২৮৪ কার্যদিবসে ৭১৬ প্রস্তাব অনুপস্থিতির কারণে একটিও গৃহীত হয়নি-মুলতবি প্রস্তাব দিয়ে সংসদে থাকছে না বিএনপি by হারুন আল রশীদ
সংসদের ২৮৪ কার্যদিবসে বিএনপি মুলতবি প্রস্তাব দিয়েছে ৭১৬টি। তবে প্রধান বিরোধী দলটি উপস্থিত থেকেছে মাত্র ৫৪ দিন। প্রস্তাব দিয়ে সংসদে অনুপস্থিত থাকায় স্পিকারের বিবেচনায় এগুলো অগ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। ফলে একটি প্রস্তাবও গ্রহণ করা হয়নি।
সংসদ সচিবালয়-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিএনপি কার্যপ্রণালি বিধির শর্তানুযায়ী অগ্রহণযোগ্য বিষয়ে নোটিশ দিয়েছে। মুলতবি প্রস্তাব ছাড়া অন্য বিধিতে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা যেত। কিন্তু বিএনপি তা করেনি। আবার মুলতবি প্রস্তাব হিসেবে কিছু নোটিশ গ্রহণ করার মতো হলেও ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা হবে বিবেচনা করে স্পিকার সেগুলো গ্রহণ করেননি।
মুলতবি প্রস্তাব হচ্ছে, সংসদের দিনের কাজ মুলতবি করে সাম্প্রতিক ও জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করা। প্রশ্নোত্তর পর্বের পরে অথবা দিনের কার্যসূচিতে যাওয়ার আগে মুলতবি প্রস্তাব উত্থাপনের অনুমতি প্রার্থনা করতে হয়। দিনের বৈঠক শুরু হওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে এ-সংক্রান্ত নোটিশ সচিবের কাছে পাঠাতে হবে। সচিব সেই নোটিশ স্পিকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর গোচরে আনবেন। তবে বিধি অনুযায়ী, পৃথক প্রস্তাব দ্বারা উত্থাপনযোগ্য এবং আইনের মাধ্যমে প্রতিকারযোগ্য বিষয়ে মুলতবি প্রস্তাব উত্থাপন করা যাবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদবিষয়ক গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিজামউদ্দিন আহমদ বলেন, বিরোধী দলকে সতর্কভাবে বিষয় বিবেচনা করে মুলতবি প্রস্তাব দিতে হবে এবং সংসদে উপস্থিত থাকতে হবে। সংসদে উপস্থিত না থেকে মুলতবির নোটিশ দেওয়া অর্থহীন। তিনি বলেন, বিরোধী দল যৌক্তিক-অযৌক্তিক বিবেচনা না করে জেদের বশবর্তী হয়ে অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে বেশি নোটিশ দিয়ে ফেলেছে। অথচ এসব বিষয়ে ৭১ বিধিতেও আলোচনা করা যেত।
অধিবেশনের কার্যপ্রবাহের সারাংশ থেকে জানা গেছে, নবম সংসদের ১১টি অধিবেশনে বিএনপি মোট ৬৪০টি মুলতবি প্রস্তাব জমা দিয়েছে। প্রথম অধিবেশনে ৭১, দ্বিতীয় অধিবেশনে পাঁচ, তৃতীয় অধিবেশনে ৩৬, চতুর্থ অধিবেশনে ৯৯, পঞ্চম অধিবেশনে ১৫, ষষ্ঠ অধিবেশনে ৩৫, সপ্তম অধিবেশনে ১৩৮, অষ্টম অধিবেশনে ১৪৪, নবম অধিবেশনে ৩৪, দশম অধিবেশনে ১১ এবং একাদশ অধিবেশনে ৫২টি প্রস্তাব জমা দিয়েছে। সর্বশেষ চলতি দ্বাদশ অধিবেশনে দিয়েছে ৭৬টি প্রস্তাব।
প্রস্তাবের বিষয় ছিল: নির্বাচনোত্তর সহিংসতা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দলীয় চেয়ারপারসনের গ্রেপ্তার হওয়া, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি, ভারতের একতরফা অভিন্ন নদীর পানি প্রত্যাহার, বিডিআর (বিজিবি) অসন্তোষ, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ, বিষাক্ত ওষুধ, সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, শেয়ারবাজারে অনিয়ম, নতুন আবাসনে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ না দেওয়া, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, সেনানিবাসের বাড়ি থেকে খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদ, ভারতের সঙ্গে সর্বশেষ সম্পাদিত তিনটি চুক্তি, বিমানে লোকসান, গুপ্তহত্যা, পোশাক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ, ওয়ারিদ টেলিকমের শেয়ার হস্তান্তর কেলেঙ্কারি, রাজধানীর গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া, পৌর নির্বাচনে ভোট কারচুপি, বিরোধী দলের সমাবেশে বাধা, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ইত্যাদি।
