বিশেষ সাক্ষাৎকার-সমুদ্রের এই অর্জন সতর্কভাবে রক্ষা করতে হবে by এম হাবিবুর রহমান
জার্মানির ম্যাক্স-প্ল্যাংক ইনস্টিটিউটের ভিজিটিং স্কলার এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের অধ্যাপক ড. এম হাবিবুর রহমানের জন্ম ১৯৪৬ সালে, বগুড়ার ধুনট উপজেলার বানিয়াগাতি গ্রামে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতকোত্তর ও আইনে স্নাতক এবং ইংল্যান্ডের ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলএম (গবেষণা) অর্জন করেন।
তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সমুদ্রসীমা নির্ধারণবিষয়ক আইন। ১৯৭০ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৯৮ সালে ভারতের ন্যাশনাল স্কুল অব ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে গভীর সমুদ্রে খনিজ আহরণ বিষয়ে পিএইচডি করেন। জার্মানির ম্যাক্স-প্ল্যাংক ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড কমপ্যারাটিভ ল তাঁকে সেখানকার সর্বোচ্চ গবেষণায় নিয়োজিত প্রথম বাঙালি হিসেবে অভিষিক্ত করে। ৭০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক জার্নালে তাঁর প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বর্তমানে আকাশ ও মহাকাশসম্পর্কিত আইন এবং সম্পদসম্পর্কিত আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ে গবেষণায় নিয়োজিত।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফারুক ওয়াসিফ
প্রথম আলো সমুদ্রসীমা নিয়ে বঙ্গোপসাগরের পূর্ব ও পশ্চিম উভয় সীমান্তেই বিবাদ ছিল আমাদের। এখন ইটলসের রায়ে পূর্ব সীমান্তে একধরনের মীমাংসা হলো। এই রায়ে কি সেই ন্যায়পরায়ণতার প্রতিফলন দেখতে পান?
এম হাবিবুর রহমান প্রথমত, আমার অনুভূতি আনন্দের। ইটলসের শুনানিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে সমুদ্রসীমান্ত নির্দিষ্ট হয়ে গেছে। মিয়ানমার যেভাবে সীমান্তের দাবি তুলেছিল, তার সাপেক্ষে বাংলাদেশের দাবি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আমাদের দাবি মৌলিকভাবে ন্যায়পরায়ণই ছিল। আদালতের রায়েও সেটা স্বীকৃত হয়েছে। বাংলাদেশ ঠিক যেভাবে সীমানা চিহ্নিত করার দাবি করেছিল, আর ট্রাইব্যুনাল যে রায় দিলেন, তা একেবারে মিলে যায়। তার মানে বাংলাদেশের দাবি মৌলিকভাবে ইক্যুইটেবল বা ন্যায়সংগতই ছিল। এই কথা তো আমি সত্তর দশক থেকেই বলে আসছিলাম এবং আমার বইয়েও তুলে ধরেছিলাম।
প্রথম আলো কিন্তু রায়ের পর্যালোচনা বলে তো একটা ব্যাপার থাকে, রায়ে কি এমন কিছু আছে, যা ভবিষ্যতে আমাদের ন্যায্য দাবিকে খর্ব করতে পারে?
এম হাবিবুর রহমান এই রায়ে রাজনৈতিকভাবে কে খুশি হন, কে বেজার হন, তার থেকে বড় কথা, এটা এক স্মরণীয় বিজয়। এটা যথেষ্টভাবে আন্তর্জাতিকভাবে মানসম্মত রায়। এর বাইরে কিছু বিষয় রয়েছে, যেটা আমাদের স্বার্থেই ভবিষ্যতের জন্য তুলে রাখা ভালো। কারণ, ভারতের দাবি মোকাবিলার বিষয়টি এখনো অমীমাংসিত এবং এর গুরুত্ব ব্যাপক।
প্রথম আলো কিন্তু এই রায় কি ভারতের বিপরীতে একটা শক্ত নজির স্থাপন করল না?
