ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ-মোহালির পর ঢাকা by পবিত্র কুন্ডু
ইনডোরে জড়ো হওয়া তাবৎ সাংবাদিক আর সাপোর্ট স্টাফকে সন্ত্রস্ত করে বলটা উড়িয়ে মারলেন কে? না, শহীদ আফ্রিদি, মিসবাহ-উল-হক, উমর আকমলদের কেউ নন। বেশির ভাগ সময় রিজার্ভ বেঞ্চে বসে কাটানোর ‘নিয়তি’ মেনে নেওয়া হাম্মাদ আযম। এতেও যদি গোটা পাকিস্তান দলের যুদ্ধংদেহী মনোভাবটা বুঝতে না পারেন, তাহলে ‘রান্নাঘরে আরও আছে’।
একেবারেই সোজা ব্যাটে বল ওপরে না তুলে ব্যাটিং অনুশীলন করে নিলেন আফ্রিদি, মিসবাহ, আকমলরা! কোচ ডেভ হোয়াটমোর একবার আফ্রিদির কাঁধে হাত রেখে মাথাটা বুলিয়ে দেন তো পরক্ষণেই মিসবাহর সঙ্গে কোনো গোপন সলাপরামর্শ সেরে নেন। মোট কথা, আজ ভারতের বিপক্ষে দাঁড়ানোর আগে আগ্রাসনের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ পিঠ দুটো দেখিয়ে রাখল পাকিস্তান।
পরোক্ষ আগ্রাসন হলো, মানসিক প্রস্তুতিটা সেরে রাখা, যেখানে কোনোভাবেই পা না হড়কানোর প্রত্যয় থাকে, থাকে অতীতের আঘাত আর পরাজয় ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা। গত বছর মোহালিতে যে ভারত তাদের স্বপ্নের বিশ্বকাপ দৌড়টা শেষ স্টেশনের আগে থামিয়ে দিয়েছিল এক ঝটকায়, সেটি তারা কী করে ভোলে! মোহাম্মদ হাফিজ যে সংবাদ সম্মেলনে এসে বলে গেলেন, ‘এই ম্যাচটাকে আরেকটা সাধারণ ম্যাচ হিসেবেই নিচ্ছি’, ওটা বিশ্বাস করবেন না। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের কিংবা ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের ম্যাচটা কখনোই পাঁচটা সাধারণ ম্যাচের মতো নয়!
এর মধ্যে মিশে থাকে প্রতিশোধের আগুন, মিশে থাকে জাত্যাভিমান। পাকিস্তানি অলরাউন্ডার ম্যাচের উত্তাপটা বোঝাতে পরক্ষণে নিজের কথারই তো দ্বিচারিতা করলেন, ‘হ্যাঁ, এই ম্যাচটা বিশ্বের যে প্রান্তে যখনই হোক না কেন, দুই দলের ওপর চাপ থাকে প্রচণ্ড।’
ব্যাপারটা দাঁড়াল এই, মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ আরেকটি চাপের ম্যাচ। আপাতদৃষ্টিতে চকখড়ি দিয়ে আঁকা ফাইনালে ওঠার রেখাটায় পা প্রায় দিয়ে ফেলেও পাকিস্তান চাপ অনুভব করছে। আর টুর্নামেন্টে উড়ন্ত সূচনা করেও ভারত গিয়ে পৌঁছেছে খাদের কিনারায়। ভারতকে হারিয়ে দিয়ে, শচীন টেন্ডুলকারের শততম সেঞ্চুরির আলোকিত বাসরে আঁধারের পোঁচ বুলিয়ে এই চাপটা এনেছে বাংলাদেশ। শুধু চাপ আনাই তো নয়, স্বাগতিকেরা শিরোপারও দাবি জানিয়ে রেখেছে নীরবে।
আজ ম্যাচে তাই বাংলাদেশও থাকবে, নীরবে ও সরবে। পাকিস্তানের কাছে আজ ভারত হারলে পাকিস্তান যেমন ফাইনালে উঠে যাবে, তেমনই বাংলাদেশের জন্যও রাস্তাটা হবে উন্মুক্ত। তখন বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা শেষ গ্রুপ ম্যাচটাই হবে দ্বিতীয় ফাইনালিস্টের নির্ধারক। এসব হিসাব-নিকাশ পরে হবে। তার আগে দেখা যাক বাঁচা-মরার ম্যাচটি নিয়ে ভারতের কী অবস্থা?
