এক খণ্ড জমি ও ভাইবোনে দ্বন্দ্ব by তানজিম আল ইসলাম
রাশিদার তিন ভাই। বোন তিনি একাই। বাড়ি নরসিংদী। বাবা মারা যান অনেক আগেই। বাবার মৃত্যুর সময় রাশিদা অনেক ছোট। তখন থেকে মায়ের যত্নআত্তিতেই বেড়ে ওঠা। রাশিদার বড় ভাই মানসিক প্রতিবন্ধী। সংসারের দিকে খেয়াল নেই। রাশিদা যখন প্রাপ্তবয়স্ক হন, লেখাপড়া শেষ, তখন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে থাকেন।
একটি চাকরি নেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। মাকে সঙ্গে নিয়ে ভাইদের সঙ্গেই থাকেন।
এরই মধ্যে রাশিদা কিছু টাকা জমান তাঁর ভবিষ্যতের কথা ভেবে। এই জমানো টাকার কথা জানতে পারেন রাশিদার মেজো ভাই মো. হারিছ মিয়া। হারিছ মিয়া তখন রাশিদাকে তাঁর ভোগদখলীয় কিছু জমি কিনে নিতে অনুরোধ করতে থাকেন। রাশিদা ভাবেন, তাঁর আপন ভাইয়ের জমি কিনে নিলে তো দোষের কিছু নেই। হারিছ মিয়া রাশিদাকে বোঝাতে থাকেন, তিনি অর্থকষ্টে পড়েছেন। তাই নগদ কিছু টাকা দরকার। শত হলেও বোন তো, ভাইয়ের বিপদে তো তিনিই এগিয়ে আসবেন আগে। ভাইয়ের কথামতো তাঁর জমিটুকু কিনে নিতে উদ্যোগী হন রাশিদা। জমির পরিমাণ সাড়ে পাঁচ শতক। জমি বাবদ ৪০ হাজার টাকা বুঝিয়ে দেন ভাইকে। তখন ২০০৩ সাল। ভাইয়ের কথামতো সবকিছুতে বোন রাজি হন। মনোহরদী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রিকৃত সাবকবলা দলিলও সম্পন্ন করেন ভাইয়ের কথামতো। পরে বোনের সরলতা কাজে লাগিয়ে ভাই ওই জমিতে বর্গাদার হিসেবে চাষাবাদ করতে থাকেন। রাশিদা ভাবতে থাকেন, ভাইয়ের জায়গা যখন তিনি চাইবেন, তখনই দখলে নিতে পারবেন। এই ভেবে ভেবে কয়েক বছর কেটে যায়। রাশিদার বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাঁর টাকার প্রয়োজন হয়। ভাইয়ের কাছে বললে ভাই জমির দখল বুঝিয়ে দেবেন দেবেন বলে ঘোরাতে থাকেন। সম্পত্তির দখল আর বুঝিয়ে দেন না।
রাশিদার বুঝতে আর বাকি নেই, তাঁর ভাই তাঁকে ঠকাচ্ছেন। জমির দখল আর বুঝিয়ে দেন না রাশিদাকে। রাশিদা অসহায় হয়ে পড়েন।
রাশিদা বলতে থাকেন, ‘আমার মায়ের পেটের ভাই। তাঁর বিপদের দিকে তাকিয়ে আমি এগিয়ে আসি। এখন সে-ই আমাকে জমি দিতে গড়িমসি করছে। এমনকি আমাকে ও আমার স্বামীকে ভয়ভীতিও দেখাচ্ছে। নিজের ভাইয়ের কাছেও আমি অসহায় এবং নিরাপত্তাহীন বোধ করছি। আপন ভাই ঠকালে আর কোথায় যাব?’
আপনি কি কোনো আইনি প্রতিকার চেয়েছেন?