এম হাবিবুর রহমান তা তো বটেই। আমি গত ডিসেম্বরের ঢাকা ল রিভিউয়ে (ডিএলআর) বাংলাদেশ-মিয়ানমার-ভারতের মতপার্থক্য প্রসঙ্গে যা লিখেছি, তার শেষ কথা ছিল, রায় কী হবে না হবে, কার কতটুকু হবে না হবে, সেটা দেখার বিষয়। তবে এ কথা সত্য, বঙ্গোপসাগরের ওপর এককভাবে কারও দাবি প্রতিষ্ঠিত করা আর সম্ভব হবে না।
প্রথম আলো বঙ্গোপসাগর এক অর্থে বাংলাদেশের সামুদ্রিক আঙিনা। এই রায়ের মাধ্যমে সেখানে আমাদের কতটা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা পেল?
এম হাবিবুর রহমান পেল তো বটেই। তাহলেও আমরা কিন্তু বলতে পারি না সাগরের ওপর বাংলাদেশের সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হলো। তবে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের চৌহদ্দি কতখানি হবে, সেটা কিন্তু আমরা পেয়ে গেছি। এখন ভারতও বলতে পারবে না বে অব বেঙ্গল সম্পূর্ণ তাদের। কোনো রাষ্ট্রের পক্ষেই সেটা বলা সম্ভব হবে না আর। খেয়াল করতে হবে সমুদ্রের আইনে আমাদের দুটি এখতিয়ার: একটা হলো রাষ্ট্রীয় এখতিয়ারভুক্ত সমুদ্র অঞ্চলের ওপর এখতিয়ার। আরেকটা হলো, রাষ্ট্রীয় এখতিয়ারের বাইরের সমুদ্র অঞ্চলের ওপর এখতিয়ার। প্রথম ক্ষেত্রে গোড়াতেই আসবে আঞ্চলিক সমুদ্র, যা ১২ নটিক্যাল মাইল। এরপর আসবে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বা ইইজেড, যা ২০০ নটিক্যাল মাইল। এরপরে আছে মহীসোপান, যা ২০০ নটিক্যাল মাইল বা তার বেশি—এমনকি ৩০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত হতে পারে। এগুলোকেই একত্রে বলা হয় রাষ্ট্রীয় এখতিয়ারভুক্ত এলাকা। একটা রাষ্ট্র দাবি করবে কোন সমুদ্রের ওপর? হয় আঞ্চলিক সমুদ্রের ওপর, নয়তো ইইজেডের ওপর, অথবা মহীসোপানের ওপর। বর্তমান রায়ে এই তিনটি ক্ষেত্রেই মিয়ানমারের বিপরীতে বাংলাদেশের দাবির সুষ্ঠু সমাধান হলো।
প্রথম আলো বাংলাদেশের সমুদ্রোপকূলের বিশেষ প্রকৃতি হলো, সমুদ্র এখানে উপকূলের ভেতরে ঢুকে গেছে। সমুদ্র আইনে একে বিশেষ পরিস্থিতি বলা হয়েছে। ভূ-সন্নিহিত এ রকম সমুদ্র সম্পদে পরিপূর্ণ হলে আন্তর্জাতিক আইনে সমুদ্রের ওপর নির্ভরশীল রাষ্ট্রের অগ্রাধিকার বেশি বলা হয়েছে। এর ভিত্তিতে এবং এই রায়ের সমর্থনে বঙ্গোপসাগরে ভারতের দাবি কি অন্যায্য হয়ে যায় না?
এম হাবিবুর রহমান আমাদের বিপরীতে ভারতের দাবি আপনাআপনি দুর্বল হবে, এটা বলা যায় না। কারণ, ভারত বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র, মিয়ানমারও তাই। ১৯৮২ সালের সমুদ্র আইনে জাতিসংঘ প্রতিবেশী সব রাষ্ট্রকে ১২ নটিক্যাল মাইল করে সমুদ্রসীমার অধিকার দিয়েছে এবং এই আইন সবাই মান্যও করে। আমরা তো আইনকে অগ্রাহ্য করতে পারব না। আইন আছে বলেই আজ ট্রাইব্যুনালে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। এখানে আমাদের সুবিধা হয়েছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের অবস্থানের কারণে। একইভাবে বঙ্গোপসাগরের প্রেক্ষাপটে ভারত কিন্তু দুটো—একটা পশ্চিমবঙ্গ, আরেকটা আন্দামান-নিকোবর। ভারতের দাবি মিয়ানমারের মতো নয়। তারা দাবি করছে আন্দামানে অবস্থানের ভিত্তিতে। ইতিমধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে আপস-মীমাংসাও করে নিয়েছে। আদালত একে আমলে নিয়েই আমাদের বিষয়টা পর্যালোচনা করেছেন। এতে আমাদের জন্য বিশেষ অসুবিধা হয়নি। যা হোক, আইনি দৃষ্টিতেই সমস্যাটা দেখতে হবে এবং ভাবতে হবে বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশ-ভারত ও মিয়ানমারের। তবে এটুকু বলা যায়, এই রায়ের কারণে ভারতের বিপরীতে সমুদ্রে আমাদের দাবি আরও সারবত্তা পেল। এখন পশ্চিম সমুদ্রে ভারতের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দাবিকে ন্যায়সংগতভাবে জয়ী করতে হবে।
প্রথম আলো সমুদ্রসীমা নিয়ে সমস্যার সমাধানে কয়েক যুগ দেরি হলো কেন?
