সুশাসন-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংস্কার by বদিউল আলম মজুমদার
নির্বাচনী অপরাধের প্রায় সবগুলোরই উৎস রাজনৈতিক দল, তাদের মনোনীত প্রার্থী ও দলের নেতাকর্মীরা। দল ও দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাই মনোনয়ন বাণিজ্যে লিপ্ত হয়, টাকা দিয়ে ভোট কেনে, পেশিশক্তি ব্যবহার করে এবং আরও অনেক ধরনের অসদাচরণে লিপ্ত হয়।
তাই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে রাজনৈতিক দলের ব্যাপক সংস্কার করা আবশ্যক, যা আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিষয়টি আলোচনার মধ্যেই নেই
গণতন্ত্র আমাদের সাংবিধানিক অঙ্গীকার। বস্তুত এটি আমাদের সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ, যার ফলে এটি সংবিধান থেকে বাদ দেওয়া সম্ভবপর নয়। আর গণতান্ত্রিক যাত্রাপথের সূচনা হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। তবে নির্বাচন হলেই হবে না, এটি হতে হবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। কারণ বিতর্কিত নির্বাচন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য চরম হুমকির সৃষ্টি করে।
সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বেশ কিছু সুদূরপ্রসারী সংস্কার আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংস্কার, রাজনৈতিক দলের বাধ্যতামূলক নিবন্ধন ও সংস্কার, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, প্রার্থীদের সম্পর্কে ভোটারদের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা ইত্যাদি এসব সংস্কারের অংশ। এছাড়াও ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা তৈরি এবং নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ ছিল ওই সময়কার বড় অর্জন। এসব পরিবর্তনের ফলে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সফল হয়েছে বলে অনেকের ধারণা। প্রসঙ্গত, 'সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক' সংস্কার ধারণাগুলো আইনের খসড়া হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে প্রদানের পাশাপাশি এগুলো সম্পর্কে জনমত সৃষ্টি করেছে।
তবে গত কয়েক বছরের অর্জনকে 'কনসলিডেট' বা সুসংহত করতে হলে সংস্কার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে। আরও অনেক সংস্কার আইনি কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং একইসঙ্গে এগুলো চর্চায় আনতে হবে। এ লক্ষ্যে বিদায়ী নির্বাচন কমিশন কতগুলো নতুন প্রস্তাব রেখে গেছে :
১. কোনো আদালত ও ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক পলাতক ঘোষিত, মনোনয়নপত্র বা হলফনামায় সজ্ঞানে মিথ্যা তথ্য প্রদান বা তথ্য গোপনকারীদের সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণার প্রস্তাব করা হয়েছে (ধারা ১২)।
২. প্রাথমিকভাবে কোনো দল থেকে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হলে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগেই দল থেকে যে কোনো একজনকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে (ধারা ১৬)। এ ক্ষেত্রে দল থেকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পাওয়া বাকি প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যাবে। (নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর দৌরাত্ম্য কমানোর লক্ষ্যে এ প্রস্তাব করা হলেও এর মাধ্যমে মনোনয়ন বাণিজ্যের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে বলে আমাদের আশঙ্কা।)
৩. জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম প্রবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে (২৬ ধারা)। তবে নির্বাচনে দুটি পদ্ধতি ব্যবহারের পথই_ বর্তমান পদ্ধতি ও ইভিএম, খোলা রাখা হয়েছে।
৪. নির্বাচনী ব্যয়সীমা ১৫ লাখের পরিবর্তে ২৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে (৪৪বি ধারা)। আরও প্রস্তাব করা হয়েছে দৈনিক নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব পরিবীক্ষণের। এছাড়া প্রত্যেক প্রার্থী বা তার এজেন্টকে প্রতি সাত দিন অন্তর নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব দাখিল করার প্রস্তাব করা হয়েছে। (বর্তমানে সংসদ নির্বাচনে কোনো প্রার্থীই নির্বাচনী ব্যয়সীমা মানেন না। অনেক প্রার্থী কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেন। এমতাবস্থায় নির্বাচনী ব্যয়সীমা বৃদ্ধির আমরা কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাই না।)
