প্রতিরোধের মার্চ-প্রেসিডেন্ট ভবনেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করতে চেয়েছিল ওরা by আমীন আহম্মদ চৌধুরী
সত্তরের নির্বাচনের পর জানুয়ারি মাসে ইয়াহিয়া খান ঢাকায় এসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বৈঠক করে তাঁকেই পাকিস্তানের ভাবী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আখ্যায়িত করেন। কিন্তু ১৫ জানুয়ারি ঢাকা থেকে ফিরে তিনি লারকানায় যান এবং ভুট্টোর সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে অন্যান্য জেনারেলও ছিলেন। এর পরই শুরু হয় পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্র।
ইয়াহিয়া চেয়েছিলেন, ভুট্টো মুজিবের সঙ্গে বোঝাপড়া করে একটি সংবিধান প্রণয়ন করবেন। কিন্তু ভুট্টো উল্টো ইয়াহিয়াকে বোঝালেন যে পশ্চিম পাকিস্তানের কেউই ছয় দফা মানবে না। ভুট্টো তাঁকে সময়ক্ষেপণের পরামর্শ দেন, যাতে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সেনা ও অস্ত্রশস্ত্র পূর্ব বাংলায় নিয়ে আসা যায়। এর পরই ইয়াহিয়া খান সেনা অভিযানের পরিকল্পনা করেন। ভুট্টো জেনারেলদের বলেন, মুজিব ক্ষমতায় গেলে সশস্ত্র বাহিনীকে খর্ব করবেন। তাই সশস্ত্র বাহিনীর উচিত বাঙালিদের উচিত শিক্ষা দেওয়া। ১৬ জানুয়ারির বৈঠকে জেনারেলরা সিদ্ধান্ত নেন, বাঙালির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যাবে না। সশস্ত্র বাহিনী চেয়েছিল একজন বশংবদ প্রধানমন্ত্রী। মুজিব তাতে কখনোই রাজি হতেন না। এরপর ভুট্টো ‘এধার হাম ওধার তোম’ বলে ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব দেন, যা সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। ১৬ জানুয়ারির বৈঠকের পরপর কনটিনজেন্সি প্ল্যান হিসেবে অপারেশন সার্চলাইটের ড্রাফট তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় সাহেবজাদা ইয়াকুবকে। খারিয়া থেকে নবম ডিভিশন ও কোয়েটা থেকে ১৬ ডিভিশনকে পূর্ববঙ্গে আসার জন্য তৈরি থাকতে নির্দেশ দেওয়া হলো। সামরিক রসদ, অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদসহ এমভি সোয়াতকে পূর্ববঙ্গে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হলো।
পরে ২২ ফেব্রুয়ারি গভর্নরদের সম্মেলনে সেনা অভিযানের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। সাহেবজাদা খসড়া অপারেশন অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করেন এবং একই সঙ্গে দুই পৃষ্ঠার একটি বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন সরাসরি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে দেন। সাহেবজাদা সম্ভাব্য মিলিটারি অ্যাকশন নেওয়া হলে কী ধরনের ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, তার বর্ণনা দিয়ে উপসংহারে সেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা খুব দুরূহ হবে বলে উল্লেখ করেন।
ইয়াহিয়া দুবার ছোট্ট ওই প্রতিবেদন পড়লেন। চোখেমুখে চিন্তার রেখা দেখা দিল। চিন্তিত হলেও মিলিটারি অ্যাকশন নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রইলেন তিনি। একই সঙ্গে ভুট্টো প্রস্তাব দিলেন, ইয়াহিয়া যেন মুজিবকে ইসলামাবাদে আসার আমন্ত্রণ করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি ইয়াহিয়া অ্যাডমিরাল এহসানকে দিয়ে মুজিবকে আমন্ত্রণ জানান। শেখ মুজিব তাৎক্ষণিক প্রস্তাব নাকচ করে দেন। উত্তরে মুজিব বললেন, জাতীয় সংসদ অধিবেশন বসার আগে তিনি ঢাকা ত্যাগ করতে পারবেন না।