‘হ্যাঁ, আমি কয়েক মাস আগে ১০৭ ধারায় একটি মামলা করেছি, যেন জমি দখলে নিয়ে কোনো বিশৃঙ্খলা না করতে পারে। আবার থানায় অভিযোগও করেছি। থানা থেকে তেমন কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না।’
রাশিদা জানান, তিনি গাজীপুরে তাঁর স্বামীর সঙ্গে থাকছেন। তাঁর মাও তাঁর সঙ্গেই থাকেন। বর্তমানে সাড়ে পাঁচ শতক জমির আনুমানিক মূল্য তিন লাখ টাকা হওয়ায় তাঁর ভাই এ জমি তাঁকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন না বলে তাঁর অভিযোগ।
এ প্রসঙ্গে হারিছ মিয়ার কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি আমার বোনকে ঠকায়নি। আমি আড়াই শতক জায়গা অন্য এক লোকের কাছ থেকে কিনেছি। এ জায়গা আমাকে ওই লোক বুঝিয়ে দিচ্ছে না। তাই আমি আমার বোনকে এ জায়গার দখল দিতে পারছি না। বাকি আড়াই শতক জায়গা বোনের দখলেই আছে।’
আড়াই শতক জায়গা দখলে থাকার কথা অস্বীকার করেন রাশিদা। তিনি জানান, এ জায়গা তাঁর দুই ভাই যোগসাজশে দখল করে আছেন। কিন্তু হারিছ মিয়া রাশিদার কথাও অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার দখলে কোনো সম্পত্তি নেই। আর আমার বোন কেনার সময় ১০ হাজার টাকা কম দিয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘বিক্রেতা বাকি আড়াই শতক দিলে আমি আমার বোনকে ফেরত দেব।’
রাশিদা বলেন, এ পুরো সম্পত্তি তাঁর ভাইয়ের দখলেই আছে। তাঁর ভাইকে সরল বিশ্বাসে এ জমি দিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু ভাই তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তাঁর অভাব-অনটনের সংসারে এখন এই এক খণ্ড জমির মূল্য অনেক। তিনি কিছুতেই তাঁর কেনা জমি হারাতে চান না। নারী হয়ে জন্মেছেন বলে আপন ভাইয়েরাও অবলা-অসহায় ভাবছেন, এর অবসান চান তিনি। তিনি তাঁর অধিকার ফিরে পেতে চান।
পাদটীকা: ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭ ধারা অনুসারে শান্তিরক্ষার জন্য মুচলেকার বিধান রয়েছে। এ ধারায় বলা হয়েছে, যে ক্ষেত্রে কোনো জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খবর পান যে কোনো ব্যক্তি সম্ভবত কোনো শান্তিভঙ্গের কোনো কাজ করবে বা এমন কোনো বেআইনি কাজ করবে যার জন্য শান্তি ভঙ্গ হতে পারে, তাহলে ওই ব্যক্তিকে কেন অনধিক এক বছরের জন্য জামিনদারসহ বা ছাড়া একটি মুচলেকা সম্পাদনের আদেশ দেওয়া হবে না, এর কারণ দর্শাতে বলতে পারে। প্রয়োজনে কোনো এখতিয়ারবিহীন ম্যাজিস্ট্রেট কারণ লিপিবদ্ধ করে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন এবং কারণসহ উপযুক্ত ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠাতে পারেন।
tanzimlaw@yahoo.com
এরই মধ্যে রাশিদা কিছু টাকা জমান তাঁর ভবিষ্যতের কথা ভেবে। এই জমানো টাকার কথা জানতে পারেন রাশিদার মেজো ভাই মো. হারিছ মিয়া। হারিছ মিয়া তখন রাশিদাকে তাঁর ভোগদখলীয় কিছু জমি কিনে নিতে অনুরোধ করতে থাকেন। রাশিদা ভাবেন, তাঁর আপন ভাইয়ের জমি কিনে নিলে তো দোষের কিছু নেই। হারিছ মিয়া রাশিদাকে বোঝাতে থাকেন, তিনি অর্থকষ্টে পড়েছেন। তাই নগদ কিছু টাকা দরকার। শত হলেও বোন তো, ভাইয়ের বিপদে তো তিনিই এগিয়ে আসবেন আগে। ভাইয়ের কথামতো তাঁর জমিটুকু কিনে নিতে উদ্যোগী হন রাশিদা। জমির পরিমাণ সাড়ে পাঁচ শতক। জমি বাবদ ৪০ হাজার টাকা বুঝিয়ে দেন ভাইকে। তখন ২০০৩ সাল। ভাইয়ের কথামতো সবকিছুতে বোন রাজি হন। মনোহরদী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রিকৃত সাবকবলা দলিলও সম্পন্ন করেন ভাইয়ের কথামতো। পরে বোনের সরলতা কাজে লাগিয়ে ভাই ওই জমিতে বর্গাদার হিসেবে চাষাবাদ করতে থাকেন। রাশিদা ভাবতে থাকেন, ভাইয়ের জায়গা যখন তিনি চাইবেন, তখনই দখলে নিতে পারবেন। এই ভেবে ভেবে কয়েক বছর কেটে যায়। রাশিদার বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাঁর টাকার প্রয়োজন হয়। ভাইয়ের কাছে বললে ভাই জমির দখল বুঝিয়ে দেবেন দেবেন বলে ঘোরাতে থাকেন। সম্পত্তির দখল আর বুঝিয়ে দেন না।
রাশিদার বুঝতে আর বাকি নেই, তাঁর ভাই তাঁকে ঠকাচ্ছেন। জমির দখল আর বুঝিয়ে দেন না রাশিদাকে। রাশিদা অসহায় হয়ে পড়েন।
রাশিদা বলতে থাকেন, ‘আমার মায়ের পেটের ভাই। তাঁর বিপদের দিকে তাকিয়ে আমি এগিয়ে আসি। এখন সে-ই আমাকে জমি দিতে গড়িমসি করছে। এমনকি আমাকে ও আমার স্বামীকে ভয়ভীতিও দেখাচ্ছে। নিজের ভাইয়ের কাছেও আমি অসহায় এবং নিরাপত্তাহীন বোধ করছি। আপন ভাই ঠকালে আর কোথায় যাব?’
