ঢাকায় আজ মহারণ by নোমান মোহাম্মদ
বর্ষপঞ্জি দেখে এখন আর গর্জন ছাড়ে না মেঘদূত। চৈত্র মাসের ৩ তারিখে ঈশান-নৈর্ঋত কোণ আঁধারে ডুবে যাওয়ায় তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই। কাল সন্ধ্যার চৈতালী ঝড়ের সঙ্গে ঘণ্টাখানেকের ঘনবর্ষণকে মানতে হবে প্রকৃতির খেয়াল। তাতে কিন্তু ভারত-পাকিস্তান মহারণ মঞ্চায়নের সামনে বড়সড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন পড়ছে না।
মিরপুরের দুর্দান্ত ড্রেনেজ সিস্টেম আজকের বড় ভরসা, ব্যাকআপ হিসেবে থাকছে আগামীকালের রিজার্ভ ডে। অতএব, এশিয়া কাপের আকাশে-বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছে আরেকটি ধ্রুপদী দ্বৈরথের আবাহন। অথচ এটি হওয়ার কথা নিতান্তই আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচ। ফাইনালের মহড়া। ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল যে একরকম নিশ্চিত হয়েই ছিল। পরশু ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের 'অলৌকিক' জয়ে পাল্টে গেল সব সমীকরণ। চার দলের সামনেই এখন গ্রুপ পর্বের চৌকাঠ মাড়িয়ে ফাইনালে ওঠার সুযোগ। সমশঙ্কা মুখ থুবড়ে পড়ারও। ফলে আজকের ম্যাচে জয় ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে ভাবার অবকাশ নেই কোনো দলের।
অবশ্য ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ে কখনোই-বা সেটি ছিল! দুই প্রতিবেশীর ব্যাটে-বলের যুদ্ধ বরাবরই ছড়ায় বারুদের ঝাঁজ। মাঠে ২২ জন ক্রিকেটার যেন হয়ে যান শিরস্ত্রাণ পরিহিত ২২ যোদ্ধা। কাশ্মীর-কারগিলের উত্তাপে পোড়ে মাঠের ক্রিকেট, শত্রুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জান বাজি রেখে লড়েন তাঁরা। মাঠের লড়াই ছাপিয়ে, সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক নানা বঞ্চনা আর প্রতিশোধের কথা ঘুরপাক খায় তাঁদের মাথায়। সেটি তাঁরা মুখে যতই অস্বীকার করুন না কেন! জয়ের জন্য ঝাঁপানো দুই দলের এমন মরিয়া চেষ্টায় নিরপেক্ষ ক্রিকেটপ্রেমীদের লাভ হয় সবচেয়ে বেশি। ধ্রুপদী লড়াইয়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে থাকে যে!
অতিভোজনে অমৃতেও নাকি অরুচি ধরে। মাঝের কয়েক বছরে ভারত-পাকিস্তান লড়াই হয়ে পড়েছিল তেমনই ডালভাত। আবার সর্বশেষ কিছু দিনে সীমান্তে উত্তেজনা, রাজনৈতিক উত্তাপ মিলিয়ে অদৃশ্য দেয়াল উঠে গেছে দুই দেশের ক্রিকেট সম্পর্কে। এখন আর তাই এই দুই দলের লড়াই নিয়মিত ঘটনা নয়। সে কারণে যখনই মাঠে তারা মুখোমুখি হয়, আবেগ-উত্তেজনা-উন্মাদনা পেঁৗছে চরমে। এবারের এশিয়া কাপে বাংলাদেশ স্বাগতিক হওয়ার পরও এই ম্যাচটির টিকিট-আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। আর যখন ফাইনালে ওঠার জন্য জীবনপণ লড়াইয়ে নামছে দুই দল, তখন অবস্থাটা ভাবুন!