জাতীয় সংসদ অধিবেশন হওয়ার কথা ছিল ৩ মার্চ ১৯৭১। ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ অধিবেশন বন্ধের কথা শেখ মুজিবকে জানানো হলো। ১ মার্চ জাতীয় সংসদ অধিবেশন বন্ধ ঘোষণা করা হলো। খারিয়া ও কোয়েটা থেকে সেনারা ব্যাটল ড্রেসে বিমানে করে কলম্বো হয়ে ঢাকায় আসতে শুরু করে। এমভি সোয়াত ২২ ফেব্রুয়ারি আউটার এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে (১৭ নম্বর জেটি) নোঙর করে। তবে শ্রমিক-জনতার প্রতিরোধের মুখে ২৪-২৫ মার্চের আগে সোয়াত আনলোড করা সম্ভব হয়নি।
উত্তাল হয়ে উঠল সারা দেশ। চট্টগ্রাম বিস্ফোরণের মুখে। এ অবস্থায় শেখ মুজিবের ইসলামাবাদে না যাওয়ার সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল। ভুট্টোর সঙ্গে জেনারেল গুল হাসানের একটি আঁতাত হয়। বঙ্গবন্ধুকে ইসলামাবাদে নিয়ে তাঁরা কোনো অজুহাতে বন্দী করে ফেলবেন। তখন ১১০০ মাইল দূরে বসে বাঙালির কিছুই করার থাকত না। ১৬ মার্চের পর যখন ঢাকায় ইয়াহিয়ার সঙ্গে বৈঠক চলছিল, তখনো একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনানায়কেরা শেখ মুজিবকে প্রেসিডেন্ট হাউসে ডেকে এনে গ্রেপ্তার করতে চেয়েছিলেন। ইয়াহিয়া তা হতে দেননি। কারণ, সারা বিশ্বের কাছে তিনি ধোঁকাবাজ হিসেবে চিহ্নিত হতেন। তবে তাঁদের সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয় ২৫/২৬ মার্চ রাতে, বঙ্গবন্ধুকে তাঁর বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৫/২৬ মার্চ রাত আটটায় ঢাকা বিমানবন্দর ত্যাগের আগে ইয়াহিয়া খান সদম্ভে নির্দেশ দিলেন, ‘Sort the bastards out well and proper...’। সামরিক অভিযান চালানোর পর ভুট্টো বলেছিলেন, পাকিস্তান বেঁচে গেছে।
মার্চে আমি চট্টগ্রামে ছিলাম এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হতো। আন্দোলনের গতিবিধি আমরা পর্যবেক্ষণ করতাম। কী করা যায়, তা নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা হতো। ২৪ মার্চ ব্রিগেডিয়ার এম আর মজুমদার ও আমাকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় এবং ব্রিগেডিয়ার জাহানজেবের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় (৫৬, বাশার রোড, ঢাকা সেনানিবাস)। আমি যখন গুলশানে আমার মামা ইঞ্জিনিয়ার শাহ আলম চৌধুরীর বাসায় যেতে চাইলাম, ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব বললেন, শহর সৈনিকদের জন্য নিরাপদ নয়। তাই আমি যেন ব্রিগেডিয়ারের বাসায় থেকে যাই। ব্রিগেডিয়ার মজুমদার হেসে বললেন, ‘জাহানজেব, বর্তমানে চলাচলের জন্য দুটি পতাকা লাগে, পাকিস্তান পতাকা সেনানিবাসের জন্য এবং কালো পতাকা ঢাকা শহরসহ সমগ্র বাংলাদেশে। এমন কোনো কাজ করো না যাতে জনগণ তৃতীয় পতাকা দিকে ধাবিত হয়।’
উত্তরে জাহানজেব বেশ কঠিন স্বরে বললেন, ‘মজুমদার, আমাকে দুটি কোম্পানি দাও। আমি তোমাদের বঙ্গবন্ধুসহ হরতালরত জনতাকে দুই মিনিটে ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করে দেব।’ অর্থাৎ, তাঁরা মাত্র দুই কোম্পানি সেনা নিয়ে (৩০০ সেনা) বাংলাদেশ জয় করবেন—এই ছিল পাকিস্তান ব্রিগেড কমান্ডারের আস্ফাালন, যিনি বস্তুত ব্রিগেডিয়ারের ড্রেসে কোম্পানি কমান্ডারের পদবির একজন কর্মকর্তা মাত্র, যাঁকে জেনারেল নিয়াজি মালামাল লুট, হত্যা-রাহাজানির অপরাধে তাঁর পদ থেকে অপসারণ করে পিন্ডিতে ফেরত পাঠিয়ে দেন। ফেরত গিয়ে লুটেরা জাহানজেব নাকি লে. জেনারেল হয়েছিলেন।