৫. দলীয় মনোনয়নে ৫১ থেকে ১০০ জন সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে এমন দলের সর্বোচ্চ ব্যয়সীমা ৭৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে এক কোটি ৫০ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে (৪৪সি ধারা)। (রাজনৈতিক দলগুলোও নির্বাচনী ব্যয়সীমা মানে না, তাই এ ক্ষেত্রেও ব্যয়সীমা বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নেই।)
৬. আরপিওর ৭৩, ৭৮, ৭৯ ও ৮০ ধারায় নির্ধারিত নির্বাচনী অপরাধের শাস্তি কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে এগুলোর বিচার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা যায়।
৭. হলফনামায় মিথ্যা তথ্য প্রদানের দায়ে নির্বাচন-পরবর্তীকালে সংসদ সদস্যপদ বাতিলের বিধান যুক্তের প্রস্তাব করা হয়েছে (৯০এফ ধারা)।
৮. সংসদ ভেঙে যাওয়ার দিন থেকে পরবর্তী সরকার গঠন পর্যন্ত সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পূর্বালোচনা ব্যতীত নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত যেন নিতে না পারে সে প্রস্তাব করা হয়েছে (ধারা ৪৪ই)। (এ প্রস্তাবটি সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হবে না। এছাড়াও নির্বাচন পরিচালনার লক্ষ্যে গঠিত বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কমিশনের মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব গ্রহণ ক্ষমতার পৃথক্করণের নীতিমালার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।)
উপরন্তু বিদায়ী নির্বাচন কমিশন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার (নিয়োগ পদ্ধতি) আইন শিরোনামে একটি আইনের খসড়া প্রস্তুত করে রেখে গেছে। আইনের খসড়ায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারের যোগ্যতা-অযোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। একটি অনুসন্ধান কমিটি এবং কমিটির সুপারিশ সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বিবেচনা সাপেক্ষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও নিয়োগের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণের বিধান এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আইনের এ খসড়া এবং বিদ্যমান আইন সংশোধনের লক্ষ্যে উপরোক্ত প্রস্তাবগুলো নতুন কমিশনের কাজকে অনেক সহজ করে দেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
নির্বাচন কমিশনের উপরোক্ত প্রস্তাবের সঙ্গে আমরা 'সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিকে'র পক্ষ থেকে কতগুলো নতুন বিষয় সংযোজন করা প্রয়োজন বলে মনে করি :
১. গত জাতীয় নির্বাচনে 'না ভোটে'র বিধান কার্যকর থাকলেও, নবম জাতীয় সংসদ আরপিও থেকে এটি বাদ দেওয়া হয়। আমরা না ভোটের বিধান আরপিওতে পুনঃসংযোজনের প্রস্তাব করছি।
২. গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সংশোধিত আরপিওতে নিবন্ধিত দলের তৃণমূলের কমিটিগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে তৈরি প্যানেল থেকে দল কর্তৃক মনোনয়নের বিধান ছিল। কিন্তু নবম সংসদ এটি রহিত করে প্যানেলটি শুধু বিবেচনায় নেওয়ার বিধান আরপিওতে অন্তর্ভুক্ত করে। এর মাধ্যমে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রভাবিত করার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়, যদিও এ ব্যাপারে তাদের পক্ষ থেকে কোনোরূপ উচ্চবাচ্য নেই। এছাড়াও এর মাধ্যমে মনোনয়ন বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তাই আমরা আরপিওর ৯০বি(১)(বি)(রা)-এর সংশোধন করে এ ক্ষমতা দলের সদস্যদের ফিরিয়ে দেওয়ার এবং তাদের প্রতি দলের দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করছি। আরেকটি বিকল্প প্রস্তাব_ তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই দলের মনোনয়ন চূড়ান্ত করবে।
৩. আদালতের নির্দেশে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের হলফনামার মাধ্যমে তথ্য প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু প্রদত্ত তথ্য সঠিক ও বিভ্রান্তিমুক্ত হতে হবে। তাই নির্বাচন কমিশনের চুলচেরাভাবে তথ্যের সঠিকতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে আমরা আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব করছি।