দলের বিখ্যাততম সদস্যের শততম সেঞ্চুরির পরও বাংলাদেশের কাছে পরাজয়ে হঠাৎই এশিয়া কাপে ভারতের মধুর সংসারটায় একরাশ অস্থিরতা ঢুকে পড়েছে। ক্রিকেট-পৃথিবীটা আবার তাদের কাছে ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়া সফরের কাঁটার যন্ত্রণা। একটু ব্যতিক্রম, এখানে ব্যাটিং যন্ত্রণার উপশম হলেও বোলিং ঢাকতে পারছে না আব্রু। ইরফান পাঠান, অশোক দিন্দা, প্রাভিন কুমারদের যেমন এক রাত আগেই গলির বোলারের মতো বেধড়ক ঠেঙিয়েছে সাকিব, মুশফিকরা। আর তাই রানের কুতুবমিনার গড়েও তা সুরক্ষিত রাখা যাবে কি না, চিন্তায় ধোনিরা।
কাল সারা দিন ভারতীয় দল আবদ্ধ থাকল সোনারগাঁও হোটেলের সাততলার ডেরায়। দলের ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, কয়েকজন ডিভিডি চালিয়ে গত সিবি সিরিজের কয়েকটি ম্যাচ দেখে নিয়েছেন। বিকেলে কয়েকজন পুলে নেমে সাঁতার কেটেছেন। কিন্তু এতে বাংলাদেশের কাছে হারের দগদগে ঘা-টা যেমন শুকোচ্ছে না, আসন্ন পাকিস্তান-যুদ্ধের মানসিক প্রস্তুতিও থেকে যাচ্ছে অপরিণত।
বিরাট কোহলি বারকয়েক ‘ঘরকে বাহির বাহিরকে ঘর’ করলেন লিফটে ওঠানামা করে। মানসিক যন্ত্রণা এড়ানোর দাওয়াই! শচীন টেন্ডুলকারের মন্থর ব্যাটিংয়ের কথা উঠেছে, কিন্তু দায় তো তাঁরও কম ছিল না। যদিও তাঁর মুখে কেবলই শচীন-প্রশংসা, ‘ওহ্, হান্ড্রেডথ সেঞ্চুরি! উই আর প্রাউড অব হিম।’
ভারতীয় দলের অন্দরমহলে কালকের সন্ধ্যার মতোই মেঘ আর বৃষ্টির গুমোট। গুমোটটা প্রকৃতিতে থাকতে পারে আজও। এর মধ্যেও ভারতীয় সাংবাদিক সমাজ ভাসছে আশার ভেলায়, ‘মেরে দেবে, শচীন ঠিকই মেরে দেবে পাকিস্তানকে! মাথা থেকে বোঝাটা নেমে গিয়েছে, এখনই তো ওর আসল খেলা।’ সবচেয়ে প্রতীক্ষিত ও বিখ্যাত আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরিটি পেয়েও পরাজয়ের গ্লানি লেগেছে গায়ে। তার পরও ভারত আছে ভারতেই, মগ্ন ওই সেঞ্চুরিতেই।
কিন্তু আসল লড়াইটা হবে মাঠে, যে লড়াইয়ে গত বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের পটভূমি থাকবে। আবার থাকবেও না। বিশ্বকাপ মানেই চতুর্বাষিক জয়ের ‘টিকা’ নিয়ে নামা ভারতের, যেখানে তারা পাকিস্তানের কাছে অজেয়। কিন্তু এটা এশিয়া কাপ। আলাদা পৃথিবী, আলাদা টুর্নামেন্ট। মুখোমুখি লড়াইয়ে দুই দলেরই জয় চারটি করে। বাংলাদেশে এর আগের দুটি এশিয়া কাপে দুই দলের সাফল্য-হারও সমান। ভারত পাঁচ শিরোপার একটি জিতেছে এখানে, আবার ঢাকাই পাকিস্তানকে দিয়েছে একমাত্র শিরোপা জয়ের স্মারক।
আপাতত পরিসংখ্যান-টংখ্যান বাদ দিন। এসব দিয়ে কবে মাপা গেছে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের উত্তাপ?