সংসদ সচিবালয়ের হিসাবে বিরোধী দল দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, নবম, দশম, একাদশ এবং চলতি দ্বাদশ অধিবেশনে পুরোপুরিই অনুপস্থিত। আর যে কয় দিন সংসদে উপস্থিত ছিল, তখনো মুলতবি প্রস্তাব গ্রহণের ব্যাপারে জোরালো কোনো দাবি উত্থাপন করা হয়নি।
তবে বাংলাদেশ-ভারত চুক্তি, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি এবং গুপ্তহত্যাসহ বেশ কিছু বিষয়ে মুলতবি প্রস্তাব গ্রহণ করার মতো ছিল। কিন্তু সরকারের সমালোচনা হবে ভেবে স্পিকার সেগুলো গ্রহণ করেননি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে স্পিকার আবদুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপি এখন পর্যন্ত যেসব মুলতবি প্রস্তাব দিয়েছে, তার বেশির ভাগই অন্য বিধিতে আলোচনা করা সম্ভব। যা-তা বিষয়কে মুলতবি প্রস্তাব হিসেবে গ্রহণ করে তো দিনের নির্ধারিত কাজ বন্ধ রাখা সম্ভব নয়। তাদের দু-একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা যেত। এ জন্য রেওয়াজ অনুযায়ী, হাউসে দাঁড়িয়ে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। তারপর আলোচনা করে দিনক্ষণ ঠিক করতে হবে। কিন্তু বিরোধী দল প্রস্তাব দিয়ে হাউসে উপস্থিত থাকছে না। কীভাবে তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে?’
চলতি অধিবেশনে বিরোধী দল ৭৬টি মুলতবি প্রস্তাব দিয়েছে। এগুলো স্পিকার ১৩ মার্চ নিষ্পত্তি করেছেন। কাজেই বিএনপি আজ সংসদে যোগ দিলেও নোটিশগুলো নিয়ে আলোচনার আর কোনো সুযোগ নেই।
যোগাযোগ করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, স্পিকার বিরোধী দলকে সামান্যতম সুযোগ না দিয়ে নিজের সুবিধামতো সময়ে নোটিশ নিষ্পত্তি করছেন। গ্রহণ করার মতো কোনো প্রস্তাব থাকলে তা নিয়ে আলোচনার দিনক্ষণ ঠিক করলে বিএনপি অবশ্যই সংসদে উপস্থিত থাকবে।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, সর্বশেষ বিএনপি আমলে পঞ্চম সংসদে পাঁচটি মুলতবি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। এগুলো হচ্ছে: গোলাম আযমের বিচার, উত্তরবঙ্গে মঙ্গা, সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের হাতে ছাত্র খুন ইত্যাদি।
এরপর সপ্তম ও অষ্টম সংসদে কোনো মুলতবি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়নি। অষ্টম সংসদে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলার পর সেই সময়ের বিরোধীদলীয় উপনেতা আবদুল হামিদ মুলতবি প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তখনকার স্পিকার জমিরউদ্দিন সরকার তা গ্রহণ করেননি।
মুলতবি প্রস্তাব হচ্ছে, সংসদের দিনের কাজ মুলতবি করে সাম্প্রতিক ও জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করা। প্রশ্নোত্তর পর্বের পরে অথবা দিনের কার্যসূচিতে যাওয়ার আগে মুলতবি প্রস্তাব উত্থাপনের অনুমতি প্রার্থনা করতে হয়। দিনের বৈঠক শুরু হওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে এ-সংক্রান্ত নোটিশ সচিবের কাছে পাঠাতে হবে। সচিব সেই নোটিশ স্পিকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর গোচরে আনবেন। তবে বিধি অনুযায়ী, পৃথক প্রস্তাব দ্বারা উত্থাপনযোগ্য এবং আইনের মাধ্যমে প্রতিকারযোগ্য বিষয়ে মুলতবি প্রস্তাব উত্থাপন করা যাবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদবিষয়ক গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিজামউদ্দিন আহমদ বলেন, বিরোধী দলকে সতর্কভাবে বিষয় বিবেচনা করে মুলতবি প্রস্তাব দিতে হবে এবং সংসদে উপস্থিত থাকতে হবে। সংসদে উপস্থিত না থেকে মুলতবির নোটিশ দেওয়া অর্থহীন। তিনি বলেন, বিরোধী দল যৌক্তিক-অযৌক্তিক বিবেচনা না করে জেদের বশবর্তী হয়ে অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে বেশি নোটিশ দিয়ে ফেলেছে। অথচ এসব বিষয়ে ৭১ বিধিতেও আলোচনা করা যেত।
অধিবেশনের কার্যপ্রবাহের সারাংশ থেকে জানা গেছে, নবম সংসদের ১১টি অধিবেশনে বিএনপি মোট ৬৪০টি মুলতবি প্রস্তাব জমা দিয়েছে। প্রথম অধিবেশনে ৭১, দ্বিতীয় অধিবেশনে পাঁচ, তৃতীয় অধিবেশনে ৩৬, চতুর্থ অধিবেশনে ৯৯, পঞ্চম অধিবেশনে ১৫, ষষ্ঠ অধিবেশনে ৩৫, সপ্তম অধিবেশনে ১৩৮, অষ্টম অধিবেশনে ১৪৪, নবম অধিবেশনে ৩৪, দশম অধিবেশনে ১১ এবং একাদশ অধিবেশনে ৫২টি প্রস্তাব জমা দিয়েছে। সর্বশেষ চলতি দ্বাদশ অধিবেশনে দিয়েছে ৭৬টি প্রস্তাব।