৪. সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্য হলো এগুলো ভোটারদের কাছে সময়মতো পেঁৗছে দেওয়া, যাতে তারা জেনে-শুনে-বুঝে সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের পক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। কিন্তু প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের দিন থেকে নির্বাচনের দিনের সময়ের ব্যবধান সর্বোচ্চ সপ্তাহ দুই। এ সীমিত সময়ের মধ্যে কয়েক হাজার প্রার্থীর তথ্য সংকলিত করে ভোটারদের কাছে যথাসময়ে পেঁৗছে দেওয়া অত্যন্ত দুরূহ কাজ। তাই আমরা প্রস্তাব করছি যে, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলফনামা ও আয়কর রিটার্নসহ কমিশনে তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের অভিপ্রায় লিখিতভাবে (ইনটেন্ড টু রান) দাখিল করবেন, যা কমিশন প্রকাশ করবে। অথবা রাজনৈতিক দলও যাদের মনোনয়নের জন্য বিবেচনা করছে, তাদের তথ্য দল প্রকাশ করতে পারে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নিজেরা তা করতে পারেন। এর ফলে তথ্য যাচাই-বাছাই করার পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যাবে।
৫. আমরা মনোনয়নপত্র, হলফনামা, নির্বাচনের সম্ভাব্য ব্যয়ের হিসাবসহ সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্টগুলো ইলেকট্রনিক্যালি (অন-লাইনে) জমা দেওয়ার বিধান আইনে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করছি। সুপারিশ করছি 'কাউন্টার অ্যাফিডেভিট' বা বিরুদ্ধ হলফনামা প্রদানের বিধানটি আইনে অন্তর্ভুক্ত করার। প্রসঙ্গত, বিরুদ্ধ হলফনামা প্রদানের বিধানটি নির্বাচন কমিশনের ১৭/১১/০৮ তারিখে জারি করা পরিপত্র-৮ দ্বারা গত সংসদ নির্বাচনে কার্যকর করা হয়। এ ব্যাপারে এখন জনসচেতনতা সৃষ্টি প্রয়োজন।
৬. 'জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন আইন, ২০০৪' সংশোধন করে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে আরপিওর ১২ ধারার অন্তর্ভুক্ত অনুরূপ হলফনামা ও আয়কর রিটার্নের কপি জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা আবশ্যক। হলফনামার ছকটিও নতুন করে তৈরির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে আমরা মনে করি।
৭. আরপিওর ১২ ধারা অনুযায়ী, ইস্তফাদানকারী বা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য ইস্তফাদানের বা অবসরের পর তিন বছর অপেক্ষা, মনোনয়ন লাভের জন্য দলে যোগদানের পর তিন বছর অপেক্ষার বিধান রয়েছে। তিন বছর অপেক্ষা করার এ বিধানকে কার্যকর করতে হলে দলের পক্ষ থেকে তাদের সদস্যের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ ও নিয়মিত আপডেট করতে হবে।
৮. বর্তমানে রাষ্ট্রপতি ও সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব। আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দায়িত্বও কমিশনের ওপর অর্পণ করার সুপারিশ করছি।
৯. রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সংসদীয় এলাকার সীমানা নির্ধারণ নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব (অনুচ্ছেদ-১১৯)। এর জন্য কমিশনকে স্বাধীনতা দিতে হবে, বিশেষত আর্থিক স্বাধীনতা, যাতে প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে না হয়। এ জন্য কমিশনের ব্যয়কে 'সংযুক্ত তহবিলের ওপর দায়যুক্ত ব্যয়' হিসেবে গণ্য করা আবশ্যক।
১০. নির্বাচনী অপরাধের প্রায় সবগুলোরই উৎস রাজনৈতিক দল, তাদের মনোনীত প্রার্থী ও দলের নেতাকর্মীরা। দল ও দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাই মনোনয়ন বাণিজ্যে লিপ্ত হয়, টাকা দিয়ে ভোট কেনে, পেশিশক্তি ব্যবহার করে এবং আরও অনেক ধরনের অসদাচরণে লিপ্ত হয়। তাই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে রাজনৈতিক দলের ব্যাপক সংস্কার করা আবশ্যক, যা আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিষয়টি আলোচনার মধ্যেই নেই।
১১. নির্বাচনে টাকার খেলা আমাদের রাজনীতিকে আজ লাভজনক ব্যবসায়ে পরিণত করেছে এবং আমাদের গণতন্ত্র হয়ে গেছে 'বেস্ট ডেমোক্র্যাসি মানি ক্যান বাই'। আর আমাদের জাতীয় সংসদ পরিণত হয়েছে ব্যবসায়ীদের আখড়ায়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে আইনের সংশোধনের জন্যও নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগ জরুরি।
১২. রাজনৈতিক দলের প্রদত্ত হিসাব নির্বাচন কমিশনের পক্ষে যাচাই-বাছাই করার বিধান আরপিওতে অন্তর্ভুক্ত করার আমরা প্রস্তাব করছি।