পরোক্ষ আগ্রাসন হলো, মানসিক প্রস্তুতিটা সেরে রাখা, যেখানে কোনোভাবেই পা না হড়কানোর প্রত্যয় থাকে, থাকে অতীতের আঘাত আর পরাজয় ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা। গত বছর মোহালিতে যে ভারত তাদের স্বপ্নের বিশ্বকাপ দৌড়টা শেষ স্টেশনের আগে থামিয়ে দিয়েছিল এক ঝটকায়, সেটি তারা কী করে ভোলে! মোহাম্মদ হাফিজ যে সংবাদ সম্মেলনে এসে বলে গেলেন, ‘এই ম্যাচটাকে আরেকটা সাধারণ ম্যাচ হিসেবেই নিচ্ছি’, ওটা বিশ্বাস করবেন না। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের কিংবা ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের ম্যাচটা কখনোই পাঁচটা সাধারণ ম্যাচের মতো নয়!
এর মধ্যে মিশে থাকে প্রতিশোধের আগুন, মিশে থাকে জাত্যাভিমান। পাকিস্তানি অলরাউন্ডার ম্যাচের উত্তাপটা বোঝাতে পরক্ষণে নিজের কথারই তো দ্বিচারিতা করলেন, ‘হ্যাঁ, এই ম্যাচটা বিশ্বের যে প্রান্তে যখনই হোক না কেন, দুই দলের ওপর চাপ থাকে প্রচণ্ড।’
ব্যাপারটা দাঁড়াল এই, মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ আরেকটি চাপের ম্যাচ। আপাতদৃষ্টিতে চকখড়ি দিয়ে আঁকা ফাইনালে ওঠার রেখাটায় পা প্রায় দিয়ে ফেলেও পাকিস্তান চাপ অনুভব করছে। আর টুর্নামেন্টে উড়ন্ত সূচনা করেও ভারত গিয়ে পৌঁছেছে খাদের কিনারায়। ভারতকে হারিয়ে দিয়ে, শচীন টেন্ডুলকারের শততম সেঞ্চুরির আলোকিত বাসরে আঁধারের পোঁচ বুলিয়ে এই চাপটা এনেছে বাংলাদেশ। শুধু চাপ আনাই তো নয়, স্বাগতিকেরা শিরোপারও দাবি জানিয়ে রেখেছে নীরবে।
আজ ম্যাচে তাই বাংলাদেশও থাকবে, নীরবে ও সরবে। পাকিস্তানের কাছে আজ ভারত হারলে পাকিস্তান যেমন ফাইনালে উঠে যাবে, তেমনই বাংলাদেশের জন্যও রাস্তাটা হবে উন্মুক্ত। তখন বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা শেষ গ্রুপ ম্যাচটাই হবে দ্বিতীয় ফাইনালিস্টের নির্ধারক। এসব হিসাব-নিকাশ পরে হবে। তার আগে দেখা যাক বাঁচা-মরার ম্যাচটি নিয়ে ভারতের কী অবস্থা?
