অভিনন্দন বাংলাদেশ-অটুট থাকুক বিজয়ের ধারা
যুগপৎ ইতিহাস রচিত হলো মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশ পেল ভারতের বিরুদ্ধে অবিস্মরণীয় জয় আর ভারত পেল শচীনের শততম সেঞ্চুরি। শচীনের ক্রিকেটীয় মহাকাব্যের সঙ্গে এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দলের প্রথম কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিরুদ্ধে বিজয়ে যেন কোনো ভেদরেখা নেই।
শততম সেঞ্চুরিকে বাঙালি এক লহমায় আপন বুকে জড়িয়ে আপনার করে নিয়েছে। আর এখানেই শচীনের ক্রিকেটীয় মহাকাব্যের রঙ, রূপ, রস যেন ধর্ম, বর্ণ, জাতপাত, অঞ্চলের সীমারেখাকে মুছে দিয়ে ক্রিকেট আনন্দধারায় সবাইকে একই সুতোয় গেঁথে নিয়েছে। শততম সেঞ্চুরিটি সম্পন্ন হওয়ার মুহূর্ত থেকে বিশ্ব ক্রীড়ামোদীদের কাছে তাই আজ আর কেবল একটি মস্ত বড় ও প্রায় অনতিক্রম্য পরিসংখ্যান নয়। অন্যদিকে, ভারতের করা ২৮৯ রান তাড়া করে চার বল বাকি থাকতেই বিজয় ভেরী বাজিয়ে দেওয়া মোটেই আমাদের খেলোয়াড়দের জন্য সহজ কাজ ছিল না। বিশেষত, কালেভদ্রে বড় দলগুলোর বিরুদ্ধে জ্বলে উঠেই বাংলাদেশের নিভে যাওয়ার ইতিহাস যাদের জানা তারা ধরেই নিয়েছিলেন যে, এবারও পরাজয়ের মধ্য দিয়ে আমাদের এশিয়া কাপ শেষ হবে। কিন্তু তামিম ইকবালের অনবদ্য ওপেনিং, জহিরুলের সঙ্গে জুটি বেঁধে সম্মানজনক স্কোর উপহার দেওয়া, সাকিব আল হাসানের বুদ্ধিদৃপ্ত খেলা, শেষে ক্যাপ্টেন মুশফিকুর রহিমের ২৫ বলে ৪৬ রানের আবির ছড়ানো ইনিংস বাংলাদেশকে জয়ের বন্দর চিনিয়ে দেয়। ২০ মার্চ শ্রীলংকার সঙ্গে বাংলাদেশ যদি একই গতি ও দক্ষতা নিয়ে বিজয় ছিনিয়ে নিতে পারে তাহলে হয়তো আমাদের ক্রিকেট যৌবনপ্রাপ্ত হয়েছে, এ কথা আমরা সগর্বে বলতে পারব। সমগ্র জাতি তাকিয়ে থাকবে, তাতিয়ে থাকবে এ জন্য। বাংলাদেশকে এবারের এশিয়া কাপেও কারও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী মনে না হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। অধিকাংশ মিডিয়াতেও এ নিয়ে উচ্চাশা পল্লবিত হতে দেখা যায়নি। কিন্তু প্রথম খেলাতেই পাকিস্তানকে ধরাশায়ী করার কিনারায় নিয়ে যাওয়া এবং শুক্রবার মিরপুরে ভারতকে ক্রিকেটীয় নৈপুণ্য প্রদর্শন করেই পরিকল্পিতভাবে হারিয়ে দেওয়ার ঘটনাদৃষ্টে মনে হয়েছে, পরিবর্তিত এক বাংলাদেশ দলকে আমরা দেখছি। আসলে বিপিএল আমাদের ক্রিকেট দুনিয়ায় নবজাগরণ ঘটিয়ে দিয়েছে। ক্রিকেটারদের দক্ষতা, সাহস, বিচক্ষণতা ও ধৈর্যশক্তিকে বিপিএল শানিত করতে সাহায্য করেছে। বিদেশি ক্রিকেটারদের টিমমেট হিসেবে পেয়ে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের দ্রুত অন্যের কাছ থেকে শেখা ও প্রতিপক্ষকে ভয় না করার মানসিকতা গড়ে উঠে। ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এই বিজয় গুরুত্ব বহন করে। আমরা এজন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানাই। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে শচীনের শততম সেঞ্চুরির দেখা পাওয়াটা সত্যিই তুলনাহীন। এর মধ্য দিয়ে শচীন নিজেকে এবং ক্রিকেটকে এমন এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, যেখানে তাকে ছোঁয়ার সাধ্য আর কারও হবে কি-না কে জানে! ক্রিকেটীয় মহাকাব্যের মহানায়ককে সালাম।
No comments