পাকিস্তানিদের মোটা বুদ্ধি নিয়ে চালু আছে অনেক রসিকতা। সেটির প্রমাণ আরো একবার দিচ্ছে তারা এশিয়া কাপে। কাল দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ হাফিজ দিব্যি বলে গেলেন, পাকিস্তান ফাইনাল খেলছে। এ জন্য নাকি ভারতের চেয়ে তাদের ওপর চাপ কম থাকবে। কিন্তু সত্যিটা হলো, অন্তত কাগজ-কলমে এখনো টুর্নামেন্টে থেকে ছিটকে পড়ার আশঙ্কা পাকিস্তানের ঠিকই আছে। আজ ভারত যদি বোনাস পয়েন্টসহ জেতে এবং পরশু শ্রীলঙ্কাকে বোনাস পয়েন্টসহ হারায় বাংলাদেশ- সে ক্ষেত্রে নেট রান রেটে পাকিস্তানের বাদ পড়ার আশঙ্কা ঠিকই থাকছে। অথচ তারা কিনা আজকের ম্যাচের আগেই ফাইনালে ওঠার খুশিতে বগল বাজাচ্ছে!
অবশ্য দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইয়ের গুরুত্বের কথা বারবার ঠিকই মনে করিয়ে দিয়েছেন হাফিজ। তাতে যে ফাইনালে ওঠা-না ওঠার সমীকরণের ভূমিকা গৌণ, সেটিও আছে এই অলরাউন্ডারের কথায়, 'ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ পৃথিবীর যেখানেই হোক, চাপ থাকবেই, কেননা ম্যাচটি দুই দলই জিততে চায়। আমরাও কাল ১১০ ভাগ দিয়ে জেতার চেষ্টা করব। তবে এক দিক দিয়ে আমরা একটু নির্ভার, কারণ এরই মধ্যে আমরা ফাইনালে উঠে গেছি।' ভুল বুঝে অমন স্বস্তিতে আছে পাকিস্তান। ভারতের অবশ্য স্বস্তিতে থাকার উপায় নেই। পরশু বাংলাদেশের কাছে হারে এমনকি ম্লান হয়ে গেছে শচীন টেন্ডুলকারের শততম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির গৌরবও। কাল সারা দিন আর অনুশীলনের জন্য হোটেল থেকে বেরোয়নি ভারত। বিশ্রাম নিয়ে তৈরি হচ্ছে পাকিস্তান-বধের জন্য। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হারাতে পারলে তবুও মুখ রক্ষা!
তবে এমন নির্বিষ বোলিং নিয়ে ভারত কি সেটি পারবে? অনুশীলন শেষে মাইক্রোফোনের মুখোমুখি হয়ে এমন প্রশ্ন ছুটে গেল হাফিজের দিকে। পাকিস্তানি অলরাউন্ডার ভারতের দুর্বলতায় আঘাত হানার ঘোষণাই দিলেন, 'প্রতি দলের শক্তি-দুর্বলতা থাকে। নিজেদের বোলিং শক্তির ওপর আমাদের আস্থা আছে। আর ভারতের বোলিং নিয়েও আমরা ইতিবাচকভাবেই ভাবছি। তাদের বোলাররা খুব একটা ফর্মে নেই। বোলিং নিয়ে তাদের দুর্বলতা থাকলে সেটি কাজে লাগানোর চেষ্টা করব।' নিজেদের ব্যাটসম্যানরাও আস্থাভোট পাচ্ছেন এই অলরাউন্ডারে, 'প্রথম ম্যাচে দুই ওপেনার ভালো করেছে। পরের খেলায় মিসবাহ ও উমর আকমল যেভাবে ব্যাটিং করেছে, সেটি আমাদের জন্য ইতিবাচক। ব্যাটিং ইউনিট হিসেবেও আমরা আত্মবিশ্বাসী।'
আত্মবিশ্বাস! এই শব্দটি এখন আঁতিপাঁতি করে খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না ভারতীয় ক্যাম্পের চৌহদ্দিতে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৮৯ রান করেও শেষরক্ষা হয়নি। পাকিস্তানের টুর্নামেন্টসেরা বোলিং লাইনের বিপক্ষে কত দূর যেতে পারবে, সেটি প্রথম প্রশ্ন। আর পরের প্রশ্ন, কত রান করলে সেটি ডিফেন্ড করতে পারবেন ভারতীয় বোলাররা? এশিয়া কাপে যেমন উইকেটে খেলা হচ্ছে, তাতে আজও আরেকটি রানবন্যার প্রতিশ্রুতি থাকছে। যাতে হয়তো চকচক করে উঠবে শচীন-কোহলি-গম্ভীরদের চোখমুখ। সমান্তরালে আত্মারাম খাঁচাছাড়া কি হবে না প্রভীন কুমান-বিনয় কুমার-অশোক দিন্দাদের? শচীন টেন্ডুলকার অবশ্য শততম সেঞ্চুরির পর সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের বিপক্ষে চ্যালেঞ্জের কথাটি বলেছিলেন, 'ওদের বিপক্ষে খেলা সব সময়ই চ্যালেঞ্জের। ওই ম্যাচের জন্য আমরা মুখিয়ে আছি।'
সন্ধ্যার ঝড়ের আগে-পরেও ঝিরিঝিরি বর্ষণে ভিজেছে মিরপুর স্টেডিয়ামের সবুজ চত্বর। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর দ্বৈরথের ফলাফলেও চোখের পাতা ভিজে যাবে এক দলের। ভারতের? নাকি পাকিস্তানের?