এম হাবিবুর রহমান বাংলাদেশ জলসীমা ও সমুদ্রোপকূল আইনটি প্রণীত হয় ১৯৭৪ সালে। আর জাতিসংঘের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে আইনটি প্রণীত হয় ১৯৮২ সালে। ’৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকার যখন ছয়টা বিদেশি কোম্পানিকে সমুদ্রের সম্পদ উত্তোলনের দায়িত্ব দিতে চেয়েছিল, তখন ভারত আপত্তি করে। এরপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই বাংলাদেশ সফরে এসে সমুদ্রে যৌথ সমীক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা আর করেনি ভারত।
প্রথম আলো বঙ্গোপসাগরে আমাদের যে প্রাকৃতিক সম্পদ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা, বর্তমান রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে তার গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু বলুন।
এম হাবিবুর রহমান আমি একটি দিকের কথা বলব। বাংলাদেশ সমুদ্রপারের দেশ। আমাদের উপকূল নাজুক এবং নিরন্তর পলি জমাটের কারণে তীরের গভীরতাও এতই কম যে, জাহাজ সরাসরি বন্দরে ভিড়তে পারে না। অন্যদিকে ভারত ও মিয়ানমারের উপকূল উত্তল (Convex), অর্থাৎ তাদের উপকূল সমুদ্রের ভেতর ঢুকে যাওয়া। আর আমাদের উপকূল হলো অবতল (Concave), সমুদ্র এখানে উপকূলের ভেতরে ঢুকে গেছে। এ রকম পরিস্থিতিতে উপকূল আঁকাবাঁকা হয়, পলি জমা হয় বেশি। আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইনে একে বিশেষ পরিস্থিতি বলা হয়েছে। ভূ-সন্নিহিত এ রকম সমুদ্র সম্পদে পরিপূর্ণ হলে আন্তর্জাতিক আইনে সমুদ্রের ওপর নির্ভরশীল রাষ্ট্রের অগ্রাধিকারই বেশি বলা হয়েছে। আমাদের সমুদ্র চিংড়ি-ইলিশ-লবণ এবং নানা রকম খনিজ পদার্থ ও গ্যাস-সম্পদে পরিপূর্ণ। এখানকার ইলিশ ও চিংড়ি পৃথিবীতে বিরল এবং এগুলোর বিকল্প কোনো উৎসও আমাদের নেই। আমাদের যাবতীয় লবণও এখান থেকেই আসে। দেশের মোট জনসংখ্যার চার ভাগের এক ভাগ হলো উপকূলীয় এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠী। তাদের জীবন-জীবিকাও এর ওপর নিভর্রশীল। সুতরাং, সমুদ্র আমাদের জন্য যতটা গুরুত্বপূর্ণ, অনেক দেশের জন্য ততটা নয়। কারণ, আমাদের বিশেষ ভৌগোলিক ও ভূরাজনৈতিক অবস্থান এবং সমুদ্রসম্পদের প্রাচুর্য ও উপকূলের গঠন। আবার এই অঞ্চল একদিকে অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশে গর্জনশীল চল্লিশার অংশ হিসেবে দুর্যোগপূর্ণ। অন্যদিকে হিমালয়সহ ভারতবর্ষের পলি এখানে নির্গত হচ্ছে। পাকিস্তান আমলের শেষ দিকে জাতিসংঘের উদ্যোগে বঙ্গোপসাগরে একটা জরিপ হয়। সেই জরিপ দলের প্রধান মি. জ্যাকব বলেন, বঙ্গোপসাগরে প্রচুর সম্পদ স্তূপীকৃত রয়েছে; সমুদ্রের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলো এ সম্পদ সংরক্ষণ করতে পারলে শতাব্দীর পর শতাব্দী এর ওপর নির্ভর করে তারা চলতে পারবে। এখন আমাদের প্রয়োজন, আইনের বলে প্রতিষ্ঠিত সামুদ্রিক চৌহদ্দির মধ্যে অনাদিকাল থেকে জমা হওয়া বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর জাতীয় অধিকার প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া।
প্রথম আলো অনেক বেশি সামুদ্রিক এলাকা আমাদের হাতে এল। এটা রক্ষা করা, জনকল্যাণে এর সম্পদের ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আমাদের এখন কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত?