আশা করি নির্বাচন কমিশন এসব প্রস্তাব সনি্নবেশিত করে রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের সঙ্গে যথাশীঘ্র সংলাপ শুরু করবে এবং একটি ঐকমত্যে পেঁৗছবে। আর এ ধরনের ঐকমত্যই ভবিষ্যতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
ড. বদিউল আলম মজুমদার : সম্পাদক সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক
গণতন্ত্র আমাদের সাংবিধানিক অঙ্গীকার। বস্তুত এটি আমাদের সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ, যার ফলে এটি সংবিধান থেকে বাদ দেওয়া সম্ভবপর নয়। আর গণতান্ত্রিক যাত্রাপথের সূচনা হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। তবে নির্বাচন হলেই হবে না, এটি হতে হবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। কারণ বিতর্কিত নির্বাচন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য চরম হুমকির সৃষ্টি করে।
সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বেশ কিছু সুদূরপ্রসারী সংস্কার আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংস্কার, রাজনৈতিক দলের বাধ্যতামূলক নিবন্ধন ও সংস্কার, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, প্রার্থীদের সম্পর্কে ভোটারদের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা ইত্যাদি এসব সংস্কারের অংশ। এছাড়াও ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা তৈরি এবং নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ ছিল ওই সময়কার বড় অর্জন। এসব পরিবর্তনের ফলে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সফল হয়েছে বলে অনেকের ধারণা। প্রসঙ্গত, 'সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক' সংস্কার ধারণাগুলো আইনের খসড়া হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে প্রদানের পাশাপাশি এগুলো সম্পর্কে জনমত সৃষ্টি করেছে।
তবে গত কয়েক বছরের অর্জনকে 'কনসলিডেট' বা সুসংহত করতে হলে সংস্কার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে। আরও অনেক সংস্কার আইনি কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং একইসঙ্গে এগুলো চর্চায় আনতে হবে। এ লক্ষ্যে বিদায়ী নির্বাচন কমিশন কতগুলো নতুন প্রস্তাব রেখে গেছে :
১. কোনো আদালত ও ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক পলাতক ঘোষিত, মনোনয়নপত্র বা হলফনামায় সজ্ঞানে মিথ্যা তথ্য প্রদান বা তথ্য গোপনকারীদের সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণার প্রস্তাব করা হয়েছে (ধারা ১২)।
২. প্রাথমিকভাবে কোনো দল থেকে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হলে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগেই দল থেকে যে কোনো একজনকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে (ধারা ১৬)। এ ক্ষেত্রে দল থেকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পাওয়া বাকি প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যাবে। (নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর দৌরাত্ম্য কমানোর লক্ষ্যে এ প্রস্তাব করা হলেও এর মাধ্যমে মনোনয়ন বাণিজ্যের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে বলে আমাদের আশঙ্কা।)
৩. জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম প্রবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে (২৬ ধারা)। তবে নির্বাচনে দুটি পদ্ধতি ব্যবহারের পথই_ বর্তমান পদ্ধতি ও ইভিএম, খোলা রাখা হয়েছে।
৪. নির্বাচনী ব্যয়সীমা ১৫ লাখের পরিবর্তে ২৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে (৪৪বি ধারা)। আরও প্রস্তাব করা হয়েছে দৈনিক নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব পরিবীক্ষণের। এছাড়া প্রত্যেক প্রার্থী বা তার এজেন্টকে প্রতি সাত দিন অন্তর নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব দাখিল করার প্রস্তাব করা হয়েছে। (বর্তমানে সংসদ নির্বাচনে কোনো প্রার্থীই নির্বাচনী ব্যয়সীমা মানেন না। অনেক প্রার্থী কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেন। এমতাবস্থায় নির্বাচনী ব্যয়সীমা বৃদ্ধির আমরা কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাই না।)
৫. দলীয় মনোনয়নে ৫১ থেকে ১০০ জন সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে এমন দলের সর্বোচ্চ ব্যয়সীমা ৭৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে এক কোটি ৫০ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে (৪৪সি ধারা)। (রাজনৈতিক দলগুলোও নির্বাচনী ব্যয়সীমা মানে না, তাই এ ক্ষেত্রেও ব্যয়সীমা বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নেই।)