অবশ্য ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ে কখনোই-বা সেটি ছিল! দুই প্রতিবেশীর ব্যাটে-বলের যুদ্ধ বরাবরই ছড়ায় বারুদের ঝাঁজ। মাঠে ২২ জন ক্রিকেটার যেন হয়ে যান শিরস্ত্রাণ পরিহিত ২২ যোদ্ধা। কাশ্মীর-কারগিলের উত্তাপে পোড়ে মাঠের ক্রিকেট, শত্রুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জান বাজি রেখে লড়েন তাঁরা। মাঠের লড়াই ছাপিয়ে, সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক নানা বঞ্চনা আর প্রতিশোধের কথা ঘুরপাক খায় তাঁদের মাথায়। সেটি তাঁরা মুখে যতই অস্বীকার করুন না কেন! জয়ের জন্য ঝাঁপানো দুই দলের এমন মরিয়া চেষ্টায় নিরপেক্ষ ক্রিকেটপ্রেমীদের লাভ হয় সবচেয়ে বেশি। ধ্রুপদী লড়াইয়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে থাকে যে!
অতিভোজনে অমৃতেও নাকি অরুচি ধরে। মাঝের কয়েক বছরে ভারত-পাকিস্তান লড়াই হয়ে পড়েছিল তেমনই ডালভাত। আবার সর্বশেষ কিছু দিনে সীমান্তে উত্তেজনা, রাজনৈতিক উত্তাপ মিলিয়ে অদৃশ্য দেয়াল উঠে গেছে দুই দেশের ক্রিকেট সম্পর্কে। এখন আর তাই এই দুই দলের লড়াই নিয়মিত ঘটনা নয়। সে কারণে যখনই মাঠে তারা মুখোমুখি হয়, আবেগ-উত্তেজনা-উন্মাদনা পেঁৗছে চরমে। এবারের এশিয়া কাপে বাংলাদেশ স্বাগতিক হওয়ার পরও এই ম্যাচটির টিকিট-আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। আর যখন ফাইনালে ওঠার জন্য জীবনপণ লড়াইয়ে নামছে দুই দল, তখন অবস্থাটা ভাবুন!
পাকিস্তানিদের মোটা বুদ্ধি নিয়ে চালু আছে অনেক রসিকতা। সেটির প্রমাণ আরো একবার দিচ্ছে তারা এশিয়া কাপে। কাল দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ হাফিজ দিব্যি বলে গেলেন, পাকিস্তান ফাইনাল খেলছে। এ জন্য নাকি ভারতের চেয়ে তাদের ওপর চাপ কম থাকবে। কিন্তু সত্যিটা হলো, অন্তত কাগজ-কলমে এখনো টুর্নামেন্টে থেকে ছিটকে পড়ার আশঙ্কা পাকিস্তানের ঠিকই আছে। আজ ভারত যদি বোনাস পয়েন্টসহ জেতে এবং পরশু শ্রীলঙ্কাকে বোনাস পয়েন্টসহ হারায় বাংলাদেশ- সে ক্ষেত্রে নেট রান রেটে পাকিস্তানের বাদ পড়ার আশঙ্কা ঠিকই থাকছে। অথচ তারা কিনা আজকের ম্যাচের আগেই ফাইনালে ওঠার খুশিতে বগল বাজাচ্ছে!