এম হাবিবুর রহমান: কয়েক দিন আগে টেলিভিশনে দেখলাম, বঙ্গোপসাগরে শত শত দ্বীপ জাগছে। গভীর সমুদ্রে যেখানে দুই হাজার মিটার গভীরতা ছিল, সেখানে এখন মাত্র কয়েক ফুট গভীরতা, সেখানে নেমে দাঁড়ানো যাচ্ছে। কী হবে এসব দ্বীপের ভবিষ্যৎ? জাতীয় স্বার্থে আমি এখন এর উত্তর দেব না। আমি মনে করি, যেকোনো সরকারেরই কাজ হলো বাংলাদেশের স্বার্থে কাজ করা।
প্রথম আলো তার মানে আমাদের দায়িত্ব বেড়ে গেল?
এম হাবিবুর রহমান অবশ্যই। যে গুরুত্ব দিয়ে, যে চেতনায় আপনি আপনার ভূমিকে দেখেন ও রক্ষা করেন, সমুদ্রকেও সেভাবে দেখতে হবে। যে দ্বীপগুলো জাগছে, সেটা কোথায়, তার কী অবস্থান, সেটা আপনার কোন এখতিয়ারের মধ্যে পড়েছে, এসব যাচাই করে দেখতে হবে। প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে, রাষ্ট্রনৈতিক, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা করতে হবে। সমুদ্র তো ভূমি হয়ে যেতে পারে। সমুদ্র হলো আপনার উপহার। আপনি বঙ্গোপসাগরে যা পাচ্ছেন, তা পৃথিবীর আর কোথাও পাবেন না। সুতরাং এই অর্জন এখন সতর্কভাবে রক্ষা করতে হবে।
প্রথম আলো এই শুনানিতে দেখা গেল, বাংলাদেশের সমুদ্র বিশেষজ্ঞ, সমুদ্র আইন বিশেষজ্ঞদের কাউকে বাংলাদেশ দলে নেওয়া হয়নি। কী এর কারণ?
এম হাবিবুর রহমান ডিএলআরের ওই সংখ্যায় আমি কিন্তু আমার অভিব্যক্তি, আবেগ ও জানাশোনা ব্যক্ত করেছি। যে বিদেশি অধ্যাপকদের ওই দলে নেওয়া হয়েছে, তাঁরা আমার পূর্বপরিচিত ও সহকর্মী ছিলেন। তাঁরাও জানতে চেয়েছেন, আপনাদের কি স্বদেশি বিশেষজ্ঞ নেই? ছিল, অথচ তাঁদের নেওয়া হয়নি। আমাদের উচিত আইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা, তার মধ্যে সমুদ্র আইন গবেষণা কেন্দ্র চালু করা। পাশাপাশি, সামগ্রিকভাবে সমুদ্র গবেষণাপ্রতিষ্ঠানও দরকার, জরুরিভাবেই দরকার।
প্রথম আলো এই রায়ের ঐতিহাসিক মাত্রা, বাংলাদেশের বিজয়ের আত্মবিশ্বাস সম্পর্কে আপনার কী মনে হয়?
