বাপের কাছে একজন ‘গরিব’ সন্তানের একান্ত ব্যক্তিগত বাজেট পেশ-গরিব সন্তানের বাজেট ২০১১-১২ by নাফিস চৌধুরী
মাননীয় আব্বা, আপনাকে সালাম জানিয়ে আমার এই বাজেট বয়ান শুরু করছি। আজ আমি আগামী অর্থবছরের জন্য আমার একান্ত ব্যক্তিগত বাজেট পেশ করছি। প্রথমেই শিক্ষা খাত, আব্বা, শিক্ষা হইল জাতির মেরুদণ্ড। Education is the... মেরুদণ্ডের ইংলিশটা ভুলে গেছি... সে যাক, দুই বছর ধরে আমি সাফল্যের সঙ্গে অত্যন্ত চমৎকার ফলাফল করে
আসছি। এখন পর্যন্ত আমি মাত্র ১৮টা কোর্স রিটেক করছি, যা কিনা আমার বন্ধু মহলের মধ্যে সর্বনিম্ন! সে অনুপাতে আগামী বছর আমার কমপক্ষে আরও নয়টা রিটেক লাগবে। এ জন্য আপনি কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখবেন।
এরপর খাদ্য খাত,
আব্বা, দুঃখের কথা কী বলব! দুইটা বছর ধরে ভার্সিটিতে প্রত্যেক দিন মাত্র একটা বার্গার আর একটা হটডগ খেয়ে কোনোমতে বেঁচে আছি! এত কম খেয়ে পড়ালেখায় মন কীভাবে দেব, আব্বা? তাই বলছি, আগামী বছরের জন্য প্রত্যেক দিন ভার্সিটিতে আমি যাতে দুইটা বার্গার, একটা পিৎজা, একটা চিকেন সমুচা, একটা হটডগ খেতে পারি, সেই ব্যবস্থা করেন। এ ছাড়া ছয়টা টাকা বাড়তি দেবেন, আব্বা। কী জন্য, এটা আর বললাম না!
এখন আসি স্বাস্থ্য খাতে,
আব্বা, ছয়টা মাস ধরে আমার হার্টের বাম পাশে চিকন ব্যথা। মলিকে যখন দেখি তখন সেই ব্যথা আরও বেড়ে যায়। আব্বা গো, আমার মনের মধ্যে কী যে সুনামি, এইটা আপনি বুঝবেন না। কবির ভাষায়, ‘ওরে হারাই হারাই সদা হয় ভয়, হারাইয়া ফেলি চকিতে!’ তাই মলিকে উপযুক্ত গিফটের মাধ্যমে পটাইয়া যাতে আমি এই দুরারোগ্য ব্যাধি হতে মুক্তি পাই, সেই ব্যবস্থা করার দায়িত্ব আপনার হাতে!
এখন আসি ক্রীড়া খাতে,
আব্বা, আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাইতেছি যে, উল্লেখযোগ্য অর্থ বরাদ্দের অভাবে ক্রীড়াক্ষেত্রে আমি দিন দিন পিছিয়ে পড়ছি। কয়েক বছর আগে যে রাজীব ‘স্নুকার’ খেলায় আমার ধারেকাছেই আইতে পারত না, সেই ছেলের কাছে গত সপ্তাহে আমি ৫০০ ট্যাকা বাজিতে হেরেছি। এভাবে চলতে থাকলে আমার ও আমার পরিবারের মান-ইজ্জত ধুলায় মিশে যাবে। আপনে গ্রামে মুখ দেখাতে পারবেন না। রাজীবের এই সাফল্যের রহস্য হলো, সে সপ্তাহের সাত দিনই ক্লাবে গিয়ে খেলে আর আমি টাকার অভাবে সপ্তাহে মাত্র তিন-চার দিন খেলতে পারি। আপনি ক্রীড়াক্ষেত্রে বিশেষ বরাদ্দের ব্যবস্থা রাখলে আমি প্রত্যেক দিন খেলে ও প্রশিক্ষণ নিয়ে ওই বড়লোকের কুলাঙ্গার সন্তানকে হারিয়ে আপনার ও আমার গ্রামের ইজ্জত রক্ষা করতে পারব!