অবশ্য দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইয়ের গুরুত্বের কথা বারবার ঠিকই মনে করিয়ে দিয়েছেন হাফিজ। তাতে যে ফাইনালে ওঠা-না ওঠার সমীকরণের ভূমিকা গৌণ, সেটিও আছে এই অলরাউন্ডারের কথায়, 'ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ পৃথিবীর যেখানেই হোক, চাপ থাকবেই, কেননা ম্যাচটি দুই দলই জিততে চায়। আমরাও কাল ১১০ ভাগ দিয়ে জেতার চেষ্টা করব। তবে এক দিক দিয়ে আমরা একটু নির্ভার, কারণ এরই মধ্যে আমরা ফাইনালে উঠে গেছি।' ভুল বুঝে অমন স্বস্তিতে আছে পাকিস্তান। ভারতের অবশ্য স্বস্তিতে থাকার উপায় নেই। পরশু বাংলাদেশের কাছে হারে এমনকি ম্লান হয়ে গেছে শচীন টেন্ডুলকারের শততম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির গৌরবও। কাল সারা দিন আর অনুশীলনের জন্য হোটেল থেকে বেরোয়নি ভারত। বিশ্রাম নিয়ে তৈরি হচ্ছে পাকিস্তান-বধের জন্য। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হারাতে পারলে তবুও মুখ রক্ষা!
তবে এমন নির্বিষ বোলিং নিয়ে ভারত কি সেটি পারবে? অনুশীলন শেষে মাইক্রোফোনের মুখোমুখি হয়ে এমন প্রশ্ন ছুটে গেল হাফিজের দিকে। পাকিস্তানি অলরাউন্ডার ভারতের দুর্বলতায় আঘাত হানার ঘোষণাই দিলেন, 'প্রতি দলের শক্তি-দুর্বলতা থাকে। নিজেদের বোলিং শক্তির ওপর আমাদের আস্থা আছে। আর ভারতের বোলিং নিয়েও আমরা ইতিবাচকভাবেই ভাবছি। তাদের বোলাররা খুব একটা ফর্মে নেই। বোলিং নিয়ে তাদের দুর্বলতা থাকলে সেটি কাজে লাগানোর চেষ্টা করব।' নিজেদের ব্যাটসম্যানরাও আস্থাভোট পাচ্ছেন এই অলরাউন্ডারে, 'প্রথম ম্যাচে দুই ওপেনার ভালো করেছে। পরের খেলায় মিসবাহ ও উমর আকমল যেভাবে ব্যাটিং করেছে, সেটি আমাদের জন্য ইতিবাচক। ব্যাটিং ইউনিট হিসেবেও আমরা আত্মবিশ্বাসী।'
আত্মবিশ্বাস! এই শব্দটি এখন আঁতিপাঁতি করে খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না ভারতীয় ক্যাম্পের চৌহদ্দিতে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৮৯ রান করেও শেষরক্ষা হয়নি। পাকিস্তানের টুর্নামেন্টসেরা বোলিং লাইনের বিপক্ষে কত দূর যেতে পারবে, সেটি প্রথম প্রশ্ন। আর পরের প্রশ্ন, কত রান করলে সেটি ডিফেন্ড করতে পারবেন ভারতীয় বোলাররা? এশিয়া কাপে যেমন উইকেটে খেলা হচ্ছে, তাতে আজও আরেকটি রানবন্যার প্রতিশ্রুতি থাকছে। যাতে হয়তো চকচক করে উঠবে শচীন-কোহলি-গম্ভীরদের চোখমুখ। সমান্তরালে আত্মারাম খাঁচাছাড়া কি হবে না প্রভীন কুমান-বিনয় কুমার-অশোক দিন্দাদের? শচীন টেন্ডুলকার অবশ্য শততম সেঞ্চুরির পর সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের বিপক্ষে চ্যালেঞ্জের কথাটি বলেছিলেন, 'ওদের বিপক্ষে খেলা সব সময়ই চ্যালেঞ্জের। ওই ম্যাচের জন্য আমরা মুখিয়ে আছি।'
সন্ধ্যার ঝড়ের আগে-পরেও ঝিরিঝিরি বর্ষণে ভিজেছে মিরপুর স্টেডিয়ামের সবুজ চত্বর। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর দ্বৈরথের ফলাফলেও চোখের পাতা ভিজে যাবে এক দলের। ভারতের? নাকি পাকিস্তানের?
No comments