৬. আরপিওর ৭৩, ৭৮, ৭৯ ও ৮০ ধারায় নির্ধারিত নির্বাচনী অপরাধের শাস্তি কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে এগুলোর বিচার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা যায়।
৭. হলফনামায় মিথ্যা তথ্য প্রদানের দায়ে নির্বাচন-পরবর্তীকালে সংসদ সদস্যপদ বাতিলের বিধান যুক্তের প্রস্তাব করা হয়েছে (৯০এফ ধারা)।
৮. সংসদ ভেঙে যাওয়ার দিন থেকে পরবর্তী সরকার গঠন পর্যন্ত সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পূর্বালোচনা ব্যতীত নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত যেন নিতে না পারে সে প্রস্তাব করা হয়েছে (ধারা ৪৪ই)। (এ প্রস্তাবটি সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হবে না। এছাড়াও নির্বাচন পরিচালনার লক্ষ্যে গঠিত বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কমিশনের মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব গ্রহণ ক্ষমতার পৃথক্করণের নীতিমালার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।)
উপরন্তু বিদায়ী নির্বাচন কমিশন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার (নিয়োগ পদ্ধতি) আইন শিরোনামে একটি আইনের খসড়া প্রস্তুত করে রেখে গেছে। আইনের খসড়ায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারের যোগ্যতা-অযোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। একটি অনুসন্ধান কমিটি এবং কমিটির সুপারিশ সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বিবেচনা সাপেক্ষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও নিয়োগের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণের বিধান এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আইনের এ খসড়া এবং বিদ্যমান আইন সংশোধনের লক্ষ্যে উপরোক্ত প্রস্তাবগুলো নতুন কমিশনের কাজকে অনেক সহজ করে দেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
নির্বাচন কমিশনের উপরোক্ত প্রস্তাবের সঙ্গে আমরা 'সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিকে'র পক্ষ থেকে কতগুলো নতুন বিষয় সংযোজন করা প্রয়োজন বলে মনে করি :
১. গত জাতীয় নির্বাচনে 'না ভোটে'র বিধান কার্যকর থাকলেও, নবম জাতীয় সংসদ আরপিও থেকে এটি বাদ দেওয়া হয়। আমরা না ভোটের বিধান আরপিওতে পুনঃসংযোজনের প্রস্তাব করছি।
২. গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সংশোধিত আরপিওতে নিবন্ধিত দলের তৃণমূলের কমিটিগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে তৈরি প্যানেল থেকে দল কর্তৃক মনোনয়নের বিধান ছিল। কিন্তু নবম সংসদ এটি রহিত করে প্যানেলটি শুধু বিবেচনায় নেওয়ার বিধান আরপিওতে অন্তর্ভুক্ত করে। এর মাধ্যমে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রভাবিত করার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়, যদিও এ ব্যাপারে তাদের পক্ষ থেকে কোনোরূপ উচ্চবাচ্য নেই। এছাড়াও এর মাধ্যমে মনোনয়ন বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তাই আমরা আরপিওর ৯০বি(১)(বি)(রা)-এর সংশোধন করে এ ক্ষমতা দলের সদস্যদের ফিরিয়ে দেওয়ার এবং তাদের প্রতি দলের দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করছি। আরেকটি বিকল্প প্রস্তাব_ তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই দলের মনোনয়ন চূড়ান্ত করবে।
৩. আদালতের নির্দেশে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের হলফনামার মাধ্যমে তথ্য প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু প্রদত্ত তথ্য সঠিক ও বিভ্রান্তিমুক্ত হতে হবে। তাই নির্বাচন কমিশনের চুলচেরাভাবে তথ্যের সঠিকতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে আমরা আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব করছি।