এখন আসি বিনোদন খাতে,
বিনোদনের কথা আর কী বলব! বিনোদনের অভাবে আমার এই জীবন মরুভূমিতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে, আব্বা। সিনে কমপ্লেক্সে গিয়ে সপ্তাহে একটার বেশি সিনেমা আমি দেখতে পারি না। মাসে ডিভিডি কিনে বড়জোর ৩০-৪০টা সিনেমা দেখতে পারি। কোনো কোনো মাসে আরও কম! বুঝি আর না বুঝি, ইদানীং ইংলিশ ব্যাটাগো মুভি না দেখলে বন্ধুদের কাছে ইজ্জত থাকে না। আমি এই সমস্যার আশু সমাধান কামনা করছি...।
মাঝেমধ্যে আপনার কথা খুব মনে পড়ে। সেই যে ছোটবেলায় আপনি আমাকে পুকুরে নামিয়ে গোসল করাতেন, আহ্, সেসব কথা মনে পড়লে আমার চোখের পানিতেই পুকুর হয়ে যায়! আমার তখন ইচ্ছা করে পুকুরে নেমে গোসল করি। কিন্তু এই মরুভূমি শহরে পুকুর তো দূরের কথা, বাথরুমের বালতিতেও পানি থাকে না। তাই মাঝেমধ্যে সুইমিং পুলে গিয়ে দুইটা ডুবসাঁতার না দিলে প্রাণে শান্তি পাই না। এই বিষয়ে একটু খেয়াল রাখবেন!
এরপর আসি তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে,
আব্বা, এখন ইন্টারনেটের যুগ। সাধারণ মডেম দিয়ে ইন্টারনেট ব্রাউজ করা যায়? পেজ লোড হতে হতে চোখ ঘুমে লোড হয়ে যায়। আগে অ্যাঞ্জেলিনা জোলিকে ডাউনলোড দিলে বুড়ো হয়ে আসত, আর এখন আসে তাঁর লাশ। তাই আগামী অর্থবছরে আমার জন্য একটা ১ এমবিপিএস স্পিডের ওয়াইম্যাক্স মডেম ও কার্ডের জন্য মাসে ন্যূনতম এক হাজার ২০০ টাকা বরাদ্দ রাখবেন। না হলে ফেসবুক পেজ ‘আমরা বড়লোক বাপের গরিব সন্তান’ চালানো কষ্টকর হয়ে পড়বে। এ ছাড়া ডেস্কটপ কম্পিউটারের কারণে ঘরের বাইরে গেলে আমি বহির্বিশ্বের সঙ্গে এক প্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি। ফলে আমার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আজ হুমকির মুখে। একটা ল্যাপটপ থাকলে আজ আমার এই দশা হতো না। বিষয়টা ভেবে দেখার অনুরোধ রইল।
পরিশেষে, বিগত দিনগুলোয় আমি যে দুর্ভোগ, দুর্দশায় ছিলাম, আশা করছি, আসছে বছরে এই বাজেট অনুমোদনের মাধ্যমে আমার সেই দুঃখের দিনগুলোর অবসান ঘটবে।
আপনাকে ধন্যবাদ।
এরপর খাদ্য খাত,
আব্বা, দুঃখের কথা কী বলব! দুইটা বছর ধরে ভার্সিটিতে প্রত্যেক দিন মাত্র একটা বার্গার আর একটা হটডগ খেয়ে কোনোমতে বেঁচে আছি! এত কম খেয়ে পড়ালেখায় মন কীভাবে দেব, আব্বা? তাই বলছি, আগামী বছরের জন্য প্রত্যেক দিন ভার্সিটিতে আমি যাতে দুইটা বার্গার, একটা পিৎজা, একটা চিকেন সমুচা, একটা হটডগ খেতে পারি, সেই ব্যবস্থা করেন। এ ছাড়া ছয়টা টাকা বাড়তি দেবেন, আব্বা। কী জন্য, এটা আর বললাম না!
এখন আসি স্বাস্থ্য খাতে,
আব্বা, ছয়টা মাস ধরে আমার হার্টের বাম পাশে চিকন ব্যথা। মলিকে যখন দেখি তখন সেই ব্যথা আরও বেড়ে যায়। আব্বা গো, আমার মনের মধ্যে কী যে সুনামি, এইটা আপনি বুঝবেন না। কবির ভাষায়, ‘ওরে হারাই হারাই সদা হয় ভয়, হারাইয়া ফেলি চকিতে!’ তাই মলিকে উপযুক্ত গিফটের মাধ্যমে পটাইয়া যাতে আমি এই দুরারোগ্য ব্যাধি হতে মুক্তি পাই, সেই ব্যবস্থা করার দায়িত্ব আপনার হাতে!