এম হাবিবুর রহমান বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের মানুষের যে দাবি, তা মূলত ন্যায়সংগত। সমুদ্র নিয়ে আমরা যে দাবি করেছিলাম, তা বিবেক নিয়েই করেছি। ট্রাইব্যুনালও কিন্তু ওইভাবেই রায় দিয়ে দিয়েছে। ইতিহাসের শিক্ষাও এই, যখনই বাংলাদেশের মানুষ ন্যায়পরায়ণতার ভিত্তিতে দাবি তুলেছে, তখনই জয়ী হয়েছে। ভাষার ও স্বাধীনতার দাবির মতো সমুদ্রের দাবিও ন্যায়পরায়ণ ছিল বলেই আমরা জিতেছি। বাঙালিদের দাবি যখন সম্মিলিতভাবে, জাতীয়ভাবে উত্থাপিত হয়, তখন আমরা ন্যায়ের দিকে তাকাই, আইনের দিকে তাকাই, যুক্তির দিকে তাকাই এবং পরিশেষে হয় কি? আমরা তা অর্জন করি। এর মাধ্যমেই বোঝা যায়, ন্যায়পরায়ণতার বিকাশ আমাদের জীবনের একটা বৈশিষ্ট্য।
প্রথম আলো আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
এম হাবিবুর রহমান ধন্যবাদ আপনাকেও।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফারুক ওয়াসিফ
প্রথম আলো সমুদ্রসীমা নিয়ে বঙ্গোপসাগরের পূর্ব ও পশ্চিম উভয় সীমান্তেই বিবাদ ছিল আমাদের। এখন ইটলসের রায়ে পূর্ব সীমান্তে একধরনের মীমাংসা হলো। এই রায়ে কি সেই ন্যায়পরায়ণতার প্রতিফলন দেখতে পান?
এম হাবিবুর রহমান প্রথমত, আমার অনুভূতি আনন্দের। ইটলসের শুনানিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে সমুদ্রসীমান্ত নির্দিষ্ট হয়ে গেছে। মিয়ানমার যেভাবে সীমান্তের দাবি তুলেছিল, তার সাপেক্ষে বাংলাদেশের দাবি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আমাদের দাবি মৌলিকভাবে ন্যায়পরায়ণই ছিল। আদালতের রায়েও সেটা স্বীকৃত হয়েছে। বাংলাদেশ ঠিক যেভাবে সীমানা চিহ্নিত করার দাবি করেছিল, আর ট্রাইব্যুনাল যে রায় দিলেন, তা একেবারে মিলে যায়। তার মানে বাংলাদেশের দাবি মৌলিকভাবে ইক্যুইটেবল বা ন্যায়সংগতই ছিল। এই কথা তো আমি সত্তর দশক থেকেই বলে আসছিলাম এবং আমার বইয়েও তুলে ধরেছিলাম।
প্রথম আলো কিন্তু রায়ের পর্যালোচনা বলে তো একটা ব্যাপার থাকে, রায়ে কি এমন কিছু আছে, যা ভবিষ্যতে আমাদের ন্যায্য দাবিকে খর্ব করতে পারে?
এম হাবিবুর রহমান এই রায়ে রাজনৈতিকভাবে কে খুশি হন, কে বেজার হন, তার থেকে বড় কথা, এটা এক স্মরণীয় বিজয়। এটা যথেষ্টভাবে আন্তর্জাতিকভাবে মানসম্মত রায়। এর বাইরে কিছু বিষয় রয়েছে, যেটা আমাদের স্বার্থেই ভবিষ্যতের জন্য তুলে রাখা ভালো। কারণ, ভারতের দাবি মোকাবিলার বিষয়টি এখনো অমীমাংসিত এবং এর গুরুত্ব ব্যাপক।
প্রথম আলো কিন্তু এই রায় কি ভারতের বিপরীতে একটা শক্ত নজির স্থাপন করল না?
এম হাবিবুর রহমান তা তো বটেই। আমি গত ডিসেম্বরের ঢাকা ল রিভিউয়ে (ডিএলআর) বাংলাদেশ-মিয়ানমার-ভারতের মতপার্থক্য প্রসঙ্গে যা লিখেছি, তার শেষ কথা ছিল, রায় কী হবে না হবে, কার কতটুকু হবে না হবে, সেটা দেখার বিষয়। তবে এ কথা সত্য, বঙ্গোপসাগরের ওপর এককভাবে কারও দাবি প্রতিষ্ঠিত করা আর সম্ভব হবে না।
প্রথম আলো বঙ্গোপসাগর এক অর্থে বাংলাদেশের সামুদ্রিক আঙিনা। এই রায়ের মাধ্যমে সেখানে আমাদের কতটা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা পেল?