প্রস্তাবের বিষয় ছিল: নির্বাচনোত্তর সহিংসতা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দলীয় চেয়ারপারসনের গ্রেপ্তার হওয়া, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি, ভারতের একতরফা অভিন্ন নদীর পানি প্রত্যাহার, বিডিআর (বিজিবি) অসন্তোষ, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ, বিষাক্ত ওষুধ, সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, শেয়ারবাজারে অনিয়ম, নতুন আবাসনে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ না দেওয়া, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, সেনানিবাসের বাড়ি থেকে খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদ, ভারতের সঙ্গে সর্বশেষ সম্পাদিত তিনটি চুক্তি, বিমানে লোকসান, গুপ্তহত্যা, পোশাক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ, ওয়ারিদ টেলিকমের শেয়ার হস্তান্তর কেলেঙ্কারি, রাজধানীর গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া, পৌর নির্বাচনে ভোট কারচুপি, বিরোধী দলের সমাবেশে বাধা, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ইত্যাদি।
সংসদ সচিবালয়ের হিসাবে বিরোধী দল দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, নবম, দশম, একাদশ এবং চলতি দ্বাদশ অধিবেশনে পুরোপুরিই অনুপস্থিত। আর যে কয় দিন সংসদে উপস্থিত ছিল, তখনো মুলতবি প্রস্তাব গ্রহণের ব্যাপারে জোরালো কোনো দাবি উত্থাপন করা হয়নি।
তবে বাংলাদেশ-ভারত চুক্তি, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি এবং গুপ্তহত্যাসহ বেশ কিছু বিষয়ে মুলতবি প্রস্তাব গ্রহণ করার মতো ছিল। কিন্তু সরকারের সমালোচনা হবে ভেবে স্পিকার সেগুলো গ্রহণ করেননি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে স্পিকার আবদুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপি এখন পর্যন্ত যেসব মুলতবি প্রস্তাব দিয়েছে, তার বেশির ভাগই অন্য বিধিতে আলোচনা করা সম্ভব। যা-তা বিষয়কে মুলতবি প্রস্তাব হিসেবে গ্রহণ করে তো দিনের নির্ধারিত কাজ বন্ধ রাখা সম্ভব নয়। তাদের দু-একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা যেত। এ জন্য রেওয়াজ অনুযায়ী, হাউসে দাঁড়িয়ে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। তারপর আলোচনা করে দিনক্ষণ ঠিক করতে হবে। কিন্তু বিরোধী দল প্রস্তাব দিয়ে হাউসে উপস্থিত থাকছে না। কীভাবে তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে?’
চলতি অধিবেশনে বিরোধী দল ৭৬টি মুলতবি প্রস্তাব দিয়েছে। এগুলো স্পিকার ১৩ মার্চ নিষ্পত্তি করেছেন। কাজেই বিএনপি আজ সংসদে যোগ দিলেও নোটিশগুলো নিয়ে আলোচনার আর কোনো সুযোগ নেই।
যোগাযোগ করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, স্পিকার বিরোধী দলকে সামান্যতম সুযোগ না দিয়ে নিজের সুবিধামতো সময়ে নোটিশ নিষ্পত্তি করছেন। গ্রহণ করার মতো কোনো প্রস্তাব থাকলে তা নিয়ে আলোচনার দিনক্ষণ ঠিক করলে বিএনপি অবশ্যই সংসদে উপস্থিত থাকবে।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, সর্বশেষ বিএনপি আমলে পঞ্চম সংসদে পাঁচটি মুলতবি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। এগুলো হচ্ছে: গোলাম আযমের বিচার, উত্তরবঙ্গে মঙ্গা, সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের হাতে ছাত্র খুন ইত্যাদি।
এরপর সপ্তম ও অষ্টম সংসদে কোনো মুলতবি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়নি। অষ্টম সংসদে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলার পর সেই সময়ের বিরোধীদলীয় উপনেতা আবদুল হামিদ মুলতবি প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তখনকার স্পিকার জমিরউদ্দিন সরকার তা গ্রহণ করেননি।
No comments