দলের বিখ্যাততম সদস্যের শততম সেঞ্চুরির পরও বাংলাদেশের কাছে পরাজয়ে হঠাৎই এশিয়া কাপে ভারতের মধুর সংসারটায় একরাশ অস্থিরতা ঢুকে পড়েছে। ক্রিকেট-পৃথিবীটা আবার তাদের কাছে ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়া সফরের কাঁটার যন্ত্রণা। একটু ব্যতিক্রম, এখানে ব্যাটিং যন্ত্রণার উপশম হলেও বোলিং ঢাকতে পারছে না আব্রু। ইরফান পাঠান, অশোক দিন্দা, প্রাভিন কুমারদের যেমন এক রাত আগেই গলির বোলারের মতো বেধড়ক ঠেঙিয়েছে সাকিব, মুশফিকরা। আর তাই রানের কুতুবমিনার গড়েও তা সুরক্ষিত রাখা যাবে কি না, চিন্তায় ধোনিরা।
কাল সারা দিন ভারতীয় দল আবদ্ধ থাকল সোনারগাঁও হোটেলের সাততলার ডেরায়। দলের ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, কয়েকজন ডিভিডি চালিয়ে গত সিবি সিরিজের কয়েকটি ম্যাচ দেখে নিয়েছেন। বিকেলে কয়েকজন পুলে নেমে সাঁতার কেটেছেন। কিন্তু এতে বাংলাদেশের কাছে হারের দগদগে ঘা-টা যেমন শুকোচ্ছে না, আসন্ন পাকিস্তান-যুদ্ধের মানসিক প্রস্তুতিও থেকে যাচ্ছে অপরিণত।
বিরাট কোহলি বারকয়েক ‘ঘরকে বাহির বাহিরকে ঘর’ করলেন লিফটে ওঠানামা করে। মানসিক যন্ত্রণা এড়ানোর দাওয়াই! শচীন টেন্ডুলকারের মন্থর ব্যাটিংয়ের কথা উঠেছে, কিন্তু দায় তো তাঁরও কম ছিল না। যদিও তাঁর মুখে কেবলই শচীন-প্রশংসা, ‘ওহ্, হান্ড্রেডথ সেঞ্চুরি! উই আর প্রাউড অব হিম।’
ভারতীয় দলের অন্দরমহলে কালকের সন্ধ্যার মতোই মেঘ আর বৃষ্টির গুমোট। গুমোটটা প্রকৃতিতে থাকতে পারে আজও। এর মধ্যেও ভারতীয় সাংবাদিক সমাজ ভাসছে আশার ভেলায়, ‘মেরে দেবে, শচীন ঠিকই মেরে দেবে পাকিস্তানকে! মাথা থেকে বোঝাটা নেমে গিয়েছে, এখনই তো ওর আসল খেলা।’ সবচেয়ে প্রতীক্ষিত ও বিখ্যাত আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরিটি পেয়েও পরাজয়ের গ্লানি লেগেছে গায়ে। তার পরও ভারত আছে ভারতেই, মগ্ন ওই সেঞ্চুরিতেই।
কিন্তু আসল লড়াইটা হবে মাঠে, যে লড়াইয়ে গত বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের পটভূমি থাকবে। আবার থাকবেও না। বিশ্বকাপ মানেই চতুর্বাষিক জয়ের ‘টিকা’ নিয়ে নামা ভারতের, যেখানে তারা পাকিস্তানের কাছে অজেয়। কিন্তু এটা এশিয়া কাপ। আলাদা পৃথিবী, আলাদা টুর্নামেন্ট। মুখোমুখি লড়াইয়ে দুই দলেরই জয় চারটি করে। বাংলাদেশে এর আগের দুটি এশিয়া কাপে দুই দলের সাফল্য-হারও সমান। ভারত পাঁচ শিরোপার একটি জিতেছে এখানে, আবার ঢাকাই পাকিস্তানকে দিয়েছে একমাত্র শিরোপা জয়ের স্মারক।
আপাতত পরিসংখ্যান-টংখ্যান বাদ দিন। এসব দিয়ে কবে মাপা গেছে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের উত্তাপ?
No comments