এম হাবিবুর রহমান পেল তো বটেই। তাহলেও আমরা কিন্তু বলতে পারি না সাগরের ওপর বাংলাদেশের সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হলো। তবে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের চৌহদ্দি কতখানি হবে, সেটা কিন্তু আমরা পেয়ে গেছি। এখন ভারতও বলতে পারবে না বে অব বেঙ্গল সম্পূর্ণ তাদের। কোনো রাষ্ট্রের পক্ষেই সেটা বলা সম্ভব হবে না আর। খেয়াল করতে হবে সমুদ্রের আইনে আমাদের দুটি এখতিয়ার: একটা হলো রাষ্ট্রীয় এখতিয়ারভুক্ত সমুদ্র অঞ্চলের ওপর এখতিয়ার। আরেকটা হলো, রাষ্ট্রীয় এখতিয়ারের বাইরের সমুদ্র অঞ্চলের ওপর এখতিয়ার। প্রথম ক্ষেত্রে গোড়াতেই আসবে আঞ্চলিক সমুদ্র, যা ১২ নটিক্যাল মাইল। এরপর আসবে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বা ইইজেড, যা ২০০ নটিক্যাল মাইল। এরপরে আছে মহীসোপান, যা ২০০ নটিক্যাল মাইল বা তার বেশি—এমনকি ৩০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত হতে পারে। এগুলোকেই একত্রে বলা হয় রাষ্ট্রীয় এখতিয়ারভুক্ত এলাকা। একটা রাষ্ট্র দাবি করবে কোন সমুদ্রের ওপর? হয় আঞ্চলিক সমুদ্রের ওপর, নয়তো ইইজেডের ওপর, অথবা মহীসোপানের ওপর। বর্তমান রায়ে এই তিনটি ক্ষেত্রেই মিয়ানমারের বিপরীতে বাংলাদেশের দাবির সুষ্ঠু সমাধান হলো।
প্রথম আলো বাংলাদেশের সমুদ্রোপকূলের বিশেষ প্রকৃতি হলো, সমুদ্র এখানে উপকূলের ভেতরে ঢুকে গেছে। সমুদ্র আইনে একে বিশেষ পরিস্থিতি বলা হয়েছে। ভূ-সন্নিহিত এ রকম সমুদ্র সম্পদে পরিপূর্ণ হলে আন্তর্জাতিক আইনে সমুদ্রের ওপর নির্ভরশীল রাষ্ট্রের অগ্রাধিকার বেশি বলা হয়েছে। এর ভিত্তিতে এবং এই রায়ের সমর্থনে বঙ্গোপসাগরে ভারতের দাবি কি অন্যায্য হয়ে যায় না?
এম হাবিবুর রহমান আমাদের বিপরীতে ভারতের দাবি আপনাআপনি দুর্বল হবে, এটা বলা যায় না। কারণ, ভারত বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র, মিয়ানমারও তাই। ১৯৮২ সালের সমুদ্র আইনে জাতিসংঘ প্রতিবেশী সব রাষ্ট্রকে ১২ নটিক্যাল মাইল করে সমুদ্রসীমার অধিকার দিয়েছে এবং এই আইন সবাই মান্যও করে। আমরা তো আইনকে অগ্রাহ্য করতে পারব না। আইন আছে বলেই আজ ট্রাইব্যুনালে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। এখানে আমাদের সুবিধা হয়েছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের অবস্থানের কারণে। একইভাবে বঙ্গোপসাগরের প্রেক্ষাপটে ভারত কিন্তু দুটো—একটা পশ্চিমবঙ্গ, আরেকটা আন্দামান-নিকোবর। ভারতের দাবি মিয়ানমারের মতো নয়। তারা দাবি করছে আন্দামানে অবস্থানের ভিত্তিতে। ইতিমধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে আপস-মীমাংসাও করে নিয়েছে। আদালত একে আমলে নিয়েই আমাদের বিষয়টা পর্যালোচনা করেছেন। এতে আমাদের জন্য বিশেষ অসুবিধা হয়নি। যা হোক, আইনি দৃষ্টিতেই সমস্যাটা দেখতে হবে এবং ভাবতে হবে বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশ-ভারত ও মিয়ানমারের। তবে এটুকু বলা যায়, এই রায়ের কারণে ভারতের বিপরীতে সমুদ্রে আমাদের দাবি আরও সারবত্তা পেল। এখন পশ্চিম সমুদ্রে ভারতের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দাবিকে ন্যায়সংগতভাবে জয়ী করতে হবে।
প্রথম আলো সমুদ্রসীমা নিয়ে সমস্যার সমাধানে কয়েক যুগ দেরি হলো কেন?
