুপারিশে পাকিস্তান, ১৯৫২ সালে, বিশ্বক্রিকেটের সর্বালোকিত ভুবন টেস্ট পরিবারে ঢোকার পর থেকে দর্শকদের কাছে এই সত্য বড় প্রবলভাবে প্রকট, সংসারের আর সবার সঙ্গে ওদের লড়াইয়ের মেজাজ আর চরিত্রচারিত্র্য এক রকম, এক পক্ষ আরেক পক্ষকে মুখোমুখি পেলে হয়ে যায় অন্য রকম। তখন ওরা ক্রিকেটের গান বাঁধে ভিন্ন এক লিপিতেস্বরলিপিতে।
এর মধ্যে নিরেট ক্রিকেট-প্রতিদ্বন্দ্বিতার উপকরণ ছাড়া অক্রিকেটীয় কিছু উপকরণও মাত্রায়মাত্রায় যুক্ত হয়। এসব উপকরণের যুক্তিসংযুক্তি গ্যালারি ও গ্যালারির বাইরের দর্শক ও ক্রিকেটের ভক্ত ও ভোক্তাদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। তৃতীয় দেশ বাংলাদেশের দর্শকদের মধ্যেও। সবকিছু মিলিয়ে উপভোগের একটা মধূৎসব তৈরি হয়।
এ উৎসবে যারা ভাগ নেয়, তাদের উন্মাদনায় কখনো কখনো যে কেমন অভাবনীয় ও কৌতুককর ঘটনা তৈরি হয়, তার একটি সাক্ষী লেখক নিজে। ১৯৭৯ সালে সতেরো বছর পর ভারত-পাকিস্তান টেস্ট সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের সিরিজে, এক ম্যাচে, পাকিস্তানের জেতার মুহূর্তে ভারতের একজন বোলার ‘নেগেটিভ বোলিং’ করছিলেন। ঠিক ওয়াইড ডেলিভারিও নয়, আবার ব্যাটসম্যানের জন্য জুত-এরও নয়। রেডিওতে খেলা শুনছিল এমন দুই বন্ধু, যাদের একজন ভারতের, অন্যজন পাকিস্তানের এমন সাপোর্টার যে তেমন সাপোর্টার ভূভারত ও পাকমুলুকে তখন ছিল না, এখনো সম্ভবত পয়দা হয়নি। পাকিস্তানের সাপোর্টার সহসা ভারতের সাপোর্টারের চোয়াল বরাবর ধাঁ করে মেরে দিল এক ঘুষি, সঙ্গে জগৎসংসারের সবচেয়ে ‘অকাট্য’ ও অতিগুরুতর অভিযোগ: ‘অই ব্যাটা, স্টাম্পের বাইরে বল ফেকিস কেন?!’ ক্রিকেটের অনেক কিছু স্মৃতিছুট হওয়ার পরও এটি এখনো লেগে আছে মনের সঙ্গে।
পাকিস্তান ও ভারতকে নিয়ে, তাদের ক্রিকেটকে নিয়ে, মূলত মনেমনে এমন ক্রোধের ও উদ্বাহুপ্রার্থনার বোধ যে দেশে বসেছে ক্রিকেটের এশীয় শিরোপার একাদশ আসর, সে দেশের দর্শককুলে এখনো জাগরূক। হয়তো কারও কারও বেলায় কিছুটা শীলনপরিশীলন হয়েছে, কারও কারও বেলায় কিছুটা ছদ্মাবরণ এসেছে, তবে ছবিটা এখনো অনেকটা তেমনই থাকতে চাইছে। খেলা উপভোগের জন্য একটা পক্ষে সমর্থন যে জুড়তেই হয়, এটি তার অতিরিক্ত।
এই বোধ নিয়ে বাইশ গজের যে রণচাতাল আমরা সামনে রাখব, তাতে আজ স্নায়ুর খেলা হবে, মেধার খেলা হবে এবং ব্যাট ও বলের খেলার সঙ্গে সঙ্গে অঙ্গীকার সংকল্প ও প্রতিশ্রুতির মজবুতির খেলা হবে। যদি পাকিস্তান জেতে, তারা ফাইনালে যাবে সবার শিরে বসে, যদি তার উল্টো হয়, ভারতের ফাইনাল-সম্ভাবনা ভেস্তে যাবে না।
তার পরও মানের ও সম্মানের লড়াইয়ে সবাই সবকিছুই করবে, আপস ছাড়া।
No comments