এখন আসি ক্রীড়া খাতে,
আব্বা, আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাইতেছি যে, উল্লেখযোগ্য অর্থ বরাদ্দের অভাবে ক্রীড়াক্ষেত্রে আমি দিন দিন পিছিয়ে পড়ছি। কয়েক বছর আগে যে রাজীব ‘স্নুকার’ খেলায় আমার ধারেকাছেই আইতে পারত না, সেই ছেলের কাছে গত সপ্তাহে আমি ৫০০ ট্যাকা বাজিতে হেরেছি। এভাবে চলতে থাকলে আমার ও আমার পরিবারের মান-ইজ্জত ধুলায় মিশে যাবে। আপনে গ্রামে মুখ দেখাতে পারবেন না। রাজীবের এই সাফল্যের রহস্য হলো, সে সপ্তাহের সাত দিনই ক্লাবে গিয়ে খেলে আর আমি টাকার অভাবে সপ্তাহে মাত্র তিন-চার দিন খেলতে পারি। আপনি ক্রীড়াক্ষেত্রে বিশেষ বরাদ্দের ব্যবস্থা রাখলে আমি প্রত্যেক দিন খেলে ও প্রশিক্ষণ নিয়ে ওই বড়লোকের কুলাঙ্গার সন্তানকে হারিয়ে আপনার ও আমার গ্রামের ইজ্জত রক্ষা করতে পারব!
এখন আসি বিনোদন খাতে,
বিনোদনের কথা আর কী বলব! বিনোদনের অভাবে আমার এই জীবন মরুভূমিতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে, আব্বা। সিনে কমপ্লেক্সে গিয়ে সপ্তাহে একটার বেশি সিনেমা আমি দেখতে পারি না। মাসে ডিভিডি কিনে বড়জোর ৩০-৪০টা সিনেমা দেখতে পারি। কোনো কোনো মাসে আরও কম! বুঝি আর না বুঝি, ইদানীং ইংলিশ ব্যাটাগো মুভি না দেখলে বন্ধুদের কাছে ইজ্জত থাকে না। আমি এই সমস্যার আশু সমাধান কামনা করছি...।
মাঝেমধ্যে আপনার কথা খুব মনে পড়ে। সেই যে ছোটবেলায় আপনি আমাকে পুকুরে নামিয়ে গোসল করাতেন, আহ্, সেসব কথা মনে পড়লে আমার চোখের পানিতেই পুকুর হয়ে যায়! আমার তখন ইচ্ছা করে পুকুরে নেমে গোসল করি। কিন্তু এই মরুভূমি শহরে পুকুর তো দূরের কথা, বাথরুমের বালতিতেও পানি থাকে না। তাই মাঝেমধ্যে সুইমিং পুলে গিয়ে দুইটা ডুবসাঁতার না দিলে প্রাণে শান্তি পাই না। এই বিষয়ে একটু খেয়াল রাখবেন!
এরপর আসি তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে,
আব্বা, এখন ইন্টারনেটের যুগ। সাধারণ মডেম দিয়ে ইন্টারনেট ব্রাউজ করা যায়? পেজ লোড হতে হতে চোখ ঘুমে লোড হয়ে যায়। আগে অ্যাঞ্জেলিনা জোলিকে ডাউনলোড দিলে বুড়ো হয়ে আসত, আর এখন আসে তাঁর লাশ। তাই আগামী অর্থবছরে আমার জন্য একটা ১ এমবিপিএস স্পিডের ওয়াইম্যাক্স মডেম ও কার্ডের জন্য মাসে ন্যূনতম এক হাজার ২০০ টাকা বরাদ্দ রাখবেন। না হলে ফেসবুক পেজ ‘আমরা বড়লোক বাপের গরিব সন্তান’ চালানো কষ্টকর হয়ে পড়বে। এ ছাড়া ডেস্কটপ কম্পিউটারের কারণে ঘরের বাইরে গেলে আমি বহির্বিশ্বের সঙ্গে এক প্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি। ফলে আমার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আজ হুমকির মুখে। একটা ল্যাপটপ থাকলে আজ আমার এই দশা হতো না। বিষয়টা ভেবে দেখার অনুরোধ রইল।
পরিশেষে, বিগত দিনগুলোয় আমি যে দুর্ভোগ, দুর্দশায় ছিলাম, আশা করছি, আসছে বছরে এই বাজেট অনুমোদনের মাধ্যমে আমার সেই দুঃখের দিনগুলোর অবসান ঘটবে।
আপনাকে ধন্যবাদ।
No comments