এম হাবিবুর রহমান বাংলাদেশ জলসীমা ও সমুদ্রোপকূল আইনটি প্রণীত হয় ১৯৭৪ সালে। আর জাতিসংঘের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে আইনটি প্রণীত হয় ১৯৮২ সালে। ’৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকার যখন ছয়টা বিদেশি কোম্পানিকে সমুদ্রের সম্পদ উত্তোলনের দায়িত্ব দিতে চেয়েছিল, তখন ভারত আপত্তি করে। এরপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই বাংলাদেশ সফরে এসে সমুদ্রে যৌথ সমীক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা আর করেনি ভারত।
প্রথম আলো বঙ্গোপসাগরে আমাদের যে প্রাকৃতিক সম্পদ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা, বর্তমান রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে তার গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু বলুন।
এম হাবিবুর রহমান আমি একটি দিকের কথা বলব। বাংলাদেশ সমুদ্রপারের দেশ। আমাদের উপকূল নাজুক এবং নিরন্তর পলি জমাটের কারণে তীরের গভীরতাও এতই কম যে, জাহাজ সরাসরি বন্দরে ভিড়তে পারে না। অন্যদিকে ভারত ও মিয়ানমারের উপকূল উত্তল (Convex), অর্থাৎ তাদের উপকূল সমুদ্রের ভেতর ঢুকে যাওয়া। আর আমাদের উপকূল হলো অবতল (Concave), সমুদ্র এখানে উপকূলের ভেতরে ঢুকে গেছে। এ রকম পরিস্থিতিতে উপকূল আঁকাবাঁকা হয়, পলি জমা হয় বেশি। আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইনে একে বিশেষ পরিস্থিতি বলা হয়েছে। ভূ-সন্নিহিত এ রকম সমুদ্র সম্পদে পরিপূর্ণ হলে আন্তর্জাতিক আইনে সমুদ্রের ওপর নির্ভরশীল রাষ্ট্রের অগ্রাধিকারই বেশি বলা হয়েছে। আমাদের সমুদ্র চিংড়ি-ইলিশ-লবণ এবং নানা রকম খনিজ পদার্থ ও গ্যাস-সম্পদে পরিপূর্ণ। এখানকার ইলিশ ও চিংড়ি পৃথিবীতে বিরল এবং এগুলোর বিকল্প কোনো উৎসও আমাদের নেই। আমাদের যাবতীয় লবণও এখান থেকেই আসে। দেশের মোট জনসংখ্যার চার ভাগের এক ভাগ হলো উপকূলীয় এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠী। তাদের জীবন-জীবিকাও এর ওপর নিভর্রশীল। সুতরাং, সমুদ্র আমাদের জন্য যতটা গুরুত্বপূর্ণ, অনেক দেশের জন্য ততটা নয়। কারণ, আমাদের বিশেষ ভৌগোলিক ও ভূরাজনৈতিক অবস্থান এবং সমুদ্রসম্পদের প্রাচুর্য ও উপকূলের গঠন। আবার এই অঞ্চল একদিকে অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশে গর্জনশীল চল্লিশার অংশ হিসেবে দুর্যোগপূর্ণ। অন্যদিকে হিমালয়সহ ভারতবর্ষের পলি এখানে নির্গত হচ্ছে। পাকিস্তান আমলের শেষ দিকে জাতিসংঘের উদ্যোগে বঙ্গোপসাগরে একটা জরিপ হয়। সেই জরিপ দলের প্রধান মি. জ্যাকব বলেন, বঙ্গোপসাগরে প্রচুর সম্পদ স্তূপীকৃত রয়েছে; সমুদ্রের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলো এ সম্পদ সংরক্ষণ করতে পারলে শতাব্দীর পর শতাব্দী এর ওপর নির্ভর করে তারা চলতে পারবে। এখন আমাদের প্রয়োজন, আইনের বলে প্রতিষ্ঠিত সামুদ্রিক চৌহদ্দির মধ্যে অনাদিকাল থেকে জমা হওয়া বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর জাতীয় অধিকার প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া।
প্রথম আলো অনেক বেশি সামুদ্রিক এলাকা আমাদের হাতে এল। এটা রক্ষা করা, জনকল্যাণে এর সম্পদের ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আমাদের এখন কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত?