যেখানে দুই কোম্পানি সেনা নিয়ে তিনি বাংলাদেশ দুঃস্বপ্ন দেখছিলেন, সেখানে শেষ পর্যন্ত ৯৩ হাজার সৈন্যসামন্ত নিয়ে তাঁরা আত্মসমর্পণ করলেন।
একাত্তরের মার্চের ঘটনা মনে করলে একটি প্রশ্নই বারবার জাগে, পাকিস্তানিদের সামরিক প্রস্তুতি দেখেও কেন আমরা তাদের বিরুদ্ধে আগেভাগে অভিযান চালালাম না? সাধারণ মানুষ কিন্তু সেদিন পাকিস্তানিদের ট্যাংক দেখে ভড়কে যায়নি, বরং এক হাতে লাঙলফলা, অন্য হাতে রাইফেল নিয়েই প্রস্তুত ছিল। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যে যুদ্ধে আমরা জয়ী হয়েছিলাম, তার প্রস্তুতি চলছিল মার্চেই। বহু বাঙালির রক্তে রঞ্জিত প্রতিরোধের মার্চ। যথাসময়ে সামরিক অভিযানের সিদ্ধান্ত না নেওয়ার খেসারত দিতে হয়েছে ইবিআরসিসহ বিভিন্ন সেনানিবাসে কর্মরত বাঙালি সেনাদের। বন্দরে খালাসরত ১২০ জন নিরস্ত্র সেনার মধ্যে ১১৪ জনকে তারা হত্যা করে। এক ইবিআরসিতে ২৫/২৬ মার্চ রাতে অসুস্থ কর্নেল এম আর চৌধুরীসহ ২৩৪ ঘুমন্ত বাঙালি সেনাকে তারা হত্যা করে।
আমীন আহম্মদ চৌধুরী: অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ও সাবেক রাষ্ট্রদূত।
পরে ২২ ফেব্রুয়ারি গভর্নরদের সম্মেলনে সেনা অভিযানের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। সাহেবজাদা খসড়া অপারেশন অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করেন এবং একই সঙ্গে দুই পৃষ্ঠার একটি বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন সরাসরি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে দেন। সাহেবজাদা সম্ভাব্য মিলিটারি অ্যাকশন নেওয়া হলে কী ধরনের ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, তার বর্ণনা দিয়ে উপসংহারে সেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা খুব দুরূহ হবে বলে উল্লেখ করেন।
ইয়াহিয়া দুবার ছোট্ট ওই প্রতিবেদন পড়লেন। চোখেমুখে চিন্তার রেখা দেখা দিল। চিন্তিত হলেও মিলিটারি অ্যাকশন নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রইলেন তিনি। একই সঙ্গে ভুট্টো প্রস্তাব দিলেন, ইয়াহিয়া যেন মুজিবকে ইসলামাবাদে আসার আমন্ত্রণ করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি ইয়াহিয়া অ্যাডমিরাল এহসানকে দিয়ে মুজিবকে আমন্ত্রণ জানান। শেখ মুজিব তাৎক্ষণিক প্রস্তাব নাকচ করে দেন। উত্তরে মুজিব বললেন, জাতীয় সংসদ অধিবেশন বসার আগে তিনি ঢাকা ত্যাগ করতে পারবেন না।
জাতীয় সংসদ অধিবেশন হওয়ার কথা ছিল ৩ মার্চ ১৯৭১। ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ অধিবেশন বন্ধের কথা শেখ মুজিবকে জানানো হলো। ১ মার্চ জাতীয় সংসদ অধিবেশন বন্ধ ঘোষণা করা হলো। খারিয়া ও কোয়েটা থেকে সেনারা ব্যাটল ড্রেসে বিমানে করে কলম্বো হয়ে ঢাকায় আসতে শুরু করে। এমভি সোয়াত ২২ ফেব্রুয়ারি আউটার এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে (১৭ নম্বর জেটি) নোঙর করে। তবে শ্রমিক-জনতার প্রতিরোধের মুখে ২৪-২৫ মার্চের আগে সোয়াত আনলোড করা সম্ভব হয়নি।