৪. সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্য হলো এগুলো ভোটারদের কাছে সময়মতো পেঁৗছে দেওয়া, যাতে তারা জেনে-শুনে-বুঝে সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের পক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। কিন্তু প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের দিন থেকে নির্বাচনের দিনের সময়ের ব্যবধান সর্বোচ্চ সপ্তাহ দুই। এ সীমিত সময়ের মধ্যে কয়েক হাজার প্রার্থীর তথ্য সংকলিত করে ভোটারদের কাছে যথাসময়ে পেঁৗছে দেওয়া অত্যন্ত দুরূহ কাজ। তাই আমরা প্রস্তাব করছি যে, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলফনামা ও আয়কর রিটার্নসহ কমিশনে তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের অভিপ্রায় লিখিতভাবে (ইনটেন্ড টু রান) দাখিল করবেন, যা কমিশন প্রকাশ করবে। অথবা রাজনৈতিক দলও যাদের মনোনয়নের জন্য বিবেচনা করছে, তাদের তথ্য দল প্রকাশ করতে পারে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নিজেরা তা করতে পারেন। এর ফলে তথ্য যাচাই-বাছাই করার পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যাবে।
৫. আমরা মনোনয়নপত্র, হলফনামা, নির্বাচনের সম্ভাব্য ব্যয়ের হিসাবসহ সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্টগুলো ইলেকট্রনিক্যালি (অন-লাইনে) জমা দেওয়ার বিধান আইনে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করছি। সুপারিশ করছি 'কাউন্টার অ্যাফিডেভিট' বা বিরুদ্ধ হলফনামা প্রদানের বিধানটি আইনে অন্তর্ভুক্ত করার। প্রসঙ্গত, বিরুদ্ধ হলফনামা প্রদানের বিধানটি নির্বাচন কমিশনের ১৭/১১/০৮ তারিখে জারি করা পরিপত্র-৮ দ্বারা গত সংসদ নির্বাচনে কার্যকর করা হয়। এ ব্যাপারে এখন জনসচেতনতা সৃষ্টি প্রয়োজন।
৬. 'জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন আইন, ২০০৪' সংশোধন করে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে আরপিওর ১২ ধারার অন্তর্ভুক্ত অনুরূপ হলফনামা ও আয়কর রিটার্নের কপি জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা আবশ্যক। হলফনামার ছকটিও নতুন করে তৈরির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে আমরা মনে করি।
৭. আরপিওর ১২ ধারা অনুযায়ী, ইস্তফাদানকারী বা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য ইস্তফাদানের বা অবসরের পর তিন বছর অপেক্ষা, মনোনয়ন লাভের জন্য দলে যোগদানের পর তিন বছর অপেক্ষার বিধান রয়েছে। তিন বছর অপেক্ষা করার এ বিধানকে কার্যকর করতে হলে দলের পক্ষ থেকে তাদের সদস্যের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ ও নিয়মিত আপডেট করতে হবে।
৮. বর্তমানে রাষ্ট্রপতি ও সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব। আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দায়িত্বও কমিশনের ওপর অর্পণ করার সুপারিশ করছি।
৯. রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সংসদীয় এলাকার সীমানা নির্ধারণ নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব (অনুচ্ছেদ-১১৯)। এর জন্য কমিশনকে স্বাধীনতা দিতে হবে, বিশেষত আর্থিক স্বাধীনতা, যাতে প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে না হয়। এ জন্য কমিশনের ব্যয়কে 'সংযুক্ত তহবিলের ওপর দায়যুক্ত ব্যয়' হিসেবে গণ্য করা আবশ্যক।
১০. নির্বাচনী অপরাধের প্রায় সবগুলোরই উৎস রাজনৈতিক দল, তাদের মনোনীত প্রার্থী ও দলের নেতাকর্মীরা। দল ও দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাই মনোনয়ন বাণিজ্যে লিপ্ত হয়, টাকা দিয়ে ভোট কেনে, পেশিশক্তি ব্যবহার করে এবং আরও অনেক ধরনের অসদাচরণে লিপ্ত হয়। তাই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে রাজনৈতিক দলের ব্যাপক সংস্কার করা আবশ্যক, যা আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিষয়টি আলোচনার মধ্যেই নেই।
১১. নির্বাচনে টাকার খেলা আমাদের রাজনীতিকে আজ লাভজনক ব্যবসায়ে পরিণত করেছে এবং আমাদের গণতন্ত্র হয়ে গেছে 'বেস্ট ডেমোক্র্যাসি মানি ক্যান বাই'। আর আমাদের জাতীয় সংসদ পরিণত হয়েছে ব্যবসায়ীদের আখড়ায়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে আইনের সংশোধনের জন্যও নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগ জরুরি।
১২. রাজনৈতিক দলের প্রদত্ত হিসাব নির্বাচন কমিশনের পক্ষে যাচাই-বাছাই করার বিধান আরপিওতে অন্তর্ভুক্ত করার আমরা প্রস্তাব করছি।
আশা করি নির্বাচন কমিশন এসব প্রস্তাব সনি্নবেশিত করে রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের সঙ্গে যথাশীঘ্র সংলাপ শুরু করবে এবং একটি ঐকমত্যে পেঁৗছবে। আর এ ধরনের ঐকমত্যই ভবিষ্যতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
ড. বদিউল আলম মজুমদার : সম্পাদক সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক
No comments