এম হাবিবুর রহমান: কয়েক দিন আগে টেলিভিশনে দেখলাম, বঙ্গোপসাগরে শত শত দ্বীপ জাগছে। গভীর সমুদ্রে যেখানে দুই হাজার মিটার গভীরতা ছিল, সেখানে এখন মাত্র কয়েক ফুট গভীরতা, সেখানে নেমে দাঁড়ানো যাচ্ছে। কী হবে এসব দ্বীপের ভবিষ্যৎ? জাতীয় স্বার্থে আমি এখন এর উত্তর দেব না। আমি মনে করি, যেকোনো সরকারেরই কাজ হলো বাংলাদেশের স্বার্থে কাজ করা।
প্রথম আলো তার মানে আমাদের দায়িত্ব বেড়ে গেল?
এম হাবিবুর রহমান অবশ্যই। যে গুরুত্ব দিয়ে, যে চেতনায় আপনি আপনার ভূমিকে দেখেন ও রক্ষা করেন, সমুদ্রকেও সেভাবে দেখতে হবে। যে দ্বীপগুলো জাগছে, সেটা কোথায়, তার কী অবস্থান, সেটা আপনার কোন এখতিয়ারের মধ্যে পড়েছে, এসব যাচাই করে দেখতে হবে। প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে, রাষ্ট্রনৈতিক, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা করতে হবে। সমুদ্র তো ভূমি হয়ে যেতে পারে। সমুদ্র হলো আপনার উপহার। আপনি বঙ্গোপসাগরে যা পাচ্ছেন, তা পৃথিবীর আর কোথাও পাবেন না। সুতরাং এই অর্জন এখন সতর্কভাবে রক্ষা করতে হবে।
প্রথম আলো এই শুনানিতে দেখা গেল, বাংলাদেশের সমুদ্র বিশেষজ্ঞ, সমুদ্র আইন বিশেষজ্ঞদের কাউকে বাংলাদেশ দলে নেওয়া হয়নি। কী এর কারণ?
এম হাবিবুর রহমান ডিএলআরের ওই সংখ্যায় আমি কিন্তু আমার অভিব্যক্তি, আবেগ ও জানাশোনা ব্যক্ত করেছি। যে বিদেশি অধ্যাপকদের ওই দলে নেওয়া হয়েছে, তাঁরা আমার পূর্বপরিচিত ও সহকর্মী ছিলেন। তাঁরাও জানতে চেয়েছেন, আপনাদের কি স্বদেশি বিশেষজ্ঞ নেই? ছিল, অথচ তাঁদের নেওয়া হয়নি। আমাদের উচিত আইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা, তার মধ্যে সমুদ্র আইন গবেষণা কেন্দ্র চালু করা। পাশাপাশি, সামগ্রিকভাবে সমুদ্র গবেষণাপ্রতিষ্ঠানও দরকার, জরুরিভাবেই দরকার।
প্রথম আলো এই রায়ের ঐতিহাসিক মাত্রা, বাংলাদেশের বিজয়ের আত্মবিশ্বাস সম্পর্কে আপনার কী মনে হয়?
এম হাবিবুর রহমান বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের মানুষের যে দাবি, তা মূলত ন্যায়সংগত। সমুদ্র নিয়ে আমরা যে দাবি করেছিলাম, তা বিবেক নিয়েই করেছি। ট্রাইব্যুনালও কিন্তু ওইভাবেই রায় দিয়ে দিয়েছে। ইতিহাসের শিক্ষাও এই, যখনই বাংলাদেশের মানুষ ন্যায়পরায়ণতার ভিত্তিতে দাবি তুলেছে, তখনই জয়ী হয়েছে। ভাষার ও স্বাধীনতার দাবির মতো সমুদ্রের দাবিও ন্যায়পরায়ণ ছিল বলেই আমরা জিতেছি। বাঙালিদের দাবি যখন সম্মিলিতভাবে, জাতীয়ভাবে উত্থাপিত হয়, তখন আমরা ন্যায়ের দিকে তাকাই, আইনের দিকে তাকাই, যুক্তির দিকে তাকাই এবং পরিশেষে হয় কি? আমরা তা অর্জন করি। এর মাধ্যমেই বোঝা যায়, ন্যায়পরায়ণতার বিকাশ আমাদের জীবনের একটা বৈশিষ্ট্য।
প্রথম আলো আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
এম হাবিবুর রহমান ধন্যবাদ আপনাকেও।
No comments