উত্তাল হয়ে উঠল সারা দেশ। চট্টগ্রাম বিস্ফোরণের মুখে। এ অবস্থায় শেখ মুজিবের ইসলামাবাদে না যাওয়ার সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল। ভুট্টোর সঙ্গে জেনারেল গুল হাসানের একটি আঁতাত হয়। বঙ্গবন্ধুকে ইসলামাবাদে নিয়ে তাঁরা কোনো অজুহাতে বন্দী করে ফেলবেন। তখন ১১০০ মাইল দূরে বসে বাঙালির কিছুই করার থাকত না। ১৬ মার্চের পর যখন ঢাকায় ইয়াহিয়ার সঙ্গে বৈঠক চলছিল, তখনো একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনানায়কেরা শেখ মুজিবকে প্রেসিডেন্ট হাউসে ডেকে এনে গ্রেপ্তার করতে চেয়েছিলেন। ইয়াহিয়া তা হতে দেননি। কারণ, সারা বিশ্বের কাছে তিনি ধোঁকাবাজ হিসেবে চিহ্নিত হতেন। তবে তাঁদের সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয় ২৫/২৬ মার্চ রাতে, বঙ্গবন্ধুকে তাঁর বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৫/২৬ মার্চ রাত আটটায় ঢাকা বিমানবন্দর ত্যাগের আগে ইয়াহিয়া খান সদম্ভে নির্দেশ দিলেন, ‘Sort the bastards out well and proper...’। সামরিক অভিযান চালানোর পর ভুট্টো বলেছিলেন, পাকিস্তান বেঁচে গেছে।
মার্চে আমি চট্টগ্রামে ছিলাম এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হতো। আন্দোলনের গতিবিধি আমরা পর্যবেক্ষণ করতাম। কী করা যায়, তা নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা হতো। ২৪ মার্চ ব্রিগেডিয়ার এম আর মজুমদার ও আমাকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় এবং ব্রিগেডিয়ার জাহানজেবের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় (৫৬, বাশার রোড, ঢাকা সেনানিবাস)। আমি যখন গুলশানে আমার মামা ইঞ্জিনিয়ার শাহ আলম চৌধুরীর বাসায় যেতে চাইলাম, ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব বললেন, শহর সৈনিকদের জন্য নিরাপদ নয়। তাই আমি যেন ব্রিগেডিয়ারের বাসায় থেকে যাই। ব্রিগেডিয়ার মজুমদার হেসে বললেন, ‘জাহানজেব, বর্তমানে চলাচলের জন্য দুটি পতাকা লাগে, পাকিস্তান পতাকা সেনানিবাসের জন্য এবং কালো পতাকা ঢাকা শহরসহ সমগ্র বাংলাদেশে। এমন কোনো কাজ করো না যাতে জনগণ তৃতীয় পতাকা দিকে ধাবিত হয়।’
উত্তরে জাহানজেব বেশ কঠিন স্বরে বললেন, ‘মজুমদার, আমাকে দুটি কোম্পানি দাও। আমি তোমাদের বঙ্গবন্ধুসহ হরতালরত জনতাকে দুই মিনিটে ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করে দেব।’ অর্থাৎ, তাঁরা মাত্র দুই কোম্পানি সেনা নিয়ে (৩০০ সেনা) বাংলাদেশ জয় করবেন—এই ছিল পাকিস্তান ব্রিগেড কমান্ডারের আস্ফাালন, যিনি বস্তুত ব্রিগেডিয়ারের ড্রেসে কোম্পানি কমান্ডারের পদবির একজন কর্মকর্তা মাত্র, যাঁকে জেনারেল নিয়াজি মালামাল লুট, হত্যা-রাহাজানির অপরাধে তাঁর পদ থেকে অপসারণ করে পিন্ডিতে ফেরত পাঠিয়ে দেন। ফেরত গিয়ে লুটেরা জাহানজেব নাকি লে. জেনারেল হয়েছিলেন।
যেখানে দুই কোম্পানি সেনা নিয়ে তিনি বাংলাদেশ দুঃস্বপ্ন দেখছিলেন, সেখানে শেষ পর্যন্ত ৯৩ হাজার সৈন্যসামন্ত নিয়ে তাঁরা আত্মসমর্পণ করলেন।
একাত্তরের মার্চের ঘটনা মনে করলে একটি প্রশ্নই বারবার জাগে, পাকিস্তানিদের সামরিক প্রস্তুতি দেখেও কেন আমরা তাদের বিরুদ্ধে আগেভাগে অভিযান চালালাম না? সাধারণ মানুষ কিন্তু সেদিন পাকিস্তানিদের ট্যাংক দেখে ভড়কে যায়নি, বরং এক হাতে লাঙলফলা, অন্য হাতে রাইফেল নিয়েই প্রস্তুত ছিল। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যে যুদ্ধে আমরা জয়ী হয়েছিলাম, তার প্রস্তুতি চলছিল মার্চেই। বহু বাঙালির রক্তে রঞ্জিত প্রতিরোধের মার্চ। যথাসময়ে সামরিক অভিযানের সিদ্ধান্ত না নেওয়ার খেসারত দিতে হয়েছে ইবিআরসিসহ বিভিন্ন সেনানিবাসে কর্মরত বাঙালি সেনাদের। বন্দরে খালাসরত ১২০ জন নিরস্ত্র সেনার মধ্যে ১১৪ জনকে তারা হত্যা করে। এক ইবিআরসিতে ২৫/২৬ মার্চ রাতে অসুস্থ কর্নেল এম আর চৌধুরীসহ ২৩৪ ঘুমন্ত বাঙালি সেনাকে তারা হত্যা করে।
আমীন আহম্মদ চৌধুরী: অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ও সাবেক রাষ্ট্রদূত।
No comments