আপনি কি কোনো আইনি প্রতিকার চেয়েছেন?
‘হ্যাঁ, আমি কয়েক মাস আগে ১০৭ ধারায় একটি মামলা করেছি, যেন জমি দখলে নিয়ে কোনো বিশৃঙ্খলা না করতে পারে। আবার থানায় অভিযোগও করেছি। থানা থেকে তেমন কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না।’
রাশিদা জানান, তিনি গাজীপুরে তাঁর স্বামীর সঙ্গে থাকছেন। তাঁর মাও তাঁর সঙ্গেই থাকেন। বর্তমানে সাড়ে পাঁচ শতক জমির আনুমানিক মূল্য তিন লাখ টাকা হওয়ায় তাঁর ভাই এ জমি তাঁকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন না বলে তাঁর অভিযোগ।
এ প্রসঙ্গে হারিছ মিয়ার কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি আমার বোনকে ঠকায়নি। আমি আড়াই শতক জায়গা অন্য এক লোকের কাছ থেকে কিনেছি। এ জায়গা আমাকে ওই লোক বুঝিয়ে দিচ্ছে না। তাই আমি আমার বোনকে এ জায়গার দখল দিতে পারছি না। বাকি আড়াই শতক জায়গা বোনের দখলেই আছে।’
আড়াই শতক জায়গা দখলে থাকার কথা অস্বীকার করেন রাশিদা। তিনি জানান, এ জায়গা তাঁর দুই ভাই যোগসাজশে দখল করে আছেন। কিন্তু হারিছ মিয়া রাশিদার কথাও অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার দখলে কোনো সম্পত্তি নেই। আর আমার বোন কেনার সময় ১০ হাজার টাকা কম দিয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘বিক্রেতা বাকি আড়াই শতক দিলে আমি আমার বোনকে ফেরত দেব।’
রাশিদা বলেন, এ পুরো সম্পত্তি তাঁর ভাইয়ের দখলেই আছে। তাঁর ভাইকে সরল বিশ্বাসে এ জমি দিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু ভাই তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তাঁর অভাব-অনটনের সংসারে এখন এই এক খণ্ড জমির মূল্য অনেক। তিনি কিছুতেই তাঁর কেনা জমি হারাতে চান না। নারী হয়ে জন্মেছেন বলে আপন ভাইয়েরাও অবলা-অসহায় ভাবছেন, এর অবসান চান তিনি। তিনি তাঁর অধিকার ফিরে পেতে চান।
পাদটীকা: ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭ ধারা অনুসারে শান্তিরক্ষার জন্য মুচলেকার বিধান রয়েছে। এ ধারায় বলা হয়েছে, যে ক্ষেত্রে কোনো জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খবর পান যে কোনো ব্যক্তি সম্ভবত কোনো শান্তিভঙ্গের কোনো কাজ করবে বা এমন কোনো বেআইনি কাজ করবে যার জন্য শান্তি ভঙ্গ হতে পারে, তাহলে ওই ব্যক্তিকে কেন অনধিক এক বছরের জন্য জামিনদারসহ বা ছাড়া একটি মুচলেকা সম্পাদনের আদেশ দেওয়া হবে না, এর কারণ দর্শাতে বলতে পারে। প্রয়োজনে কোনো এখতিয়ারবিহীন ম্যাজিস্ট্রেট কারণ লিপিবদ্ধ করে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন এবং কারণসহ উপযুক্ত ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠাতে পারেন।
tanzimlaw@yahoo.com
No comments